উম্মে মাহবুবা তমা
আমার জীবনে সবকিছু অন্য সবার মতোই ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, বন্ধু, আড্ডা, হইচই, টিউশন—এসব করেই দিন যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন তমা থেকে হয়ে গেলাম ‘মীরার আম্মু’। মীরা আমার একমাত্র বিড়াল কন্যা। ছোট থেকে যে খুব বিড়ালপ্রেমী ছিলাম, বিষয়টি এমন নয়। তবে এই ছোট্ট, আদুরে প্রাণীটিকে ভালো লাগত খুব। আমাদের বাড়িতে যদিও বিড়াল, কুকুর পোষার অনুমতি ছিল না। কিন্তু আমার ফুফুর বাসায় একটা বিড়াল পুষত। ফুপাতো বোন যখন ওর নানান সব কাণ্ডকারখানার গল্প করত, তখন মনে হতো, ‘ইস! যদি আমারও একটা বিড়াল থাকত, আমিও সারাক্ষণ কোলে নিয়ে ঘুরতাম আর দুধ-ভাত খেতে দিতাম।’ তখন অবশ্য ভাবিনি বড় হয়ে নিজেই বিড়ালের আম্মু হয়ে যাব।
একদিন আমার খুব কাছের এক বন্ধু ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করে। সেখানে একটা বিড়াল রেসকিউ করার গল্প ছিল। গল্পটা এমন যে, মালিবাগে এক ভদ্রলোকের বাসার সামনে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে এক থেকে দেড় মাস বয়সী ছোট্ট একটি বিড়াল আশ্রয় নেয়। বিড়ালটির সারা গায়ে ময়লা, পোকা দিয়ে ভর্তি। ভদ্রলোক সেসব পরিষ্কার করে বিড়ালটিকে তাঁর বাসায় আশ্রয় দেন, খেতে দেন। তাঁর বাসায় তখন পাঁচটি বিড়াল ছিল এবং নতুন করে আরেকটি বিড়াল পোষার মতো অবস্থা ছিল না। তাই তিনি ওই পোস্টে অনুরোধ করেন, যেন কেউ ওই বিড়ালকে পোষার জন্য নেন। আমার বন্ধু কর্মসূত্রে ভদ্রলোককে চিনতেন। তাই সে আমাকে পরামর্শ দেয়, আমি যেন ওই বিড়ালটি নিই।
২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল এক রোদ–ফাটা দুপুরে মালিবাগ থেকে একটি জুতার বক্সে আমি বিড়ালটি নিয়ে বাসে করে বাসায় নিয়ে আসি। বাসের পুরোটা সময় সে আমার কোলে ঘুমিয়েছিল। বাসায় এসে ওর জন্য কার্টন দিয়ে একটি ঘর করে দিই এবং খেলনা, লিটার, ক্যাটফুড কিনি। এত ছোট বাচ্চা ছিল বলেই হয়তো সে আমার কোল ছাড়া ঘুমাতে পারত না। শুরুর দিকে সারাক্ষণ মোবাইল ফোনে ছবি তুলতাম, ভিডিও করতাম, ওর খেলনাগুলো দিয়ে খেলার চেষ্টা করতাম। ওকে ছেড়ে ক্লাস বা টিউশনে যেতে খুব খারাপ লাগত। একা একা নিশ্চয়ই ওরও খারাপ লাগত। তাই বাসায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সে মিউ মিউ করে আমার গা বেয়ে উঠে আসত। সে দিনগুলোর কথা ভাবলে এখনো দারুণ ভালো লাগে। ওই সময়ে আমি মানসিকভাবে একটু খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। সে সময় মীরা ছিল আমার সারাক্ষণের সঙ্গী। ওর সব অদ্ভুত কাজ-কারবার আমার মন ভালো করে দিত। ডিপ্রেশন কাটাতে পোষা প্রাণী আসলেই ভালো অনুষঙ্গ হতে পারে—সেটা উপলব্ধি করলাম।
এভাবে মীরা আস্তে আস্তে চোখের সামনে বড় হয়ে গেল। এক সময় আমি বাথরুমে গেলেও দরজার সামনে বসে থাকত মীরা। এখন অবশ্য সে অনেক বড় হয়ে গেছে, সেসব ছেলেমানুষী আর করে না। কোলে নিতে চাইলে দৌড়ে পালায়। সবচেয়ে মজার পরিবর্তন এসেছে আমার মায়ের মধ্যে। মা কখনোই বিড়াল পোষার পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু মীরাকে পেয়ে তিনি পুরোদস্তুর বদলে গেলেন। মীরার ক্ষুধা পেল কিনা, বাইরে যেতে চাচ্ছে কিনা, গরম লাগছে কিনা—এসব বিষয় নিয়ে তাঁর চিন্তার শেষ নাই। রান্নাঘরে মা যখন রান্না করতে ব্যস্ত, তখন মীরা তাঁর পাশে বসে থাকে। আর মা সারাক্ষণ ওর সঙ্গে এ কথা সে কথা বলতে থাকেন। মায়ের দৃঢ় বিশ্বাস, মীরা তাঁর সব কথাই বুঝতে পারে।
শুধু মীরা নয়, মীরার বাচ্চারাও আমাদের বাসার সবার খুব আদরের। মীরাও কেন জানি আমার মাকে কখনো কামড় বা খামচি দেয় না। আমাদের অবশ্য মাঝেমধ্যে দেয়। তবে সমস্যা হয় না এতে। কারণ, মীরাকে ভ্যাকসিন দেওয়া আছে। কেউ খেতে বসলে অবশ্য তার একেবারেই ভিন্ন চেহারা দেখা যায়। তখন নিজে থেকেই এসে পায়ের কাছে বসে খেতে চায়। আমরাও প্লেট থেকে একটু মাছ বা মাংস ওকে দিই। যদিও মীরাদের জন্য আলাদাভাবে মাছ সেদ্ধ করে ভাতের সঙ্গে মিলিয়ে খেতে দেওয়া হয়। কারণ, মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার ওদের জন্য ক্ষতিকর। আমরা ভাইবোনেরা যেহেতু সবাই বড় হয়ে গেছি, মায়ের সময় ওদের সঙ্গে খুনসুটিতেই কেটে যায়। যদিও মীরা কোনো দুষ্টুমি করলে মা বলেন, ‘যেমন মা তার তেমন মেয়ে।’ মানে মীরার সকল দুষ্টুমির দায়ভার আমার ওপর বর্তায়। মা আবার মাঝেমধ্যে দুঃখ করেও বলেন, ‘যে বয়সে নাতি নাতনি নিয়ে খেলা করার কথা, সে বয়সে তোমার বিড়াল পালতেছি।’
মানুষ বলে থাকে, কুকুর খুব প্রভুভক্ত, বিড়াল এমনটা হয় না। কিন্তু আমি বলব, বিড়ালের চেয়ে আদুরে আর কিউট পোষা প্রাণী আর হয় না। বিড়াল পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করে, নির্দিষ্ট জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করে, নিজে নিজেই বাইরে থেকে ঘুরে আসে, গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকে আর রাতের বেলা বিছানায় এসে কোলের মধ্যে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকে। একটু যত্ন করলেই দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকে অনেক দিন। তাই যে কেউই পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়াল বেছে নিতে পারেন। কখনো বিরক্ত হবেন না।
উম্মে মাহবুবা তমা: শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আমার জীবনে সবকিছু অন্য সবার মতোই ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, বন্ধু, আড্ডা, হইচই, টিউশন—এসব করেই দিন যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন তমা থেকে হয়ে গেলাম ‘মীরার আম্মু’। মীরা আমার একমাত্র বিড়াল কন্যা। ছোট থেকে যে খুব বিড়ালপ্রেমী ছিলাম, বিষয়টি এমন নয়। তবে এই ছোট্ট, আদুরে প্রাণীটিকে ভালো লাগত খুব। আমাদের বাড়িতে যদিও বিড়াল, কুকুর পোষার অনুমতি ছিল না। কিন্তু আমার ফুফুর বাসায় একটা বিড়াল পুষত। ফুপাতো বোন যখন ওর নানান সব কাণ্ডকারখানার গল্প করত, তখন মনে হতো, ‘ইস! যদি আমারও একটা বিড়াল থাকত, আমিও সারাক্ষণ কোলে নিয়ে ঘুরতাম আর দুধ-ভাত খেতে দিতাম।’ তখন অবশ্য ভাবিনি বড় হয়ে নিজেই বিড়ালের আম্মু হয়ে যাব।
একদিন আমার খুব কাছের এক বন্ধু ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করে। সেখানে একটা বিড়াল রেসকিউ করার গল্প ছিল। গল্পটা এমন যে, মালিবাগে এক ভদ্রলোকের বাসার সামনে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে এক থেকে দেড় মাস বয়সী ছোট্ট একটি বিড়াল আশ্রয় নেয়। বিড়ালটির সারা গায়ে ময়লা, পোকা দিয়ে ভর্তি। ভদ্রলোক সেসব পরিষ্কার করে বিড়ালটিকে তাঁর বাসায় আশ্রয় দেন, খেতে দেন। তাঁর বাসায় তখন পাঁচটি বিড়াল ছিল এবং নতুন করে আরেকটি বিড়াল পোষার মতো অবস্থা ছিল না। তাই তিনি ওই পোস্টে অনুরোধ করেন, যেন কেউ ওই বিড়ালকে পোষার জন্য নেন। আমার বন্ধু কর্মসূত্রে ভদ্রলোককে চিনতেন। তাই সে আমাকে পরামর্শ দেয়, আমি যেন ওই বিড়ালটি নিই।
২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল এক রোদ–ফাটা দুপুরে মালিবাগ থেকে একটি জুতার বক্সে আমি বিড়ালটি নিয়ে বাসে করে বাসায় নিয়ে আসি। বাসের পুরোটা সময় সে আমার কোলে ঘুমিয়েছিল। বাসায় এসে ওর জন্য কার্টন দিয়ে একটি ঘর করে দিই এবং খেলনা, লিটার, ক্যাটফুড কিনি। এত ছোট বাচ্চা ছিল বলেই হয়তো সে আমার কোল ছাড়া ঘুমাতে পারত না। শুরুর দিকে সারাক্ষণ মোবাইল ফোনে ছবি তুলতাম, ভিডিও করতাম, ওর খেলনাগুলো দিয়ে খেলার চেষ্টা করতাম। ওকে ছেড়ে ক্লাস বা টিউশনে যেতে খুব খারাপ লাগত। একা একা নিশ্চয়ই ওরও খারাপ লাগত। তাই বাসায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সে মিউ মিউ করে আমার গা বেয়ে উঠে আসত। সে দিনগুলোর কথা ভাবলে এখনো দারুণ ভালো লাগে। ওই সময়ে আমি মানসিকভাবে একটু খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। সে সময় মীরা ছিল আমার সারাক্ষণের সঙ্গী। ওর সব অদ্ভুত কাজ-কারবার আমার মন ভালো করে দিত। ডিপ্রেশন কাটাতে পোষা প্রাণী আসলেই ভালো অনুষঙ্গ হতে পারে—সেটা উপলব্ধি করলাম।
এভাবে মীরা আস্তে আস্তে চোখের সামনে বড় হয়ে গেল। এক সময় আমি বাথরুমে গেলেও দরজার সামনে বসে থাকত মীরা। এখন অবশ্য সে অনেক বড় হয়ে গেছে, সেসব ছেলেমানুষী আর করে না। কোলে নিতে চাইলে দৌড়ে পালায়। সবচেয়ে মজার পরিবর্তন এসেছে আমার মায়ের মধ্যে। মা কখনোই বিড়াল পোষার পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু মীরাকে পেয়ে তিনি পুরোদস্তুর বদলে গেলেন। মীরার ক্ষুধা পেল কিনা, বাইরে যেতে চাচ্ছে কিনা, গরম লাগছে কিনা—এসব বিষয় নিয়ে তাঁর চিন্তার শেষ নাই। রান্নাঘরে মা যখন রান্না করতে ব্যস্ত, তখন মীরা তাঁর পাশে বসে থাকে। আর মা সারাক্ষণ ওর সঙ্গে এ কথা সে কথা বলতে থাকেন। মায়ের দৃঢ় বিশ্বাস, মীরা তাঁর সব কথাই বুঝতে পারে।
শুধু মীরা নয়, মীরার বাচ্চারাও আমাদের বাসার সবার খুব আদরের। মীরাও কেন জানি আমার মাকে কখনো কামড় বা খামচি দেয় না। আমাদের অবশ্য মাঝেমধ্যে দেয়। তবে সমস্যা হয় না এতে। কারণ, মীরাকে ভ্যাকসিন দেওয়া আছে। কেউ খেতে বসলে অবশ্য তার একেবারেই ভিন্ন চেহারা দেখা যায়। তখন নিজে থেকেই এসে পায়ের কাছে বসে খেতে চায়। আমরাও প্লেট থেকে একটু মাছ বা মাংস ওকে দিই। যদিও মীরাদের জন্য আলাদাভাবে মাছ সেদ্ধ করে ভাতের সঙ্গে মিলিয়ে খেতে দেওয়া হয়। কারণ, মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার ওদের জন্য ক্ষতিকর। আমরা ভাইবোনেরা যেহেতু সবাই বড় হয়ে গেছি, মায়ের সময় ওদের সঙ্গে খুনসুটিতেই কেটে যায়। যদিও মীরা কোনো দুষ্টুমি করলে মা বলেন, ‘যেমন মা তার তেমন মেয়ে।’ মানে মীরার সকল দুষ্টুমির দায়ভার আমার ওপর বর্তায়। মা আবার মাঝেমধ্যে দুঃখ করেও বলেন, ‘যে বয়সে নাতি নাতনি নিয়ে খেলা করার কথা, সে বয়সে তোমার বিড়াল পালতেছি।’
মানুষ বলে থাকে, কুকুর খুব প্রভুভক্ত, বিড়াল এমনটা হয় না। কিন্তু আমি বলব, বিড়ালের চেয়ে আদুরে আর কিউট পোষা প্রাণী আর হয় না। বিড়াল পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করে, নির্দিষ্ট জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করে, নিজে নিজেই বাইরে থেকে ঘুরে আসে, গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকে আর রাতের বেলা বিছানায় এসে কোলের মধ্যে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকে। একটু যত্ন করলেই দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকে অনেক দিন। তাই যে কেউই পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়াল বেছে নিতে পারেন। কখনো বিরক্ত হবেন না।
উম্মে মাহবুবা তমা: শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
৩ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
৩ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
৩ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
৩ দিন আগে