নির্মাণ শেষ হওয়ার তিন মাসেই দেবে গেছে সড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২২, ০৬: ৫৮
আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ১১: ৫৩

স্থানে স্থানে দেবে গেছে, খোয়া-সুরকি আর পিচ উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্তের। ভেঙে গেছে সড়কের দুই পাশ। নির্মাণের মাত্র তিন মাসের মধ্যে এ অবস্থা হয়েছে সাভার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বাড্ডা ভাটাপাড়া ও পোড়াবাড়ি মহল্লার একটি সড়কের।

চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করা এবং নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে সড়কটির এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

সাভার পৌরসভা সূত্র জানায়, প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াপাড়া লুৎফরের বাজার থেকে পোড়াবাড়ি মোড় পর্যন্ত নালাসহ আধা কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর মাস তিনেক আগে তা জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রমজান আহমেদের কার্যালয়ের সামনে সড়কের এক পাশে বড় দুটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই ভাঙা অংশ থেকে কয়েক শ ফুট দূরে বাড্ডা ঢিপ মেশিনের মোড় এলাকায় কাউসার উদ্দিনের বাড়ির পাশে সৃষ্টি হয়েছে সরু সুড়ঙ্গের। বৃষ্টির পানি ঢুকে সুড়ঙ্গ ক্রমশ বড় হচ্ছে। পাশেই রিকশা গ্যারেজের সামনে দেবে গেছে সড়ক। দেবে যাওয়া অংশে মাটি ফেলে যান চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। গ্যারেজ থেকে কিছু দূরে বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কের দুই পাশ ভেঙে গেছে। দেবে গেছে আরও কয়েকটি স্থান।

রিকশা গ্যারাজের ব্যবস্থাপক শংকর চন্দ্র দাস বলেন, ‘সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে তাঁর গ্যারাজের সামনের সড়কের কয়েক ফুট দেবে যায়। দেবে যাওয়া অংশের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। মাসখানেক আগে টিসিবির পণ্য নিয়ে যাওয়ার সময় একটি ট্রাক উল্টে গিয়ে কয়েকজন আহত হন।’ এর পরেও পৌর কর্তৃপক্ষ সড়ক সংস্কারে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা দেবে যাওয়া অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করে দিয়েছেন।

ইজিবাইক চালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দেবে যাওয়া অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করায় ছোট যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়ে গেছে। বৃষ্টি হলে কাদা-পানিতে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন রিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করতে পারে না।’

বাড্ডা ঢিপ মেশিনের মোড় এলাকার বাসিন্দা কাউসার উদ্দিন বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে বাসার সামনের সড়কে সুড়ঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ক্রমশ বড় হচ্ছে সুড়ঙ্গ।’

কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে ভেঙে যাওয়া অংশের পাশেই বাসার মিয়ার বাড়ি। তিনি জানান, দিন পনেরো আগে তাঁর বাড়ির সামনের সড়কে দুইটি সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই তা বড় গর্তে পরিণত হয়।

বাড্ডা এলাকার ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, বছর দেড় আগে নালাসহ সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। তিন মাস আগে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে সড়কটি বিভিন্ন স্থানে দেবে যেতে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন অংশে প্রথমে সুড়ঙ্গের মতো হয়ে পরে সেখানে বড় গর্ত হয়।

মনির হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘সড়কের নির্মাণকাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। কাজেও ছিল যথেষ্ট গাফিলতি। এ কারণেই সড়কটির আজ এ অবস্থা।’

১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রমজান আহমেদ বলেন, ‘নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেবে যায়, সৃষ্টি হয় বড় গর্তের। বিষয়টি আমি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইমামকে অবহিত করি। এর পরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’

নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইমাম বলেন, ‘সড়কটি দেবে যাওয়া ও ভেঙে যাওয়ার তথ্য আমাদের কাছে আছে। সড়কের নিচে পাইপ-নালা থাকায় পানি ঢুকে এ অবস্থা হতে পারে। ঠিকাদারদের জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। সড়ক মেরামত করে দেওয়ার পর টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত