থাইরয়েডজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণযোগ্য

ডা. মির্জা শরীফুজ্জামান
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৪, ০৮: ৫৩

নারীরা পুরুষের তুলনায় প্রায় ৪ গুণ বেশি থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ থাইরয়েডের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই জানে না যে তাদের থাইরয়েডজনিত সমস্যা রয়েছে। ফলে চিকিৎসা না হওয়ায় তৈরি হচ্ছে নানা রকম জটিলতা।

থাইরয়েড গ্রন্থি গলার সামনের দিকে অবস্থিত প্রজাপতি আকৃতির হরমোন গ্রন্থি। এটি থাইরক্সিন ও ট্রাই আয়োডো থাইরোনিন নামের হরমোন তৈরি করে। এই হরমোনগুলো শরীরের যাবতীয় বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। তাই শরীরের প্রায় সব অঙ্গের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এই গ্রন্থি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

থাইরয়েডজনিত রোগ
থাইরয়েড গ্রন্থিতে ত্রুটি দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য-সমস্যা তৈরি হতে পারে। সম্মিলিতভাবে এগুলো থাইরয়েড রোগ নামে পরিচিত।

হরমোন তৈরি ও রক্তে এর পরিমাণসংক্রান্ত

  • হাইপোথাইরয়েডিজম: থাইরয়েড গ্রন্থি যথেষ্ট থাইরয়েড হরমোন তৈরি না করলে এ অবস্থা তৈরি হয়।
  • হাইপারথাইরয়েডিজম: থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদনে এ অবস্থা তৈরি হয়।

গ্রন্থির গঠন ও আকৃতিবিষয়ক

থাইরয়েড নোডুলস: এগুলো থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা পিণ্ড। যদিও বেশির ভাগ নোডুলস বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিছু নোডুলসে ক্যানসার হতে পারে।

অন্যান্য
প্রদাহজনিত রোগ, জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ হাইপো থাইরয়েড, দেড় থেকে ২ শতাংশ হাইপার থাইরয়েডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। এ ছাড়া প্রায় ৭ শতাংশ নারী ও দেড় শতাংশ পুরুষ গলগণ্ড রোগে আক্রান্ত। 

 থাইরয়েড রোগের কারণ

  • অটোইমিউনিটি
  • আয়োডিনের ঘাটতি
  • জেনেটিকস
  • রেডিয়েশন থেরাপি
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

থাইরয়েড রোগের লক্ষণ
সাধারণত কারণ অনুযায়ী এই রোগের লক্ষণ ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। 

  • হাইপোথাইরয়েড: ক্লান্তি, ওজন বৃদ্ধি, ঠান্ডা সংবেদনশীলতা, বিষণ্নতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, গায়ে ব্যথা, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, হাত-পা ফুলে যাওয়া, মেয়েদের মাসিকের সমস্যা, বন্ধ্যা ইত্যাদি। শিশুদের ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিকভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া, স্কুলে পারফরম্যান্স কমে যাওয়া ইত্যাদি।
  • হাইপারথাইরয়েড: ওজন কমে যাওয়া, দ্রুত হৃৎস্পন্দন, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, ঘন ঘন পায়খানা হওয়া, উদ্বেগ, তাপ সংবেদনশীলতা, চোখ বড় হয়ে যাওয়া, মেয়েদের মাসিকের সমস্যা বা বন্ধ্যা ইত্যাদি।
  • গলগণ্ড: লক্ষণগুলোর মধ্যে গলায় দৃশ্যমান পিণ্ড ও গিলতে অসুবিধা হওয়া।
  • থাইরয়েডাইটিস: ঘাড়ের ব্যথা, ফোলা ভাব এবং থাইরয়েডের অকার্যকারিতা ইত্যাদি। 

রোগনির্ণয়

থাইরয়েড রোগ নির্ণয়ের জন্য সাধারণত রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তের হরমোন লেভেল পরীক্ষা করা হয়। এগুলো এফটিথ্রি, এফটিফোর ও টিএইচ নামে পরিচিত।

এ ছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অটো অ্যান্টিবডি, থাইরয়েড সিন্টিগ্রাফি, আলট্রাসনোগ্রাম ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। আর ক্যানসার সন্দেহ হলে এফএনএসি পরীক্ষা করা হয়।

চিকিৎসা
থাইরয়েড অবস্থার ধরন ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারিত হয়। হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় সাধারণত লেভোথাইরক্সিনের মতো সিনথেটিক থাইরয়েড হরমোন ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসক রোগের তীব্রতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডোজ নির্ধারণ করবেন। হাইপার থাইরয়েড রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টি-থাইরয়েড ড্রাগ, রেডিও আয়োডিন থেরাপি অথবা অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। থাইরয়েড নোডুলসের ক্ষেত্রে চিকিৎসা নোডুলসের আকার ও বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে। পর্যবেক্ষণ, থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণের ওষুধ বা অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে। থাইরয়েডাইটিসের চিকিৎসার লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং এতে প্রদাহবিরোধী ওষুধ বা হরমোন থেরাপি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

বিশেষ অবস্থায় থাইরয়েড রোগীর চিকিৎসা 
গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডজনিত রোগ মা ও শিশু দুজনকে ঝুঁকিতে ফেলে। ফলে গর্ভপাত বা ভূমিষ্ঠ শিশুর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এ জন্য থাইরয়েডের রোগীরা গর্ভধারণের আগে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট তথা হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং গর্ভাবস্থায় নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকুন।শিশুর জন্মের পর থাইরয়েড পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

ডা. মির্জা শরীফুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত