Ajker Patrika

‘ক্রিপটো রিজার্ভ’ গড়বে যুক্তরাষ্ট্র, ঘোষণামাত্রই আকাশে উড়ছে এই মুদ্রার বাজার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৫, ২১: ৪৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ক্রিপটো রিজার্ভ গঠন করবে যুক্তরাষ্ট্র—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন ঘোষণার পর ক্রিপটোকারেন্সির বাজারে বড় ধরনের উত্থান দেখা গেছে। মার্কিন ক্রিপটো রিজার্ভের প্রথম ধাপে পাঁচটি ডিজিটাল টোকেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সোমবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক সানডে টাইমস জানিয়েছে, মার্কিন ক্রিপটো রিজার্ভ নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণার পর মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ক্রিপটোকারেন্সির বাজারমূল্য ২০০ বিলিয়ন ডলার বেড়ে গেছে।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর এক্সআরপি, কারডানো (এডিএ) এবং সোলানার (এসওএল) মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। এর মধ্যে এক্সআরপির মূল্য ২.২৩ ডলার থেকে বেড়ে ২.৯৯ ডলার পর্যন্ত পৌঁছায়। এর ফলে মুদ্রাটির বাজারমূল্য মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই ৪৪ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ১৭৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। অন্যদিকে সোলানার মূল্য ১৪০ ডলার থেকে বেড়ে ১৬৮ হয়ে যায়। আর কারডানো ০.৬৮ ডলার থেকে বেড়ে প্রায় ১ ডলারে পৌঁছায়।

পরে ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে আরও দুটি বড় ক্রিপটোকারেন্সি—বিটকয়েন (বিটিসি) এবং ইথেরিয়াম (ইটিএইচ) যুক্ত করার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর বিটকয়েনের মূল্য ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে ৯৩ হাজার ডলারে পৌঁছায়। এতে মুদ্রাটির বাজারমূল্য ১৬৬ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ে।

ট্রাম্প তাঁর পোস্টে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিপটো রিজার্ভ এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যা কিনা বাইডেন প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্ত আক্রমণের শিকার হয়েছে। আমার ডিজিটাল অ্যাসেটসংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ এই রিজার্ভ গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে—যেখানে এক্সআরপি, এসওএল এবং এডিএ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করব, যুক্তরাষ্ট্র হবে বিশ্বের ক্রিপটো রাজধানী।’

পরে তিনি বিটকয়েন ও ইথেরিয়ামকেও রিজার্ভের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘বিটিসি ও ইটিএইচ অবশ্যই রিজার্ভের কেন্দ্রে থাকবে। আমি বিটকয়েন ও ইথেরিয়ামকে ভালোবাসি!’

ট্রাম্পের নীতির ফলে ক্রিপটো ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তিনি ক্রিপটো লেনদেনের ওপর বিদ্যমান বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ক্রিপটো রিজার্ভ পরিকল্পনাটি রিপাবলিকানদের নতুন নীতিমালার অংশ, যার মাধ্যমে ক্রিপটোমুদ্রাকে সরকারি সমর্থন দেওয়া হবে, ঠিক যেমনভাবে মার্কিন ডলার বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে কাজ করে।

এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভকে একটি ডিজিটাল ডলার চালুর প্রকল্প বাতিল করতে বাধ্য করেছে, যা ব্যক্তিগত স্টেবলকয়েনের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারত। তবে ক্রিপটো রিজার্ভ কীভাবে পরিচালিত হবে এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির ক্ষেত্রে সরকার কোনো গ্যারান্টি দেবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন এখনো থেকেই যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রিপটোকারেন্সির বাজার একাধিক ধাক্কা খেয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল এফটিএক্স-এর পতন। ট্রাম্পের নির্বাচনের পর বিটকয়েনের মূল্য ১ লাখ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে এটি ১৭.৫ শতাংশ কমে দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মাস অতিক্রম করেছে।

জানা গেছে, এই সপ্তাহেই হোয়াইট হাউস প্রথম ‘ক্রিপটো গোলটেবিল সম্মেলন’ আয়োজন করবে। এই সম্মেলনে ডিজিটাল সম্পদ সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট উদ্যোক্তা, সিইও এবং বিনিয়োগকারীরা অংশ নেবেন। এ ছাড়া ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব মেম কয়েন চালু করেছেন, যদিও এটি বাজারে তেমন সাফল্য পায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের ক্রিপটো রিজার্ভ গঠনের পরিকল্পনা ডিজিটাল মুদ্রার বাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তবে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনো বিভক্ত। মার্কিন প্রশাসনের নীতিমালা কীভাবে গড়ে উঠবে, তা দেখার জন্য বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত