ডেঙ্গু হলে যা করবেন, যা করবেন না

ডা. নূরজাহান বেগম 
Thumbnail image

প্রতিবছরের মতো আবারও শুরু হয়েছে ডেঙ্গু-আতঙ্ক। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও এর ভয়াবহতা কমেনি; বরং প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

ভাইরাসবাহিত ডেঙ্গু রোগ মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয় এডিস মশার কামড়ে। ভাইরাস শরীরে প্রবেশের সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা যায়। তীব্র জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখের চারপাশে কিংবা পুরো শরীরে ব্যথা থাকে। সেই সঙ্গে অনেকের থাকে বমি কিংবা বমিভাব, র‍্যাশ। বর্তমানে ডেঙ্গুর উপসর্গের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক শিশুর জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানা, এমনকি সর্দি-কাশিও দেখা যাচ্ছে। আবার অনেকের জ্বরের মাত্রা তেমন তীব্র হচ্ছে না।

তাই এ সময় জ্বর হলে ডেঙ্গু আছে কি না, সেটা জানার জন্য জ্বরের প্রথম তিন দিনের মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু এনএস১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসকেরা চাইলে সঙ্গে সিবিসি, এসজিপিটি, সিআরপি পরীক্ষাও করিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া রক্তের গ্রুপ জানা না থাকলে সেটিও করে নিতে হবে।

অনেক সময় ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় সেটা ধরা পড়ে না। সে ক্ষেত্রে আবারও পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের রোগীরা পর্যায়ক্রমে ফেব্রাইল, ক্রিটিক্যাল এবং কনভালেসেন্ট তিনটি ফেইজের মধ্য দিয়ে যায়।

ফেব্রাইল ফেইজ: প্রথম ৩ থেকে ৪ দিন। এ সময় তীব্র জ্বর এবং অন্যান্য উপসর্গ থাকে।

ক্রিটিক্যাল ফেইজ বা এফেব্রাইল ফেইজ: এ সময় শিশুর জ্বর থাকে না। জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার পর থেকে পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় ডেঙ্গুর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেসব রোগী মারাত্মক ডেঙ্গুতে ভোগে, তাদের এই সময় শক সিনড্রোম অর্থাৎ মারাত্মকভাবে রক্তচাপ কমে যাওয়া, ফুসফুস ও পেটে পানি জমা, শ্বাসকষ্ট, রক্তক্ষরণের প্রবণতা ইত্যাদি দেখা যায়। এ সময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো জরুরি। প্রায়ই নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিইউতে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে।

সাধারণত ১০ শতাংশের কম রোগী ক্রিটিক্যাল ফেইজে জটিলতায় ভোগে। তবে ক্রিটিক্যাল ফেইজে শক সিনড্রোম হলে কিংবা সঠিক সময়ে চিকিৎসক বা হাসপাতালে না গেলে মৃত্যুহার বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশে পৌঁছায়। 

জ্বর চলে যাওয়ার পর কিংবা জ্বর থাকাকালীন কিছু উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

  • অতিরিক্ত পেটব্যথা
  • সারা দিনে ৩ বারের বেশি বমি কিংবা ৩ বারের বেশি

পাতলা পায়খানা

  • অতিরিক্ত অস্থিরতা কিংবা নেতিয়ে যাওয়া
  • জ্ঞানের মাত্রায় পরিবর্তন
  • হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া কিংবা হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
  • বসা থেকে দাঁড়ালে মাথা ঘোরানো কিংবা চোখে অন্ধকার দেখা 
  • অতিরিক্ত ঘাম ও শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • ৬ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়া 
  • নাক থেকে, মাড়ি দিয়ে, কাশির সঙ্গে কিংবা

প্রস্রাব-পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ
কনভালেসেন্ট ফেইজ: এর সময়কাল ২ থেকে ৩ দিন। এ সময় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে। তাদের খাবারের রুচি ফিরে আসে। এ সময় আবারও র‍্যাশ দেখাসহ শরীর চুলকানি এবং বেশ দুর্বল থাকতে পারে। অনেক সময় হার্টের গতি কমে যায়, অতিরিক্ত প্রস্রাব হয় এবং অতিরিক্ত ঘামতে থাকে।

ডেঙ্গু জ্বরে যা করা যাবে না

  • দ্রুত জ্বর কমানোর জন্য এসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপরক্সেন, মেফেনেমিক অ্যাসিড-জাতীয় ওষুধ খাবেন না।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড ও অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করবেন না।
  • কোনো রোগী এসপিরিন কিংবা ওয়ারফেরিন-জাতীয় ওষুধ নিয়মিত খেলে চিকিৎসককে জানিয়ে তা বন্ধ করতে হবে রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত।
  • হাসপাতালে শিশু ভর্তির প্রয়োজন হলে শারীরিক অবস্থা এবং রক্তের রিপোর্ট অনুযায়ী সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে স্যালাইন দিয়ে থাকেন চিকিৎসক। আবার কখনো কখনো স্যালাইনের ধরনও পরিবর্তন করে থাকেন। 
  • রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া জটিলতার একটিমাত্র অংশ। সাধারণত ২০ হাজারের নিচে, কখনো ১০ হাজারের নিচে না নামলে প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হয় না। তবে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসক প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

যে বিষয়গুলোর ওপর রোগীর মৃত্যুঝুঁকি নির্ভর করে

  • রক্তের ঘনত্ব। এটি বোঝা যায় রক্তের হিমোগ্লোবিন এবং হেমাটোক্রিট বাড়া দেখে।
  • শকের মাত্রা কতখানি এবং শক ঠিক করার জন্য কী পরিমাণ স্যালাইনের প্রয়োজন পড়ছে।
  • রক্তের জলীয় অংশ বের হয়ে তা কী পরিমাণে ফুসফুসে ও পেটে জমা হচ্ছে।
  • শ্বাসকষ্ট কতটা হচ্ছে, অক্সিজেনের পরিমাণ কেমন লাগছে।
  • রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া কী পরিমাণ ব্যাহত হচ্ছে।
  • হৃৎপিণ্ড, কিডনি, লিভার, মস্তিষ্ক আক্রান্ত হচ্ছে কি না।

ফলে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমা বা বাড়া নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন না হয়ে অন্য বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে। এ ছাড়া রোগীকে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে।

লেখক: স্পেশালিস্ট, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত