রেলের স্বপ্নে বারবার হোঁচট

খান রফিক, বরিশাল
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ১৬
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ২৯

রেল আসবে বরিশালে—দক্ষিণের মানুষের এই আশা হোঁচট খেয়েই চলেছে। রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের মেয়াদ আবারও বেড়েছে। এ নিয়ে ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও বরিশালে মাঠপর্যায়ে তেমন অগ্রগতি চোখে পড়েনি। যাচাই-বাছাই, মাপজোখ, মার্কিংই ছিল প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের কাজ। নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা তিন বছর আগের ওই ‘লাল দাগে’র ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় উন্নয়নকাজ এবং জমি কেনাবেচা অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এদিকে পদ্মা সেতু চালু হতে চললেও বরিশালে রেললাইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ থমকে যাওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পেরিয়ে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা প্রকল্প ২০১৬ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু পিছিয়ে এটি এখন ২০২২ সালের জুনে গিয়ে ঠেকেছে। তাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে বলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

নগরের ৩০, ২৮, ২২, ২৩ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পড়েছে সম্ভাব্য এই রেললাইনের আওতায়। এটি যাচাইয়ে ২০১৮ সালে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এলাকাগুলোতে মাপজোখ, দাগ কাটা, সভার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন। এই ৫ ওয়ার্ডের শত শত বাড়িঘর, জমি, গাছপালা চিহ্নিত করে লাল রং দিয়ে যান সমীক্ষাসংশ্লিষ্টরা।

নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফকির বাড়িসংলগ্ন নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য আমির আলী জানান, ২০১৮ সালের আগস্টে তাঁর বাসায় লাল চিহ্ন দেওয়া হয়। পার্শ্ববর্তী মাঝিবাড়িতে চলে গণশুনানি। তাঁরা ওই সময় জমি মেপে নম্বর বসিয়ে গেছে। শুনানিকালে আশ্বাস দিয়েছে যাঁদের বাড়িঘর, গাছপালা রেললাইনের আওতায় পড়বে, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। উন্নয়নের স্বার্থে তাঁরা রাজিও হয়েছেন। কিন্তু তিন বছর পেরোলেও আর খবর নেই। যে কারণে রেললাইনের আওতায় আসায় তাঁর মতো অনেক বাসিন্দা বাসাবাড়ির উন্নয়ন করতে পারছেন না।

২৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা শামিম আহমেদ বলেন, ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট তাঁর এলাকার মাঝিবাড়ি রেললাইন সমীক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্তরা গণশুনানি করেন। ওই সময় রেলপথ হওয়ার জন্য বাসাবাড়িতে লাল দাগ দিয়ে যায়। রেললাইন হলে তাঁরা আশ্বাসও দেন ক্ষতিপূরণের। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তার খবর নেই। যে কারণে ওই সব এলাকায় সব ধরনের উন্নয়ন ও জমি কেনাবেচা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এম সাইদুর রহমান জাকির জানান, তাঁর ওয়ার্ডসংলগ্ন দুর্গবাড়ির পোলের পাশ দিয়ে কয়েক একর জমি রেললাইন অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে। কয়েক বছর আগে যে জরিপ করা হয়েছিল, এর অগ্রগতি দেখছেন না। তিনি দ্রুত বরিশালে রেললাইন বাস্তবায়নের দাবি জানান।

প্রস্তাবিত রেলপথে ভাঙ্গায় মূল জংশন থেকে টেকেরহাট, মাদারীপুর, গৌরনদী, বরিশাল বিমানবন্দর, বরিশাল নগর, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, আমতলী, পায়রা বিমানবন্দর ও পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা স্টেশনে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী নগরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চৌহুতপুরে একটি জংশন হতে পারে। চৌহুতপুরের বাসিন্দা মরহুম খোকন চৌধুরীর ছেলে নয়ন চৌধুরী বলেন, তাঁদের পুরোনো বাড়িও রেললাইনের আওতায় পড়েছে। শুনেছেন নগরের মধ্যে এখানেই জংশন হতে পারে। কিন্তু এর কোনো অগ্রগতি না থাকায় হতাশ এলাকাবাসী।

ঢাকা-মাওয়া-বরিশাল-কুয়াকাটা রেললাইন প্রতিষ্ঠা সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, পদ্মা সেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গে রেললাইন দক্ষিণাঞ্চলে আসবে—এমনটাই প্রত্যাশা ছিল বৃহত্তর বরিশালবাসীর। এ নিয়ে তাঁরা জোরালো দাবিও তোলেন। সভা, সমাবেশ, স্মারকলিপি দেন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আগামী জুনে পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। কিন্তু রেললাইনের খবর নেই। কেবল লাল দাগ টেনেই সমীক্ষার নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। রেলের সুবিধা দেশের সব অঞ্চলের মানুষ পেলেও এখনো বরিশালবাসী বঞ্চিত। এই সমীক্ষার কাজ আরও ছয় মাস পিছিয়েছে। এমনটা হলে রেলের দেখা কবে মিলবে বরিশালে? আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় রেল নিয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষ। দ্রুত রেললাইন প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে এর জবাব রাজপথেই দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত