মইনুল হাসান
ভবিষ্যতে আমরা কী খাব?
জীবনকে খাদ্য থেকে আলাদা করা যায় না। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। আর ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যের বিকল্প কিছু নেই। অন্তত এখনো সে বিকল্প মানুষের অজানা।
বিজ্ঞান কল্পকাহিনি যেমন রটিয়ে বেড়াচ্ছে, ভবিষ্যতে মানুষ একটি মাত্র ছোট ট্যাবলেট, অর্থাৎ পুরিয়া মুখে পুরে দিব্যি বছরখানেক না খেয়ে থাকতে পারবে বা শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে হাজার বছরের লম্বা এক ঘুম দিয়ে জেগে উঠে নতুন পৃথিবী দেখবে।
একদিন হয়তো একটি ট্যাবলেট আমাদের খাদ্য সংকট থেকে রক্ষা করবে। তবে সে ভরসা করে বিজ্ঞ বিজ্ঞানীরা বসে থাকতে পারেন না। অতটা সময় এখন আর এ গ্রহের মানুষের হাতে নেই। কারণ, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। স্বাভাবিকভাবেই জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাহিদা। প্রধান চাহিদা হচ্ছে খাদ্য, বিশেষ করে আমিষের চাহিদা মেটাতে যেসব পশু-পাখি, মাছ আমরা লালন–পালন করি, তা বেশ সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য। এ জন্য বাড়তি স্থান এবং উত্তরোত্তর দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠা পানযোগ্য পানির বিপুল অপচয় হয়। ব্যাপক রাসায়নিক সার, কীট-পতঙ্গ এবং আবর্জনানাশক ইত্যাদি ব্যবহার মোটেই পরিবেশবান্ধব নয়। চাষযোগ্য জমিও আর বাকি নেই। মানুষ, পালিত পশু-পাখি ও মাছের জন্য খাদ্য জোগাতে উজাড় হচ্ছে পৃথিবীর ফুসফুস বনভূমি। এর সঙ্গে আছে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন।
আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ১০০০ কোটির কাছে চলে যাবে। বাড়তি মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া হবে অনেকটাই অসাধ্যসাধনের মতো একটা চ্যালেঞ্জ। উন্নত প্রযুক্তির কারণে কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়লেও ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ পত্রিকা জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষকেরা ২১ শতাংশ ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। এ কারণে উদ্বেগ বাড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে খাদ্য অপচয়। জমি থেকে আমাদের মুখ পর্যন্ত পৌঁছানোর মাঝখানে পথেই হারিয়ে যায় ৩০ শতাংশ খাদ্য। তা ছাড়া মানুষের ব্যবহারের জন্য এক বছরে আমাদের এই পৃথিবী যেটুকু নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ উৎপন্ন করে, তা দিয়ে আট মাসও চলে না। ২০২০ সালেই যেমন নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ ২২ আগস্টেই সাবাড় করে দিয়েছিল পৃথিবীর মানুষেরা। ফলে বছরের বাকি চার মাস সময় আমাদের ধারের ওপর চলতে হয়েছে। এমনটিই জানিয়েছে গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্ক।
বর্তমানে প্রতি ১০ জনে ১ জন মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে। ভবিষ্যতে খাদ্য সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে। এসব বিবেচনায় ভবিষ্যতে খাদ্য সমস্যা সমাধানে জৈবপ্রযুক্তিবিদেরা আমাদের খাদ্যের নতুন উৎসের সন্ধান দিচ্ছেন। আগামী দিনে নিশ্চিতভাবে যেসব খাদ্যে পরিতৃপ্ত থাকতে হবে, সেগুলোর সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় থাকা ভালো।
কীট-পতঙ্গ
প্রথমবারের মতো চলতি বছরের ৪ মে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ২৭টি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা গুবরেপোকার লার্ভা বা শুককীট মানুষের খাদ্য হিসেবে নিরাপদ বলে ছাড়পত্র দিয়েছে। ফ্রান্সের পোকামাকড় দিয়ে খাদ্য প্রস্তুতকারী সংস্থা মাইক্রোনিউট্রিসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় খাদ্যনিরাপত্তা সংস্থা আমিষের নতুন উৎস হিসেবে কীটপতঙ্গকে বিবেচনায় নিয়েছে। ইউরোপীয় খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থার অনুমোদন পাওয়ার পর ইউরোপের দেশগুলোতে গুবরেপোকার লার্ভা মানুষের নতুন খাদ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল।
এক কথায় উন্নত আমিষ ফাইবার, আয়রন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ কীট-পতঙ্গ স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব, সময় ও অর্থসাশ্রয়ী। বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, প্রাণিজগতের এক বিশাল অংশ (৮৫ শতাংশ) দখল করে আছে এই সন্ধিপদী কীটপতঙ্গেরা। এদের রয়েছে এক বিশাল ও বৈচিত্র্যময় ভান্ডার। তাই পোকামাকড়ের এমন আমিষ, প্রচলিত আমিষের অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও উন্নত বিকল্প হতে পারে। এতে মাত্র ২৫ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন হবে।
শৈবাল
বহুদিন আগে থেকেই পৃথিবীর বহু অঞ্চলে কীট-পতঙ্গের মতো শৈবালও মানুষের খাদ্য হিসেবে সমাদর লাভ করেছে। তবে তা নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা সবজির বিকল্প হিসেবে বেশ কিছু প্রজাতির শৈবালকে চিহ্নিত করেছেন। সেসব শৈবাল পুষ্টিমানে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য; বিশেষ করে উন্নত আমিষ, আঁশ, ভিটামিন ও উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড, যেমন ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ।
চীন ও নাইজারে নীল অণু শৈবাল ‘স্পিরুলিনা’ মানুষ এবং পশু-পাখির খাদ্য হিসেবে উৎপাদনে সাফল্য লাভ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মরু অঞ্চলে অপেয় পানি ব্যবহার করে এমন পুষ্টিকর অণু শৈবাল উৎপাদন করা সম্ভব।
বিজ্ঞানীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে সহজে উৎপাদন করা যায় এমন বেশ কিছু খাবার যোগ্য শৈবাল। এ তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রায় ১০ হাজার ধরনের শৈবাল। এর মধ্যে ১৪৫ ধরনের শৈবাল ইতিমধ্যে মানুষের খাদ্যতালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
অণুজীব থেকে দুধ, ডিম ও চকলেট উৎপাদন
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আরেকটি চমকপ্রদ খবরের খোঁজ দিয়েছেন। এটি আমাদের বলছে, দুধের জন্য আর গাভির দরকার হবে না। ভবিষ্যতে এককোষী অণুজীব হবে দুধের প্রধান উৎস। তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক তামির টুলের ও খাদ্য-প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ড. আইয়াল ইফারগান দুজন মিলে এককোষী ছত্রাক ইস্ট থেকে দুধ উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন। পুষ্টিগুণের সঙ্গে রং, ঘ্রাণ, স্বাদ ও গঠন বিবেচনায় অণুজীব উৎপাদিত দুধ কোনো অংশেই কম যায় না। বরং আরও কিছু পুষ্টিগুণ যোগ করে স্বাস্থ্যের জন্য আরও উত্তম করা যাবে বলে জানিয়েছেন। এমনকি এ থেকে উৎকৃষ্ট মানের চিজ অর্থাৎ পনির তৈরি করা যাবে।
জিনতত্ত্ব প্রকৌশল প্রয়োগ করে অণুজীব থেকে ‘ঈশ্বরের খাদ্য’ নামে পরিচিত বিশ্বব্যাপী সমাদৃত জাদুকরী স্বাদের চকলেট উৎপাদন করতে প্রযুক্তিবিদেরা সফল হয়েছেন। তাঁরা এই ইস্ট ব্যবহার করে ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ উৎপাদনেও সমর্থ হয়েছেন। ডিমের বাড়তি চাহিদা, জনপ্রিয়তার কথা ভেবেই বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উদ্ভিজ্জ কৃত্রিম ডিম নিয়ে বাজার জাঁকিয়ে বসেছে।
আজ অণুজীব থেকে দুধ, ডিম, মজার চকলেট উৎপাদনের জৈবপ্রযুক্তি আমাদের হাতের মুঠোয় আছে। বলে রাখা ভালো, অণুজীব হলেও এই প্রজাতির ইস্ট খুব নিরাপদ ও উপকারী।
গবেষণাগারে মাংস উৎপাদন
গত বছর ২ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ গবেষণাগারে তৈরি কৃত্রিম মাংস খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ অচিরেই অনুমোদন দিতে যাচ্ছে এটিকে। পশু-পাখি ও মাছের একটি টিস্যু থেকে অবিকল স্বাদ, ঘ্রাণ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ মাংস এখন আর কোনো কল্পকাহিনি নয়। অচিরেই সস্তা, ক্ষতিকর উপাদানমুক্ত ‘ক্লিন মিট’ যে জনপ্রিয়তা পাবে, তাতে মোটেই সন্দেহ নেই। আর স্বাদে, গন্ধে, পুষ্টিতে অতুলনীয় এ বিকল্প আমিষ সবার জন্য হবে এক উপাদেয় খাদ্য। এ ব্যাপারে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। খাদ্যের জন্য পশু-পাখি, মাছ বধ করতে হবে না অদূর ভবিষ্যতে।
ভবিষ্যতে রেস্তোরাঁয় থাকবে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার। আধুনিক প্রযুক্তিতে ঠাসা এই যন্ত্র গ্রাহকের পছন্দের খাবার তার সামনেই তৈরি করে দেবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের পকেটে বা ত্বকের নিচে থাকা খুবই ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য কার্ড (হেলথ কার্ড) বিশ্লেষণ করে গ্রাহকের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বাদ দিয়ে উপকারী উপাদান যোগ করে সুষম ও মুখরোচক খাবার পরিবেশন করবে।
আজ কল্পকাহিনি মনে হলেও অচিরেই তা হবে অনেকটাই নিত্যনৈমিত্তিক; সাধারণ ব্যাপার। তাই এ মুহূর্তে যে প্রশ্ন বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, তা হলো, ভবিষ্যতে আমরা কী খাব?
লেখক: গবেষক ও লেখক, ফ্রান্স
ভবিষ্যতে আমরা কী খাব?
জীবনকে খাদ্য থেকে আলাদা করা যায় না। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। আর ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যের বিকল্প কিছু নেই। অন্তত এখনো সে বিকল্প মানুষের অজানা।
বিজ্ঞান কল্পকাহিনি যেমন রটিয়ে বেড়াচ্ছে, ভবিষ্যতে মানুষ একটি মাত্র ছোট ট্যাবলেট, অর্থাৎ পুরিয়া মুখে পুরে দিব্যি বছরখানেক না খেয়ে থাকতে পারবে বা শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে হাজার বছরের লম্বা এক ঘুম দিয়ে জেগে উঠে নতুন পৃথিবী দেখবে।
একদিন হয়তো একটি ট্যাবলেট আমাদের খাদ্য সংকট থেকে রক্ষা করবে। তবে সে ভরসা করে বিজ্ঞ বিজ্ঞানীরা বসে থাকতে পারেন না। অতটা সময় এখন আর এ গ্রহের মানুষের হাতে নেই। কারণ, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। স্বাভাবিকভাবেই জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাহিদা। প্রধান চাহিদা হচ্ছে খাদ্য, বিশেষ করে আমিষের চাহিদা মেটাতে যেসব পশু-পাখি, মাছ আমরা লালন–পালন করি, তা বেশ সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য। এ জন্য বাড়তি স্থান এবং উত্তরোত্তর দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠা পানযোগ্য পানির বিপুল অপচয় হয়। ব্যাপক রাসায়নিক সার, কীট-পতঙ্গ এবং আবর্জনানাশক ইত্যাদি ব্যবহার মোটেই পরিবেশবান্ধব নয়। চাষযোগ্য জমিও আর বাকি নেই। মানুষ, পালিত পশু-পাখি ও মাছের জন্য খাদ্য জোগাতে উজাড় হচ্ছে পৃথিবীর ফুসফুস বনভূমি। এর সঙ্গে আছে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন।
আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ১০০০ কোটির কাছে চলে যাবে। বাড়তি মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া হবে অনেকটাই অসাধ্যসাধনের মতো একটা চ্যালেঞ্জ। উন্নত প্রযুক্তির কারণে কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়লেও ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ পত্রিকা জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষকেরা ২১ শতাংশ ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। এ কারণে উদ্বেগ বাড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে খাদ্য অপচয়। জমি থেকে আমাদের মুখ পর্যন্ত পৌঁছানোর মাঝখানে পথেই হারিয়ে যায় ৩০ শতাংশ খাদ্য। তা ছাড়া মানুষের ব্যবহারের জন্য এক বছরে আমাদের এই পৃথিবী যেটুকু নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ উৎপন্ন করে, তা দিয়ে আট মাসও চলে না। ২০২০ সালেই যেমন নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ ২২ আগস্টেই সাবাড় করে দিয়েছিল পৃথিবীর মানুষেরা। ফলে বছরের বাকি চার মাস সময় আমাদের ধারের ওপর চলতে হয়েছে। এমনটিই জানিয়েছে গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্ক।
বর্তমানে প্রতি ১০ জনে ১ জন মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে। ভবিষ্যতে খাদ্য সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে। এসব বিবেচনায় ভবিষ্যতে খাদ্য সমস্যা সমাধানে জৈবপ্রযুক্তিবিদেরা আমাদের খাদ্যের নতুন উৎসের সন্ধান দিচ্ছেন। আগামী দিনে নিশ্চিতভাবে যেসব খাদ্যে পরিতৃপ্ত থাকতে হবে, সেগুলোর সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় থাকা ভালো।
কীট-পতঙ্গ
প্রথমবারের মতো চলতি বছরের ৪ মে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ২৭টি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা গুবরেপোকার লার্ভা বা শুককীট মানুষের খাদ্য হিসেবে নিরাপদ বলে ছাড়পত্র দিয়েছে। ফ্রান্সের পোকামাকড় দিয়ে খাদ্য প্রস্তুতকারী সংস্থা মাইক্রোনিউট্রিসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় খাদ্যনিরাপত্তা সংস্থা আমিষের নতুন উৎস হিসেবে কীটপতঙ্গকে বিবেচনায় নিয়েছে। ইউরোপীয় খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থার অনুমোদন পাওয়ার পর ইউরোপের দেশগুলোতে গুবরেপোকার লার্ভা মানুষের নতুন খাদ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল।
এক কথায় উন্নত আমিষ ফাইবার, আয়রন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ কীট-পতঙ্গ স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব, সময় ও অর্থসাশ্রয়ী। বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, প্রাণিজগতের এক বিশাল অংশ (৮৫ শতাংশ) দখল করে আছে এই সন্ধিপদী কীটপতঙ্গেরা। এদের রয়েছে এক বিশাল ও বৈচিত্র্যময় ভান্ডার। তাই পোকামাকড়ের এমন আমিষ, প্রচলিত আমিষের অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও উন্নত বিকল্প হতে পারে। এতে মাত্র ২৫ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন হবে।
শৈবাল
বহুদিন আগে থেকেই পৃথিবীর বহু অঞ্চলে কীট-পতঙ্গের মতো শৈবালও মানুষের খাদ্য হিসেবে সমাদর লাভ করেছে। তবে তা নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা সবজির বিকল্প হিসেবে বেশ কিছু প্রজাতির শৈবালকে চিহ্নিত করেছেন। সেসব শৈবাল পুষ্টিমানে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য; বিশেষ করে উন্নত আমিষ, আঁশ, ভিটামিন ও উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড, যেমন ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ।
চীন ও নাইজারে নীল অণু শৈবাল ‘স্পিরুলিনা’ মানুষ এবং পশু-পাখির খাদ্য হিসেবে উৎপাদনে সাফল্য লাভ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মরু অঞ্চলে অপেয় পানি ব্যবহার করে এমন পুষ্টিকর অণু শৈবাল উৎপাদন করা সম্ভব।
বিজ্ঞানীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে সহজে উৎপাদন করা যায় এমন বেশ কিছু খাবার যোগ্য শৈবাল। এ তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রায় ১০ হাজার ধরনের শৈবাল। এর মধ্যে ১৪৫ ধরনের শৈবাল ইতিমধ্যে মানুষের খাদ্যতালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
অণুজীব থেকে দুধ, ডিম ও চকলেট উৎপাদন
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আরেকটি চমকপ্রদ খবরের খোঁজ দিয়েছেন। এটি আমাদের বলছে, দুধের জন্য আর গাভির দরকার হবে না। ভবিষ্যতে এককোষী অণুজীব হবে দুধের প্রধান উৎস। তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক তামির টুলের ও খাদ্য-প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ড. আইয়াল ইফারগান দুজন মিলে এককোষী ছত্রাক ইস্ট থেকে দুধ উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন। পুষ্টিগুণের সঙ্গে রং, ঘ্রাণ, স্বাদ ও গঠন বিবেচনায় অণুজীব উৎপাদিত দুধ কোনো অংশেই কম যায় না। বরং আরও কিছু পুষ্টিগুণ যোগ করে স্বাস্থ্যের জন্য আরও উত্তম করা যাবে বলে জানিয়েছেন। এমনকি এ থেকে উৎকৃষ্ট মানের চিজ অর্থাৎ পনির তৈরি করা যাবে।
জিনতত্ত্ব প্রকৌশল প্রয়োগ করে অণুজীব থেকে ‘ঈশ্বরের খাদ্য’ নামে পরিচিত বিশ্বব্যাপী সমাদৃত জাদুকরী স্বাদের চকলেট উৎপাদন করতে প্রযুক্তিবিদেরা সফল হয়েছেন। তাঁরা এই ইস্ট ব্যবহার করে ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ উৎপাদনেও সমর্থ হয়েছেন। ডিমের বাড়তি চাহিদা, জনপ্রিয়তার কথা ভেবেই বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উদ্ভিজ্জ কৃত্রিম ডিম নিয়ে বাজার জাঁকিয়ে বসেছে।
আজ অণুজীব থেকে দুধ, ডিম, মজার চকলেট উৎপাদনের জৈবপ্রযুক্তি আমাদের হাতের মুঠোয় আছে। বলে রাখা ভালো, অণুজীব হলেও এই প্রজাতির ইস্ট খুব নিরাপদ ও উপকারী।
গবেষণাগারে মাংস উৎপাদন
গত বছর ২ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ গবেষণাগারে তৈরি কৃত্রিম মাংস খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ অচিরেই অনুমোদন দিতে যাচ্ছে এটিকে। পশু-পাখি ও মাছের একটি টিস্যু থেকে অবিকল স্বাদ, ঘ্রাণ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ মাংস এখন আর কোনো কল্পকাহিনি নয়। অচিরেই সস্তা, ক্ষতিকর উপাদানমুক্ত ‘ক্লিন মিট’ যে জনপ্রিয়তা পাবে, তাতে মোটেই সন্দেহ নেই। আর স্বাদে, গন্ধে, পুষ্টিতে অতুলনীয় এ বিকল্প আমিষ সবার জন্য হবে এক উপাদেয় খাদ্য। এ ব্যাপারে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। খাদ্যের জন্য পশু-পাখি, মাছ বধ করতে হবে না অদূর ভবিষ্যতে।
ভবিষ্যতে রেস্তোরাঁয় থাকবে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার। আধুনিক প্রযুক্তিতে ঠাসা এই যন্ত্র গ্রাহকের পছন্দের খাবার তার সামনেই তৈরি করে দেবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের পকেটে বা ত্বকের নিচে থাকা খুবই ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য কার্ড (হেলথ কার্ড) বিশ্লেষণ করে গ্রাহকের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বাদ দিয়ে উপকারী উপাদান যোগ করে সুষম ও মুখরোচক খাবার পরিবেশন করবে।
আজ কল্পকাহিনি মনে হলেও অচিরেই তা হবে অনেকটাই নিত্যনৈমিত্তিক; সাধারণ ব্যাপার। তাই এ মুহূর্তে যে প্রশ্ন বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, তা হলো, ভবিষ্যতে আমরা কী খাব?
লেখক: গবেষক ও লেখক, ফ্রান্স
তরুণদের মধ্যে যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তাদের বলা হচ্ছে জেন জি বা জেনারেশন জেড। একাডেমিক পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে করোনা চলাকালীন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ শুরু করে এই প্রজন্ম। কিন্তু তাদের নিয়ে সবার যে প্রত্যাশা এরই মধ্যে তাতে ধুলো পড়তে শুরু করেছে।
২ দিন আগেআমন্ত্রণ নয়, রাজশাহী আপনাকে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছে। ছাতিমের সুগন্ধ ছাড়িয়ে রাজশাহী এখন ম-ম করছে হাঁসের মাংস ভুনার সুগন্ধে। সাদা ভাত আর গরম-গরম মাংস ভুনা। বিকেলে বাটার মোড়ের জিলাপির সঙ্গে নিমকি দিয়ে হালকা নাশতা। আলোর শহর রাজশাহী ঘুরে দেখার পর সন্ধ্যায় সিঅ্যান্ডবি মোড়ে গরম-গরম রসগোল্লার সঙ্গে পুরি।
৩ দিন আগেশুধু কলাপাড়া বললে অনেকে হয়তো জায়গাটা চিনবেন না। কিন্তু কুয়াকাটার কথা বললে চিনবেন প্রায় সবাই। কুয়াকাটা সৈকতের জন্য কলাপাড়া এখন সুপরিচিত। এখানে আছে এক বিখ্যাত খাবার। জগার মিষ্টি।
৩ দিন আগেঢাকা শহরের গলিগুলো এখন খাবারের ঘ্রাণে উতলা থাকে। এদিক-ওদিক তাকালেই দেখবেন, কোথাও না কোথাও একটি লাইভ বেকারি। এতে বেক করা হচ্ছে পাউরুটি, বিভিন্ন ধরনের কেক-বিস্কুট কিংবা বাটার বান। কৌতূহল নিয়ে এক পিস কিনে মুখে পুরে দিতে পারেন। এগুলোর দামও যে খুব আহামরি, তা কিন্তু নয়।
৩ দিন আগে