বিশুদ্ধ পানি কেনার হিড়িক

দাকোপ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ৪৮
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৩৭

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই দাকোপে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। বর্তমানে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে বিশুদ্ধ খোলা পানি অনেকে কিনে ব্যবহার করছেন। দোকানেও পড়েছে পানি কেনার হিড়িক।

অনেকে বাধ্য হয়ে ডোবা-নালার পানি খেয়ে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগে ভুগছেন। সরেজমিন জানা গেছে, তিনটি পৃথক দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত সুন্দরবনের কোলঘেঁষা এই উপজেলা। এর চার পাশে নদীতে লবণপানির প্রচণ্ড চাপ থাকায় খরা মৌসুমে সুপেয় পানির সংকট দেখা দেয়।

এবারও ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের সর্বত্রই সুপেয় পানীয়জলের সংকট দেখা দিয়েছে। দাকোপে বর্তমানে ৩৬ হাজার ৫৯৭টি পরিবারে প্রায় দুই লাখ মানুষ সুপেয় পানির জন্য হা-হুতাশ করছেন।

চায়ের দোকান, খাবার হোটেল, মিষ্টির দোকানে খরিদ্দারকে বিশুদ্ধ পানি দিতে না পেরে দোকানিরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। আবার এ অঞ্চলের প্রধান ফসল তরমুজখেতেও সেচ দিতে না পারায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন এলাকার কৃষক।

এখানে কোথাও গভীর নলকূপ সফল না হওয়ায় রয়েছে অগভীর নলকূপ, যা বেশির ভাগ অকেজো। আবার কোনো কোনো নলকূপের পানিতে লবণ, আর্সেনিক ও অতিরিক্ত আয়রন রয়েছে। যে কারণে খাওয়ার জন্য একমাত্র ব্যবস্থা পুকুরের পানি ফিল্টার করা। কিন্তু অপ্রতুল পুকুরগুলোতে পানিস্বল্পতার কারণে প্রায় সব ফিল্টারই অকেজো হয়ে পড়েছে।

এলাকার কয়েকজন সচ্ছল ব্যক্তি বটিয়াঘাটা ও খুলনাসহ বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কিনে জীবন ধারণ করছেন। আর মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে পুকুরের পানি সরাসরি পান করছেন। এতে অনেকেই ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে ভুগছেন।

গুনারী কালীবাড়ি এলাকার বিথিকা সরদার, কালী মণ্ডল, তৃপ্তি মণ্ডল, অঞ্জনা মণ্ডলসহ অনেকে জানান, দুই-আড়াই কিলোমিটার দূরের একটি পুকুর থেকে কষ্ট করে পানি এনে খেতে হচ্ছে।

আর যাদের টাকা-পয়সা আছে, তারা পানি কিনে খায়। তাদের মতো ওই এলাকার বহু গরিব মানুষ সরাসরি পুকুরের পানি পান করছে বলে জানান তিনি।

চালনা বাজার লঞ্চঘাট এলাকার হোটেল মালিক রমেশ রায় বলেন, ‘সংকটে খরিদ্দারদের পানি দিতে পারছি না। পুকুরের পানি খাবার অনুপযোগী হওয়ায় তা দিয়ে প্লেট ধোয়ার কাজ চলছে, আর খরিদ্দারদের ৫০ পয়সা করে লিটার পানি কিনে খেতে হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হক নিজামী জানান, প্রধানত বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। গত জানুয়ারি থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১২২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এ ছাড়া কয়েক শ মানুষ ভর্তি ছাড়াই সেবা নিয়েছেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে চালনা পৌর মেয়র সনৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, সুপেয় পানির সমস্যা নিরসনে একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের ও বাড়ি বাড়ি পাইপলাইনের কাজ চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগবে। কাজ শেষ হলেই পৌর এলাকায় সুপেয় পানির সংকট অনেকটা নিরসন হবে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত