শহীদ আসাদ দিবস আজ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ০২
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ৩৬

আজ শহীদ আসাদ দিবস। ১৯৬৯ সালের এই দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্র সংগ্রাম কমিটির ১১ দফা আদায়ের মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আসাদ। তাঁর মৃত্যু উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের গোটা চিত্রকেই পাল্টে দেয়। একপর্যায়ে আইয়ুব খানের শাসন ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয় আন্দোলনটি।

শহীদ আসাদের পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। ১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে জন্ম তাঁর। বাবা মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের বিএবিটি হাতিরদিয়া সাদত আলী হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মা মতি জাহান খাদিজা খাতুনও ছিলেন একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। 

১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৬৯-এর ওই আন্দোলনের সময় আসাদুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। 

আসাদ একজন কৃষক সংগঠকও ছিলেন। শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুরাসহ নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। আসাদ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের নিয়ে শিবপুরে একটি নৈশ বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেন। 

১৯৬৯ সালের ২১ জানুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহত’ শিরোনামে আসাদের মৃত্যুর খবরআসাদ ছিলেন সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) ঢাকা হল (বতর্মান শহীদুল্লাহ হল) শাখার সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ছাত্রসংগঠক। ১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমাবেশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম কমিটি। সেখান থেকে ১১ দফা বাস্তবায়ন এবং ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীর নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পাল্টা হিসেবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। তবে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একত্র হন। দুপুর ১২টার দিকে বটতলা থেকে ছাত্রদের বিশাল এক মিছিল ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নামে। এটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ হামলা চালায়। একপর্যায়ে আসাদসহ ছাত্রনেতারা মিছিলটিকে শহরের কেন্দ্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা আসাদকে গুলি করেন। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

আসাদকে হত্যার প্রতিবাদে বেলা ৩টার দিকে বিরাট এক মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ মানুষও এতে যোগ দেন। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। 

আসাদের মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি গোটা পূর্ব পাকিস্তানে তিন দিনের শোক ঘোষণা করে। এ ছাড়া ঢাকা শহরে হরতাল এবং পরবর্তী চার দিন প্রতিবাদ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। ২৪ তারিখে হরতালে গুলি চলানো হয়। তখন ঢাকার পরিস্থিতি গভর্নর মোনেম খানের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় পতন ঘটে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের। 

আসাদের মৃত্যুতে উনসত্তরের গণ-আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল গণ-অভ্যুত্থানে। ‘আইয়ুব গেট’ হয়ে যায় ‘আসাদ গেট’, ‘আইয়ুব অ্যাভিনিউ’ থেকে ‘আসাদ অ্যাভিনিউ’। নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীকে পরিণত হন শহীদ আসাদ। 

সূত্র: বাংলাপিডিয়া
উইকিপিডিয়া

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত