সতর্ক থাকুন ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি থেকে

ডা. মো. বখতিয়ার
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭: ১৫

ডায়াবেটিস অতিপরিচিত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত অনেকেই ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্ত হয়। শরীরের প্রায় সব অঙ্গের ওপর ডায়াবেটিসের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। স্নায়ুর ওপর অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয়। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হলো স্নায়ুর ওপর ডায়াবেটিসের প্রতিক্রিয়াজনিত প্রভাব। অনেক সময় অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আক্রান্তের ১০ থেকে ১৫ বছর সময়ের মধ্যে এই রোগ হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ বছরের মধ্যেই হতে পারে। এর প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। ধারণা করা হয়, রক্তে গ্লুকোজের আধিক্যের কারণে এমনটা হয়।

লক্ষণ

  • হাত-পা ঝিনঝিন করা।
  • পায়ের শক্তি কমে যাওয়া।
  • মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে থাকা।
  • হাত-পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া অনুভব করা।
  • হাত-পায়ের শেষভাগে অনুভূতি কমে যাওয়া। কেটে গেলে রক্ত বের হলেও বলতে না পারা।

চিকিৎসা 
কঠোরভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা এই রোগ থেকে মুক্ত থাকার প্রধান কাজ। নিউরোপ্যাথির উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে হাত ও পায়ের মাংসপেশির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখা যায় এ রোগে। রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

করণীয় রক্তের অতিরিক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে 
হবে। মনে রাখতে হবে, রক্তে উচ্চ শর্করা থাকলে তা স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। খাবারের তালিকায় বেশি রাখতে হবে ফলমূল, শাকসবজি, কম চর্বিযুক্ত দুধ, শস্যদানা। এরপর থাকবে মাছ, বাদাম, অল্প পরিমাণ মাংস। ভাত, চিড়া-মুড়ি এসব খাবার থাকবে একেবারে কম। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কমাতে হবে মানসিক চাপ। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ করতে প্রতিদিন কিছু সময় রোদে থাকতে হবে। ব্যথা কমাতে উষ্ণ পানিতে পা ডুবিয়ে রাখতে হবে। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, ব্যথা কমবে। 

রোগীর পায়ের যত্ন পায়ে যাতে অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা 
কিছু বা আঘাত না লাগে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পায়ের জুতা নির্বাচনে সব ধরনের সাবধানতা মেনে চলতে হবে, 
যাতে জুতা কোনো ক্ষত সৃষ্টি না করে। এ ধরনের রোগীদের ধূমপান করা নিষেধ। ধূমপান রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়। এতে পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া ও পচন ধরার আশঙ্কা বেড়ে যায়। একবার পচন ধরলে অনেক সময় পা কেটেও ফেলতে হয়। তাই ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নিয়ে অবহেলা করা যাবে না। 

ব্যায়ামের উপকারিতা
ব্যায়াম ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ফলে শরীরে অল্প যা ইনসুলিন তৈরি হয় তাতেই রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। এতে বাড়তি ওষুধের দরকার না-ও পড়তে পারে। ব্যায়ামের ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এটি রক্তের ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। তা ছাড়া ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং দুশ্চিন্তা দূর করে মন প্রফুল্ল রাখে। হাড় ও হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী করে। জয়েন্টগুলোকে সচল রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদদোজা মডার্ন হাসপাতাল, গাজীপুর

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত