আগাম খেজুরগাছ কাটার ধুম

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ০৭: ৪৪
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৫৫

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য আগাম গাছ কেটে পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত গাছিরা। উপজেলায় এখন দিনে তাপ ও রাতের শেষ ভাগে শীত অনুভূত হওয়ায় গাছিরা রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের মাথা ভালো করে পরিষ্কার করতে হয়। এরপর সাদা অংশ কেটে রোদে শুকিয়ে আবারও কেটে ছোট-বড় পাত্র বেঁধে রস সংগ্রহ করা হয়। এ জন্য খেজুর গাছে উঠা ঝুঁকি থাকায় রশি বেঁধে গাছের রস সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন বিকেলে ছোট-বড় পাত্র গাছে বেঁধে সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। এ রস কেউ কেউ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার কেউ রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেন।

উপজেলার পানিমাছকুটি গ্রামের জামাল উদ্দিন গাছি বলেন, যেভাবে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় খেজুর আর গাছ থাকবে না। কুটি চন্দ্রখানা গ্ৰামের হারাণ গাছি বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতে আমরা রস সংগ্রহ করি। এই রস কেউ বিক্রি করেন আবার কেউ গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মৌসুমে প্রতিটি খেজুর গাছ আড়াই থেকে ৩০০ টাকায় ভাড়া হয়। মৌসুমে একটা খেজুর গাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি খেজুর রস পাওয়া যায়।

ফুলমতি গ্রামের রহমত আলী বলেন, শীতের সকালে খেজুরের রস খাওয়ার মজাই আলাদা।

রামপ্রসাদ গ্ৰামের আমির আলী গাজি বলেন, মৌসুমে ৫০ থেকে ১০০ গাছ কেটে রস সংগ্রহ করি। কিন্তু বর্তমানে ইটভাটার জ্বালানির জন্য খেজুর গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।

উপজেলার কুরুষাফেরুষা গ্রামের গাছি আমিনুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলাম জানান, এলাকায় আগের মতো আর খেজুর গাছ নেই। অন্যদিকে আগের চেয়ে গাছে রস কমে গেছে। ফলে স্থানীয় গাছিরা রস আহরণের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এ বছর তাঁরা প্রত্যেকেই ৩০ থেকে ৪০টি খেজুর গাছের ঠিকা নিয়েছেন। তাঁরা গাছ পরিস্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

ফুলবাড়ী জছিমিয়া সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক একরামুল হক জানান, আগে শীত মৌসুমে গ্রামে সকালের পরিবেশে নলেন গুড়-পাটালির ঘ্রাণে মৌ মৌ করত। কিন্তু এখন আর সেসব দিন নেই। শীতের সময় শুধু গ্রামই নয় শহরেও খেজুরের রস-গুড় দিয়ে তৈরি হয় হরেক রকমের পিঠা-পুলি, ক্ষীর ও পায়েস। ফলে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় গুড়ের দামও অনেক বেশি।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আসফিয়া শারমিন জানান, উপজেলার ছয় ইউনিয়নে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। ইতিমধ্যে আগাম গাছ কাটায় ব্যস্ত গাছিরা। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান গড়ে তোলা হলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। কারণ খেজুর গাছের জন্য বাড়তি কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের বাড়ির আশপাশে ও সড়কের ধারে খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত