ভিন্নপথে চলা সফল খামারি

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯: ০২

বীরগঞ্জের চৌপুকুরিয়া গ্রাম। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে। এ গ্রামে যেতে পথে পড়বে সিংড়া জাতীয় উদ্যান। এই সাধারণ গ্রামে আছে এক আদর্শ খামার।

বছর দশেক আগে শখের সংগীত প্রযোজনা ছেড়ে অন্য এক লড়াইয়ে নামেন চৌপুকুরিয়া গ্রামের যুবক রায়হান হোসেন রিন্টু। সে সময়ই অহনা এন্টারটেইনমেন্টের বদলে যাত্রা শুরু হয় অহনা অ্যাগ্রো ফার্মের। ৯ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এটি। শুরুর প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও অহনা অ্যাগ্রো ফার্ম এখন উত্তরবঙ্গের খামারিদের সামনে একটি মডেল হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।

ফার্মে খোলামেলা পরিবেশে গরু লালনপালন করা হয়। এ ফার্মের উৎপাদিত দুধ সম্পূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত। শুধু তা-ই নয়, এখানকার গরুকে কোনোভাবে হরমোনও দেওয়া হয় না। পশুপালনের স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলায় খামারটি জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

অহনা অ্যাগ্রো ফার্মকে এখন আদর্শ খামার বলা হলেও শুরুটা মসৃণ ছিল না। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় গাভি কিনে বারবার প্রতারিত হতে হয়েছে রায়হানকে। দীর্ঘ তিন বছরে আটটি গরুতে তাঁকে লোকসান গুনতে হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। পরে ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় সফল হন তিনি। তবে লোকসানের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা আর নিজের প্রচেষ্টার ফসল ঘরে তুলতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। ফার্মের বর্তমান অবস্থানে সন্তুষ্ট হলেও এখানেই থেমে থাকতে চান না রায়হান হোসেন। তাঁর পথ অনুসরণ করে আরও অনেকে এখন খামার গড়ে তুলেছেন। নিজে প্রতারিত হলেও অন্যদের ব্যাপারে সব সময় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। সেই সঙ্গে দেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ।

দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি রায়হান শুরু করেন প্রাকৃতিক জৈব সার উৎপাদন। ২০১৫ সালে শুরু করেন মাছ চাষ। ভেজালমুক্ত উৎপাদনের জন্য নিজের খামারেই ঘাস উৎপাদন শুরু করেন।

করোনাকালে আবারও বিপদে পড়েন তিনি। উৎপাদিত দুধ বিক্রির পরিমাণ কমে যাওয়ায় গরুর খাবার কেনা ও খামারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। শুরু করেন প্যাকেটজাত দুগ্ধ বিক্রি। করোনাকালে সরকারি ভ্রাম্যমাণ আমিষ বিক্রয় স্টলে মাত্র ৪০ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করে প্রশংসিত হন তিনি।

বর্তমানে রায়হান হোসেনের খামারে প্রতিদিন প্রায় ১০০ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। বীরগঞ্জ থেকে দুধ নিয়ে দিনাজপুর শহরে এনে বিক্রি করেন তিনি। শহরের সচেতন মানুষ রায়হানের খামারের দুধের বড় গ্রাহক। বর্তমানে অহনা অ্যাগ্রো খামারে দুধের পাশাপাশি ঘি, পনির ও মাখন উৎপাদিত হচ্ছে।

হাজারো ভেজালের ভিড়ে রায়হান দিনাজপুরে ভেজালমুক্ত দুধ সরবরাহের চেষ্টা করছেন। এ জন্য তাঁকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ। তিনি মনে করেন, এক দিনে পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাঁর মতো আরও অনেকের ছোট ছোট প্রচেষ্টায় দেশে একদিন ভেজালমুক্ত শতভাগ খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হবে।

সেই সঙ্গে রায়হান হোসেন মনে করেন, চাকরির পেছনে না ছুটে যুবকেরা খামার, পশুপালন, কৃষিকাজ, মাছ চাষসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী কাজে নিয়োজিত করে বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত