সড়কে রাখা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

আবুল আহসান টিটু, ফকিরহাট (বাগেরহাট)
আপডেট : ১২ জুন ২০২২, ১২: ৪৬
Thumbnail image

ব্যস্ততম ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফকিরহাট উপজেলার দুর্ঘটনাপ্রবণ দুই কিলোমিটার সড়কের পাশে পল্লী বিদ্যুতের বৈদ্যুতিক খুঁটি রাখার কারণে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। খুঁটিগুলো আনা-নেওয়ার জন্য বড় ট্রাক ও ট্রলি মহাসড়কের যত্রতত্র পার্কিং এবং সড়কের এক-তৃতীয়াংশজুড়ে ক্রেন বসিয়ে সেগুলো ওঠানামার কাজ চলছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

নিরাপদ সড়ক ও জনস্বার্থে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ঝুঁকিপূর্ণ এ খুঁটিগুলো সড়কের পাশ থেকে অপসরণের দাবি জানান বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও স্থানীয়রা।

গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বেশ কিছু ট্রাক ও লড়ি থেকে ক্রেনে করে বৈদ্যুতিক খুঁটি সড়কের পাশে রাখা হচ্ছে। এ সময় একটি ট্রাককে পাশ কাটাতে গিয়ে সাইকেল আরোহী আব্দুর রশিদ মোড়ল বৈদ্যুতিক খুঁটিতে মাথায় আঘাত লেগে আহত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁর মাথায় সেলাই ও চিকিৎসা দেওয়া হয়।

মহাসড়কসংলগ্ন একাধিক বাসিন্দা জানান, ফকিরহাট বিশ্বরোড মোড় থেকে তৈয়ব আলী বটতলা মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় সড়কের দুই পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। মহাসড়কের এ অংশে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও পার্শ্বরাস্তা থাকার কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে এখানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু বিষয়টি আামলে না নিয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড খুঁটি রেখে সড়কটি আরও দুর্ঘটনাপ্রবণ করেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এলাকাবাসীর দাবি, ফকিরহাটে যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তার বেশির ভাগ এই এলাকায় সংঘটিত হয়। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ব্যস্ততার কারণে এ দুর্ঘটনা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গাড়িচালকেরা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে সড়কের দুই পাশে পল্লী বিদ্যুতের অনেক খুঁটি এলোপাতাড়িভাবে রেখে ওঠানো ও নামানো হচ্ছে। এর কারণে গাড়ি চলাচলে খুব সমস্যা হয়। চলাচলের জন্য কোনো নির্দেশনামূলক সতর্কতা বা লাল পতাকা ছাড়াই এসব লোড-আনলোডের কাজ করা হয়।

এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানালেও কোনো প্রতিকার মেলেনি বলে অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দা ও ফকিরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি শেখ ফারুক হোসেন।

সমাজকর্মী ও ফকিরহাটের ব্র্যাক মোড় এলাকার খান মাহমুদ আরিফুল হক বলেন, সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোর শোল্ডার পর্যন্ত স্তূপ করে বিদ্যুতের খুঁটিগুলো রাখা হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে কয়েক বছর ধরে পড়ে আছে খুঁটিগুলো। এ কারণে একাধিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে যানবাহন ও পথচারীরা।

সড়কের পাশে খুঁটি রাখার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক রসুল শেখ বলেন, খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে ১৫টি ট্রলিতে ৬৩০টি খুঁটি আনা হয়েছে। ফকিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী আব্দুল কুদ্দুস সড়কের পাশে রাখতে বলায় তাঁরা খুঁটিগুলো আনলোড করছেন।

আব্দুল কুদ্দুস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় খুঁটিগুলো সড়কের পাশে রাখা হচ্ছে। এভাবে খুঁটি রাখার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেননি বলে জানান তিনি।

পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, সড়কের পাশে রাখা খুঁটিগুলো মোংলা, চিতলমারী, বাগেরহাট ও কচুয়া এলাকায় কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। তবে সড়কের পাশে খুঁটি রাখার দায় তাঁর নয় বলে তিনি দাবি করেন।

পল্লী বিদ্যুতের ফকিরহাট জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক আহসানুল করিম বলেন, সড়কের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি রাখা বা না রাখার বিষয়ে তাঁর কোনো দায়িত্ব নেই। এটা বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিস নিয়ন্ত্রণ করে।

বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাগর সৈকত মণ্ডল বলেন, মহাসড়কের পাশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটি রাখার কোনো অনুমতি সওজ থেকে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে তিনি বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত