লোনাপানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ, ধানের সর্বনাশ

এস এস শোহান, বাগেরহাট
Thumbnail image

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় পশুর, মরা পশুর মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলসহ ৫০টির বেশি নদনদী বা খাল রয়েছে। এসব নদীর পানি লোনা হওয়ায় বেশির ভাগ ধানিজমি অনাবাদি থাকত। দীর্ঘদিন পরে পেরিখালি ও রাজনগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এ বছর ইরি মৌসুমে কিছু নদী ও খাল আটকে মিঠাপানিতে ধান চাষ করেছিলেন কৃষক।

কিন্তু চিংড়ির পোনা ছাড়ার সময় হওয়ায় প্রভাবশালী ঘেরমালিকেরা খাল কেটে ধানের জমিতে লোনাপানি প্রবেশ করাচ্ছেন। চিংড়ি চাষের জন্য ওঠানো লোনাপানিতে এখন পচে যাচ্ছে কৃষকের কষ্টের ফসল। এর ফলে দুই শতাধিক কৃষক অন্তত অর্ধকোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

তবে ১৫-২০ দিন পরে এ পানি প্রবেশ করালে ধানের ক্ষতি হতো না বলে দাবি কৃষকের। ১৫ দিনের সময় চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সুফল পাননি হতদরিদ্র কৃষক।

গত বুধবার সকালে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে যাওয়া কালেখারবেড় এলাকার ঘরের খালের বাঁধ কেটে মৎস্যঘেরে পানি ঢুকিয়েছেন জুলু হাজিসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। লোনাপানিতে কৃষকের ধানের গোড়া এখন পচে যাচ্ছে। শুধু কালেখারবেড় নয়, রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের সিংগুরবুনিয়া, রনজয়পুর ও আড়ুয়াডাঙ্গা এলাকায়ও একইভাবে ধান চাষ করেছেন কৃষক। এসব এলাকার ঘেরমালিকেরা এখন খাল কেটে লোনাপানি ঢোকানোর পাঁয়তারা করছেন। কৃষকের কোনো আবেদন কর্ণপাত করছেন না তাঁরা।

কালেখারবেড় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সবিতা হাসলাদার বলেন, ‘গরু বিক্রি করে এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ছয় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ১৫-২০ দিন পর ধান ঘরে তুলতে পারতাম। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাঁধটি কেটে দেওয়ায় লোনাপানি ঢুকে ধানগাছ সব মরতে শুরু করেছে। অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু তাঁরা আমাদের কথা শোনেননি।’

একই গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেওয়ায় কৃষকেরা আগ্রহ নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। তখন লোনাপানি ঠেকাতে সবার সম্মতি নিয়ে কালেখার খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঘেরে লোনাপানি প্রবেশ করাতে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বাঁধটি কেটে দেন। বাঁধটি কাটার আগে চেয়ারম্যান, কৃষি অফিসার ও ইউএনওকে বিষয়টি জানিয়েছি। ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য মাত্র ১৫ দিন সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেননি।’

রাজনগর ইউনিয়নের সিংগুরবুনিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সবার অনুমতি ও সম্মতি নিয়ে খাল কেটে আমরা তিন গ্রামের শতাধিক কৃষক প্রায় ১০০ একর জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী শেখ মোতাহার আলী, মোকছেদ শেখসহ কিছু ঘেরমালিক একই এলাকার চামারখালী ও দোয়ানে খালের বাঁধ কেটে লোনাপানি প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছেন।’

রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতানা পারভিন বলেন, ধান চাষের জন্য সব কৃষক একমত হয়ে খাল আটকে ধান চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু ঘেরমালিক লোনাপানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ করতে চান। এ কারণে মাছচাষিরা বাঁধটি কেটে দিয়েছেন।

রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, ‘কাউকে সরকারি খাল আটকে রাখার অনুমতি দিতে পারি না। তবে ঘেরমালিকেরা ও কৃষকের মাঝে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা সমাধানের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সমাধান করবেন।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত