মুখের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া দূর করতে কী করবেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯: ৩২
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ১১

প্রতিদিন অন্তত দুইবার দাঁত ব্রাশ করার পাশাপাশি জিহ্বা পরিষ্কার রাখাও মুখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দেশেই বিভিন্ন টুল দিয়ে জিহ্বা পরিষ্কার করার প্রচলন রয়েছে। এই অভ্যাস গড়ে তুললে মুখের দুর্গন্ধও দূর হবে। বিজ্ঞানীরা এর গুরুত্ব বিভিন্ন গবেষণাপত্রে তুলে ধরেছেন।

জিহ্বা পরিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা কী
জিহ্বা নিয়মিত পরিষ্কার না করলে এর ওপর ময়লা জমে যায় এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য দেখা দেয়। এসব ব্যাকটেরিয়া মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।

সুস্থ মানুষের মুখে সাধারণত ৭০০ বা বেশি প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব প্লাইমাউথের ডেন্টাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জো ব্রুকস বলেন, মুখের স্বাস্থ্য খারাপ হলে ও জিহ্বায় ব্যাকটেরিয়ার পাতলা স্তর তৈরি হলে ব্যাকটেরিয়া প্রজাতির বৈচিত্র্য কমে যায়। সেখানে অ্যানারোবিক প্রজাতির (যেসব জীবাণু অক্সিজেন ছাড়াই বাঁচে) জীবাণু আধিপত্য বিস্তার করতে পারে।

অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়া জিহ্বার পেছনের খাঁজগুলোতে জমতে থাকে। এরা খাবার ও লালার প্রোটিনগুলো ভেঙে ফেলে সালফারযুক্ত উপাদান তৈরি করে। এই সালফারযুক্ত উপাদানই মুখের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী।

ব্রুকস বলেন, জিহ্বার ওপর জমে যাওয়া আবরণটি যত পুরোনো হবে, এতে তত বেশি অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়া থাকবে। ফলে মুখের দুর্গন্ধ আরও তীব্র হবে।

একজনের মুখে সাধারণত ৭০০ ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
এই সমস্যা এড়াতে ব্রুকস টাং ক্র্যাপার বা জিহ্বা ঘষামাজার টুল ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। এগুলো জিহ্বা থেকে জীবাণুর আবরণটি চেঁচে ফেলে। ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

যদিও জিহ্বা ঘষা মাজা বা স্ক্র্যাপ করা মানুষের প্রায় শতাব্দী পুরোনো চর্চা। তবে কিছু সংস্কৃতি অন্যদের তুলনায় এটি নিয়ে বেশি উৎসাহী।

মানুষের মুখের দুর্গন্ধ আর রসুন, পেঁয়াজ বা অন্যান্য ঝাঁজালো গন্ধযুক্ত খাবারের কারণে সৃষ্ট মুখের গন্ধ এক নয়। মুখের দুর্গন্ধ সহজে দূর করা যায় না। এটি হয় মুখের ব্যাকটেরিয়ার কারণেই। কিছু মানুষের মুখে এসব ব্যাকটেরিয়া স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে আবার কিছু মানুষের কম থাকে।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ডের বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক সালিহা সাদ মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, মুখে দুর্গন্ধ হওয়া কোনো জিনগত ব্যাপার কি না তা আমরা এখনো জানি না। তবে এর কোনো স্থায়ী প্রতিকার নেই। আর এই সমস্যা সমাধানের উপায় হলো—ব্রাশ, ফ্লস (একটি বিশেষ সুতার মাধ্যমে দাঁতের ফাঁকের ময়লা পরিষ্কার করা) ও জিহ্বা পরিষ্কারের মাধ্যমে মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখা।

মুখে দুর্গন্ধ না থাকলেও কৌশলগুলো অবলম্বন করা উচিত। বৃদ্ধ বয়সে প্রত্যেকের মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কারণ এ সময় শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতার কারণে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যের দিকে ততটা নজর দিতে পারেন না।

এক গবেষণায় সাদ দেখতে পান, যেসব মানুষের মুখে দুর্গন্ধ থাকে তাঁরা যদি একবার ব্রাশ করেন ও জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করেন, তাহলে তাঁদের মুখ ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত দুর্গন্ধমুক্ত থাকে।

জিহ্বা পরিষ্কার রাখার সঠিক উপায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, ধাতব বা প্লাস্টিক স্ক্র্যাপার থেকে শুরু করে সিলিকন ব্রাশ ব্যবহার করে জিহ্বা পরিষ্কার করা যায়। অনেক টুথব্রাশের মাথার পেছনের দিকে থাকা খাঁজযুক্ত অংশ দিয়েও জিহ্বা পরিষ্কার করা যায়।

জিহ্বায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কমাতে কোনটি বেশি কার্যকর তা জানতে ২০২২ সালের এক গবেষণায় স্ক্র্যাপারকে টুথব্রাশের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এই পরীক্ষায় দেখা যায়, দুটি টুলই (ব্রাশ ও স্ক্র্যাপার) জিহ্বা পরিষ্কার করতে বেশ ভালোভাবে কাজ করে।

সাদ বলেন, যে পদ্ধতি আপনার জন্য সুবিধাজনক আপনি সেটিই ব্যবহার করতে পারেন। তবে শক্ত বা ধারালো টুলের চেয়ে নরম ব্রাশ বা স্ক্র্যাপার ব্যবহার করা ভালো।

যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
জিহ্বা পরিষ্কারের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সাদ এ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, জিহ্বা খুব জোরে ঘষে পরিষ্কার করা যাবে না। এতে টুলটি জিহ্বার ক্ষতি করতে পারে। জিহ্বা কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে পারে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে সংক্রমণ হতে পারে।

কিছু গবেষক মনে করেন, জিহ্বার ত্বকে বারবার আঘাত থেকে মুখের ক্যানসারও হতে পারে। এক গবেষণায় জানা যায়, জিহ্বার মাইক্রোবায়োম (উপকারী অণুজীব) নষ্ট করলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এমন ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া সবুজ শাকসবজি থেকে প্রাপ্ত নাইট্রোজেন উপাদানকে নাইট্রিক অক্সাইডে পরিণত করে। আর এই নাইট্রিক অক্সাইড ভাসোডিলেটর হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এটি রক্তনালির জট খুলে দিতে সাহায্য করে।

আবার ব্রুকের গবেষণা বলছে, চিকিৎসকের পরামর্শে যেসব মাউথওয়াস ব্যবহার করা হয় তা জিহ্বার মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য বজায় রাখে। আর জিহ্বা পরিষ্কারের সঙ্গে রক্তচাপ ওতপ্রোতভাবে জড়িত—এমনটি ভাবা হয়তো পুরোপুরি সঠিক নয়। তবে স্বাস্থ্য সম্পর্কে যে কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ও সুবিধাগুলো বিবেচনা করতে হবে। তাই যদি কারও মুখের দুর্গন্ধ সামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলে তাহলে নিয়মিত আলতোভাবে জিহ্বা পরিষ্কার করা খুবই জরুরি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত