গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, নিহত প্রায় ১৫৫০০ 

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল যুক্তরাজ্য। এদিকে, অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ আপডেট অনুসারে, অঞ্চলটিতে নিহতের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার ৫০০।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় হামাস ও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাত বন্ধে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি আহ্বান করে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র বলে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩ সদস্য দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়। ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে যুক্তরাজ্য। এর আগে, গাজার পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য জাতিসংঘ সনদের ৯৯ অনুচ্ছেদ আহ্বান করেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এর মাধ্যমে গাজায় চলমান সংকট নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। তার পরিপ্রেক্ষিতেই নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল।

জাতিসংঘে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবুশাহাব নিরাপত্তা পরিষদে প্রশ্ন করেন, ‘গাজায় অবিরাম বোমাবর্ষণ বন্ধ করার আহ্বানের পেছনে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি, তাহলে আমরা ফিলিস্তিনিদের কী বার্তা পাঠাচ্ছি? প্রকৃতপক্ষে, যারা বিশ্বজুড়ে যেকোনো সময় একই পরিস্থিতিতে পড়তে পারে সেসব বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি আমরা কী বার্তা পাঠাচ্ছি?’

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন উপ-রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, ‘খসড়া প্রস্তাবনাটি খুবই ত্বরিত গতিতে করা হয়েছে এবং এটি ভারসাম্যহীন, বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য এই প্রস্তাবনাকে সমর্থন করতে পারি। এটি কেবল পরবর্তী যুদ্ধের বীজই রোপণ করবে।’ 

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেন, প্রস্তাবনায় হামাসের কোনো নিন্দা না করায় তাঁর দেশে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলকে হামাসের সৃষ্ট হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম হতে হবে যাতে এমন হামলা আর না হয়। তবে এটি এমনভাবে করতে হবে যাতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলা হয়।’

এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৮৭ জনে। আহত হয়েছেন আরও ৪৬ হাজার ৪৮০ জন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দেওয়া আপডেটে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, শুক্রবার সারা দিনে সাড়ে ৩ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে ইসরায়েলি হামলায়। আহত হয়েছে আরও ৫৫৮ জন।

এর আগে আশরাফ আল-কুদরা জানিয়েছিলেন, নিহতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী। পাশাপাশি তিনি জানান, ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানির পাশাপাশি গাজায় ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রাণ হারিয়েছেন চিকিৎসাকর্মীরাও। আশরাফ আল-কুদরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ২৯০ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও জানান, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০২টি অ্যাম্বুলেন্স বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এর বাইরে ইসরায়েলি হামলায় ১৬০টি চিকিৎসাকেন্দ্র বিধ্বস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি হাসপাতাল ও ৪৬টি প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত