সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দ্রুত পতন যেসব কারণে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ০৩
Thumbnail image
সিরিয়ার হামায় গুলিতে বিদীর্ণ বাশার আল-আসাদের ছবি। ছবি: এএফপি

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়েছে বিদ্রোহীরা। রাজধানীর প্রান্তগুলোতে মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ একটি উড়োজাহাজে করে দামেস্ক ছেড়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সিরিয়ার দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও বাশার আল–আসাদের রাজধানী ছেড়ে যাওয়ার খবর এসেছে। তবে কোথায় আসাদের গন্তব্য সম্পর্কে কেউ ধারণা দিতে পারেনি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসও জানিয়েছে, দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে যে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজটি ছেড়ে গেছে, সেটিতে আসাদ ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের পর বিমানবন্দরের সরকারি সৈন্যদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে তারা জানিয়েছে।

সিরিয়ায় ২০১১ সালে শুরু হওয়া আসাদ বিরোধী আন্দোলন মাঝে স্তিমিত হয়ে এলেও চলতি বছর গত নভেম্বরের শেষ দিকে বিদ্রোহীরা নতুন করে আক্রমণ শুরু করে এবং আলেপ্পো, হামা, হোমস জয়ের পর দ্রুতই রাজধানী দামেস্কের দিকে অগ্রসর হয়। বিদ্রোহীদের আক্রমণ শুরু হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই বাশার আল-আসাদের পতন হয়েছে বলে দাবি বিদ্রোহীদের।

এদিকে, কী কী কারণে বাশার আল-আসাদের পতন ত্বরান্বিত হয়েছে তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। মার্কিন থিংক ট্যাংক নিয়ার ইস্ট সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ডেভিড ডেস রোচেস সিরিয়ার বিদ্রোহীদের দ্রুতগতির আক্রমণের সাফল্যকে সিরিয়ান সেনাবাহিনীর ‘মনোবল ও নেতৃত্বের অভাব’ বলে উল্লেখ করেছেন।

রোচেস কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘২০১৪ সালে ইরানি ও রুশ বাহিনীর হস্তক্ষেপের সময় থেকে আমরা শুনতে শুরু করি যে, সিরিয়ান আরব বাহিনীর (সিরিয়ার সরকারি বাহিনী) নেতৃত্ব সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে না। তারা যুদ্ধের চেয়ে বেসামরিক জনগণের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ে বেশি মনোযোগী। প্রকৃত যুদ্ধ পরিচালনা করা হচ্ছিল মূলত ইরান সমর্থিত বিভিন্ন প্রক্সি বাহিনীর মাধ্যমে। রাশিয়ার বিমানশক্তি এই প্রক্সি বাহিনীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছিল।’

এই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘রাশিয়া বিমানবাহিনীর সমর্থন সরিয়ে নেওয়ার পর ইরান সমর্থিত প্রক্সি বাহিনী যুদ্ধ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এর পর যুদ্ধ করার জন্য বাকি থাকে কেবল মনোবলহীন, দুর্বল নেতৃত্বাধীন, অপর্যাপ্তভাবে সজ্জিত এবং সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিগ্রস্ত একটি সশস্ত্রবাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকে না।’

এ ছাড়া, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে তুরস্কের তরফ থেকে সরাসরি না হলেও চুপিসারে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে বিদ্রোহীদের সাফল্য কামনা করেছেন। গত শুক্রবার এরদোয়ান বলেন, ‘...ইদলিব, হামা, হোমস এবং অবশ্যই লক্ষ্য হলো দামেস্ক। বিরোধীদের মার্চ অব্যাহত রয়েছে। আমাদের ইচ্ছা, সিরিয়ায় এই অগ্রগতি কোনো দুর্ঘটনা বা বিপর্যয় ছাড়াই চলতে থাকবে।’ সিরিয়ার নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা (বাশার আল—) আসাদকে আহ্বান জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আসুন, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ একসঙ্গে নির্ধারণ করি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা ইতিবাচক সাড়া পাইনি।’

২০১১ সালের মার্চে আসাদ বিরোধী ব্যাপক গণবিক্ষোভের মধ্য দিয়ে সিরিয়াতে অস্থিতিশীলতার শুরু। এরপর সেখানে যুক্ত হয়েছে সশস্ত্র একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী। পরবর্তীতে সেসব বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করে রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখেন আসাদ।

সিরিয়া এখনো একটি বিভক্ত দেশ, বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের গভীর ক্ষত এখনো দগদগে। গত চার বছর ধরে যে অচলাবস্থা এবং স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছিল, তা মাত্র দেড় সপ্তাহ আগে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বিদ্রোহীরা হঠাৎ করেই কঠোর আঘাত করেছে, ফলে আসাদ বাহিনী প্রতিঘাত বা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। আসাদ আরব নেতাদের মধ্যে একঘরে থাকার অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। তবে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি কার্যকর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কোনো অগ্রগতি হয়নি।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সমালোচকদের ধুয়ে দিলেন রোহিত

আজহারীর মাহফিলে অসংখ্য মানুষের স্বর্ণালংকার-মোবাইল খোয়া, থানায় জিডির হিড়িক

মানিকগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়ি ভাঙচুর মামলায় গ্রেপ্তার আসামির ঢামেকে মৃত্যু

টিউলিপকে লন্ডনের ফ্ল্যাটদাতা কে এই মোতালিফ, কীভাবে তিনি হাসিনা-ঘনিষ্ঠ

টিউলিপ সিদ্দিককে বিনামূল্যে লন্ডনে ফ্ল্যাট দেন আ.লীগ সরকার-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত