ড. ক্রেইগ কনসিডাইন
মক্কার সাধারণ এক ক্রীতদাস ছিলেন বিলাল ইবনে রাবাহ। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দাওয়াতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবিদের কাতারে নিজের নাম লেখান। বলা যায়, পৃথিবীর ইতিহাসে বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের সূত্রপাত হয়েছিল তাঁকে ঘিরেই। তাঁর বাবা ছিলেন আরব ক্রীতদাস। মা ছিলেন ইথিওপিয়ান রাজকুমারী। সেকালের নিয়মমতো কোনো এক দুর্ভাগ্যের বেড়াজালে আটকে তিনি ক্রীতদাসীতে পরিণত হন।
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আনীত ধর্মে বিশ্বাস স্থাপনের কারণে বিলালের ওপর নেমে আসে দুর্বিষহ নির্যাতন। বিলালের মনিব তাঁর ওপর নির্মম অত্যাচার করতে শুরু করে। তাঁকে মক্কার পথে-প্রান্তরে, উত্তপ্ত মরুভূমিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হতো। ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার জন্য অত্যুৎসাহী জনতার কাছে ছুড়ে দেওয়া হতো। জ্বলন্ত অঙ্গারসম মরুভূমিতে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হতো। বুকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হতো বিশাল পাথর। এভাবে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে ইসলাম ত্যাগের আদেশ দিত নিষ্ঠুর মনিব। কিন্তু বিলাল বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হারাননি। তাঁর ইমানের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। মৃত্যুমুখে পতিত হয়েও তিনি ‘আল্লাহ এক’ ‘আল্লাহ এক’ বলে নির্যাতন সয়ে যান।
ইসলামের প্রতি বিলালের অটুট বিশ্বাস ও নজিরবিহীন ত্যাগ দেখে নবী মুহাম্মদ (সা.) আবু বকরের মাধ্যমে নিষ্ঠুর মনিবের কাছ থেকে বেশ চড়া দামে তাঁকে কিনে নেন। এরপর রাসুলের পরামর্শে আবু বকর তাঁকে দাসত্বের কবল থেকে মুক্ত করে দেন।
দাসত্বের শিকল থেকে মুক্ত হওয়ার পর বিলাল প্রাথমিক মুসলিম সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাতারে শামিল হলেন এবং নবীজির সঙ্গে মক্কায় দাওয়াতের কাজ চালিয়ে গেলেন। মদিনায় হিজরতের পর আজানের প্রত্যাদেশ এলে নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁকেই মসজিদে নববিতে আজান দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন। এভাবে তিনি ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিনের মর্যাদা লাভ করেন।
বিলাল কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন। তাঁর গায়ের রঙের কারণে বিষয়টি অনেকের কাছে বেমানান ঠেকল। একজন কালো মানুষের জন্য এমন সম্মানজনক দায়িত্ব মানায় না! একবার কোনো এক ঘটনার জেরে এক সাহাবি মুখ ফসকে বিলালের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন। ‘এই, কৃষ্ণাঙ্গের ছেলে’ বলে সম্বোধন করে তাঁকে অপমানিত করলেন। এ ঘটনায় নবীজি খুব বেশি অসন্তুষ্ট হলেন। সেই সাহাবিকে ডেকে বললেন, ‘তুমি তাঁর মায়ের নামে গালি দিয়েছ? তোমার মধ্যে দেখি এখনো কিছুটা জাহেলি যুগের স্বভাব রয়ে গেছে।’
এভাবেই বর্ণবৈষম্যের বিষবৃক্ষের শিকড় উপড়ে ফেলতে নবী মুহাম্মদ (সা.) মনোযোগী হন। যে সমাজে ব্যক্তির বংশপরিচয় তার নীতি-নৈতিকতা ও সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি ভাবা হয়, সেই সমাজকে তিনি অন্ধকার রাজ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সেই বর্ণবাদ বিরোধিতা সপ্তম শতাব্দীর প্রভাবশালী আরব বর্ণবাদকে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেয়। ইসলামের প্রভাব যতই বেড়েছে, বর্ণবৈষম্যের কুসংস্কার পেছনে ঠেলে সাদা-কালোর পার্থক্য না করে মুসলমানরা একই শামিয়ানার তলে আশ্রয় নিয়েছে।
তর্ক সাপেক্ষে, নবী মুহাম্মদ (সা.)ই ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, বর্ণ বা বংশগুণে কেউ কারও ঊর্ধ্বে নয়। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে আরাফাতের ময়দানে দেওয়া বিখ্যাত বিদায় হজের ভাষণটি আজও ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে আছে। সেই ভাষণে নবী মুহাম্মদ (সা.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বর্ণবাদের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘সমগ্র মানবজাতি আদম ও হাওয়ার সন্তান। অনারবের ওপর আরবের কোনো প্রাধান্য নেই। তেমনি আরবের ওপর অনারবেরও কোনো প্রাধান্য নেই। শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের বা কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো প্রাধান্য নেই। প্রাধান্য কেবল তাকওয়া, পুণ্য ও ভালো কাজের ভিত্তিতেই হবে।’
আজও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সেই শিক্ষা বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে মানবজাতিকে আলো বিতরণ করছে। যুগে যুগে মানুষ বর্ণপ্রথার মূলোৎপাটনে এবং সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আসছে। মুসলিম নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মালিক আল-শাহবাজের কথাই ধরা যাক, ম্যালকম এক্স নামেই যিনি অধিক পরিচিত। গত পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যাপক সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।
মক্কায় হজ পালন শেষে ম্যালকম এক্স সেই বিখ্যাত পত্রটি লেখেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘এখানে সারা বিশ্ব থেকে আগত লক্ষাধিক হাজি অংশ নিয়েছিলেন। কারও নীল চোখ, সোনালি চুল; কেউ আবার আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ। কিন্তু আমরা সবাই একই ধর্মানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের প্রকৃত অর্থ এখানেই ফুটে উঠেছে। অথচ আমার আমেরিকার অভিজ্ঞতা আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে সাদা-কালোর এরকম বৈচিত্র্যপূর্ণ মিলনের অস্তিত্ব পৃথিবীর বুকে অসম্ভব!’
ম্যালকম এক্স আরও বলেছেন, ‘নিজেদের বর্ণের বাইরে গিয়ে, অন্যদের সঙ্গে মিশে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ ভ্রাতৃত্বের চর্চা ইতিপূর্বে তিনি কখনো দেখেননি। ম্যালকম মনে করেন, হজ বর্ণবাদের ঘৃণ্য দেয়াল ভেঙে দেয় এবং বর্ণসমতার পথ দেখায়।’
এ ছাড়া নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বর্ণবাদবিরোধী শিক্ষা সাধারণ বর্ণসমতার চিন্তাধারা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাধারণ অবর্ণবাদীরা বর্ণবাদের কুসংস্কারগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে না, সোচ্চারভাবে মত প্রকাশ করে না। সমাজ থেকে বর্ণবাদের অভিশাপ মুছে দিতেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। পক্ষান্তরে, নবী মুহাম্মদ (সা.) কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকা ভেতরে-বাইরের সব ধরনের বর্ণবাদের দেয়াল ভেঙে ফেলেন। তিনি বর্ণবাদকে সমাজের মারাত্মক উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করেন, যার মূল কারণ মানুষের অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্বের মনোভাব।
আজকের পৃথিবী খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তাই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। আমি নিজেও একজন অমুসলিম, কিন্তু আমি স্বীকার করতে বাধ্য, নবী মুহাম্মদের বর্ণবৈষম্যবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমি অনুপ্রাণিত হই। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, একজন মানুষ তার গোত্র পরিচয়ে অন্য কারও থেকে আলাদা নয়, বরং উন্নত চরিত্র ও ভালো আচরণের মাধ্যমে একে অন্যের চেয়ে পৃথক ও স্বতন্ত্র বিবেচিত হয়।
লেখক: আইরিশ-আমেরিকান স্কলার এবং টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক।
‘অ্যাবাউট ইসলাম’ থেকে মিশকাত মুহাম্মদের ভাষান্তর
মক্কার সাধারণ এক ক্রীতদাস ছিলেন বিলাল ইবনে রাবাহ। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দাওয়াতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবিদের কাতারে নিজের নাম লেখান। বলা যায়, পৃথিবীর ইতিহাসে বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের সূত্রপাত হয়েছিল তাঁকে ঘিরেই। তাঁর বাবা ছিলেন আরব ক্রীতদাস। মা ছিলেন ইথিওপিয়ান রাজকুমারী। সেকালের নিয়মমতো কোনো এক দুর্ভাগ্যের বেড়াজালে আটকে তিনি ক্রীতদাসীতে পরিণত হন।
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আনীত ধর্মে বিশ্বাস স্থাপনের কারণে বিলালের ওপর নেমে আসে দুর্বিষহ নির্যাতন। বিলালের মনিব তাঁর ওপর নির্মম অত্যাচার করতে শুরু করে। তাঁকে মক্কার পথে-প্রান্তরে, উত্তপ্ত মরুভূমিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হতো। ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার জন্য অত্যুৎসাহী জনতার কাছে ছুড়ে দেওয়া হতো। জ্বলন্ত অঙ্গারসম মরুভূমিতে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হতো। বুকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হতো বিশাল পাথর। এভাবে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে ইসলাম ত্যাগের আদেশ দিত নিষ্ঠুর মনিব। কিন্তু বিলাল বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হারাননি। তাঁর ইমানের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। মৃত্যুমুখে পতিত হয়েও তিনি ‘আল্লাহ এক’ ‘আল্লাহ এক’ বলে নির্যাতন সয়ে যান।
ইসলামের প্রতি বিলালের অটুট বিশ্বাস ও নজিরবিহীন ত্যাগ দেখে নবী মুহাম্মদ (সা.) আবু বকরের মাধ্যমে নিষ্ঠুর মনিবের কাছ থেকে বেশ চড়া দামে তাঁকে কিনে নেন। এরপর রাসুলের পরামর্শে আবু বকর তাঁকে দাসত্বের কবল থেকে মুক্ত করে দেন।
দাসত্বের শিকল থেকে মুক্ত হওয়ার পর বিলাল প্রাথমিক মুসলিম সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাতারে শামিল হলেন এবং নবীজির সঙ্গে মক্কায় দাওয়াতের কাজ চালিয়ে গেলেন। মদিনায় হিজরতের পর আজানের প্রত্যাদেশ এলে নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁকেই মসজিদে নববিতে আজান দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন। এভাবে তিনি ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিনের মর্যাদা লাভ করেন।
বিলাল কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন। তাঁর গায়ের রঙের কারণে বিষয়টি অনেকের কাছে বেমানান ঠেকল। একজন কালো মানুষের জন্য এমন সম্মানজনক দায়িত্ব মানায় না! একবার কোনো এক ঘটনার জেরে এক সাহাবি মুখ ফসকে বিলালের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন। ‘এই, কৃষ্ণাঙ্গের ছেলে’ বলে সম্বোধন করে তাঁকে অপমানিত করলেন। এ ঘটনায় নবীজি খুব বেশি অসন্তুষ্ট হলেন। সেই সাহাবিকে ডেকে বললেন, ‘তুমি তাঁর মায়ের নামে গালি দিয়েছ? তোমার মধ্যে দেখি এখনো কিছুটা জাহেলি যুগের স্বভাব রয়ে গেছে।’
এভাবেই বর্ণবৈষম্যের বিষবৃক্ষের শিকড় উপড়ে ফেলতে নবী মুহাম্মদ (সা.) মনোযোগী হন। যে সমাজে ব্যক্তির বংশপরিচয় তার নীতি-নৈতিকতা ও সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি ভাবা হয়, সেই সমাজকে তিনি অন্ধকার রাজ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সেই বর্ণবাদ বিরোধিতা সপ্তম শতাব্দীর প্রভাবশালী আরব বর্ণবাদকে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেয়। ইসলামের প্রভাব যতই বেড়েছে, বর্ণবৈষম্যের কুসংস্কার পেছনে ঠেলে সাদা-কালোর পার্থক্য না করে মুসলমানরা একই শামিয়ানার তলে আশ্রয় নিয়েছে।
তর্ক সাপেক্ষে, নবী মুহাম্মদ (সা.)ই ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, বর্ণ বা বংশগুণে কেউ কারও ঊর্ধ্বে নয়। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে আরাফাতের ময়দানে দেওয়া বিখ্যাত বিদায় হজের ভাষণটি আজও ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে আছে। সেই ভাষণে নবী মুহাম্মদ (সা.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বর্ণবাদের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘সমগ্র মানবজাতি আদম ও হাওয়ার সন্তান। অনারবের ওপর আরবের কোনো প্রাধান্য নেই। তেমনি আরবের ওপর অনারবেরও কোনো প্রাধান্য নেই। শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের বা কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো প্রাধান্য নেই। প্রাধান্য কেবল তাকওয়া, পুণ্য ও ভালো কাজের ভিত্তিতেই হবে।’
আজও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সেই শিক্ষা বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে মানবজাতিকে আলো বিতরণ করছে। যুগে যুগে মানুষ বর্ণপ্রথার মূলোৎপাটনে এবং সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আসছে। মুসলিম নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মালিক আল-শাহবাজের কথাই ধরা যাক, ম্যালকম এক্স নামেই যিনি অধিক পরিচিত। গত পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যাপক সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।
মক্কায় হজ পালন শেষে ম্যালকম এক্স সেই বিখ্যাত পত্রটি লেখেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘এখানে সারা বিশ্ব থেকে আগত লক্ষাধিক হাজি অংশ নিয়েছিলেন। কারও নীল চোখ, সোনালি চুল; কেউ আবার আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ। কিন্তু আমরা সবাই একই ধর্মানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের প্রকৃত অর্থ এখানেই ফুটে উঠেছে। অথচ আমার আমেরিকার অভিজ্ঞতা আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে সাদা-কালোর এরকম বৈচিত্র্যপূর্ণ মিলনের অস্তিত্ব পৃথিবীর বুকে অসম্ভব!’
ম্যালকম এক্স আরও বলেছেন, ‘নিজেদের বর্ণের বাইরে গিয়ে, অন্যদের সঙ্গে মিশে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ ভ্রাতৃত্বের চর্চা ইতিপূর্বে তিনি কখনো দেখেননি। ম্যালকম মনে করেন, হজ বর্ণবাদের ঘৃণ্য দেয়াল ভেঙে দেয় এবং বর্ণসমতার পথ দেখায়।’
এ ছাড়া নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বর্ণবাদবিরোধী শিক্ষা সাধারণ বর্ণসমতার চিন্তাধারা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাধারণ অবর্ণবাদীরা বর্ণবাদের কুসংস্কারগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে না, সোচ্চারভাবে মত প্রকাশ করে না। সমাজ থেকে বর্ণবাদের অভিশাপ মুছে দিতেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। পক্ষান্তরে, নবী মুহাম্মদ (সা.) কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকা ভেতরে-বাইরের সব ধরনের বর্ণবাদের দেয়াল ভেঙে ফেলেন। তিনি বর্ণবাদকে সমাজের মারাত্মক উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করেন, যার মূল কারণ মানুষের অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্বের মনোভাব।
আজকের পৃথিবী খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তাই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। আমি নিজেও একজন অমুসলিম, কিন্তু আমি স্বীকার করতে বাধ্য, নবী মুহাম্মদের বর্ণবৈষম্যবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমি অনুপ্রাণিত হই। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, একজন মানুষ তার গোত্র পরিচয়ে অন্য কারও থেকে আলাদা নয়, বরং উন্নত চরিত্র ও ভালো আচরণের মাধ্যমে একে অন্যের চেয়ে পৃথক ও স্বতন্ত্র বিবেচিত হয়।
লেখক: আইরিশ-আমেরিকান স্কলার এবং টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক।
‘অ্যাবাউট ইসলাম’ থেকে মিশকাত মুহাম্মদের ভাষান্তর
প্রত্যেক মুসলমানের চূড়ান্ত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও একান্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে জান্নাতের মেহমান হওয়া। কেননা জান্নাত অনন্ত সুখ, শান্তি ও অসংখ্য নিয়ামতের জায়গা। আল্লাহ তাআলা নিজেই জান্নাতের দিকে বান্দাদের ডেকেছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ শান্তির ঘরের দিকে ডাকছেন।’ (সুরা ইউনুস: ২৫)
১ দিন আগেসংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির বরাত দিয়ে গালফ নিউজ জানিয়েছে, ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়ালের চাঁদ দেখা যাবে আগামী ৩ নভেম্বর। এই চাঁদ দেখার সঙ্গে রমজান শুরুর ব্যাপারে পূর্বাভাস পান জ্যোতির্বিদেরা।
২ দিন আগেপ্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জন্য মহান আল্লাহর পরীক্ষা। দুর্যোগের সময় মুমিনের বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে এসেছে। এখানে কয়েকটি করণীয় বিষয় তুলে ধরা হলো—
২ দিন আগেমোহরে নবুয়ত। শাব্দিক অর্থ নবুয়তের সিলমোহর। সিরাত বিশেষজ্ঞদের মতে, মোহরে নবুয়ত হলো হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ঘাড় মোবারকের নিচে অবস্থিত গোশতের টুকরা, যা তাঁর রিসালাত ও নবুয়তের প্রমাণ।
৩ দিন আগে