Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

শিক্ষানবিশেরাও কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন

ওমর আহমেদ

বাংলাদেশি তরুণ ওমর আহমেদ বর্তমানে বেলজিয়ামের ইএএসপিডি ব্রাসেলসের ইইউ প্রজেক্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত। বেলজিয়ামে উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কাজ, বাংলাদেশিদের সুযোগ ও প্রস্তুতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন নাদিম মজিদ

প্রশ্ন: আপনি কীভাবে ইএএসপিডি ব্রাসেলসের ইইউ প্রজেক্ট অফিসার হিসেবে কাজের সুযোগ পেলেন?

উত্তর: আমার পেশাগত জীবন শুরু হয় বাংলাদেশের একটি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিতে, প্রকৌশলী হিসেবে। এরপর দেশে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কনসালট্যান্ট হিসেবে প্রায় তিন বছর কাজ করি। সেখানে বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, নারী উদ্যোগ ও অর্থনৈতিক সহায়তা, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা—এসব সেক্টরে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করি।

এ ছাড়া গুগল ডেভেলপার গ্রুপ (জিডিজি) সোনারগাঁয়ে কমিউনিটি ম্যানেজার হিসেবে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল। পরে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেডরিশ এবার্ট স্টিফটিংয়ের ফেলোশিপ পাই, যেখানে বাংলাদেশের আউটসোর্সিং খাতে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে গবেষণা করি।

করোনার পর বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কাজের ধরনে পরিবর্তন আসে। সেই পরিবর্তনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ খুঁজতে থাকি। এরপর ২০২০ সালের শেষদিকে লকডাউন শিথিল হলে বেলজিয়ামে আসি এবং ইএএসপিডি ব্রাসেলসের প্রজেক্ট অফিসার হিসেবে যোগ দিই।

প্রশ্ন: ইএএসপিডি ব্রাসেলস কী নিয়ে কাজ করে? আপনার দায়িত্ব কী?

উত্তর: ইএএসপিডি বা ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব সার্ভিস প্রোভাইডারস ফর পারসন উইদ ডিজঅ্যাবিলিটি ইউরোপের ৩৪টি দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা। এটি কাঠামোগতভাবে একটি অ্যাসোসিয়েশন, যা কিছুটা বাংলাদেশের বেসিস বা এফবিসিসিআইয়ের মতো। ইএএসপিডির ইউরোপজুড়ে দুই শর বেশি সদস্য সংস্থা রয়েছে, যারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত।

আমি এখানে তিন বছরের বেশি সময় ধরে প্রজেক্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত। আমার কাজ মূলত প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন বিভাগের আওতায়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানে প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

অটিজম-আক্রান্ত শিশুদের জন্য ভার্চুয়াল রিয়ালিটি গেম নির্মাণ; বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সফটওয়্যার তৈরি এবং স্পেনের একটি হাসপাতালের জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সফটওয়্যার তৈরি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি।

প্রশ্ন: ইউরোপের উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে বাংলাদেশিরা কীভাবে কাজের সুযোগ পেতে পারেন?

উত্তর: ব্রাসেলসকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক রাজধানী বলা হয়। এখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো, জাতিসংঘসহ ১৫০টির বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যালয় রয়েছে। পাশাপাশি ১৮০টি দূতাবাস ও ১০ হাজারের বেশি এনজিও কাজ করছে। প্রতিবছর ব্রাসেলসে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কাজের জন্য আসেন। বাংলাদেশিদের জন্য এখানে কাজের ভালো সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে দক্ষ ও অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের। বিদ্যুৎ, নির্মাণ, গাড়ি, কেমিক্যাল, প্রতিরক্ষা, ওষুধ, টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী খাতে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সুযোগ আছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ইউরোপীয় কাউন্সিল এবং বিভিন্ন এনজিওতে শিক্ষানবিশ ও অভিজ্ঞদের জন্যও নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাঁরা এখানকার বিভিন্ন সংস্থার শিক্ষানবিশ প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারেন।

প্রশ্ন: এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে হলে কখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করা প্রয়োজন? অভিজ্ঞতার ঝুলিতে কী কী থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়?

উত্তর: যাঁরা পড়াশোনার শেষ পর্যায়ে রয়েছেন, তাঁরা এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন। এ ছাড়া ক্যারিয়ারের শুরু বা মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিরাও তাঁদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রথম ধাপে প্রয়োজন হবে ইউরোপাস ফরম্যাটে একটি সংক্ষিপ্ত (এক থেকে দুই পৃষ্ঠার) সিভি প্রস্তুত করা। এতে পূর্ববর্তী কাজের অর্জনগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরা উচিত। পাশাপাশি প্রতিটি চাকরির জন্য আলাদা কভার লেটার তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কভার লেটারে সংক্ষেপে উল্লেখ করা প্রয়োজন, কেন আপনি কাজটিতে আগ্রহী এবং আপনার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা কীভাবে এই চাকরির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ভাষার দক্ষতা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যালয় এবং এনজিওগুলোতে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইংরেজির পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ, জার্মান বা স্প্যানিশের মতো একটি ইউরোপীয় ভাষার জ্ঞান থাকলে সুযোগ আরও বাড়ে। তবে উচ্চস্তরের দক্ষতা থাকা জরুরি নয়; প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও তা সিভিতে উল্লেখ করা প্রয়োজন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যখন চাকরির আবেদন শুরু করি, তখন ডাচ ভাষায় আমার জ্ঞান ছিল খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের। ইন্টারভিউ বোর্ডে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আমি চাকরি পেলে ভাষা শেখা চালিয়ে যাব কি না। বলেছিলাম, ভাষা শেখা শুধু কাজের জন্যই নয়, বরং এটি একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে সংযুক্ত হতে সাহায্য করে। ফলে আমি ভাষা শেখার চর্চা চালিয়ে যেতে আগ্রহী।

প্রশ্ন: চাকরির আবেদনের জন্য কি ভিসা থাকা বাধ্যতামূলক? কীভাবে ভিসা আবেদন করা যায়?

উত্তর: ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর জন্য চাকরি পেতে ভিসা বা বসবাসের অনুমতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা বর্তমানে বেলজিয়াম বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের কোনো একটিতে বসবাস করছেন বা পড়াশোনা করছেন, তাঁদের জন্য আবেদন করা তুলনামূলক সহজ। তবে যাঁরা বাংলাদেশে রয়েছেন, তাঁদের জন্য এটি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও অসম্ভব নয়। ভালো ইন্টারভিউ দিলে অনেক সংস্থাই ভিসা পেতে সহায়তা করতে পারে।

যাঁরা বাংলাদেশ থেকে আবেদন করতে চান, তাঁরা ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত বেলজিয়াম কনস্যুলেট অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

প্রশ্ন: বাংলাদেশিরা প্রাইমারি স্কুল থেকে ইংরেজি শিখলেও তাঁদের কমিউনিকেশন স্কিল তেমন উন্নত হয় না। কীভাবে বাংলাদেশিরা ভালো ইংরেজি যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করতে পারেন?

উত্তর: ভাষার দক্ষতা নির্ভর করে চর্চার ওপর। বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও দৈনন্দিন জীবনে এর ব্যবহার সীমিত থাকার কারণে অনেকের যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত হয় না। তবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ইংরেজি দক্ষতা অনেক ইউরোপীয় দেশ; যেমন ফ্রান্স, পর্তুগাল, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া বা ইতালির তুলনায় ভালো।

ইংরেজি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য স্পোকেন ইংলিশ কোর্স করা যেতে পারে, পাশাপাশি বিভিন্ন স্পিকিং ক্লাব যেমন Toastmasters International, ইংরেজি বিতর্ক প্রতিযোগিতা বা অনলাইন কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া যেতে পারে। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমেই ইংরেজি যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত