এম এস রানা, ঢাকা
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরেই নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আভাস দিয়েছিলেন এই ঘটনার আদলে সিনেমা নির্মাণ হতে পারে। প্রাথমিক পরিকল্পনা শেষে ২০১৮ সালের শুরুতে ঢাকায় শুরু হয় ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার শুটিং। দেশে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে শুটিং ও সম্পাদনা শেষে সে বছরই সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া হয় সিনেমাটি। সেই থেকে দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে ‘শনিবার বিকেল’।
নির্মাতা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা জানান, সিনেমাটি তাঁদের ভালো লেগেছে, শিগগিরই সেন্সর ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ১০ জানুয়ারি হঠাৎ করেই সিনেমাটির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়। ১১ জানুয়ারি সিনেমাটি রিকল করে আবার দেখে সেন্সর বোর্ড। এবার সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করে ঢালাও কিছু অভিযোগ করে বোর্ড জানায়, সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে! পরবর্তী সময়ে নির্মাতা ও সংস্কৃতিকর্মী নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও মোরশেদুল ইসলামকে সিনেমাটি দেখান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তাঁরা এর মধ্যে এমন কোনো রাষ্ট্র বা ইসলামবিরোধী বিষয় খুঁজে পাননি।
নির্মাতা এবার আপিলের সিদ্ধান্ত জানালে একটি আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। ১৯ জানুয়ারি আপিলে ওঠে সিনেমাটি। নির্মাতা সরয়ার ফারুকীর অনুরোধে সিনেমাটি নিয়ে আপিল বিভাগে যুক্তি উপস্থাপন করেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ। যুক্তি-তর্ক সিনেমার পক্ষেই যায়। কিন্তু আপিল বিভাগের সদস্যরা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সেন্সর ছাড়পত্রের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন তাঁরা। সেই থেকে আজ অবধি আপিলের কোনো রায় কিংবা সেন্সর ছাড়পত্র দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
কী আছে সিনেমায়
৯০ মিনিটের একটি সিনেমা। পুরো সিনেমাটি টানা এক শটে তৈরি, কোনো কাট নেই। সেই হিসেবে এটা টেকনিক্যালি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। সিনেমার গল্পে একটা রেস্টুরেন্টের মধ্যে একদল জঙ্গি ঢুকে পড়ে। ওরা বিশেষ একজনের খোঁজে একের পর এক মানুষকে হত্যা করে।
জাজ মাল্টিমিডিয়া, ছবিয়াল ও ট্যানডেম প্রোডাকশন প্রযোজিত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১২টি দেশের স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পীরা। যার মধ্যে আছেন ইউরোপের এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক, ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি, বাংলাদেশের মামুনুর রশীদ, জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
সেন্সর বোর্ড
ওই সময় সেন্সর বোর্ডের সদস্য নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার সিনেমাটি দেখে গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘আমরা দ্রুতই সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি।’ কিন্তু দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর কেন সিনেমাটি ছাড়পত্র পেল না এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সিনেমাটির ব্যাপারে কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু কী হলো বুঝতে পারছি না। রাষ্ট্রের কিছু ব্যাপার থাকতে পারে। সিনেমার সাবজেক্ট নিয়ে প্রশাসনিক কোনো আপত্তি থাকলে আমাদের কিছু বলার নেই।’
আপিল বোর্ড
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আপিল করলে তাঁর অনুরোধে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মাতার পক্ষে আপিল বোর্ডে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, সেই আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন একজন কেবিনেট সেক্রেটারি এবং সেন্সর সার্টিফিকেট না দেওয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ছিলেন দুজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘আমি সিনেমাটিতে আপত্তিকর কিছু দেখিনি। বরং যে জঙ্গিদেরকে সফলভাবে শেখ হাসিনার সরকার দমন করতে পেরেছে, বাংলাদেশকে আবার একটি নিরাপদ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পেরেছে, এই সিনেমা বরং তার পক্ষে যায়। সরকার পক্ষ একটা অনুরোধ করেছিল আমাদের, সিনেমার শেষে একটা টেল অফ দিতে বলেছিল। তাতে বলা হবে, এই সিনেমার মতো একটা ঘটনা বাস্তবে ঘটেছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব সফলভাবে সেটা প্রতিহত করেছিল। ফারুকী এতে রাজি হয়েছিল।’
ছাড়পত্র কেন দেওয়া হচ্ছে না
বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, এতে এমন কিছু থাকতে পারে, যা মুক্তি পেলে দেশের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ হতে পারে! এমন আশঙ্কায় সিনেমাটির মুক্তি আটকে দেয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। বিষয়টি এখন আপিল বিভাগে রয়েছে। নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘আমার মনে হয়, সেন্সর বোর্ড ভাবছে এটি অনুমতি দিলে, এটি দেখালে হয়তো দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এটি দেখে জঙ্গিরা অনুপ্রাণিত হবে। বিদেশিরা ভাববে বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। আমার বক্তব্য হচ্ছে, এই সিনেমা মুক্তি পেলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। বিদেশিরা তো এই ঘটনার কথা জানেই। কিন্তু এটাকে আমরা শৈল্পিকভাবে প্রতিরোধ করেছিলাম কি না। এই সিনেমাটা তার একটা প্রমাণ। আমরা শৈল্পিকভাবে এ ধরনের ঘটনাকে প্রত্যাখ্যান করি, জঙ্গিবাদকে প্রত্যাখ্যান করি—এ কথাটাই ফারুকী তাঁর সিনেমায় বলতে চেয়েছে, দেখিয়েছে।’
সিনেমাটি কেন এখনো ছাড়পত্র পেল না, এমন প্রশ্নে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদিজা বেগম জানান, বিষয়টি তাঁর নলেজে নেই!
সংশ্লিষ্টরা যা বলেন
নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘বিদেশের স্ক্রিনে মানুষ বাংলাদেশের সিনেমা দেখছে, অথচ নিজের দেশে নিজেদের চলচ্চিত্র দেখতে পারছি না সেন্সরশিপের কারণে। এ সমস্যাগুলোর সমাধান হোক!’
নির্মাতা অনিমেষ আইচ বলেছেন, ‘লাইভে আত্মহত্যা দেখি, বিডিআর বিদ্রোহ দেখি, বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে দেখি। একটা সিনেমা দেখতে গেলেই হয়তো আমাদের ঘুমিয়ে থাকা গত জন্মে মৃত আত্মা জেগে উঠবে। সিনেমার সঙ্গে কেন এমন ফ্যাসিস্ট আচরণ?’
অভিনেত্রী জয়া আহসানের ভাষ্য, ‘নানা দেশে যখন সেন্সর বোর্ড নামের বালাইটা উঠে যাচ্ছে, আমাদের দেশে সেটা তখন ফাঁসির রজ্জুর মতো চলচ্চিত্রের গলায় চেপে বসছে।’
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যে সিনেমাগুলো চলছে, সেগুলো কি সেন্সর করা যাচ্ছে? এর চেয়ে ভয়াবহ সিনেমা তো অনলাইনে দেখে ফেলছি। তাহলে এই সেন্সর বোর্ডের কী মানে থাকল? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো সেন্সর বোর্ডকে বন্ধ করে দিয়েছেন, তিনি সার্টিফিকেশন বোর্ডের কথা বলেছেন। সার্টিফিকেশন বোর্ড সেন্সর করবে না, কোন সিনেমা কোন ক্যাটাগরির, কারা দেখতে পারবেন, কারা পারবেন না, সেই সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
পুরস্কার ও দর্শকের মতামত
বাংলাদেশে সিনেমাটি মুক্তি না পেলেও এরই মধ্যে মিউনিখ, মস্কো, সিডনি, বুসান, প্যারিসসহ বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হয়েছে। যার মধ্যে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে দুটি ইনডিপেনডেন্ট জুরি পুরস্কার জিতেছে।
কানাডায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব সাউথ এশিয়া। সরয়ার ফারুকী এখন সেখানে আছেন। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে প্রদর্শিত হয় ‘শনিবার বিকেল’। কানাডাপ্রবাসী সাংবাদিক সওগাত আলী সাগর জানান, মর্নিংসাইড সিনেপ্লেক্সে সব টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছিল আগেই। অসংখ্য প্রবাসী ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি দেখে দেশের সেন্সর বোর্ডে কেন আটকে আছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। হলভর্তি দর্শক সিনেমাটি দেখে পরিচালক ফারুকীকে নানা প্রশ্ন করেছেন, ফারুকী সেগুলোর জবাব দিয়েছেন।
নির্মাতা যা বললেন
যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের পর আপিল বোর্ড সন্তুষ্ট হয়েছিল। তাঁদের টেল অফের সিদ্ধান্তেও রাজি হয়েছি। কিন্তু এরপরেও কেন দীর্ঘ তিন বছরের ওপর সিনেমাটি সেন্সর ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না, সেটা এক রহস্য। এই দীর্ঘ সময় আমি অপেক্ষায় থেকেছি। যোগাযোগের চেষ্টা কেরছি কোনো লাভ হয়নি। কত রাত দুশ্চিন্তায় ঘুমোতে পর্যন্ত পারিনি। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার আদালতে যাব। আইনের সাহায্য নেব।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরেই নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আভাস দিয়েছিলেন এই ঘটনার আদলে সিনেমা নির্মাণ হতে পারে। প্রাথমিক পরিকল্পনা শেষে ২০১৮ সালের শুরুতে ঢাকায় শুরু হয় ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার শুটিং। দেশে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে শুটিং ও সম্পাদনা শেষে সে বছরই সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া হয় সিনেমাটি। সেই থেকে দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে ‘শনিবার বিকেল’।
নির্মাতা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা জানান, সিনেমাটি তাঁদের ভালো লেগেছে, শিগগিরই সেন্সর ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ১০ জানুয়ারি হঠাৎ করেই সিনেমাটির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়। ১১ জানুয়ারি সিনেমাটি রিকল করে আবার দেখে সেন্সর বোর্ড। এবার সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করে ঢালাও কিছু অভিযোগ করে বোর্ড জানায়, সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে! পরবর্তী সময়ে নির্মাতা ও সংস্কৃতিকর্মী নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও মোরশেদুল ইসলামকে সিনেমাটি দেখান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তাঁরা এর মধ্যে এমন কোনো রাষ্ট্র বা ইসলামবিরোধী বিষয় খুঁজে পাননি।
নির্মাতা এবার আপিলের সিদ্ধান্ত জানালে একটি আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। ১৯ জানুয়ারি আপিলে ওঠে সিনেমাটি। নির্মাতা সরয়ার ফারুকীর অনুরোধে সিনেমাটি নিয়ে আপিল বিভাগে যুক্তি উপস্থাপন করেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ। যুক্তি-তর্ক সিনেমার পক্ষেই যায়। কিন্তু আপিল বিভাগের সদস্যরা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সেন্সর ছাড়পত্রের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন তাঁরা। সেই থেকে আজ অবধি আপিলের কোনো রায় কিংবা সেন্সর ছাড়পত্র দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
কী আছে সিনেমায়
৯০ মিনিটের একটি সিনেমা। পুরো সিনেমাটি টানা এক শটে তৈরি, কোনো কাট নেই। সেই হিসেবে এটা টেকনিক্যালি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। সিনেমার গল্পে একটা রেস্টুরেন্টের মধ্যে একদল জঙ্গি ঢুকে পড়ে। ওরা বিশেষ একজনের খোঁজে একের পর এক মানুষকে হত্যা করে।
জাজ মাল্টিমিডিয়া, ছবিয়াল ও ট্যানডেম প্রোডাকশন প্রযোজিত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১২টি দেশের স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পীরা। যার মধ্যে আছেন ইউরোপের এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক, ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি, বাংলাদেশের মামুনুর রশীদ, জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
সেন্সর বোর্ড
ওই সময় সেন্সর বোর্ডের সদস্য নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার সিনেমাটি দেখে গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘আমরা দ্রুতই সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি।’ কিন্তু দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর কেন সিনেমাটি ছাড়পত্র পেল না এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সিনেমাটির ব্যাপারে কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু কী হলো বুঝতে পারছি না। রাষ্ট্রের কিছু ব্যাপার থাকতে পারে। সিনেমার সাবজেক্ট নিয়ে প্রশাসনিক কোনো আপত্তি থাকলে আমাদের কিছু বলার নেই।’
আপিল বোর্ড
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আপিল করলে তাঁর অনুরোধে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মাতার পক্ষে আপিল বোর্ডে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, সেই আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন একজন কেবিনেট সেক্রেটারি এবং সেন্সর সার্টিফিকেট না দেওয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ছিলেন দুজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘আমি সিনেমাটিতে আপত্তিকর কিছু দেখিনি। বরং যে জঙ্গিদেরকে সফলভাবে শেখ হাসিনার সরকার দমন করতে পেরেছে, বাংলাদেশকে আবার একটি নিরাপদ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পেরেছে, এই সিনেমা বরং তার পক্ষে যায়। সরকার পক্ষ একটা অনুরোধ করেছিল আমাদের, সিনেমার শেষে একটা টেল অফ দিতে বলেছিল। তাতে বলা হবে, এই সিনেমার মতো একটা ঘটনা বাস্তবে ঘটেছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব সফলভাবে সেটা প্রতিহত করেছিল। ফারুকী এতে রাজি হয়েছিল।’
ছাড়পত্র কেন দেওয়া হচ্ছে না
বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, এতে এমন কিছু থাকতে পারে, যা মুক্তি পেলে দেশের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ হতে পারে! এমন আশঙ্কায় সিনেমাটির মুক্তি আটকে দেয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। বিষয়টি এখন আপিল বিভাগে রয়েছে। নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘আমার মনে হয়, সেন্সর বোর্ড ভাবছে এটি অনুমতি দিলে, এটি দেখালে হয়তো দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এটি দেখে জঙ্গিরা অনুপ্রাণিত হবে। বিদেশিরা ভাববে বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। আমার বক্তব্য হচ্ছে, এই সিনেমা মুক্তি পেলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। বিদেশিরা তো এই ঘটনার কথা জানেই। কিন্তু এটাকে আমরা শৈল্পিকভাবে প্রতিরোধ করেছিলাম কি না। এই সিনেমাটা তার একটা প্রমাণ। আমরা শৈল্পিকভাবে এ ধরনের ঘটনাকে প্রত্যাখ্যান করি, জঙ্গিবাদকে প্রত্যাখ্যান করি—এ কথাটাই ফারুকী তাঁর সিনেমায় বলতে চেয়েছে, দেখিয়েছে।’
সিনেমাটি কেন এখনো ছাড়পত্র পেল না, এমন প্রশ্নে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদিজা বেগম জানান, বিষয়টি তাঁর নলেজে নেই!
সংশ্লিষ্টরা যা বলেন
নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘বিদেশের স্ক্রিনে মানুষ বাংলাদেশের সিনেমা দেখছে, অথচ নিজের দেশে নিজেদের চলচ্চিত্র দেখতে পারছি না সেন্সরশিপের কারণে। এ সমস্যাগুলোর সমাধান হোক!’
নির্মাতা অনিমেষ আইচ বলেছেন, ‘লাইভে আত্মহত্যা দেখি, বিডিআর বিদ্রোহ দেখি, বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে দেখি। একটা সিনেমা দেখতে গেলেই হয়তো আমাদের ঘুমিয়ে থাকা গত জন্মে মৃত আত্মা জেগে উঠবে। সিনেমার সঙ্গে কেন এমন ফ্যাসিস্ট আচরণ?’
অভিনেত্রী জয়া আহসানের ভাষ্য, ‘নানা দেশে যখন সেন্সর বোর্ড নামের বালাইটা উঠে যাচ্ছে, আমাদের দেশে সেটা তখন ফাঁসির রজ্জুর মতো চলচ্চিত্রের গলায় চেপে বসছে।’
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যে সিনেমাগুলো চলছে, সেগুলো কি সেন্সর করা যাচ্ছে? এর চেয়ে ভয়াবহ সিনেমা তো অনলাইনে দেখে ফেলছি। তাহলে এই সেন্সর বোর্ডের কী মানে থাকল? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো সেন্সর বোর্ডকে বন্ধ করে দিয়েছেন, তিনি সার্টিফিকেশন বোর্ডের কথা বলেছেন। সার্টিফিকেশন বোর্ড সেন্সর করবে না, কোন সিনেমা কোন ক্যাটাগরির, কারা দেখতে পারবেন, কারা পারবেন না, সেই সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
পুরস্কার ও দর্শকের মতামত
বাংলাদেশে সিনেমাটি মুক্তি না পেলেও এরই মধ্যে মিউনিখ, মস্কো, সিডনি, বুসান, প্যারিসসহ বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হয়েছে। যার মধ্যে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে দুটি ইনডিপেনডেন্ট জুরি পুরস্কার জিতেছে।
কানাডায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব সাউথ এশিয়া। সরয়ার ফারুকী এখন সেখানে আছেন। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে প্রদর্শিত হয় ‘শনিবার বিকেল’। কানাডাপ্রবাসী সাংবাদিক সওগাত আলী সাগর জানান, মর্নিংসাইড সিনেপ্লেক্সে সব টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছিল আগেই। অসংখ্য প্রবাসী ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি দেখে দেশের সেন্সর বোর্ডে কেন আটকে আছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। হলভর্তি দর্শক সিনেমাটি দেখে পরিচালক ফারুকীকে নানা প্রশ্ন করেছেন, ফারুকী সেগুলোর জবাব দিয়েছেন।
নির্মাতা যা বললেন
যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের পর আপিল বোর্ড সন্তুষ্ট হয়েছিল। তাঁদের টেল অফের সিদ্ধান্তেও রাজি হয়েছি। কিন্তু এরপরেও কেন দীর্ঘ তিন বছরের ওপর সিনেমাটি সেন্সর ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না, সেটা এক রহস্য। এই দীর্ঘ সময় আমি অপেক্ষায় থেকেছি। যোগাযোগের চেষ্টা কেরছি কোনো লাভ হয়নি। কত রাত দুশ্চিন্তায় ঘুমোতে পর্যন্ত পারিনি। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার আদালতে যাব। আইনের সাহায্য নেব।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৪ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৮ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৮ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৮ দিন আগে