জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা
আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক বৈশ্বিক তাপমাত্রা, দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বৈরশাসক, চরমপন্থার উত্থান, অধিকারের নতুন মাত্রা এবং সরকার ও করপোরেটের ধ্বংসাত্মক নীতি ক্রমেই মানবজাতিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে ক্রোধ, হতাশা এবং বিদ্রোহের দাবানলে ঘি ঢালছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এক শতাংশের কম নারীযোদ্ধা
এই বিশৃঙ্খল বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে কিন্তু অনেক দৃঢ়চেতা নারীকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখছি। আমাদের সামনে গ্রেটা থুনবার্গ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মতো নারীদের উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ আমাদের আপ্লুত করছে। কিন্তু একজন নারী যদি আক্ষরিক অর্থেই একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বেছে নেন? নারীর এমন সাহসিকতা কিন্তু পুরুষশাসিত কর্তৃত্ববাদী সমাজ এখনো উদ্যাপন করার উদারতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে বহু তরুণ যুবক প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে যুদ্ধে গেছে। তারা কেউ ভুক্তভোগী, কেউ কঠিন পরিস্থিতির নায়ক অথবা অনুপ্রেরণা।
কিন্তু একজন নারী যদি নিজ ইচ্ছায় কোনো সহিংসতার কাছাকাছিও যান, এমনকি হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও এখনো ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ান। কঠোর সমালোচনা এবং প্রায়ই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।
তাহলে নারী ও সহিংসতা, তাঁর সহযোগী ভূমিকা এবং যুদ্ধের মধ্যে অনুমোদিত সীমানা আসলে কী? কখন একজন নারী সজ্ঞানে এবং পরিকল্পিতভাবে এবং পুরুষের মতো সহজাতভাবে নিজের বা তাঁর মূল্যবোধের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র তুলে নিতে রাজি হতে পারবেন? নারীরা কি সহজাতভাবে তুলনামূলক বেশি শান্তিপ্রিয়? তারা কি সক্ষম সৈনিক হতে পারে?
যুদ্ধ বা সহিংসতা ও নারী প্রশ্নে এই প্রশ্নগুলো খুবই মোক্ষম।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোশুয়া গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘ওয়ার অ্যান্ড জেন্ডার’ বইতে যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের সঙ্গে আন্তঃসাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক প্রমাণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি দেখেছেন ‘ইতিহাসের সমস্ত যোদ্ধার ১ শতাংশেরও কম নারী’।
আধুনিক স্থায়ী সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের অধিকাংশই পুরুষ। যুদ্ধ একটি সামাজিকভাবে বৈচিত্র্যময় ঘটনা। প্রশ্ন করাই যায়, তাহলে কেন এখানে লিঙ্গ বৈচিত্র্য নেই হয়ে গেল? গোল্ডস্টেইন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘যুদ্ধে মানুষ হত্যার ব্যাপারটা লিঙ্গ নির্বিশেষে কোনো স্বাভাবিক প্রবণতা নয়। তবুও যুদ্ধের সম্ভাবনা কিন্তু সর্বজনীন। যুদ্ধের প্রতি সৈন্যদের অনীহার মনোভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্যই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিঙ্গের ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হয়। একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আরও কঠোরভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোকে “পৌরুষদীপ্ত” কাজ বলা হয়!
আমরা ‘নারী যোদ্ধাকে’ গ্রহণ করতে খুব একটা স্বস্তি বোধ করি না। একটি দেশ এবং তার সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে থাকা একজন নারী, বা যুদ্ধরত নারী সেনাপতি, প্রায়ই একটা যৌন অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখা হয়। যেমন ইতিহাসে আমরা অনেক বীরকে দেখি, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না বলে চেচাচ্ছেন! ইতিহাসে হাতে গোনা যে কজন সফল নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা যোদ্ধা, সেনাপতির কথা পাওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনা এবং পাঠকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি দেখলেই দৃষ্টিভঙ্গির এই অস্বস্তি ও অস্বাভাবিকতা অনুমান করা যায়।
সমাজে বা কর্মক্ষেত্রেও সামনের সারিতে সক্রিয় নারীরা যেন ‘সাপের গলায় ব্যাঙের’ মতো অস্বস্তি তৈরি করে। এই নারীদের সন্তান কত জন তা নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহের শেষ নেই, তাঁর মাতৃত্বের বেপরোয়া অভাবকে তিরস্কার করা হয়। আর মৌলবাদের মতো ঘৃণিত মূল্যবোধের সঙ্গে তাঁর সংযোগ থাকলে তো কথাই নেই! ফ্যাসিবাদের সৈনিক হলেও মানা যায়, কিন্তু মৌলবাদী উগ্রপন্থীদের দলে গেলে তো তাকে দেশেই ঢুকতে দেওয়া হবে না!
আজকাল কম্পিউটার গেম, সিনেমা এবং ঢাউস আকৃতির সব বইয়ে ‘নারীশক্তিকে’ খুব মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু সেসব চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার খুব কমই মিল থাকে।
এই প্রশ্নগুলো শুধু পুরুষত্বের ধারণার সঙ্গেই নয়, নারীবাদের ধারণাগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কিত। নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ কী ‘পুরুষতান্ত্রিক সহিংসতা-বিরোধী’ নারীবাদী নীতিকে ক্ষুণ্ন করে? ইতিহাস বলে, আমেরিকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগের কেউ কেউ কংগ্রেসে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর মতো কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত অবশ্য শান্তিপূর্ণই ছিল।
যুদ্ধের সম্ভাব্য সকল ক্ষয়ক্ষতির অংশীদার হয় নারী। এর মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়-পরিকল্পিত হত্যা, সেটিরও প্রথম শিকার হয় নারীরা। নিপীড়ন বা প্রতিশোধ নিতে দুর্বল ও সহজ লক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের বিভিন্ন যুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নারী সৈনিক কই?
নারীর কলমে যুদ্ধসাহিত্য প্রায় অনুপস্থিত
একটা যুদ্ধ পুরো সমাজকে গ্রাস করে, লিঙ্গ নির্বিশেষে যুদ্ধের আঁচ লাগে। কিন্তু নারীদের কলমে যুদ্ধের কথাসাহিত্য যেন অস্বাভাবিক ঘটনা। যেন যুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক কথাসাহিত্য তৈরির কল্পনা করার অধিকারটাও তাঁদের নেই!
মার্কিন ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলন বলেন, ‘সেনাবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান থেকে নারীদের বাদ দেওয়া একটা সাধারণ ঘটনা। ঐতিহাসিক নথি এবং শৈল্পিক প্রতিনিধিত্ব থেকেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ যা ঘটে-নারী যোদ্ধাদের উদাহরণ প্রায়ই অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ জাগতে বাধ্য।’
সম্মুখ সমরে নারী যোদ্ধাদের অংশীদারত্ব বেশ কমই। কিন্তু যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রবণতা বলছে, বহু নারীই সংঘাতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তারা যুদ্ধ, প্রযুক্তি এবং কূটনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন, গোয়েন্দা, যুদ্ধাস্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে কাজ করেছেন। দগদগে ক্ষত হয়ে থাকা দুটি বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এক সময় শেষ হয়ে যায়, নারীরা বেঁচে থাকে এবং পরিণতির যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা যুদ্ধের নির্লিপ্ত ভুক্তভোগী থাকে না। তারা স্বামী, সন্তান, ভাই হারানোর শোক করে, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই করে, অনেকে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে বাধ্য হয়, পুরোনো পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এবং যুদ্ধ তাদের ভাবনার নতুন আকৃতি দেয়।
এই ব্যাপারগুলো সরাসরি ভুক্তভোগীদের বয়ান থেকে বোঝার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি তথ্যচিত্র করেছে। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই কাজটির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। রেড ক্রস একটি প্রতিবেদনে বলছে, ‘এ ওম্যানস ওয়ার’ নামে তাদের প্রকল্পটি ‘নারী হিসেবে যুদ্ধের শিকার’ এমন গৎবাঁধা (স্টিরিওটাইপ) ধারণা ভেঙে দিয়েছে। নারীদের একাধিক জটিল এবং সংঘাতপূর্ণ ভূমিকা অন্বেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নারীরা যোদ্ধা, মানবতাবাদী, মা, কন্যা, শ্রমিক, সম্প্রদায়ের নেতা এবং বেঁচে ফেরা সংগ্রামী সত্তা।
নারী সৈন্যদের কাজগুলোকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নথিবদ্ধ করা হয়নি। এই কারণেই সাহিত্যে নোবেলজয়ী বেলারুশিয়ান সাংবাদিক সোভেৎলানা আলেক্সিভিচের বিবরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত নারীদের যে ভূমিকা ও অবদান উঠে এসেছে তা সরকারি বয়ানে অনুপস্থিত। এই একটি কারণেই তাঁর ‘দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ বইটিকে অমূল্য সাহিত্যকর্ম বলা যায়।
ইরাক, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সংঘাত কবলিত এলাকার নারীদের অভিজ্ঞতা ও বয়ান রেকর্ড করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। অস্ত্র, গোলাবারুদের গর্জন থেমে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গোষ্ঠীর আত্মপরিচয় যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন রূপ ধারণ করতে থাকে। এ প্রক্রিয়া বহু দিন পর্যন্ত চলে। পেরুতে দেখা গেছে, স্প্যানিশ আগ্রাসনের বহু পুরোনো ক্ষত এখনো নিরাময় হয়নি।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কথাই ধরা যাক:
সূত্র: জাতিসংঘ
ওই সময় যুদ্ধে শ্রমিক হিসেবে সারা দেশ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ১৪ লাখ নারী।
সূত্র: দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াল ডটঅর্গ
ইউক্রেন পরিস্থিতি
জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারের ‘র্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস ইন ইউক্রেন’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের বাধ্যতামূলক অভিবাসী হওয়া ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধ যেহেতু চলমান এ সংখ্যা যে ক্রমে বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই।
এখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নানামুখী সমস্যা এবং অতিরিক্ত দায় ঘর কন্যার বোঝা টানা ইউক্রেনীয় নারীদের ঘাড়ে চেপেছে। কিন্তু এই ধরনের একটি অস্থির পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্মে নারী কই? পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন, সংঘাত নিরসন এবং ইউক্রেন ও এর বাইরের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশ তো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য ও গৃহনির্যাতনের অপরাধ ইউরোপের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটে ইউক্রেনে। সক্ষম পুরুষেরা যুদ্ধের ময়দানে, একা নারী ভিন দেশে কীভাবে সব সামলাচ্ছেন!
লিঙ্গ ইস্যু নিয়ে কাজ করা এমনিতেই খুব জটিল। কারণ এটি বুঝতে চাইলে ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার, একটি সম্প্রদায়ের আচার এবং প্রত্যাশাকে একত্রে বুঝতে হয়। সংঘাত বিদ্যমান (লিঙ্গ) বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যখন পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি-যিনি সাধারণত হোন একজন পুরুষ-যুদ্ধে যায় বা নিহত হয় তখন কী ঘটে? সামাজিক ভূমিকার পরিবর্তন হয়। পুরুষ প্রধান সমাজে তখন নারীদের জন্য এমন সুযোগ উন্মুক্ত হয় যা আগে কখনো ছিল না।
বলা যেতে পারে, যুদ্ধে নারীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাদের কাজকে সম্মানিত বা স্মরণ করা হয় না। এমনকি মানবাধিকার উন্নয়নের এই যুগে এসেও আমরা যুদ্ধে নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা দেখছি।
যুদ্ধ শেষে নারীদের ঘরে ফেরানো হয়, অধস্তন করে রাখা হয়। ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন) আলজেরীয় নারীদের পুরুষদের সমান বিপজ্জনক ভূমিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ ফেরত হিসেবে তার অধিকার এবং পেনশন থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
নারী সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে এলেও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে অঙ্গীভূত করা হয় না। শুধু স্মৃতির সমতা নয়, যুদ্ধের একটি সামগ্রিক ‘চেতনা’, রোল মডেল এবং বিকল্প নায়িকা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং মানবীয় অভিজ্ঞতায় নারীর ক্ষমতার আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হতে পারার একটি দারুণ সুযোগ সমাজ তার গভীরভাবে প্রোথিত সংস্কারের কারণে হাতছাড়া করে।
যুদ্ধ যদি অনিবার্যভাবেই মানবীয় ব্যাপার হয় তাহলে এটি তো নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রশ্ন হওয়ার কথা। ভারী অস্ত্র বহনের জন্য পুরুষের কাঁধ বিকশিত হয়েছে, এর সপক্ষে জৈবিক ব্যাখ্যা হাজির করা যেতে পারে কিন্তু হরমোনগত কারণে নারীরা শান্তিপ্রিয় স্নায়ুবিজ্ঞান এই ধারণাকে বাতিল করে দেয়। নারীরা সর্বদা শান্তিপ্রিয় বা শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, ঘটনার শিকার, পুরুষকে কাপুরুষ বলে তাচ্ছিল্য করা অন্দর বাসিনী বা লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙানো মনোবল বৃদ্ধিকারীনি নয়। সহিংসতা দিয়ে সহিংসতার সমাধান হয়তো কখনো হয়। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা কখনো জ্ঞান ও শান্তি বয়ে আনে না।
অবশ্য নানা যুদ্ধে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত নারীরা হলেন স্বাভাবিকতায় ফেরার নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব। তাঁদের কোমল হাত, দুর্বল কাঁধ যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র: ইউএন উইমেন, দ্য গার্ডিয়ান, আইসিআরসি, ইউএনএফপিএ, এনপিআর
আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক বৈশ্বিক তাপমাত্রা, দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বৈরশাসক, চরমপন্থার উত্থান, অধিকারের নতুন মাত্রা এবং সরকার ও করপোরেটের ধ্বংসাত্মক নীতি ক্রমেই মানবজাতিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে ক্রোধ, হতাশা এবং বিদ্রোহের দাবানলে ঘি ঢালছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এক শতাংশের কম নারীযোদ্ধা
এই বিশৃঙ্খল বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে কিন্তু অনেক দৃঢ়চেতা নারীকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখছি। আমাদের সামনে গ্রেটা থুনবার্গ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মতো নারীদের উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ আমাদের আপ্লুত করছে। কিন্তু একজন নারী যদি আক্ষরিক অর্থেই একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বেছে নেন? নারীর এমন সাহসিকতা কিন্তু পুরুষশাসিত কর্তৃত্ববাদী সমাজ এখনো উদ্যাপন করার উদারতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে বহু তরুণ যুবক প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে যুদ্ধে গেছে। তারা কেউ ভুক্তভোগী, কেউ কঠিন পরিস্থিতির নায়ক অথবা অনুপ্রেরণা।
কিন্তু একজন নারী যদি নিজ ইচ্ছায় কোনো সহিংসতার কাছাকাছিও যান, এমনকি হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও এখনো ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ান। কঠোর সমালোচনা এবং প্রায়ই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।
তাহলে নারী ও সহিংসতা, তাঁর সহযোগী ভূমিকা এবং যুদ্ধের মধ্যে অনুমোদিত সীমানা আসলে কী? কখন একজন নারী সজ্ঞানে এবং পরিকল্পিতভাবে এবং পুরুষের মতো সহজাতভাবে নিজের বা তাঁর মূল্যবোধের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র তুলে নিতে রাজি হতে পারবেন? নারীরা কি সহজাতভাবে তুলনামূলক বেশি শান্তিপ্রিয়? তারা কি সক্ষম সৈনিক হতে পারে?
যুদ্ধ বা সহিংসতা ও নারী প্রশ্নে এই প্রশ্নগুলো খুবই মোক্ষম।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোশুয়া গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘ওয়ার অ্যান্ড জেন্ডার’ বইতে যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের সঙ্গে আন্তঃসাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক প্রমাণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি দেখেছেন ‘ইতিহাসের সমস্ত যোদ্ধার ১ শতাংশেরও কম নারী’।
আধুনিক স্থায়ী সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের অধিকাংশই পুরুষ। যুদ্ধ একটি সামাজিকভাবে বৈচিত্র্যময় ঘটনা। প্রশ্ন করাই যায়, তাহলে কেন এখানে লিঙ্গ বৈচিত্র্য নেই হয়ে গেল? গোল্ডস্টেইন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘যুদ্ধে মানুষ হত্যার ব্যাপারটা লিঙ্গ নির্বিশেষে কোনো স্বাভাবিক প্রবণতা নয়। তবুও যুদ্ধের সম্ভাবনা কিন্তু সর্বজনীন। যুদ্ধের প্রতি সৈন্যদের অনীহার মনোভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্যই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিঙ্গের ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হয়। একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আরও কঠোরভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোকে “পৌরুষদীপ্ত” কাজ বলা হয়!
আমরা ‘নারী যোদ্ধাকে’ গ্রহণ করতে খুব একটা স্বস্তি বোধ করি না। একটি দেশ এবং তার সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে থাকা একজন নারী, বা যুদ্ধরত নারী সেনাপতি, প্রায়ই একটা যৌন অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখা হয়। যেমন ইতিহাসে আমরা অনেক বীরকে দেখি, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না বলে চেচাচ্ছেন! ইতিহাসে হাতে গোনা যে কজন সফল নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা যোদ্ধা, সেনাপতির কথা পাওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনা এবং পাঠকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি দেখলেই দৃষ্টিভঙ্গির এই অস্বস্তি ও অস্বাভাবিকতা অনুমান করা যায়।
সমাজে বা কর্মক্ষেত্রেও সামনের সারিতে সক্রিয় নারীরা যেন ‘সাপের গলায় ব্যাঙের’ মতো অস্বস্তি তৈরি করে। এই নারীদের সন্তান কত জন তা নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহের শেষ নেই, তাঁর মাতৃত্বের বেপরোয়া অভাবকে তিরস্কার করা হয়। আর মৌলবাদের মতো ঘৃণিত মূল্যবোধের সঙ্গে তাঁর সংযোগ থাকলে তো কথাই নেই! ফ্যাসিবাদের সৈনিক হলেও মানা যায়, কিন্তু মৌলবাদী উগ্রপন্থীদের দলে গেলে তো তাকে দেশেই ঢুকতে দেওয়া হবে না!
আজকাল কম্পিউটার গেম, সিনেমা এবং ঢাউস আকৃতির সব বইয়ে ‘নারীশক্তিকে’ খুব মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু সেসব চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার খুব কমই মিল থাকে।
এই প্রশ্নগুলো শুধু পুরুষত্বের ধারণার সঙ্গেই নয়, নারীবাদের ধারণাগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কিত। নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ কী ‘পুরুষতান্ত্রিক সহিংসতা-বিরোধী’ নারীবাদী নীতিকে ক্ষুণ্ন করে? ইতিহাস বলে, আমেরিকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগের কেউ কেউ কংগ্রেসে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর মতো কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত অবশ্য শান্তিপূর্ণই ছিল।
যুদ্ধের সম্ভাব্য সকল ক্ষয়ক্ষতির অংশীদার হয় নারী। এর মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়-পরিকল্পিত হত্যা, সেটিরও প্রথম শিকার হয় নারীরা। নিপীড়ন বা প্রতিশোধ নিতে দুর্বল ও সহজ লক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের বিভিন্ন যুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নারী সৈনিক কই?
নারীর কলমে যুদ্ধসাহিত্য প্রায় অনুপস্থিত
একটা যুদ্ধ পুরো সমাজকে গ্রাস করে, লিঙ্গ নির্বিশেষে যুদ্ধের আঁচ লাগে। কিন্তু নারীদের কলমে যুদ্ধের কথাসাহিত্য যেন অস্বাভাবিক ঘটনা। যেন যুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক কথাসাহিত্য তৈরির কল্পনা করার অধিকারটাও তাঁদের নেই!
মার্কিন ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলন বলেন, ‘সেনাবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান থেকে নারীদের বাদ দেওয়া একটা সাধারণ ঘটনা। ঐতিহাসিক নথি এবং শৈল্পিক প্রতিনিধিত্ব থেকেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ যা ঘটে-নারী যোদ্ধাদের উদাহরণ প্রায়ই অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ জাগতে বাধ্য।’
সম্মুখ সমরে নারী যোদ্ধাদের অংশীদারত্ব বেশ কমই। কিন্তু যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রবণতা বলছে, বহু নারীই সংঘাতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তারা যুদ্ধ, প্রযুক্তি এবং কূটনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন, গোয়েন্দা, যুদ্ধাস্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে কাজ করেছেন। দগদগে ক্ষত হয়ে থাকা দুটি বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এক সময় শেষ হয়ে যায়, নারীরা বেঁচে থাকে এবং পরিণতির যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা যুদ্ধের নির্লিপ্ত ভুক্তভোগী থাকে না। তারা স্বামী, সন্তান, ভাই হারানোর শোক করে, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই করে, অনেকে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে বাধ্য হয়, পুরোনো পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এবং যুদ্ধ তাদের ভাবনার নতুন আকৃতি দেয়।
এই ব্যাপারগুলো সরাসরি ভুক্তভোগীদের বয়ান থেকে বোঝার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি তথ্যচিত্র করেছে। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই কাজটির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। রেড ক্রস একটি প্রতিবেদনে বলছে, ‘এ ওম্যানস ওয়ার’ নামে তাদের প্রকল্পটি ‘নারী হিসেবে যুদ্ধের শিকার’ এমন গৎবাঁধা (স্টিরিওটাইপ) ধারণা ভেঙে দিয়েছে। নারীদের একাধিক জটিল এবং সংঘাতপূর্ণ ভূমিকা অন্বেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নারীরা যোদ্ধা, মানবতাবাদী, মা, কন্যা, শ্রমিক, সম্প্রদায়ের নেতা এবং বেঁচে ফেরা সংগ্রামী সত্তা।
নারী সৈন্যদের কাজগুলোকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নথিবদ্ধ করা হয়নি। এই কারণেই সাহিত্যে নোবেলজয়ী বেলারুশিয়ান সাংবাদিক সোভেৎলানা আলেক্সিভিচের বিবরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত নারীদের যে ভূমিকা ও অবদান উঠে এসেছে তা সরকারি বয়ানে অনুপস্থিত। এই একটি কারণেই তাঁর ‘দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ বইটিকে অমূল্য সাহিত্যকর্ম বলা যায়।
ইরাক, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সংঘাত কবলিত এলাকার নারীদের অভিজ্ঞতা ও বয়ান রেকর্ড করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। অস্ত্র, গোলাবারুদের গর্জন থেমে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গোষ্ঠীর আত্মপরিচয় যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন রূপ ধারণ করতে থাকে। এ প্রক্রিয়া বহু দিন পর্যন্ত চলে। পেরুতে দেখা গেছে, স্প্যানিশ আগ্রাসনের বহু পুরোনো ক্ষত এখনো নিরাময় হয়নি।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কথাই ধরা যাক:
সূত্র: জাতিসংঘ
ওই সময় যুদ্ধে শ্রমিক হিসেবে সারা দেশ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ১৪ লাখ নারী।
সূত্র: দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াল ডটঅর্গ
ইউক্রেন পরিস্থিতি
জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারের ‘র্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস ইন ইউক্রেন’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের বাধ্যতামূলক অভিবাসী হওয়া ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধ যেহেতু চলমান এ সংখ্যা যে ক্রমে বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই।
এখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নানামুখী সমস্যা এবং অতিরিক্ত দায় ঘর কন্যার বোঝা টানা ইউক্রেনীয় নারীদের ঘাড়ে চেপেছে। কিন্তু এই ধরনের একটি অস্থির পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্মে নারী কই? পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন, সংঘাত নিরসন এবং ইউক্রেন ও এর বাইরের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশ তো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য ও গৃহনির্যাতনের অপরাধ ইউরোপের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটে ইউক্রেনে। সক্ষম পুরুষেরা যুদ্ধের ময়দানে, একা নারী ভিন দেশে কীভাবে সব সামলাচ্ছেন!
লিঙ্গ ইস্যু নিয়ে কাজ করা এমনিতেই খুব জটিল। কারণ এটি বুঝতে চাইলে ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার, একটি সম্প্রদায়ের আচার এবং প্রত্যাশাকে একত্রে বুঝতে হয়। সংঘাত বিদ্যমান (লিঙ্গ) বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যখন পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি-যিনি সাধারণত হোন একজন পুরুষ-যুদ্ধে যায় বা নিহত হয় তখন কী ঘটে? সামাজিক ভূমিকার পরিবর্তন হয়। পুরুষ প্রধান সমাজে তখন নারীদের জন্য এমন সুযোগ উন্মুক্ত হয় যা আগে কখনো ছিল না।
বলা যেতে পারে, যুদ্ধে নারীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাদের কাজকে সম্মানিত বা স্মরণ করা হয় না। এমনকি মানবাধিকার উন্নয়নের এই যুগে এসেও আমরা যুদ্ধে নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা দেখছি।
যুদ্ধ শেষে নারীদের ঘরে ফেরানো হয়, অধস্তন করে রাখা হয়। ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন) আলজেরীয় নারীদের পুরুষদের সমান বিপজ্জনক ভূমিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ ফেরত হিসেবে তার অধিকার এবং পেনশন থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
নারী সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে এলেও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে অঙ্গীভূত করা হয় না। শুধু স্মৃতির সমতা নয়, যুদ্ধের একটি সামগ্রিক ‘চেতনা’, রোল মডেল এবং বিকল্প নায়িকা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং মানবীয় অভিজ্ঞতায় নারীর ক্ষমতার আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হতে পারার একটি দারুণ সুযোগ সমাজ তার গভীরভাবে প্রোথিত সংস্কারের কারণে হাতছাড়া করে।
যুদ্ধ যদি অনিবার্যভাবেই মানবীয় ব্যাপার হয় তাহলে এটি তো নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রশ্ন হওয়ার কথা। ভারী অস্ত্র বহনের জন্য পুরুষের কাঁধ বিকশিত হয়েছে, এর সপক্ষে জৈবিক ব্যাখ্যা হাজির করা যেতে পারে কিন্তু হরমোনগত কারণে নারীরা শান্তিপ্রিয় স্নায়ুবিজ্ঞান এই ধারণাকে বাতিল করে দেয়। নারীরা সর্বদা শান্তিপ্রিয় বা শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, ঘটনার শিকার, পুরুষকে কাপুরুষ বলে তাচ্ছিল্য করা অন্দর বাসিনী বা লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙানো মনোবল বৃদ্ধিকারীনি নয়। সহিংসতা দিয়ে সহিংসতার সমাধান হয়তো কখনো হয়। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা কখনো জ্ঞান ও শান্তি বয়ে আনে না।
অবশ্য নানা যুদ্ধে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত নারীরা হলেন স্বাভাবিকতায় ফেরার নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব। তাঁদের কোমল হাত, দুর্বল কাঁধ যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র: ইউএন উইমেন, দ্য গার্ডিয়ান, আইসিআরসি, ইউএনএফপিএ, এনপিআর
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
৪ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
৪ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
৪ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
৪ দিন আগে