ছয়জনের নিয়োগ হয়েছে। এঁদের মধ্যে বাস্তবে দুজনের কোনো হদিস নেই। তাঁদের কেউ কোনোদিন দেখেননি। অথচ এ দুজনের নামে প্রতি মাসে বেতনের চেক হয়েছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেই বেতনের ৯ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগের তির মেয়রের দিকে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভায় এ ঘটনা ঘটেছে।

মেয়র মুক্তার আলী অবশ্য এখন সাময়িক বরখাস্ত। আছেন কারাগারে। এখন তাঁর নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি বেরিয়ে আসছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিনের নেতৃত্বে একটি দল গত বুধবার দিনভর পৌরসভা কার্যালয়ে এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালিয়েছে। তাতেই বেরিয়ে এসেছে দুজনের গায়েবি নিয়োগ এবং বেতনের টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা।

পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ও হিসাবরক্ষক রফিকুল ইসলাম দুদক কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। দুদক কর্মকর্তারা হিসাবরক্ষকের কাছ থেকে এ ব্যাপারে লিখিতও নিয়েছেন। সেখানে তিনি গায়েবি দুই কর্মচারীর নামে টাকা তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

হিসাবরক্ষক রফিকুল ইসলাম গতকাল জানান, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৯ হাজার টাকা বেতনে মাস্টার রোলে চতুর্থ শ্রেণির ছয়জন কর্মচারীর নিয়োগ হয়। এর মধ্যে চারজন বাস্তবে আছেন। অন্য দুজনের কোনো অস্তিত্ব নেই। গত জুলাইয়ে মেয়র গ্রেপ্তার হওয়ার আগপর্যন্ত ওই দুজনের নামে বেতন-ভাতা হয়েছে এবং এই টাকা নিয়েছেন মেয়র। টাকার পরিমাণ প্রায় ৯ লাখের মতো। মেয়র গ্রেপ্তার হওয়ার পর এটি বন্ধ হয়েছে।

এলাকার এক কলেজশিক্ষককে মারধরের জেরে গত ৬ জুলাই মেয়র মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। সেই রাতেই পুলিশ তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায়। বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় চারটি আগ্নেয়াস্ত্র, নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, ১৬ লাখ ও দেড় লাখ টাকার দুটি চেক, ৪৩ রাউন্ড তাজা গুলি, ব্যবহৃত গুলির চারটি খোসা, ইয়াবা ২০টি, গাঁজা ১০ গ্রাম ও ৭ গ্রাম হেরোইন। গ্রেপ্তার করা হয় মেয়রের স্ত্রী জেসমিন খাতুন, ভাতিজা সোহান ও শান্তকে। পরে ৯ জুলাই পাবনার ঈশ্বরদী থেকে মেয়র মুক্তার আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১১ জুলাই মুক্তার আলীকে মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১১ সাল থেকে পৌরসভায় সচিব নেই। সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট নিয়ম না থাকলেও তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার নিজস্ব কোনো জিপগাড়ি নেই, এর জন্য কোনো তেলও বরাদ্দ নেই। তাও জিপগাড়ির তেলের নামে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অসংখ্য প্রকল্প বাস্তবায়নে হয়েছে নয়ছয়। আর এসবে মুক্তার আলীর প্রধান সহযোগী ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সচিব সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়ম করিনি। অনিয়ম করতে বাধ্য করা হয়েছে।’

দুদকের জনসংযোগ শাখা জানিয়েছে, আড়ানী পৌরসভার দুর্নীতির তথ্য যাচাইয়ে এনফোর্সমেন্ট টিম সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রার সংগ্রহ করেছে। সব প্রকল্পের তালিকা, বরাদ্দের নথি এবং ব্যয় রেজিস্ট্রারের কপি দ্রুত সরবরাহের জন্যও বলা হয়েছে। এসব যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আড়ানী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কার্ত্তিক চন্দ্র হালদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুদক কিছু নথি নিয়ে গেছে। আরও কিছু চেয়েছে। আমরা সেগুলোও দেব। দুদকই নিজেদের মতো করে বিষয়টি দেখুক। আমি কোনো মন্তব্য করব না।’