ঝুঁকিতে বসতভিটা ও কৃষিজমি

রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ মে ২০২২, ০৯: ৪২

নরসিংদীর রায়পুরার ২৪টি ইউনিয়নের মধ্যে নদীবেষ্টিত ৪টি ইউনিয়নসহ আরও ৩টি ইউনিয়নে মেঘনার ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে বিলীন হতে শুরু করেছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলায় বর্ষার শুরু আগেই মল্লিকপুর, শাহপুর, বল্লবপুর এবং বড়ইতলা গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। মেঘনার ভাঙনে পলাশতলী ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রাম পুরোপুরি বিলীন হওয়ার পথে। এতে শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে যাওয়ার চিন্তায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

র্ষার আগেই মেঘনার পানি বেড়ে যাওয়ায় অব্যাহত ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে চরবেষ্টিত পলাশতলী, হাইরমাড়া, চরসুবুদ্দি ইউনিয়নের মল্লিকপুর, বড়ইতলা, শাহপুর, মহিষবের, বল্লবপুর গ্রামগুলো। দীর্ঘদিন ধরে মেঘনার অব্যাহত ভাঙনের ফলে খেলার মাঠ, মসজিদ, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক, ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে শতাধিক পরিবার।

গত বৃহস্পতিবার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরে মল্লিকপুর দক্ষিণপাড়া এলাকায় নদী ভাঙনে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিতরা আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের লোকদের বাড়িতে। আবার কেউ কেউ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে চলে গেছেন অন্য কোথাও। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীতে ড্রেজিং করার কারণে নদীর গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় পাড়ের অংশ ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবু তাহের মোল্লা জানান, গ্রামটিকে রক্ষা করতে বর্তমানে এলাকাটিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।

নদী ভাঙনের ক্ষতিগ্রস্ত বদু মিয়ার স্ত্রী হনুফা বেগম জানান, তাঁদের বাড়িটি কয়েক বছর আগে নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে তাঁরা কচু, শাকসবজি বিক্রি করে, স্বামী-স্ত্রী মিলে মানুষের বাড়িতে কাজ করে, কোনো রকমে দিনাতিপাত করছেন। ভুক্তভোগী হনুফা বেগম আরও বলেন, ‘নদীভাঙনের পর সরকারি বা অন্য কোথাও থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। নদীতে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার কারণে আজ নিঃস্ব হয়ে আছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুছ মিয়া জানান, নদীভাঙনে মল্লিকপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। এখানে আর বসবাস করা যাচ্ছে না। ভাঙন থেকে রক্ষ করতে এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে গ্রামকে রক্ষা করার দাবি জানান তিনি। ইউনুছ আরও জানান, মল্লিকপুরের স্থানীয় যুবকদের একটি সামাজিক সংগঠন প্রতি বছরই ভাঙনের শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছে।

আব্দুর রাশেদ (৭০) নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের ঘরবাড়ি আগেই নদী নিয়ে গেছে। নদীভাঙন থেকে এলাকাবাসী পরিত্রাণ চান।’

স্থানীয় বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘মল্লিকপুর গ্রামটি ঐতিহ্যবাহী। ১৯৭১ সালে এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল। সেই স্মৃতিফলকসহ মসজিদ, খেলার মাঠ, ঘরবাড়ি চোখের সামনে নদীগর্ভে চলে যেতে দেখেছি। নদীর বাঁক ড্রেজিং করে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে, বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে আমরা স্বস্তি পাব।’

পলাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জানান, গত ১০০ বছর ধরে নদীভাঙনের ফলে শাহপুর, মল্লিকপুরের হাজার হাজার একর জমি চলে গেছে। নদীভাঙন রোধ করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।’

পলাশতলি ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নদীভাঙন রোধ করতে উপজেলা সমন্বয়ক মিটিংয়ের রেজুলেশন সংসদ সদস্যের ডিউ লেটারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত ফলপ্রসূ পদক্ষেপ আসবে।’

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী বিজয় চন্দ্র শংকর  বলেন, ‘রায়পুরায় মেঘনা নদীর ভাঙন প্রবণ ৮টি পয়েন্ট চিন্তিত করা হয়েছে। চরমদূয়া, মির্জারচর, চাঁনপুরসহ বেশ কয়েকটিতে কাজ চলমান আছে। বাকি পয়েন্টগুলোতে স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে পাশের অপেক্ষায় হয়েছে। এতে এ অঞ্চলের সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত