এক্সিওসের প্রতিবেদন

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত, একদিন পিছিয়ে কার্যকর হতে পারে সোমবার থেকে

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আহত একজনকে কোলে করেই সরিয়ে নিচ্ছেন একজন। ছবি: আনাদোলু

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি শুরুর জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে গেছে। কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনার সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসকে এ তথ্য জানিয়েছে। তবে ইসরায়েল সরকার আগামীকাল শনিবার রাতে এ বিষয়ে অনুমোদন দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে, রোববারের পরিবর্তে আগামী সোমবার থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, অনুমোদন দেরি হওয়ার কারণে যুদ্ধবিরতি শুরু এবং প্রথম তিনজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া রোববারের পরিবর্তে সোমবার পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে। এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে কাতারে অবস্থানরত দেশটির আলোচক দল জানিয়েছেন, চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে। নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্তি কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এই চুক্তি নিয়ে ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে দোহায় আলোচনা চলাকালে শেষ মুহূর্তে কিছু মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় চুক্তি স্বাক্ষর একদিন পিছিয়ে যায়—বলে দাবি করে ইসরায়েল।

এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে চুক্তি ঘোষণার পর ফিলিস্তিনি বন্দীদের তালিকা নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়। হামাস তাদের সামরিক নেতাদের মুক্তির দাবি করে, যাদের মধ্যে কয়েকজন আত্মঘাতী বোমা হামলার পরিকল্পনার জন্য বহু বছর ধরে কারাবন্দী। ইসরায়েল ও মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই দাবির কারণে আলোচনা নতুনভাবে জটিল হয়ে ওঠে।

ইসরায়েল চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে এসব বন্দীর মুক্তি ঠেকায়। তবে হামাস আলোচনায় নতুন করে এই দাবিগুলো তুলে ধরে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ এবং কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা দোহায় কয়েক ঘণ্টা ধরে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালান।

অপর এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, শেষ পর্যন্ত এটি অপ্রয়োজনীয় সমস্যা হিসেবেই প্রমাণিত হয়। সমস্যার সমাধান হওয়ার পরও চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। এই চুক্তিতে ইসরায়েল, কাতার এবং হামাসের প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করেছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্রেট ম্যাকগার্ক চুক্তিতে সই করেন।

এদিকে, দোহায় আলোচনা চলাকালে নেতানিয়াহুর কট্টর জাতীয়তাবাদী জোট সরকারের দুই মন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ ও ইতামার বেন গভির চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা জানান। নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার স্মতরিচের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানান এবং চুক্তি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর আলোচনার বিষয়ে অবহিত করেন বলে একটি সূত্র জানায়।

বেন গভির এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, যদি মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদিত হয় তবে তিনি পদত্যাগ করবেন এবং তাঁর দল নেতানিয়াহু সরকারের জোট ত্যাগ করবে। তবে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল গাজায় পুনরায় অভিযান শুরু করলে তিনি আবার জোটে যোগ দেওয়ার ইঙ্গিত দেন।

লিকুদ পার্টি এক বিবৃতিতে বেন গভিরের সমালোচনা করে বলেন, তিনি সরকারকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করছেন। লিকুদ পার্টি দাবি করেছে, চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে যে, ইসরায়েল যুদ্ধ পুনরায় শুরু করতে পারবে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র সরবরাহ পাবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ গত বুধবার সিএনএনকে বলেন, আসন্ন প্রশাসন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে স্পষ্ট জানিয়েছে যে, হামাস যদি চুক্তির কোনো অংশ ভঙ্গ করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে থাকবে। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন নিশ্চিত করবে যে, গাজাকে নিরস্ত্র করা হবে এবং হামাসকে ধ্বংস করা হবে।

ইসরায়েলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা আজ শুক্রবার সকালে চুক্তি অনুমোদন দেওয়ার জন্য বৈঠকে বসবে। তবে পুরো মন্ত্রিসভা বৈঠকে বসবে আগামীকাল শনিবার রাতে। ইসরায়েলি আইনে সরকারিভাবে অনুমোদন ছাড়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া যায় না। যদি চুক্তি অনুমোদিত হয়, তবে জনসাধারণের কাছে আদালতে আপিল করার জন্য ২৪ ঘণ্টার সময় থাকবে।

নেতানিয়াহুর সহযোগীরা বলছেন, নির্ধারিত সময়সূচির কারণে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি রোববারের পরিবর্তে সোমবার শুরু হবে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে থাকবেন নারী, শিশু, ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং ৫০ বছরের নিচের আহত বা অসুস্থ পুরুষ। ইসরায়েলের ধারণা, এই ৩৩ জনের অধিকাংশই জীবিত।

এই প্রথম পর্যায়ে জিম্মিদের ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়া হবে এবং গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই এটি কার্যকর হবে। প্রথম পর্যায় চলাকালে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ধীরে ধীরে গাজার সীমানার কাছে একটি বাফার জোনে সরে যাবে। আইডিএফ গাজার কেন্দ্রে নেতজারিম করিডর এবং গাজা ও মিসর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডরের বেশির ভাগ এলাকা ছেড়ে দেবে।

এই সময়ে ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। যারা হেঁটে যাবে, তাদের নিরাপত্তা তল্লাশি করা হবে না, তবে যানবাহনগুলো কাতারের ও মিসরীয় কর্মকর্তারা তল্লাশি চালাবেন, যাতে ভারী অস্ত্র স্থানান্তর না হয়।

সাত শরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে, যার মধ্যে প্রায় ২৭৫ জনকে ইসরায়েলি হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া গাজার আরও এক হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে, যাদের আইডিএফ যুদ্ধ চলাকালে আটক করেছিল কিন্তু ৭ অক্টোবরের হামলায় তারা অংশ নেয়নি। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ধারিত হবে হামাস জানালে যে, কোন জিম্মিরা জীবিত আছেন।

যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন থেকেই গাজায় প্রতিদিন ৬০০টি সাহায্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করবে, যার মধ্যে ৫০টি জ্বালানি সরবরাহ করবে। পাশাপাশি, গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য ২ লাখ তাঁবু এবং ৬০ হাজার মোবাইল বাড়ি সরবরাহ করা হবে।

চুক্তি অনুযায়ী, কাতার, মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি বাস্তবায়নের জামিনদার হিসেবে কাজ করবে। যুদ্ধবিরতির ১৬ তম দিনে, ইসরায়েল ও হামাস চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনার শুরু করবে। এই পর্যায়ে বাকি জিম্মিদের মুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

টিউলিপ সিদ্দিকের পতন ঘটাতে বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ রাজনীতির আঁতাত

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

প্রকাশ্যে এল সাইফকে ছুরিকাঘাত করা যুবকের ছবি, যা বলছে পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত