জীবনের জন্য যেমন হওয়া উচিত পরিবেশবান্ধব ও টেকসই রান্নাঘর

সানজিদা সামরিন, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭: ৫৬

বাড়িতে ক’টা গাছ লাগালেই আপনি পরিবেশবাদী? মোটেই তা নয়। ছোটখাটো আরও অনেক ব্যাপার রয়েছে নজর দেওয়ার। ধরুন, রান্নাঘরের শেলফে গাদাগাদা হাঁড়ি–পাতিল ও বাসনকোসন সাজিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কাজের বেলায় হাতে গোনা কয়েকটা বাদে বেশির ভাগই পড়ে থাকছে। তার মানে, টাকা, জায়গা ও সম্পদের অপচয় হচ্ছে। পরিবেশবাদীরাও একই কথা বলেন, এমন পণ্যই কিনুন যা দীর্ঘদিন ব্যবহার ও পুনর্ব্যবহার করা যাবে। এতে ঘরও থাকবে জঞ্জালমুক্ত, বাঁচবে অর্থও। অযথা জ্বালানি, সম্পদ ও অর্থের অপচয় নয়। 

এখানেই শেষ নয়, টেকসই রান্নাঘরের মূলমন্ত্রে রন্ধন পদ্ধতি নিয়েও আছে নির্দেশনা। যাতে সময় ও জ্বালানি বাঁচে। 

রান্নাঘরের জন্য এমন পণ্য কিনুন যা দীর্ঘদিন ব্যবহার ও পুনর্ব্যবহার করা যাবে। ছবি: পেক্সেলপরিবেশবান্ধব হাঁড়ি–পাতিল কিনুন
এখন বাজারে স্মার্ট কুকওয়্যার বলে রান্নার পাত্র সেট হিসেবে পাওয়া যায়। কিন্তু বিভিন্ন আকারের ৪ বা ৬ সেটের এই কুকওয়্যার সবগুলোই কি আপনার প্রয়োজন। দেখা গেল, এগুলোর মধ্য়ে কোনো কোনোটা আপনি ব্যবহার করছেন, আর বাকিগুলো শেলফে জায়গা দখল করে আছে। 

রান্নাঘরের জন্য ইদানীং নতুন করে জনপ্রিয় হচ্ছে মাটির পাত্র। ছবি: পেক্সেলআপনি কতটা মিনিমালিস্টিক জীবনযাপন করছেন তার ওপর নির্ভর করছে আপনি ব্যবহৃত জিনিসপত্রের পর্যাপ্ত ব্যবহার কতটুকু করতে সক্ষম। তাই যে ধরনের হাঁড়ি–পাতিল বা কুকওয়্যার একাধিক কাজে ব্যবহার করা যায় সেগুলোই কিনুন। ননস্টিক প্যান যদিও এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে, তবুও স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এটি এড়িয়ে চলুন। কারণ ননস্টিক প্যানের উপরিভাগে টেফলন নামের যে রাসায়নিক থাকে, সেগুলো রান্নার সময় খাবারের মধ্যে মিশে যায়। রান্নার সময় তাপে এসব জিনিসপত্র থেকে বিষাক্ত পদার্থ নির্গত করে, যা খাবারকে বিষাক্ত করে তোলে। ননস্টিক আবরণ টিউমারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

তাই চেষ্টা করুন লোহার কড়াইতে রান্না করার। লোহার কড়াই দীর্ঘদিন টেকে, ফলে বারবার কেনার ঝামেলাও থাকবে না। রান্নার জন্য ইদানীং নতুন করে জনপ্রিয় হচ্ছে মাটির পাত্র। ভালোভাবে পরিষ্কার করে দৈনন্দিন রান্না সেরে নিতে পারেন এসব মাটির হাঁড়ি, কড়াই ও তাওয়াতে। এগুলো পরিবেশবান্ধব তো বটেই, পাশাপাশি স্বাস্থ্যকরও।

কাঁসা–পিতলের বাসনপত্র দীর্ঘদিন টেকে। এগুলো আপনার টেকসই রান্নাঘরের জন্য আদর্শ হতে পারে। ছবি: পেক্সেলবাসনেও বাছবিচার দরকার
প্লাস্টিক ও ম্যালামাইনের বাসন ব্যবহার একেবারে বাদ দিন। এখন মাটি, কাঠ, বাঁশ কিংবা কাঁসা ও পিতলের বাসন পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করুন। সিরামিকও অস্বাস্থ্যকর নয়। সেগুলোও রাখতে পারেন। এগুলো কিনুন প্রয়োজন অনুসারে। শেলফের জায়গা বা ওয়ালেটের টাকা কোনোটাই নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। 

রান্নার সময় বাঁচাতে
একটু বুদ্ধি খাটালেই রান্নার সময়টা কমিয়ে আনা যায়। রান্নার সময় পাত্রের মুখে দিয়ে ঢেকে রাখলে ৪০ শতাংশ সময় বাঁচানো যায়। এ ছাড়া রান্নার সময় চুলার আগুন যেন হাঁড়ির ওপরে উঠে না এসে হাঁড়ির তলাতে থাকে, অর্থাৎ মাঝারি আঁচে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে খাবার ভালো সেদ্ধ হবে এবং রান্নাও হবে দ্রুত। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে অল্প পরিমাণে খাবার গরম করুন, এতে ৫০ শতাংশ জ্বালানি বা বিদ্যুৎ বাঁচবে। 

মাংস ও সবজি ছোট করে কাটুন 
রান্নার জ্বালানি ও অর্থ বাঁচাতে মাংস ও সবজি ছোট আকারে কাটুন। লাল মাংস খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়, তাই ছোট ছোট করে কাটলে লাল মাংস খাওয়াও কম হবে। অন্যদিকে ছোট আকারে কয়েক রকমের সবজি কেটে একসঙ্গে রান্না করলে খাবারে পুষ্টি পাবেন বেশি। গড়ে উঠবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস। রোধ করা যাবে খাদ্য অপচয়।

কিছু খাবার কাঁচাই খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং উদ্ভিজ্জ খাবারে মনোযোগ দিন। ছবি: পেক্সেলকিছু খাবার কাঁচা খাওয়াই ভালো
রান্নার সময় বাঁচাতেই শুধু নয়, স্বাস্থ্যের জন্য কিছু খাবার কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন প্রতিবেলায় কিছু কাঁচা খাবার রাখুন। আপেল, কমলালেবু, কলা, লেবু, মৌসুমি ফল, শসা, টমেটো, বিট, গাজর এগুলো ভিটামিন ও খনিজের আধার। এগুলো প্রতিদিন নিয়ম করে খেলে সুস্বাস্থ্যও বজায় থাকবে, অন্যদিকে রান্নার ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমবে। 

উদ্ভিজ্জ খাবারে মনোযোগ দিন
পরিবেশবাদীরা বরাবরই বলে যাচ্ছেন খাদ্যতালিকায় মাংসের ওপর থেকে চাপ কমানোর কথা। কারণ খাদ্য চাহিদা মেটাতে পশুপালন করা মানেই প্রয়োজন বিশাল পরিমাণে জমি, পানি ও জ্বালানি। আবার এসব প্রাণীর বর্জ্য হয়ে ওঠে গ্রিন হাউস গ্যাসের অন্যতম বড় উৎস। ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব তো পড়েই। তাই পরিবেশবাদীদের ভাষ্য, যদি উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন গ্রহণ করা যায়, তাহলে পরিবেশের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।    

বারান্দাতেই হার্ব বা বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ বুনে দিন
বারান্দায় পুরোনো বালতি, মগ বা বৌলে হলুদ, আদা, তুলসী, পুদিনা পাতা, অরিগানো, ধনেপাতা, মরিচ, মেথিশাক, লেমনগ্রাস বুনে দিন। রোজকার চাহিদা মিটুক সেখান থেকেই। এতে খানিকটা হলেও টাকা বাঁচবে, খাবারে বাড়তি স্বাদ যুক্ত হবে, আবার এসব হার্ববারান্দায় থাকলে ঘরে মশা–মাছি কম আসবে। মানে একসঙ্গে অনেকগুলো সুবিধা পেয়ে যাবেন। আর পরিবেশবান্ধব বিষয়টাই এমন—আপনাকে সম্পদের পর্যাপ্ত ব্যবহারও করতে হবে ও পুনর্ব্যবহারও করতে হবে। 

সূত্র: টপস ডে নার্সারিজ

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত