মোহাম্মদ আবদুল্লাহ
ইসলামি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সনের সূচনা নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায়। এক. হিজরতের পরপরই মহানবী (সা.)-এর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় এটির সূচনা হয়। দুই. ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে এটির সূচনা হয়। ইবনে শিহাব জুহরি বলেন, এ দিন থেকেই রাসুল (সা.)-এর নির্দেশে ইসলামি বর্ষপঞ্জির সূচনা হয়। মদিনায় আগমনের পর সবাইকে তাঁর হিজরতের মাস রবিউল আউয়াল থেকে দিন গণনার নির্দেশ দেন। বর্ণনাটি ইমাম হাকেম ‘ইকলিল’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তবে এই বর্ণনার সত্যতা নিয়ে আপত্তি থাকায় ইসলামি চিন্তাবিদগণ গ্রহণ করেননি।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয় মতটিই নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত, সর্বাধিক প্রসিদ্ধ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। শাবি ও মুহাম্মদ ইবনে সিরিন বর্ণনা করেন, একবার হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) হজরত ওমর (রা.)-এর খেলাফতকালে তাঁকে লিখে পাঠান—আপনার বিভিন্ন আদেশনামা আমাদের হস্তগত হয়, কিন্তু কোনোটিতেই কোনো তারিখ উল্লেখ করা থাকে না। তখন একটি নতুন বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন নিয়ে পরামর্শ করার জন্য ওমর (রা.) কয়েকজন সাহাবিকে ডাকেন। একেকজন একেকটি পরামর্শ দেন। ওমর (রা.) হিজরতের সময় থেকে গণনা শুরু করার মতটি পছন্দ করেন। তিনি বলেন, ‘হিজরতের মাধ্যমে ইসলামি বর্ষের সূচনা হওয়াই আমার দৃষ্টিতে যথাযথ। কেননা, হিজরতের মাধ্যমে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে গেছে এবং ইসলামের সম্মান, মর্যাদা ও বিজয়ের সূচনা হয়েছে।’ সবাই তাঁর এই মতামত পছন্দ করেন।
যেহেতু রাসুল (সা.) রবিউল আউয়াল মাসে মদিনায় হিজরত করেছিলেন, তাই হিসাব অনুযায়ী হিজরি বর্ষের সূচনা রবিউল আউয়াল মাস থেকে হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে মহররম থেকে হিসাব করা হয়েছে। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) মহররম মাসেই হিজরতের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে মদিনা থেকে আগত সাহাবিগণ তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন এবং মাসব্যাপী হজের কার্যক্রম সমাপ্ত করে মদিনায় ফিরে যান। তারা চলে যাওয়ার কিছুদিন পরই হুজুর (সা.) হিজরতের মনোভাব ব্যক্ত করেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে হিজরতের অনুমতি প্রদান করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হিজরি বর্ষের সূচনা মহররম থেকেই হিসাব করা হয়েছে। হজরত ওসমান ও আলি (রা.) ওমরকে মহররম থেকে বর্ষ শুরুর পরামর্শ প্রদান করেছিলেন। অবশ্য কারও কারও প্রস্তাব ছিল, রমজান মাস থেকে বর্ষ শুরুর হিসাব করা হোক। কিন্তু হজরত ওমর জবাবে বলেন, ‘বরং মহররমই হিসাব রাখার জন্য অধিক শোভনীয়। কেননা, লোকজন হজ সমাপ্ত করে মহররম মাসেই বাড়িঘরে ফিরে যায়। তাঁর এই জবাব সবাই পছন্দ করেন এবং মহররম থেকে বর্ষ শুরু করার বিষয়ে সবাই একমত হন।
ইমাম সারাখসি (রহ.) সিয়ারে কবির গ্রন্থের ব্যাখ্যায় আরেকটু বিস্তারিত বয়ান করে লেখেন, হজরত ওমর (রা.) যখন ইসলামি বর্ষ নির্ধারণকল্পে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ সভায় বসেন, তখন কারও পক্ষ থেকে এই পরামর্শ দেওয়া হয় যে রাসুল (সা.)-এর জন্মমুহূর্ত থেকে বর্ষ গণনার সূচনা হোক। কিন্তু হজরত ওমর (রা.) তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘তাহলে বিষয়টি খ্রিষ্টানদের সঙ্গে মিলে যায়। কেননা, তারা খ্রিষ্টীয় সাল ঈসা (আ.)-এর জন্মমুহূর্ত থেকে গণনা করে।’ এ বিষয়ে কারও প্রস্তাব ছিল, নবীজির ইন্তেকালের ঘটনা থেকে বর্ষ গণনা শুরু করা হোক। কিন্তু হজরত ওমর (রা.) এটিও পছন্দ করলেন না। তিনি বললেন, ‘এটি এক বিরাট দুঃখজনক শোকাবহ ঘটনা এবং আমাদের জন্য বড় বিপর্যয়ের দিন। তাই বর্ষ শুরুর মতো এক বিশেষ ঘটনাকে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না করাই উত্তম।’ এভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে হিজরতের সূচনাকালেই সবাই ঐকমত্য পোষণ করেন।
লেখক: প্রশিক্ষক, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি, রাজশাহী
ইসলামি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সনের সূচনা নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায়। এক. হিজরতের পরপরই মহানবী (সা.)-এর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় এটির সূচনা হয়। দুই. ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে এটির সূচনা হয়। ইবনে শিহাব জুহরি বলেন, এ দিন থেকেই রাসুল (সা.)-এর নির্দেশে ইসলামি বর্ষপঞ্জির সূচনা হয়। মদিনায় আগমনের পর সবাইকে তাঁর হিজরতের মাস রবিউল আউয়াল থেকে দিন গণনার নির্দেশ দেন। বর্ণনাটি ইমাম হাকেম ‘ইকলিল’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তবে এই বর্ণনার সত্যতা নিয়ে আপত্তি থাকায় ইসলামি চিন্তাবিদগণ গ্রহণ করেননি।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয় মতটিই নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত, সর্বাধিক প্রসিদ্ধ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। শাবি ও মুহাম্মদ ইবনে সিরিন বর্ণনা করেন, একবার হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) হজরত ওমর (রা.)-এর খেলাফতকালে তাঁকে লিখে পাঠান—আপনার বিভিন্ন আদেশনামা আমাদের হস্তগত হয়, কিন্তু কোনোটিতেই কোনো তারিখ উল্লেখ করা থাকে না। তখন একটি নতুন বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন নিয়ে পরামর্শ করার জন্য ওমর (রা.) কয়েকজন সাহাবিকে ডাকেন। একেকজন একেকটি পরামর্শ দেন। ওমর (রা.) হিজরতের সময় থেকে গণনা শুরু করার মতটি পছন্দ করেন। তিনি বলেন, ‘হিজরতের মাধ্যমে ইসলামি বর্ষের সূচনা হওয়াই আমার দৃষ্টিতে যথাযথ। কেননা, হিজরতের মাধ্যমে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে গেছে এবং ইসলামের সম্মান, মর্যাদা ও বিজয়ের সূচনা হয়েছে।’ সবাই তাঁর এই মতামত পছন্দ করেন।
যেহেতু রাসুল (সা.) রবিউল আউয়াল মাসে মদিনায় হিজরত করেছিলেন, তাই হিসাব অনুযায়ী হিজরি বর্ষের সূচনা রবিউল আউয়াল মাস থেকে হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে মহররম থেকে হিসাব করা হয়েছে। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) মহররম মাসেই হিজরতের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে মদিনা থেকে আগত সাহাবিগণ তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন এবং মাসব্যাপী হজের কার্যক্রম সমাপ্ত করে মদিনায় ফিরে যান। তারা চলে যাওয়ার কিছুদিন পরই হুজুর (সা.) হিজরতের মনোভাব ব্যক্ত করেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে হিজরতের অনুমতি প্রদান করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হিজরি বর্ষের সূচনা মহররম থেকেই হিসাব করা হয়েছে। হজরত ওসমান ও আলি (রা.) ওমরকে মহররম থেকে বর্ষ শুরুর পরামর্শ প্রদান করেছিলেন। অবশ্য কারও কারও প্রস্তাব ছিল, রমজান মাস থেকে বর্ষ শুরুর হিসাব করা হোক। কিন্তু হজরত ওমর জবাবে বলেন, ‘বরং মহররমই হিসাব রাখার জন্য অধিক শোভনীয়। কেননা, লোকজন হজ সমাপ্ত করে মহররম মাসেই বাড়িঘরে ফিরে যায়। তাঁর এই জবাব সবাই পছন্দ করেন এবং মহররম থেকে বর্ষ শুরু করার বিষয়ে সবাই একমত হন।
ইমাম সারাখসি (রহ.) সিয়ারে কবির গ্রন্থের ব্যাখ্যায় আরেকটু বিস্তারিত বয়ান করে লেখেন, হজরত ওমর (রা.) যখন ইসলামি বর্ষ নির্ধারণকল্পে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ সভায় বসেন, তখন কারও পক্ষ থেকে এই পরামর্শ দেওয়া হয় যে রাসুল (সা.)-এর জন্মমুহূর্ত থেকে বর্ষ গণনার সূচনা হোক। কিন্তু হজরত ওমর (রা.) তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘তাহলে বিষয়টি খ্রিষ্টানদের সঙ্গে মিলে যায়। কেননা, তারা খ্রিষ্টীয় সাল ঈসা (আ.)-এর জন্মমুহূর্ত থেকে গণনা করে।’ এ বিষয়ে কারও প্রস্তাব ছিল, নবীজির ইন্তেকালের ঘটনা থেকে বর্ষ গণনা শুরু করা হোক। কিন্তু হজরত ওমর (রা.) এটিও পছন্দ করলেন না। তিনি বললেন, ‘এটি এক বিরাট দুঃখজনক শোকাবহ ঘটনা এবং আমাদের জন্য বড় বিপর্যয়ের দিন। তাই বর্ষ শুরুর মতো এক বিশেষ ঘটনাকে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না করাই উত্তম।’ এভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে হিজরতের সূচনাকালেই সবাই ঐকমত্য পোষণ করেন।
লেখক: প্রশিক্ষক, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি, রাজশাহী
প্রত্যেক মুসলমানের চূড়ান্ত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও একান্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে জান্নাতের মেহমান হওয়া। কেননা জান্নাত অনন্ত সুখ, শান্তি ও অসংখ্য নিয়ামতের জায়গা। আল্লাহ তাআলা নিজেই জান্নাতের দিকে বান্দাদের ডেকেছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ শান্তির ঘরের দিকে ডাকছেন।’ (সুরা ইউনুস: ২৫)
১৫ ঘণ্টা আগেসংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির বরাত দিয়ে গালফ নিউজ জানিয়েছে, ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়ালের চাঁদ দেখা যাবে আগামী ৩ নভেম্বর। এই চাঁদ দেখার সঙ্গে রমজান শুরুর ব্যাপারে পূর্বাভাস পান জ্যোতির্বিদেরা।
১ দিন আগেপ্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জন্য মহান আল্লাহর পরীক্ষা। দুর্যোগের সময় মুমিনের বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে এসেছে। এখানে কয়েকটি করণীয় বিষয় তুলে ধরা হলো—
২ দিন আগেমোহরে নবুয়ত। শাব্দিক অর্থ নবুয়তের সিলমোহর। সিরাত বিশেষজ্ঞদের মতে, মোহরে নবুয়ত হলো হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ঘাড় মোবারকের নিচে অবস্থিত গোশতের টুকরা, যা তাঁর রিসালাত ও নবুয়তের প্রমাণ।
৩ দিন আগে