চীনা অনলাইন জালিয়াতির শিকার ইউরোপ-আমেরিকার লাখো মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৪, ১৩: ৪১
আপডেট : ০৮ মে ২০২৪, ১৪: ৪৫

ইউরোপ ও আমেরিকার একাধিক দেশের অন্তত ৮ লাখ মানুষ অনলাইন জালিয়াতির শিকার হয়েছেন বিগত কয়েক বছরে। আর এই জালিয়াতির পেছনের মূল হোতা চীন। দেশটির বিভিন্ন ফেক ডিজাইনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জালিয়াতেরা এসব মানুষের অনেক গোপন ডেটা হাতিয়ে নিয়েছে। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান, জার্মানির ডি জায়েট ও স্পেনের লা মন্ডে যৌথভাবে এক অনুসন্ধানী তৎপরতায় নেমেছিল এ বিষয়ে। সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে উঠে এসেছে, চীন থেকে পরিচালিত বিভিন্ন অনলাইন ডিজাইনার শপের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ৮ লাখেরও বেশি মানুষের ব্যাংক কার্ডের তথ্যসহ বিপুল পরিমাণ ডেটা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। 

যুক্তরাজ্যের চার্টার্ড ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ড ইনস্টিটিউট এই অনলাইন জালিয়াতিকে এ ধরনের জালিয়াতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় জালিয়াতি বলে আখ্যা দিয়েছে। অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, প্রায় ৭৬ হাজার ফেক ওয়েবসাইট তৈরি করে এই জালিয়াতি করা হয়েছে। সাংবাদিক ও আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জালিয়াতি চালানো হয়েছে প্রযুক্তিতে খুবই দক্ষ একদল মানুষের সাহায্যে এবং খুবই গোছানো উপায়ে। 

বাণিজ্যিকভাবে এই কার্যক্রম চালাতে গিয়ে চীনা প্রোগ্রামাররা হাজারো ফেক অনলাইন শপের ওয়েবসাইট চালু করে। যেখানে ডিওর, নাইকি, ল্যাকোস্টে, হিউগো বস, ভারস্যাচে অ্যান্ড প্রাডার মতো অনেক বিখ্যাত ব্র্যান্ডের পণ্য ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি করা হতো এসব সাইটে। এই সাইটগুলো ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি জার্মান, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, সুইডিশ ও ইতালিয়ান ভাষায় পরিচালিত হতো। এসব সাইটে লোভনীয় সব অফার দেওয়া হতো এবং বিনিময়ে হাতিয়ে নেওয়া হতো ব্যক্তিগত তথ্য। 

তদন্তে উঠে এসেছে, এসব চীনা সাইট যেসব ব্র্যান্ডের পণ্য ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি করত, সেগুলোর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের কোনোই সম্পর্ক ছিল না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব সাইটে অর্ডারকারী ব্যক্তিরা তাঁদের পণ্য পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। 

এ ধরনের প্রথম ওয়েবসাইট চালু হয় ২০১৫ সালে, যেখানে মাত্র ৩ বছরে ১০ লাখেরও বেশি অর্ডার এসেছে। কিন্তু এসব অর্ডারের বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্ডারকারী তাঁর কাঙ্ক্ষিত পণ্য হাতে পাননি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব প্ল্যাটফরম খুব বেশি দামের পণ্য বিক্রি করত না। তারা গড়ে প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে বড়জোর ৫০ ইউরো সমপরিমাণের পণ্যের অর্ডার নিত।

বর্তমানে এসব ফেক ওয়েবসাইটের দুই তৃতীয়াংশ বন্ধ হয়ে গেছে অথবা কোনো কারণে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এক-তৃতীয়াংশ ওয়েবসাইট—প্রায় ২২ হাজার ৫০০-এর বেশি—এখনো কার্যকর। 

ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম তিনটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সব মিলিয়ে এসব ওয়েবসাইট থেকে প্রায় ৮ লাখ মানুষ প্রতারিত হয়েছেন ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে। তাঁদের প্রায় সবাই নিজ নিজ ব্যক্তিগত মেইল ফাঁস করেছেন। এ ছাড়া, ৪ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ তাদের ব্যাংকের কার্ডের—ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড—তথ্য শেয়ার করেছেন সাইটগুলোর সঙ্গে। এমনকি অনেকে তাঁদের তিন অঙ্কের গোপন নম্বরও শেয়ার করেছেন। এ ছাড় সবাই নিজের নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেইল, পোস্টাল ঠিকানা চীনা নেটওয়ার্কগুলোতে শেয়ার করেছে। 

ব্রিটেনের চার্টার্ড ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ড ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ক্যাথরিন হার্ট বলেন, ‘এই অপারেশনটি আমার দেখা ফেক অনলাইন শপের মাধ্যমে করা সবচেয়ে বড় জালিয়াতির একটি। প্রায়ই এরা (জালিয়াতেরা) গুরুতর ও সংগঠিত অপরাধ গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে ডেটা সংগ্রহ করে এবং পরে এটি সেই সব লোকের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করতে পারে।’ 

সফটওয়্যার কোম্পানি ইসেটের গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি উপদেষ্টা জেক মুর বলেন, ‘বর্তমানে ডেটাই নতুন মুদ্রা (অর্থ)।’ তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এ ধরনের ব্যক্তিগত ডেটা নজরদারির উদ্দেশ্যে পরিচালিত বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে খুবই মূল্যবান বলে বিবেচিত হতে পারে। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, বড় পরিসরে বিবেচনা করলে চুরি হয়ে যাওয়া এসব ডেটায় চীন সরকারেও নজর আছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত