ডা. এম বি জামান
৬ সেপ্টেম্বর ডায়াবেটিক সেবা দিবস। জাতীয় অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিমের মৃত্যু দিবস স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ডায়াবেটিক হাসপাতালগুলোতে ৬ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালন করা হয়। এদিন রোগীদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা, কীভাবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সে বিষয়ে রোগীদের জানানো হয়।
প্রথম থেকে নতুন করে রোগটিকে জানার চেষ্টা করা যাক এবার ডায়াবেটিক সেবা দিবসে। প্রথমত, ডায়াবেটিস একধরনের প্যানক্রিয়াসিস বিপাকজনিত রোগ। আমাদের প্যানক্রিয়াসিস যখন ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা করলেও প্রয়োজনীয় পরিমাণ জোগান দিতে পারে না, তখনই ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ডায়াবেটিসকে সাধারণত টাইপ-১ ও টাইপ-২ নামে অভিহিত করা হয়। এর বাইরেও প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস আছে। ডায়াবেটিক রোগীদের তিনটি ডি পালন করতে বলা হয়। প্রথম ডি ডায়েট অর্থাৎ খাবারদাবার, দ্বিতীয় ডি ডিসিপ্লিন বা নিয়মশৃঙ্খলা এবং তৃতীয় ডি ড্রাগ অর্থাৎ ওষুধপত্র। এই তিন ডি নিয়েই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের জন্যও এই তিন ডি দায়ী।
প্রথম ডি
ডায়াবেটিস হলে চিনি, গুড়, কামরাঙা ছাড়া সব খাবারই খাওয়া যাবে। খেতে হবে বারবার, তবে অল্প পরিমাণে। মুড়ি, চিড়া, খই, ডায়াবেটিক বিস্কুট, নুডলস খাওয়া যাবে। তবে মিষ্টি খাবার হিসেবে পরিচিত সুজি, সেমাই, সাবুতে চিনি দেওয়া যাবে না। চিনির বিকল্প জিরো ক্যালরি ট্যাবলেট দিয়ে মিষ্টিজাতীয় খাবার তৈরি করে খাওয়া যাবে। দুধ ও ডিম খাওয়া যাবে, মাছ-মাংস খাওয়া যাবে। তবে প্রেশার থাকলে দুধ, ডিম, মাংস, মাছ কম খেতে হবে। সকাল ৮টা, বেলা ১১টা, বেলা ২টা, বিকাল ৫টা, রাত ৮টা ও শোওয়ার সময় ১১টায় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সকালে ৩টি রুটি, দুপুরে চায়ের কাপে তিন কাপ ভাত খাওয়া যাবে। তবে রুটি খেতে সমস্যা হলে তিন বেলাই ভাত অল্প করে খাওয়া যাবে।
দ্বিতীয় ডি
এবার দ্বিতীয় ডি, অর্থাৎ ডিসিপ্লিন। আমাদের সকাল-বিকাল দুই বেলাই ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট করে হাঁটতে হবে। সাইক্লিং, সাঁতারকাটা, দড়ি লাফ করা যাবে। তবে হার্টের রোগী অথবা যাঁদের বয়স ৪৫ বা ৫০-এর ওপরে, তাঁদের দড়ি লাফ বা বুকডন না করাই ভালো।
সূর্য ওঠার পর হাঁটার অভ্যাস করা ভালো। সকালে হাঁটতে বের হওয়ার আগে প্রেশারের ওষুধ খেয়ে (যদি প্রেশার থাকে) হালকা নাশতা করতে হবে। তবে হাঁটার সময় খেয়াল রাখতে হবে হার্টবিট বাড়ছে কি না, পালস রেট বাড়ছে কি না, শরীর ঘামছে কি না। যদি এর কোনোটি দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে আপনার কায়িক শ্রম হয়েছে।
তৃতীয় ডি
এবার তৃতীয় ডি, অর্থাৎ ওষুধপত্রের কথা। মুখে খাওয়ার ওষুধ, ইনসুলিন, পাম্প ইনসুলিন বা প্যাচ ইনজেকশন। প্রথমেই যাঁদের ডায়াবেটিস খালি পেটে ৬ এবং খাওয়ার পর ১০-এর ওপরে থাকে, তাদের খাবারদাবার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হাঁটতে বলা হয়। যদি ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তবে তাঁদের অল্প পাওয়ারের ওষুধ দেওয়া হয়। তবে হ্যাঁ, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে মুখের ওষুধ খাওয়া যায় না। অনাগত শিশুর সুস্থতার জন্য তাঁদের প্রথম থেকেই ইনসুলিন নিতে হবে। যদি খাওয়ার পর ডায়াবেটিস ১৬ থাকে, তবে ইনসুলিন নেওয়া ভালো। তাতে তাঁদের হার্ট, কিডনি, চোখ ভালো থাকবে।
খালি পেটে ডায়াবেটিস ৬.১ থাকতে হবে। খাওয়ার পর ৭.৮ থাকতে হবে। এর বেশি হলে ডায়াবেটিস বলা হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রথম অবস্থাতেই ইনসুলিন নিলে ভালো হয়। খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোগীকেই উদ্যোগী হতে হবে। কারণ মুখ ও পা নিয়ন্ত্রণে থাকলে তবেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। তখন দেখা যাবে ওষুধের খুব বেশি প্রয়োজন হবে না।
ডায়াবেটিস বেশি হলে পানির পিপাসা লাগবে এবং প্রস্রাব বেশি হবে। ডায়াবেটিস কম হলে শরীর থেকে পানি বের হবে এবং শরীর কাঁপতে থাকবে। তাই কম হলে একটু মিষ্টি খেতে হবে এবং চিকিৎসকের সহযোগিতা নিতে হবে।
লেখক : সিনিয়র মেডিকেল অফিসার, খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল
আরও পড়ুন:
৬ সেপ্টেম্বর ডায়াবেটিক সেবা দিবস। জাতীয় অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিমের মৃত্যু দিবস স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ডায়াবেটিক হাসপাতালগুলোতে ৬ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালন করা হয়। এদিন রোগীদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা, কীভাবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সে বিষয়ে রোগীদের জানানো হয়।
প্রথম থেকে নতুন করে রোগটিকে জানার চেষ্টা করা যাক এবার ডায়াবেটিক সেবা দিবসে। প্রথমত, ডায়াবেটিস একধরনের প্যানক্রিয়াসিস বিপাকজনিত রোগ। আমাদের প্যানক্রিয়াসিস যখন ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা করলেও প্রয়োজনীয় পরিমাণ জোগান দিতে পারে না, তখনই ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ডায়াবেটিসকে সাধারণত টাইপ-১ ও টাইপ-২ নামে অভিহিত করা হয়। এর বাইরেও প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস আছে। ডায়াবেটিক রোগীদের তিনটি ডি পালন করতে বলা হয়। প্রথম ডি ডায়েট অর্থাৎ খাবারদাবার, দ্বিতীয় ডি ডিসিপ্লিন বা নিয়মশৃঙ্খলা এবং তৃতীয় ডি ড্রাগ অর্থাৎ ওষুধপত্র। এই তিন ডি নিয়েই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের জন্যও এই তিন ডি দায়ী।
প্রথম ডি
ডায়াবেটিস হলে চিনি, গুড়, কামরাঙা ছাড়া সব খাবারই খাওয়া যাবে। খেতে হবে বারবার, তবে অল্প পরিমাণে। মুড়ি, চিড়া, খই, ডায়াবেটিক বিস্কুট, নুডলস খাওয়া যাবে। তবে মিষ্টি খাবার হিসেবে পরিচিত সুজি, সেমাই, সাবুতে চিনি দেওয়া যাবে না। চিনির বিকল্প জিরো ক্যালরি ট্যাবলেট দিয়ে মিষ্টিজাতীয় খাবার তৈরি করে খাওয়া যাবে। দুধ ও ডিম খাওয়া যাবে, মাছ-মাংস খাওয়া যাবে। তবে প্রেশার থাকলে দুধ, ডিম, মাংস, মাছ কম খেতে হবে। সকাল ৮টা, বেলা ১১টা, বেলা ২টা, বিকাল ৫টা, রাত ৮টা ও শোওয়ার সময় ১১টায় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সকালে ৩টি রুটি, দুপুরে চায়ের কাপে তিন কাপ ভাত খাওয়া যাবে। তবে রুটি খেতে সমস্যা হলে তিন বেলাই ভাত অল্প করে খাওয়া যাবে।
দ্বিতীয় ডি
এবার দ্বিতীয় ডি, অর্থাৎ ডিসিপ্লিন। আমাদের সকাল-বিকাল দুই বেলাই ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট করে হাঁটতে হবে। সাইক্লিং, সাঁতারকাটা, দড়ি লাফ করা যাবে। তবে হার্টের রোগী অথবা যাঁদের বয়স ৪৫ বা ৫০-এর ওপরে, তাঁদের দড়ি লাফ বা বুকডন না করাই ভালো।
সূর্য ওঠার পর হাঁটার অভ্যাস করা ভালো। সকালে হাঁটতে বের হওয়ার আগে প্রেশারের ওষুধ খেয়ে (যদি প্রেশার থাকে) হালকা নাশতা করতে হবে। তবে হাঁটার সময় খেয়াল রাখতে হবে হার্টবিট বাড়ছে কি না, পালস রেট বাড়ছে কি না, শরীর ঘামছে কি না। যদি এর কোনোটি দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে আপনার কায়িক শ্রম হয়েছে।
তৃতীয় ডি
এবার তৃতীয় ডি, অর্থাৎ ওষুধপত্রের কথা। মুখে খাওয়ার ওষুধ, ইনসুলিন, পাম্প ইনসুলিন বা প্যাচ ইনজেকশন। প্রথমেই যাঁদের ডায়াবেটিস খালি পেটে ৬ এবং খাওয়ার পর ১০-এর ওপরে থাকে, তাদের খাবারদাবার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হাঁটতে বলা হয়। যদি ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তবে তাঁদের অল্প পাওয়ারের ওষুধ দেওয়া হয়। তবে হ্যাঁ, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে মুখের ওষুধ খাওয়া যায় না। অনাগত শিশুর সুস্থতার জন্য তাঁদের প্রথম থেকেই ইনসুলিন নিতে হবে। যদি খাওয়ার পর ডায়াবেটিস ১৬ থাকে, তবে ইনসুলিন নেওয়া ভালো। তাতে তাঁদের হার্ট, কিডনি, চোখ ভালো থাকবে।
খালি পেটে ডায়াবেটিস ৬.১ থাকতে হবে। খাওয়ার পর ৭.৮ থাকতে হবে। এর বেশি হলে ডায়াবেটিস বলা হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রথম অবস্থাতেই ইনসুলিন নিলে ভালো হয়। খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোগীকেই উদ্যোগী হতে হবে। কারণ মুখ ও পা নিয়ন্ত্রণে থাকলে তবেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। তখন দেখা যাবে ওষুধের খুব বেশি প্রয়োজন হবে না।
ডায়াবেটিস বেশি হলে পানির পিপাসা লাগবে এবং প্রস্রাব বেশি হবে। ডায়াবেটিস কম হলে শরীর থেকে পানি বের হবে এবং শরীর কাঁপতে থাকবে। তাই কম হলে একটু মিষ্টি খেতে হবে এবং চিকিৎসকের সহযোগিতা নিতে হবে।
লেখক : সিনিয়র মেডিকেল অফিসার, খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল
আরও পড়ুন:
রোগে-শোকে মানুষকে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু ওষুধ খেতে হয়। নিত্যপণ্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে যেখানে সাধারণ মানুষের তিনবেলা আহারের জোগান দেওয়াই কষ্টকর, সেখানে জীবন রক্ষার জন্য দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ওধুষ কিনতে গিয়ে জীবন আরও ওষ্ঠাগত। দেশে এখন নিম্নআয়ের ৪০ শতাংশ মানুষের মোট আয়ের ২০ শতাংশ খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতেই।
১ দিন আগেদেশে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় ও ডাক্তারের ওপর আস্থা না থাকায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে প্রতিবছর দেশের মানুষ ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। স্বাস্থ্যেসেবার উন্নয়ন না হলে এর পরিমাণ দিন দিন আরও বাড়বে।
১ দিন আগেআমাদের দেশে শীত উপভোগ্য মৌসুম। কিন্তু অনেকের ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা যাদের আছে, তাদের এই মৌসুমে কষ্ট বেড়ে যায়।
২ দিন আগেত্বক অভ্যন্তরীণ অঙ্গের সংক্রমণ এবং যেকোনো ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই এর যত্নে বিশেষ মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। শীতকালে ত্বক শুষ্ক ও টানটান হলে দুশ্চিন্তা করবেন না। চুলকানি হলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক তেল কমিয়ে দেয়।
২ দিন আগে