বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য সহায়ক হবে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৭
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১০: ০০

গাছ, মাছ, গবাদিপশু, গাড়ি, অলংকার, সনদ, মেধাস্বত্বসহ অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যাবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য আর নতুন উদ্যোগে বিপ্লব ঘটবে। অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে ব্যাংকঋণ নেওয়ার এমন আইনের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়ার পর প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে এমনই আশা দেখছেন অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও বিশ্লেষকেরা। প্রস্তাবিত আইনের চূড়ান্ত খসড়া গত বুধবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিশ্লেষকেরা জানান, প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে, বিপুলসংখ্যক নতুন উদ্যোক্তা, ব্যবসা ও বিনিয়োগকারী তৈরি হবে। নতুন নতুন কারখানা গড়ে উঠবে। ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল হবে। উৎপাদন, রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহের প্রসার ঘটবে।

অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এত দিন স্থাবর সম্পত্তির অভাবে ঋণের যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও অনেকে ঋণ

পাননি বলে অর্থনীতি মন্থর ছিল বলেও তাঁরা মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলছেন, নতুন আইন ছোট ঋণের জন্য সহায়ক হলেও বড় ঋণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তা ছাড়া ঋণ মূল্যায়নও জটিল হতে পারে। তিনি বলেন, ‘কেউ পুকুরে মাছ দেখিয়ে ঋণ নিয়ে সেই মাছ বিক্রি করে ফেলতে পারে। আর মেধাস্বত্বের ভিত্তিতে ঋণ দেওয়া অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকারের বিবেচনার ওপর অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করবে। সুতরাং এটা বাংলাদেশের মতো দেশে কতটা বাস্তবসম্মত এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

অনুমোদিত খসড়া আইনে বলা হয়েছে, ঋণ নেওয়ার আগে যেকোনো অস্থাবর সম্পত্তি জামানত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। তবে অস্থাবর সম্পত্তির ওপর দেনাদার বা জামিনদারের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সম্পত্তির বাজারমূল্য থাকতে হবে। কারও যদি বন্ড থাকে, সেটা দিয়েও ঋণ পাওয়ার সুযোগ থাকবে। দামি গাড়ি, স্বর্ণ, মেধাস্বত্ব বন্ধক রেখেও ঋণ নেওয়া যাবে। এ ছাড়া খনিজ সম্পদ, কৃষিজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত মাছ, জলজ প্রাণী, গবাদিপশু, রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুতের কাঁচামালও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত রেখে ঋণ দিতে পারবে। আর নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেট, সেবার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে সেবাগ্রহীতার মূল্য পরিশোধের স্বীকৃতি বন্ধক রেখে ব্যাংকঋণ নেওয়া যাবে। আইন কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নিবন্ধন দপ্তর প্রতিষ্ঠা করবে। জামানতের তথ্য ওই দপ্তরে জমা থাকবে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত আইনে আদালত প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘আর্থিক খাতে যে সংস্কার হচ্ছে, তারই ধারাবাহিকতায় ব্যাংক খাতের জন্য আইনটি আসছে। এ আইন পাস হলে ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ের জন্য সুবিধা হবে। ব্যাংক খাতে যেহেতু নতুন নতুন পণ্য আসছে, ফলে প্রথাগত নিয়মকানুন নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এসব বিষয় বিবেচনায় আইনটি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এ আইন পাস হলে লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা অর্থনীতির মূল ধারায় ফেরার সুযোগ পাবেন। এত দিন তাঁরা স্থাবর সম্পত্তির অভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারেননি। এর ফলে বিনিয়োগ বাড়বে। উৎপাদন বাড়বে।’ এতে ব্যাংকের ঝুঁকি বাড়বে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঋণের সঙ্গে সব সময়ই ঝুঁকি থাকে। এটা শুধু ঋণের বিপরীতে রাখা স্থাবর সম্পত্তি বা বাড়ির ওপর নির্ভর করে না। ঋণগ্রহীতার মানসিকতা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও মনিটরিংয়ের ওপরও নির্ভর করে।’

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রায় ছয় বছর ধরে অস্থাবর সম্পত্তি আইন পাস হওয়া নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তিতর্ক হয়েছে। সব মিলিয়ে সরকার একটি সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে। তবে আইনটি দ্রুত পাস করতে হবে। কারণ এ আইন দেশের জন্য ভালো হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি বাড়বে।’

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা সময়ের সঙ্গে বদলাতে পারি না। সময়ের সঙ্গে যে সংস্কার দরকার, তারই অংশ হলো অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ প্রদানসংক্রান্ত আইন পাস। এটি নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করবে। অর্থনীতি গতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বাড়তি উৎস সৃষ্টি করবে।’

বেসিসের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বারের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ‘মেধাস্বত্ব মূল্যায়নের গাইডলাইন না থাকায় আমরা ঋণ পাই না। নতুন যে আইনটি হতে যাচ্ছে তাতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার তথা সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত