পাশবিকভাবে কিশোর হত্যা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৯: ৩৪

পরিবারের সঙ্গে আনন্দে ঈদ উদ্‌যাপন করতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিল কিশোর জাহিদুল ইসলাম। তার বয়স মাত্র ১৬ বছর। কিন্তু ঈদের এক দিন পর তার লাশ পাওয়া যায়। নৃশংসভাবে গলা কেটে জবাই করা হয় তাকে। শুধু কি তাই? দুই হাতের কবজির রগ কেটে দেওয়া হয় এবং দুই কানের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়। এতেই ক্ষান্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা, নির্মমভাবে বুকে-পেটে ছুরিকাঘাত করে ভুঁড়ি বের করে ফেলে! পরে লাশ পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনাটি যেকোনো বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেবে। আমরা কোন সময়ে এবং কোন সমাজে বাস করছি, তা একবার হলেও প্রশ্ন হিসেবে দাঁড় করাবে।

নিহত কিশোর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের দক্ষিণ জগৎসার গ্রামের অটোরিকশাচালক এলাছ মিয়ার ছেলে। এই বয়সে শিশু-কিশোরেরা স্কুলে পড়তে যায়। পড়াশোনার পাশাপাশি সহপাঠী, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলায় আনন্দে মেতে ওঠে। কিন্তু জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে এই বয়সে তাকে অর্থ উপার্জনের পথে নামতে হয়েছে। পরিবারে সচ্ছলতা আনতে বাবাকে সহযোগিতা করতে চার ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাইকে অর্থ উপার্জনের জন্য চট্টগ্রামের একটি বেকারিতে কাজ করতে যেতে হয়েছে। এত অল্প বয়সে শুধু পরিবারকে সাহায্য করার জন্য জাহিদুল পরিশ্রম করত। কিন্তু তাকে লাশ হতে হলো। কারা এবং কী কারণে তাকে হত্যা করেছে, তা জানা যায়নি।

একটি করে কিশোর খুন হওয়ার ঘটনা ঘটে আর আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই, কষ্ট পাই, ক্ষোভ প্রকাশ করি। কিন্তু এসব ঘটনার সুরাহা হয় না। অবস্থারও কোনো পরিবর্তন হয় না।

ঘটনার দু্‌ই দিন পরও হত্যাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখতে হয়।

মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকার পরেও দেশে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। শুধু আইন আর বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ ধরনের পাশবিক ঘটনা নির্মূল করা যাবে না। ব্যক্তির লোভ-লালসা, হিংসাত্মক প্রবণতা এ ধরনের ঘটনার জন্য অনেক ক্ষেত্রে দায়ী। তাই অন্যায়ভাবে হত্যার যে সংস্কৃতি চলমান, তা থেকে বেরিয়ে আসতে সামাজিক মূল্যবোধের চর্চা করা দরকার। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের যে পরিবেশ থাকার কথা ছিল আমাদের চারপাশে, নানা কারণেই আমরা সেগুলো থেকে দূরে সরে গেছি বা যাচ্ছি। চীনা একটি প্রবাদ রয়েছে—‘মাছের পচন শুরু হয় মাথা থেকে’। আমাদের সমাজের নানা ক্ষেত্রে যে অবক্ষয় দানা বেঁধেছে, তার শুরুটা হয়েছে মাথার দিকেই। মাথা যদি ঠিক করা যায়, তাহলে তার ইতিবাচক প্রভাব সব জায়গাতেই পড়বে।

তবে এসবের পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাও জরুরি। হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে হবে, এরপর বিচারের আওতায় এনে কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত