দীপারুণ ভট্টাচার্য
এই অর্ধেক জীবনে অনেক ছোট বড় জায়গায় ঘুরেছি। সবকিছু মাথায় রেখে ভালো লাগা ও সুন্দর জায়গার তালিকা বানালে এই জায়গাটা একেবারে ওপরের দিকে থাকবে।
এই জায়গার নাম ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস, হিন্দিতে বলে ফুলো-কা-ঘাটি আর বাংলায় বলতে পারি ফুলের উপত্যকা। ৫২১ রকম প্রজাতির লতা, গুল্ম ও বৃক্ষের আবাসস্থল এই ফুলের উপত্যকা। প্রায় ৩০০ প্রজাতির ফুল ফোটে এখানে। পার্বত্য আলপাইন ফুল ছাড়াও অন্যান্য বিরল প্রজাতির উদ্ভিদও এখানে দেখা যায়। এখানে আমি ভূর্জ পত্রের গাছ দেখেছি, যা দিয়ে আদিম যুগের পুথি লেখা হতো। আর দেখেছি ব্রহ্ম-কমল। পুরো অঞ্চলটা সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বরফে ঢেকে থাকে। বরফ গলতে শুরু করলেই বিশাল উপত্যকা জুড়ে জন্ম নেয় লতা, গুল্ম আর ফুলের গাছ। গাছে ধীরে ধীরে ফুল আসতে শুরু করে জুলাই থেকে। ফুল দেখতে যাওয়ার সঠিক সময় ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট। এরপর বৃষ্টি ও ঠান্ডায় ফুল ঝরে যায়। তখন গাছ মাটিতে তার বীজ রেখে এক বছরের জন্য লীন হয় শীত ঘুমে। পরের বছর বরফ গললে আবার শুরু হয় একই সবুজ জীবনের উৎসব।
প্রায় ৮৭ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে চলতে থাকা এই সুন্দরের উৎসব, তথাকথিত সভ্য মানুষের চোখের আড়ালেই ছিল। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ পর্বতারোহী ফ্রাঙ্ক এস স্মাইথ আরও কয়েকজন ব্রিটিশ পর্বতারোহী এবং ভুটিয়া ও নেপালি শেরপাদের সঙ্গে আসেন কামেট পর্বত আরোহণ করতে। আরোহণ সম্পূর্ণ করার পর নামার সময় তাঁরা পথ ভুল করে এই দিকে চলে আসেন। উপত্যকায় এসে বিশাল বুগিয়াল জুড়ে ফুটে থাকা ফুলের শোভা দেখে তিনি বিমোহিত হয়ে যান। দেশে ফিরে ১৯৩৮ সালে ফ্রাঙ্ক লেখেন তাঁর বিখ্যাত বই ‘দা ভ্যালি অব ফ্ল্যাওয়ারস’। এই বই পড়েই সুন্দরের খোঁজ পায় মানুষ। বইয়ের নাম থেকেই পরে জায়গাটার নামকরণ হয়েছে। যদিও বন বিভাগের খাতায় এই জায়গার নাম নন্দ দেবী ন্যাশনাল পার্ক।
নতুন ও সুন্দর জায়গার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া আমার অনেক দিনের অভ্যাস। সব জায়গায় যেতে পারিনি। তবে ভ্রমণ কাহিনি পড়ে মনে মনে আমি অনেক জায়গা থেকেই ঘুরে এসেছি। যেমন এই লেখা পড়তে পড়তে আপনিও এখন মনে মনে চলেছেন ফুলের উপত্যকায়। ২০১০ সালে একদিন ঠিক করে ফেললাম ভ্যালি অব ফ্ল্যাওয়ারস যাব। তখন আমি কোলকাতায় চাকরি করি। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়াটা বিপজ্জনক হয়ে যাবে ভেবে একাই যাব ঠিক করলাম। একদিন কথা প্রসঙ্গে বসকে বললাম। শুনেই তিনি রাজি হলেন। তবে ডিপার্টমেন্টের দুজনকে একসঙ্গে ছুটি দেওয়া যাবে কিনা ভাবতে ভাবতে অনেকগুলো দিন কাটিয়ে দিলেন বড় সাহেব। শেষে অনেক আলোচনা করে ছুটির ব্যবস্থা হলো বটে, তবে দেরির জন্য বুকিং সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে হলো। যা হোক, আগস্ট মাসের দ্বিতীয় শনিবার কলকাতা থেকে একটা স্পেশাল ট্রেনে উঠে আমরা রওনা দিলাম হরিদ্বারের উদ্দেশে। হরিদ্বারের কোণার্ক ট্র্যাভেলসের সঙ্গে আমার আগেই আলাপ ছিল। রেল স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাঁ দিকে একটু গেলেই শিব মূর্তি চৌরাহাতে এদের অফিস। আগে বদ্রিনাথ যাওয়ার সময় কোণার্ক ট্রাভেল থেকেই আমি গাড়ি ভাড়া করেছিলাম। এবার অবশ্য গাড়ি আর হোটেল দুটোই ওদের সঙ্গে ঠিক করলাম। গাড়ি প্রতিদিন ২ হাজার ২০০টাকা।
রবিবার সন্ধ্যাবেলা হরিদ্বারে পৌঁছে শরীর বড়ই আনচান করতে লাগল। একে আগস্ট মাসের ঘেমো গরম; তার ওপরে এসি কামরায় টিকিট পাইনি। হোটেলের ঘরে তাই ব্যাগ রেখে গেলাম গঙ্গার পাড়ে হাওয়া খেতে— যদি শরীর-মন একটু ঠান্ডা হয়। ঘাটে গিয়ে আমাদের হলো একটা ছোঁয়াচে রোগ। তখন রাত আটটা হবে। একের পর এক মানুষের দল পবিত্র হর-কি-পউড়ি ঘাটে স্নান করছেন দেখে অলক দা আর লোভ সামলাতে পারলেন না। আমাকে বললেন, ‘স্নান করবি?’ আমি বললাম, ‘দাদা, আমরা তো গামছা আনিনি!’ তাতে কী! গামছা কেনা হলো। তারপর নেমে পড়লাম জলে। জীবনে অনেক বার আমি হরিদ্বার, হৃষীকেশ বা কোউরিয়ালার নির্জন গঙ্গায় স্নান করেছি। তবে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, সেদিনের স্নানে যে আনন্দ পেয়েছিলাম তাকে সব থেকে এগিয়ে রাখব। এরপর বিখ্যাত ‘দাদা-বৌদির হোটেলে’ খেয়ে বিছানায় পড়তেই ডুবে গেলাম গভীর ঘুমের দেশে।
আমাদের হিসাবে একটা ভুল হয়েছিল। পরদিন ছিল শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার। শিবের মাথায় জল ঢালবে বলে লাখ লাখ লোক এসেছেন হরিদ্বারের বিভিন্ন ঘাটে। গত সন্ধ্যায় দেখা শহরটা ভোর রাত থেকে যে এমন ‘নাকা-বন্ধী’ হয়ে পড়বে কে জানত! গাড়িতে উঠে তাই হরিদ্বার ছেড়ে বেরোতে আমাদের বেলা ৯টা হয়ে গেল। উদ্দেশ্য ছিল জশিমঠ পেরিয়ে আরও ১৯ কিলোমিটার গিয়ে গোবিন্দ ঘাটে থাকব। কিন্তু দেরিতে রওনা দেওয়াতে সেটা সম্ভব হলো না। এই পাহাড়ি রাস্তায় সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে গাড়ি চালানো নিরাপদ নয়। পিপলকোঠি থেকে জশিমঠ ৩৫-৩৬ কিলোমিটার পথ। সেই পথে কয়েক কিলোমিটার যেতেই দেখলাম বিরাট গাড়ির লাইন পড়েছে। এর অর্থ সামনে কোথাও রাস্তায় ধস নেমেছে। এই সময় রাস্তায় ধস নামাটা খুব সাধারণ বিষয়। বর্ষাকাল বলেই এটা হয়। ড্রাইভার বললেন, ‘ধস সরিয়ে রাস্তা কখন ঠিক হবে কে জানে। তারপর এই রাস্তায় আগে যাওয়া যাবে কিনা বুঝতে পারছি না।’ আগেও রাস্তায় দুটো জায়গাতে আমরা ধস দেখেছি। এক জায়গায় প্রায় দুই ঘণ্টা আটকেও থেকেছি। সন্ধ্যাবেলা আর তেমন আটকে পড়ার ইচ্ছে ছিল না। তার থেকেও বড় চিন্তা, যত লম্বা গাড়ির লাইন দেখা যাচ্ছে এত লোকের থাকার মতো জায়গা পিপলকোঠিতে আছে কিনা বুঝতে পারছিলাম না। আমি বললাম, ‘গাড়ি ঘুরিয়ে নাও, আমরা এখানেই থাকব।’ গাড়ি ঘুরিয়ে প্রথম যে হোটেল পেলাম সেখানেই থেকে গেলাম। ৪০০ টাকায় পরিষ্কার ঘর, গরম জল, আর কি চাই! এই হোটেলে রান্নার ব্যবস্থা নেই। রাতে আমি আর অলক দা অন্ধকার পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চললাম নিচের বাজারের দিকে, খাবারের সন্ধানে। আর তখনই বুঝলাম, আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব হোটেলে থিক থিক করছে মানুষ। রাস্তার ওপরে সারি সারি গাড়ি। অর্থাৎ ধস সরানো হয়নি! পরদিন সকালে কী হবে, চিন্তা হতে লাগল।
খুব সকালে উঠে গাড়ি নিয়ে চললাম। তখনো বেশি লোক রাস্তায় নামেনি। ধসের জায়গাটায় গিয়ে দেখলাম, বি.আর.ও কাজ করছে। খানিকটা সময়ের মধ্যেই আমরা এগিয়ে গেলাম। পিপলকোঠি থেকে জশিমঠের রাস্তা বড়ই খাঁড়াই। ৩৫ কিলোমিটার যেতে ১ ঘণ্টা লেগে গেল। জশিমঠ থেকে বদ্রিনাথ ৪৪ কিলোমিটার রাস্তা আরও খাঁড়াই ও সরু। সিঙ্গেল রাস্তাই বলা যায়। তাই গাড়িগুলোকে দল ধরে ছাড়া হয়। একটা দল চলে গেলে আবার রাস্তা আটকে দেওয়ার হয় ঘণ্টা খানিকের জন্য। আমরাও তেমন ভাবে আটকে গেলাম। সময়টা কাটালাম চা খেয়ে আর পাহাড়ি বাজার দোকান দেখতে দেখতে। এক সময় ছাড়া পেয়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম। এই পথে ১২ কিলোমিটার গেলে বিষ্ণু প্রয়াগ। অলকানন্দা ও ধউলি গঙ্গার মিলন ভূমি। পঞ্চ প্রয়াগের শেষ প্রয়াগ। এর আগে দেব-প্রয়াগ, রুদ্র-প্রয়াগ, কর্ণ-প্রয়াগ ও নন্দ-প্রয়াগ পেরিয়ে এসেছি আমরা। রাস্তা, আশপাশের গাছপালা, খাঁড়া ন্যাড়া পাথরের পাহাড় সব মিলিয়ে জায়গাটা দারুণ সুন্দর। আরও খানিকটা পথ পেরিয়ে আমরা গোবিন্দ ঘাট বাজারে এসে দাঁড়ালাম। শিখদের দশম গুরু, গোবিন্দ সিং তাঁর জ্ঞান, সাহস এবং আদর্শের জন্য মহান হয়ে আছেন। এখানেই তাঁর আশ্রম। যাকে লোকে গুরুদ্বরা বলে। বাজারের পাশে বিরাট বড় পার্কিং। সেখানে গাড়ি রেখে পিঠে ব্যাগ চাপিয়ে আমরা চললাম ঘাঙ্ঘারিয়ার দিকে। ১৪ কিলোমিটার ঘোড়া কিংবা পায়ে হেঁটে চলতে হবে আমাদের। আমরা তিন দিন পরে ফিরব। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে থাকবে এখানে। তিনি বললেন, ‘বেশি জিনিস নিয়ে যাবেন না, কষ্ট হবে।’ আমরা তাঁর কথা শুনলাম না। পুরো ব্যাগটাই পিঠে নিয়ে চললাম। শুধু তাই নয়, ঘোড়া ওয়ালাদের অনেক অনুরোধ উপেক্ষা করে নিজের পায়ে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তিন কিলোমিটার পথ চলে ফুলনা গ্রামে এসেই বুঝলাম কী বিরাট ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু তখন আর উপায় নেই।
কয়েক বছর আগে আমার এক বন্ধু গিয়েছিল ভ্যালি অব ফ্ল্যাওয়ারসে। তার কাছে শুনেছি, এখন ফুলনা পর্যন্ত অটো চলছে। যা হোক, ফুলনাতে এসে, আমরা ঘোড়া খুঁজতে লাগলাম। মাঝ পথে ঘোড়া পাওয়া গেল না। তখন অলক দা একটা বুদ্ধি দিল। বলল, ‘ব্যাগগুলো ঘোড়াতে পাঠিয়ে খালি হাতে হাঁটা যাক, কী বলিস?’ অন্য মাল নিয়ে যাওয়া একটা ঘোড়ার পিঠে আমাদের ব্যাগ চাপিয়ে একটু এগোতেই দেখলাম, একজন বয়স্ক নারী কী যেন একটা লাল পানীয় বিক্রি করছেন। ১০ টাকায় এক গ্লাস লাল রঙের মিষ্টি পানীয়। গুড়াসের শরবত। গুড়াস, রডডেনড্রনের স্থানীয় নাম। রডডেনড্রনের লাল ফুলের পাপড়ি রোদে শুকিয়ে রাখে এখানকার গ্রামের মানুষ। সেই শুকনো পাপড়ি থেকে চা করার মতো করে তৈরি হয় গুড়াসের শরবত। আজকাল অনেক শপিং মলে পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেন এতে নাকি স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য গুড়াস ভালো। আমরা কয়েক গ্লাস খেয়ে নিলাম। শপিং মলের জিনিসে প্রিজারবেটিভ দেওয়া থাকে। ফুলনা গ্রামের এই শরবত সেই তুলনায় অমৃত।
পিঠের ওজন কমে যাওয়াতে আমাদের চলার গতি বাড়ল। ঘাঙ্ঘারিয়া থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে হেমকুন্ড সাহেব। শিখ ধর্মের স্রষ্টা গুরু নানাক এখানেই সাধনা করেছিলেন। ইসলাম ধর্মের মানুষের কাছে যেমন মক্কা তেমনই শিখ ধর্মের মানুষের কাছে হেমকুন্ড। চলার পথে তাদেরই সংখ্যাই ৯৫ শতাংশ। পথের কষ্ট দূর করতে তাঁরা মাঝে মাঝে যেমন গুরুর নাম করছেন তেমনই সহযাত্রীদের গ্লুকোজ ও জল বিতরণ করছেন। পাহাড়ের গা বেয়ে পায়ে হাঁটা পথে উৎসাহী মানুষের ভিড়, পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লক্ষ্মণ গঙ্গা নদী আর মাঝে মাঝে সুন্দরী ঝরনার ধারা। এক কোথায় রোমান্টিক পরিবেশ। তবে চলার পথে কষ্ট আছে। বৃষ্টি হবে থেকে থেকে। তার মধ্যে দিয়েই চলতে হবে ছাতা কিংবা বর্ষাতি নিয়ে। চলতে চলতে এক সর্দারজির সঙ্গে আলাপ। তিনি বোঝালেন শিখ শব্দের অর্থ, ছাত্র। সে জন্যেই গুরু কথাটা এসেছে। প্রাচীনকালে গুরু শিষ্যরা এমন জঙ্গলেই থাকতেন। লোকালয়ের বিভিন্ন অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে আসতেন মাঝে মধ্যে। তাই ঘোড়া, তরোয়াল ইত্যাদির প্রয়োজন ছিল।
যখন ঘাঙ্ঘারিয়াতে এলাম তখন বিকেল চারটে। চারদিক কালো করে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। জামা জুতো ভিজে গেছে। সেই ঘোড়া ওয়ালা ছেলেটা দেখলাম আমাদের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কথা বলে একটা হোটেলে ঘর নিলাম। দেরি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে জিএমভিএন এ ঘর পাইনি। ফ্রেশ হয়ে গেলাম খাবার খেতে। বললাম, দুটো করে আলুর পরোটা দাও। হোটেলের লোকটা বলল, ‘এখানে অক্সিজেন কম। দুটো আপনারা খেতে পারবেন না।’ পরে বুঝলাম ঠিক কথাই বলছে লোকটা। সেই একটা পরোটা রাতে পর্যন্ত আমাদের কিছু খেতে দিল না। ঘাঙ্ঘারিয়াতে তখনো বিদ্যুৎ ছিল না। হোটেল জেনারেটর চালাত দুই ঘণ্টা। সেই সুযোগে ক্যামেরা চার্জ করতে হবে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ছিল না। আমরা বিকেলে বেরিয়ে স্যাটেলাইট ফোন থেকে ২০ টাকা মিনিট দরে বাড়িতে ফোন করেছিলাম। তার পাশেই ছিল একটা অডিটোরিয়াম। এলাকার ইতিহাস ভূগোল, মানুষের জীবনযাত্রা বিষয়ে তথ্যচিত্র দেখলাম। জানলাম কী কী ফুলে দেখতে পাব আর কোন ফুলের কী নাম।
পরদিন সকালে উঠে দেখলাম আকাশের মুখ ভার। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। হোটেলের লোকটা বলল, ‘আজ ফুল দেখতে যাবেন না’। ঠিক করলাম হেমকুন্ড যাব। এই ছয় কিলোমিটার পথ আরও খাঁড়াই এবং অক্সিজেন আরও কম। আমরা তাই ঘোড়া নিয়ে নিলাম। এই পথেই চলতে চলতে দেখা পেলাম, ব্রহ্ম-কমলের। এমন বড় মাপের ফুল আমি আগে দেখিনি। রাস্তার পাশে ফুটে আছে— যেন ফুটলাইট জ্বলছে। ঘোড়া থেকে নেমে ছবি তুললাম। আরও কয়েকবার নামতে হলো। ঘোড়ার পিঠে একটানা বসে থাকা বড় কঠিন কাজ। লক্ষ্য করলাম, শিখ ধর্মের অনেক বয়স্ক মানুষও চলেছেন। কারও কারও সঙ্গে রয়েছে ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার।
হেমকুন্ড সাহেবে গিয়ে দেখলাম, কুণ্ডের বরফ শীতল জলে স্নান করে পরিষ্কার জামা কাপড় পরে মানুষ চলেছেন গুরুদ্বারে। আমরা কুণ্ডের পাশে দাঁড়িয়ে ঠান্ডায় কাঁপছি দেখে এক সর্দারজী বললেন, ‘ঝাঁপ দাও। ঠান্ডা পালিয়ে যাবে।’ বললাম, ‘মাফ করো গুরু।’ কুণ্ডের চারদিকে বরফের পাহাড়। সেই বরফ জল হেমকুন্ড পরিপূর্ণ করে এক নদীর জন্ম দিয়েছে। শোনা যায়, লক্ষ্মণ নাকি এখানে বসেই সাধনা করেছিলেন। তাই এই নদীর নাম লক্ষ্মণ গঙ্গা। এসব দেখতে দেখতে খানিকটা বেলা হয়ে গেল। দারুণ খিদে লেগেছে। গুরুদ্বারে দেখলাম বিরাট দুটো পাত্রে গরম-গরম কী যেন রান্না হচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখলাম, পাতলা খিচুড়ি আর চা। বাটি ও মগ এগিয়ে দিতেই এক এক হাতা পাওয়া গেল। খিদে অনুমান করে লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম, ‘আর একটু দিন।’ মানুষটা একটু হেসে বললেন, ‘আবার দেব, খেয়ে আসুন।’ সত্যি বলছি, ওইটুকু খেতেই ক্লান্ত হয়ে গেলাম। একটু হাঁটতেই মনে হচ্ছে শরীরের সব শক্তি শেষ হয়ে যাবে। কঠিন পর্বতের ওপরে যে সেনাবাহিনী দিনরাত লড়াই করে চলেছে, তাদের কথা ভেবে মন ভার হয়ে গেল। ফেরার পথে ঘোড়া চালককে বললাম ব্রহ্মকমল ফুল তুলে দিতে। সে বলল, ‘এই ফুল তোলা নিষেধ। তোমাকে নামিয়ে দিচ্ছি চুপিচুপি তুলে নাও।’ আমি ঘোড়া থেকে নেমে একটা পাহাড়ের বুগিয়ালের দিকে চললাম। আর ঠিক সেই সময়ে, কুয়াশা অনেকটা কমে গেল। দেখলাম পাহাড়ের গায়ে ফুটে আছে হাজার হাজার ব্রহ্মকমল। মনে হলো স্বর্গের বাগানে এসে পড়েছি!
পরদিন সকালে উঠেই চললাম ফুল দেখতে। এ পথে ঘোড়া চলে না। কেন না ঘোড়া ফুল খেয়ে ফেলবে। নন্দাদেবীর গেটে গিয়ে দেখলাম আমাদের আগে আর মাত্র দুজন এসেছেন। গেট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পথ চলার পর ফুলে ভরা পাহাড়ের উপত্যকা, যা দেখতে এসেছি আমরা। জায়গাটা ঠিক কত বড় জানি না। তবে এত সুন্দর জায়গা আমি আগে কোথাও দেখিনি। এবার সত্যি সত্যি যেন মনে হতে লাগল, আমি স্বর্গে এসে গেছি। মালি বিহীন এমন সাজানো বাগান বুঝি স্বর্গেই সম্ভব। আর তার মাঝে মাঝে ছোট ছোট জলের ধারা। খানিকক্ষণ পর পর মেঘেদের হালকা স্রোত এসে ছোঁয়া দিয়ে কোথায় চলে যাচ্ছে। একটা পাথরের ওপর বসে পড়লাম। এই সুন্দরকে কিছুক্ষণ চুপ চাপ উপভোগ করতে হবে। পাশের এক ফলকে দেখলাম লেখা রয়েছে, ‘ন্যাচার ইজ এ বুক অ্যান্ড অথর ইজ গড’— প্রকৃতি একটা বই ঈশ্বর যার লেখক। মনটা এক অন্য ভাবে ভরে উঠল। আর ঠিক তখনই কানে ভেসে এল অদ্ভুত এক বাঁশির শব্দ। কয়েক মুহূর্তের জন্য ডুবে গেলাম স্বপ্নের মধ্যে। মনে হলো পণ্ডিত হরি প্রসাদ বসেছেন ইন্দ্রের সভায়।
আমার চটকা ভেঙে দিয়ে অলক দা বললেন, ‘এদিকে আয়, দেখে যা।’ গিয়ে দেখি বড় একটা পাথরের ওপর বসে এক বৃদ্ধ বাজাচ্ছেন এই মোহন বাঁশি। পাশে বসে আছেন তাঁর স্ত্রী। বাজনা শেষে আলাপ হলো দক্ষিণ ভারতের এই দম্পতির সঙ্গে। ভদ্রলোক রেল থেকে অবসর নিয়েছেন পাঁচ বছর হলো। বললেন, ‘বহুদিনের ইচ্ছা ছিল এখানে এসে বাঁশি বাজাবার। আজ সে ইচ্ছা পূরণ হলো। এরপর মরে গেলেও দুঃখ থাকবে না।’ অলক দা বললেন, ‘এবার চল ফিরি। নামতে নামতে বিকেল হয়ে যাবে।’ আমি উপত্যকার দিকে তাকিয়ে ব্লটিং পেপারের মতো সৌন্দর্যকে শুষে নিলাম যতটা সম্ভব। তারপর ফেরার পথ ধরলাম ঘোড়ার পিঠে। ফেরার পথে এক জায়গায় দেখলাম পাথরে লেখা, ‘কাক ভুশুণ্ডি ২০ কিলোমিটার।’ ঘোড়াওয়ালা বললেন, ‘কাক ভুশুণ্ডি একটা লেকের নাম। ২০ কিলোমিটার ট্রেকিং পথ।’ পাহাড়ের লেক বাংলার সাহিত্যে কী তবে ভুশুণ্ডির মাঠ হয়েছে! মনে মনে হাসলাম।
কয়েকটি তথ্য: চেষ্টা করুন জিএমভিএন ঘাঙ্ঘারিয়া বুক করতে। সঙ্গে রাখুন হোমিও ওষুধ সিওসিএ–৩০। শ্বাস কষ্ট হলে জিভে কয়েক ফোঁটা ফেলে দিন। সঙ্গে কাজু, কিশমিশ রাখুন। পথে বারবার চা খেয়ে ও বিশ্রাম নিতে নিতে চলুন। সঙ্গে ছাতা কিংবা রেইনকোট অবশ্যই রাখুন। ব্যাটারি ব্যাংক চার্জ দিয়ে আনবেন। অপ্রয়োজনীয়ে জিনিস গাড়িতে রেখে হালকা হয়ে পাহাড়ে উঠুন, অবশ্যই ঘোড়া নিয়ে। দেখবেন সারা জীবন মনে রাখার মতো একটা ভ্রমণ হয়ে থাকবে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ট্রেনে হরিদ্বার আসতে পারেন কিংবা দিল্লি পর্যন্ত রাজধানী এক্সপ্রেস বা বিমানে। সেখান থেকে বিকেলের জন-শতাব্দীতে হরিদ্বার আসুন। পর দিন ভোরে ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। গোবিন্দ ঘাট পর্যন্ত আসতে পারলে খুব ভালো হয়। রাতে ওখানেই থাকুন। ফেরার সময় চাইলে বদ্রিনাথ দর্শন করে নিতেও পারেন।
কখন আসবেন: ১৫ আগস্ট এর আশপাশের সময়টা সব থেকে ভালো।
এই অর্ধেক জীবনে অনেক ছোট বড় জায়গায় ঘুরেছি। সবকিছু মাথায় রেখে ভালো লাগা ও সুন্দর জায়গার তালিকা বানালে এই জায়গাটা একেবারে ওপরের দিকে থাকবে।
এই জায়গার নাম ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস, হিন্দিতে বলে ফুলো-কা-ঘাটি আর বাংলায় বলতে পারি ফুলের উপত্যকা। ৫২১ রকম প্রজাতির লতা, গুল্ম ও বৃক্ষের আবাসস্থল এই ফুলের উপত্যকা। প্রায় ৩০০ প্রজাতির ফুল ফোটে এখানে। পার্বত্য আলপাইন ফুল ছাড়াও অন্যান্য বিরল প্রজাতির উদ্ভিদও এখানে দেখা যায়। এখানে আমি ভূর্জ পত্রের গাছ দেখেছি, যা দিয়ে আদিম যুগের পুথি লেখা হতো। আর দেখেছি ব্রহ্ম-কমল। পুরো অঞ্চলটা সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বরফে ঢেকে থাকে। বরফ গলতে শুরু করলেই বিশাল উপত্যকা জুড়ে জন্ম নেয় লতা, গুল্ম আর ফুলের গাছ। গাছে ধীরে ধীরে ফুল আসতে শুরু করে জুলাই থেকে। ফুল দেখতে যাওয়ার সঠিক সময় ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট। এরপর বৃষ্টি ও ঠান্ডায় ফুল ঝরে যায়। তখন গাছ মাটিতে তার বীজ রেখে এক বছরের জন্য লীন হয় শীত ঘুমে। পরের বছর বরফ গললে আবার শুরু হয় একই সবুজ জীবনের উৎসব।
প্রায় ৮৭ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে চলতে থাকা এই সুন্দরের উৎসব, তথাকথিত সভ্য মানুষের চোখের আড়ালেই ছিল। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ পর্বতারোহী ফ্রাঙ্ক এস স্মাইথ আরও কয়েকজন ব্রিটিশ পর্বতারোহী এবং ভুটিয়া ও নেপালি শেরপাদের সঙ্গে আসেন কামেট পর্বত আরোহণ করতে। আরোহণ সম্পূর্ণ করার পর নামার সময় তাঁরা পথ ভুল করে এই দিকে চলে আসেন। উপত্যকায় এসে বিশাল বুগিয়াল জুড়ে ফুটে থাকা ফুলের শোভা দেখে তিনি বিমোহিত হয়ে যান। দেশে ফিরে ১৯৩৮ সালে ফ্রাঙ্ক লেখেন তাঁর বিখ্যাত বই ‘দা ভ্যালি অব ফ্ল্যাওয়ারস’। এই বই পড়েই সুন্দরের খোঁজ পায় মানুষ। বইয়ের নাম থেকেই পরে জায়গাটার নামকরণ হয়েছে। যদিও বন বিভাগের খাতায় এই জায়গার নাম নন্দ দেবী ন্যাশনাল পার্ক।
নতুন ও সুন্দর জায়গার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া আমার অনেক দিনের অভ্যাস। সব জায়গায় যেতে পারিনি। তবে ভ্রমণ কাহিনি পড়ে মনে মনে আমি অনেক জায়গা থেকেই ঘুরে এসেছি। যেমন এই লেখা পড়তে পড়তে আপনিও এখন মনে মনে চলেছেন ফুলের উপত্যকায়। ২০১০ সালে একদিন ঠিক করে ফেললাম ভ্যালি অব ফ্ল্যাওয়ারস যাব। তখন আমি কোলকাতায় চাকরি করি। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়াটা বিপজ্জনক হয়ে যাবে ভেবে একাই যাব ঠিক করলাম। একদিন কথা প্রসঙ্গে বসকে বললাম। শুনেই তিনি রাজি হলেন। তবে ডিপার্টমেন্টের দুজনকে একসঙ্গে ছুটি দেওয়া যাবে কিনা ভাবতে ভাবতে অনেকগুলো দিন কাটিয়ে দিলেন বড় সাহেব। শেষে অনেক আলোচনা করে ছুটির ব্যবস্থা হলো বটে, তবে দেরির জন্য বুকিং সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে হলো। যা হোক, আগস্ট মাসের দ্বিতীয় শনিবার কলকাতা থেকে একটা স্পেশাল ট্রেনে উঠে আমরা রওনা দিলাম হরিদ্বারের উদ্দেশে। হরিদ্বারের কোণার্ক ট্র্যাভেলসের সঙ্গে আমার আগেই আলাপ ছিল। রেল স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাঁ দিকে একটু গেলেই শিব মূর্তি চৌরাহাতে এদের অফিস। আগে বদ্রিনাথ যাওয়ার সময় কোণার্ক ট্রাভেল থেকেই আমি গাড়ি ভাড়া করেছিলাম। এবার অবশ্য গাড়ি আর হোটেল দুটোই ওদের সঙ্গে ঠিক করলাম। গাড়ি প্রতিদিন ২ হাজার ২০০টাকা।
রবিবার সন্ধ্যাবেলা হরিদ্বারে পৌঁছে শরীর বড়ই আনচান করতে লাগল। একে আগস্ট মাসের ঘেমো গরম; তার ওপরে এসি কামরায় টিকিট পাইনি। হোটেলের ঘরে তাই ব্যাগ রেখে গেলাম গঙ্গার পাড়ে হাওয়া খেতে— যদি শরীর-মন একটু ঠান্ডা হয়। ঘাটে গিয়ে আমাদের হলো একটা ছোঁয়াচে রোগ। তখন রাত আটটা হবে। একের পর এক মানুষের দল পবিত্র হর-কি-পউড়ি ঘাটে স্নান করছেন দেখে অলক দা আর লোভ সামলাতে পারলেন না। আমাকে বললেন, ‘স্নান করবি?’ আমি বললাম, ‘দাদা, আমরা তো গামছা আনিনি!’ তাতে কী! গামছা কেনা হলো। তারপর নেমে পড়লাম জলে। জীবনে অনেক বার আমি হরিদ্বার, হৃষীকেশ বা কোউরিয়ালার নির্জন গঙ্গায় স্নান করেছি। তবে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, সেদিনের স্নানে যে আনন্দ পেয়েছিলাম তাকে সব থেকে এগিয়ে রাখব। এরপর বিখ্যাত ‘দাদা-বৌদির হোটেলে’ খেয়ে বিছানায় পড়তেই ডুবে গেলাম গভীর ঘুমের দেশে।
আমাদের হিসাবে একটা ভুল হয়েছিল। পরদিন ছিল শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার। শিবের মাথায় জল ঢালবে বলে লাখ লাখ লোক এসেছেন হরিদ্বারের বিভিন্ন ঘাটে। গত সন্ধ্যায় দেখা শহরটা ভোর রাত থেকে যে এমন ‘নাকা-বন্ধী’ হয়ে পড়বে কে জানত! গাড়িতে উঠে তাই হরিদ্বার ছেড়ে বেরোতে আমাদের বেলা ৯টা হয়ে গেল। উদ্দেশ্য ছিল জশিমঠ পেরিয়ে আরও ১৯ কিলোমিটার গিয়ে গোবিন্দ ঘাটে থাকব। কিন্তু দেরিতে রওনা দেওয়াতে সেটা সম্ভব হলো না। এই পাহাড়ি রাস্তায় সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে গাড়ি চালানো নিরাপদ নয়। পিপলকোঠি থেকে জশিমঠ ৩৫-৩৬ কিলোমিটার পথ। সেই পথে কয়েক কিলোমিটার যেতেই দেখলাম বিরাট গাড়ির লাইন পড়েছে। এর অর্থ সামনে কোথাও রাস্তায় ধস নেমেছে। এই সময় রাস্তায় ধস নামাটা খুব সাধারণ বিষয়। বর্ষাকাল বলেই এটা হয়। ড্রাইভার বললেন, ‘ধস সরিয়ে রাস্তা কখন ঠিক হবে কে জানে। তারপর এই রাস্তায় আগে যাওয়া যাবে কিনা বুঝতে পারছি না।’ আগেও রাস্তায় দুটো জায়গাতে আমরা ধস দেখেছি। এক জায়গায় প্রায় দুই ঘণ্টা আটকেও থেকেছি। সন্ধ্যাবেলা আর তেমন আটকে পড়ার ইচ্ছে ছিল না। তার থেকেও বড় চিন্তা, যত লম্বা গাড়ির লাইন দেখা যাচ্ছে এত লোকের থাকার মতো জায়গা পিপলকোঠিতে আছে কিনা বুঝতে পারছিলাম না। আমি বললাম, ‘গাড়ি ঘুরিয়ে নাও, আমরা এখানেই থাকব।’ গাড়ি ঘুরিয়ে প্রথম যে হোটেল পেলাম সেখানেই থেকে গেলাম। ৪০০ টাকায় পরিষ্কার ঘর, গরম জল, আর কি চাই! এই হোটেলে রান্নার ব্যবস্থা নেই। রাতে আমি আর অলক দা অন্ধকার পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চললাম নিচের বাজারের দিকে, খাবারের সন্ধানে। আর তখনই বুঝলাম, আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব হোটেলে থিক থিক করছে মানুষ। রাস্তার ওপরে সারি সারি গাড়ি। অর্থাৎ ধস সরানো হয়নি! পরদিন সকালে কী হবে, চিন্তা হতে লাগল।
খুব সকালে উঠে গাড়ি নিয়ে চললাম। তখনো বেশি লোক রাস্তায় নামেনি। ধসের জায়গাটায় গিয়ে দেখলাম, বি.আর.ও কাজ করছে। খানিকটা সময়ের মধ্যেই আমরা এগিয়ে গেলাম। পিপলকোঠি থেকে জশিমঠের রাস্তা বড়ই খাঁড়াই। ৩৫ কিলোমিটার যেতে ১ ঘণ্টা লেগে গেল। জশিমঠ থেকে বদ্রিনাথ ৪৪ কিলোমিটার রাস্তা আরও খাঁড়াই ও সরু। সিঙ্গেল রাস্তাই বলা যায়। তাই গাড়িগুলোকে দল ধরে ছাড়া হয়। একটা দল চলে গেলে আবার রাস্তা আটকে দেওয়ার হয় ঘণ্টা খানিকের জন্য। আমরাও তেমন ভাবে আটকে গেলাম। সময়টা কাটালাম চা খেয়ে আর পাহাড়ি বাজার দোকান দেখতে দেখতে। এক সময় ছাড়া পেয়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম। এই পথে ১২ কিলোমিটার গেলে বিষ্ণু প্রয়াগ। অলকানন্দা ও ধউলি গঙ্গার মিলন ভূমি। পঞ্চ প্রয়াগের শেষ প্রয়াগ। এর আগে দেব-প্রয়াগ, রুদ্র-প্রয়াগ, কর্ণ-প্রয়াগ ও নন্দ-প্রয়াগ পেরিয়ে এসেছি আমরা। রাস্তা, আশপাশের গাছপালা, খাঁড়া ন্যাড়া পাথরের পাহাড় সব মিলিয়ে জায়গাটা দারুণ সুন্দর। আরও খানিকটা পথ পেরিয়ে আমরা গোবিন্দ ঘাট বাজারে এসে দাঁড়ালাম। শিখদের দশম গুরু, গোবিন্দ সিং তাঁর জ্ঞান, সাহস এবং আদর্শের জন্য মহান হয়ে আছেন। এখানেই তাঁর আশ্রম। যাকে লোকে গুরুদ্বরা বলে। বাজারের পাশে বিরাট বড় পার্কিং। সেখানে গাড়ি রেখে পিঠে ব্যাগ চাপিয়ে আমরা চললাম ঘাঙ্ঘারিয়ার দিকে। ১৪ কিলোমিটার ঘোড়া কিংবা পায়ে হেঁটে চলতে হবে আমাদের। আমরা তিন দিন পরে ফিরব। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে থাকবে এখানে। তিনি বললেন, ‘বেশি জিনিস নিয়ে যাবেন না, কষ্ট হবে।’ আমরা তাঁর কথা শুনলাম না। পুরো ব্যাগটাই পিঠে নিয়ে চললাম। শুধু তাই নয়, ঘোড়া ওয়ালাদের অনেক অনুরোধ উপেক্ষা করে নিজের পায়ে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তিন কিলোমিটার পথ চলে ফুলনা গ্রামে এসেই বুঝলাম কী বিরাট ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু তখন আর উপায় নেই।
কয়েক বছর আগে আমার এক বন্ধু গিয়েছিল ভ্যালি অব ফ্ল্যাওয়ারসে। তার কাছে শুনেছি, এখন ফুলনা পর্যন্ত অটো চলছে। যা হোক, ফুলনাতে এসে, আমরা ঘোড়া খুঁজতে লাগলাম। মাঝ পথে ঘোড়া পাওয়া গেল না। তখন অলক দা একটা বুদ্ধি দিল। বলল, ‘ব্যাগগুলো ঘোড়াতে পাঠিয়ে খালি হাতে হাঁটা যাক, কী বলিস?’ অন্য মাল নিয়ে যাওয়া একটা ঘোড়ার পিঠে আমাদের ব্যাগ চাপিয়ে একটু এগোতেই দেখলাম, একজন বয়স্ক নারী কী যেন একটা লাল পানীয় বিক্রি করছেন। ১০ টাকায় এক গ্লাস লাল রঙের মিষ্টি পানীয়। গুড়াসের শরবত। গুড়াস, রডডেনড্রনের স্থানীয় নাম। রডডেনড্রনের লাল ফুলের পাপড়ি রোদে শুকিয়ে রাখে এখানকার গ্রামের মানুষ। সেই শুকনো পাপড়ি থেকে চা করার মতো করে তৈরি হয় গুড়াসের শরবত। আজকাল অনেক শপিং মলে পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেন এতে নাকি স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য গুড়াস ভালো। আমরা কয়েক গ্লাস খেয়ে নিলাম। শপিং মলের জিনিসে প্রিজারবেটিভ দেওয়া থাকে। ফুলনা গ্রামের এই শরবত সেই তুলনায় অমৃত।
পিঠের ওজন কমে যাওয়াতে আমাদের চলার গতি বাড়ল। ঘাঙ্ঘারিয়া থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে হেমকুন্ড সাহেব। শিখ ধর্মের স্রষ্টা গুরু নানাক এখানেই সাধনা করেছিলেন। ইসলাম ধর্মের মানুষের কাছে যেমন মক্কা তেমনই শিখ ধর্মের মানুষের কাছে হেমকুন্ড। চলার পথে তাদেরই সংখ্যাই ৯৫ শতাংশ। পথের কষ্ট দূর করতে তাঁরা মাঝে মাঝে যেমন গুরুর নাম করছেন তেমনই সহযাত্রীদের গ্লুকোজ ও জল বিতরণ করছেন। পাহাড়ের গা বেয়ে পায়ে হাঁটা পথে উৎসাহী মানুষের ভিড়, পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লক্ষ্মণ গঙ্গা নদী আর মাঝে মাঝে সুন্দরী ঝরনার ধারা। এক কোথায় রোমান্টিক পরিবেশ। তবে চলার পথে কষ্ট আছে। বৃষ্টি হবে থেকে থেকে। তার মধ্যে দিয়েই চলতে হবে ছাতা কিংবা বর্ষাতি নিয়ে। চলতে চলতে এক সর্দারজির সঙ্গে আলাপ। তিনি বোঝালেন শিখ শব্দের অর্থ, ছাত্র। সে জন্যেই গুরু কথাটা এসেছে। প্রাচীনকালে গুরু শিষ্যরা এমন জঙ্গলেই থাকতেন। লোকালয়ের বিভিন্ন অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে আসতেন মাঝে মধ্যে। তাই ঘোড়া, তরোয়াল ইত্যাদির প্রয়োজন ছিল।
যখন ঘাঙ্ঘারিয়াতে এলাম তখন বিকেল চারটে। চারদিক কালো করে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। জামা জুতো ভিজে গেছে। সেই ঘোড়া ওয়ালা ছেলেটা দেখলাম আমাদের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কথা বলে একটা হোটেলে ঘর নিলাম। দেরি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে জিএমভিএন এ ঘর পাইনি। ফ্রেশ হয়ে গেলাম খাবার খেতে। বললাম, দুটো করে আলুর পরোটা দাও। হোটেলের লোকটা বলল, ‘এখানে অক্সিজেন কম। দুটো আপনারা খেতে পারবেন না।’ পরে বুঝলাম ঠিক কথাই বলছে লোকটা। সেই একটা পরোটা রাতে পর্যন্ত আমাদের কিছু খেতে দিল না। ঘাঙ্ঘারিয়াতে তখনো বিদ্যুৎ ছিল না। হোটেল জেনারেটর চালাত দুই ঘণ্টা। সেই সুযোগে ক্যামেরা চার্জ করতে হবে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ছিল না। আমরা বিকেলে বেরিয়ে স্যাটেলাইট ফোন থেকে ২০ টাকা মিনিট দরে বাড়িতে ফোন করেছিলাম। তার পাশেই ছিল একটা অডিটোরিয়াম। এলাকার ইতিহাস ভূগোল, মানুষের জীবনযাত্রা বিষয়ে তথ্যচিত্র দেখলাম। জানলাম কী কী ফুলে দেখতে পাব আর কোন ফুলের কী নাম।
পরদিন সকালে উঠে দেখলাম আকাশের মুখ ভার। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। হোটেলের লোকটা বলল, ‘আজ ফুল দেখতে যাবেন না’। ঠিক করলাম হেমকুন্ড যাব। এই ছয় কিলোমিটার পথ আরও খাঁড়াই এবং অক্সিজেন আরও কম। আমরা তাই ঘোড়া নিয়ে নিলাম। এই পথেই চলতে চলতে দেখা পেলাম, ব্রহ্ম-কমলের। এমন বড় মাপের ফুল আমি আগে দেখিনি। রাস্তার পাশে ফুটে আছে— যেন ফুটলাইট জ্বলছে। ঘোড়া থেকে নেমে ছবি তুললাম। আরও কয়েকবার নামতে হলো। ঘোড়ার পিঠে একটানা বসে থাকা বড় কঠিন কাজ। লক্ষ্য করলাম, শিখ ধর্মের অনেক বয়স্ক মানুষও চলেছেন। কারও কারও সঙ্গে রয়েছে ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার।
হেমকুন্ড সাহেবে গিয়ে দেখলাম, কুণ্ডের বরফ শীতল জলে স্নান করে পরিষ্কার জামা কাপড় পরে মানুষ চলেছেন গুরুদ্বারে। আমরা কুণ্ডের পাশে দাঁড়িয়ে ঠান্ডায় কাঁপছি দেখে এক সর্দারজী বললেন, ‘ঝাঁপ দাও। ঠান্ডা পালিয়ে যাবে।’ বললাম, ‘মাফ করো গুরু।’ কুণ্ডের চারদিকে বরফের পাহাড়। সেই বরফ জল হেমকুন্ড পরিপূর্ণ করে এক নদীর জন্ম দিয়েছে। শোনা যায়, লক্ষ্মণ নাকি এখানে বসেই সাধনা করেছিলেন। তাই এই নদীর নাম লক্ষ্মণ গঙ্গা। এসব দেখতে দেখতে খানিকটা বেলা হয়ে গেল। দারুণ খিদে লেগেছে। গুরুদ্বারে দেখলাম বিরাট দুটো পাত্রে গরম-গরম কী যেন রান্না হচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখলাম, পাতলা খিচুড়ি আর চা। বাটি ও মগ এগিয়ে দিতেই এক এক হাতা পাওয়া গেল। খিদে অনুমান করে লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম, ‘আর একটু দিন।’ মানুষটা একটু হেসে বললেন, ‘আবার দেব, খেয়ে আসুন।’ সত্যি বলছি, ওইটুকু খেতেই ক্লান্ত হয়ে গেলাম। একটু হাঁটতেই মনে হচ্ছে শরীরের সব শক্তি শেষ হয়ে যাবে। কঠিন পর্বতের ওপরে যে সেনাবাহিনী দিনরাত লড়াই করে চলেছে, তাদের কথা ভেবে মন ভার হয়ে গেল। ফেরার পথে ঘোড়া চালককে বললাম ব্রহ্মকমল ফুল তুলে দিতে। সে বলল, ‘এই ফুল তোলা নিষেধ। তোমাকে নামিয়ে দিচ্ছি চুপিচুপি তুলে নাও।’ আমি ঘোড়া থেকে নেমে একটা পাহাড়ের বুগিয়ালের দিকে চললাম। আর ঠিক সেই সময়ে, কুয়াশা অনেকটা কমে গেল। দেখলাম পাহাড়ের গায়ে ফুটে আছে হাজার হাজার ব্রহ্মকমল। মনে হলো স্বর্গের বাগানে এসে পড়েছি!
পরদিন সকালে উঠেই চললাম ফুল দেখতে। এ পথে ঘোড়া চলে না। কেন না ঘোড়া ফুল খেয়ে ফেলবে। নন্দাদেবীর গেটে গিয়ে দেখলাম আমাদের আগে আর মাত্র দুজন এসেছেন। গেট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পথ চলার পর ফুলে ভরা পাহাড়ের উপত্যকা, যা দেখতে এসেছি আমরা। জায়গাটা ঠিক কত বড় জানি না। তবে এত সুন্দর জায়গা আমি আগে কোথাও দেখিনি। এবার সত্যি সত্যি যেন মনে হতে লাগল, আমি স্বর্গে এসে গেছি। মালি বিহীন এমন সাজানো বাগান বুঝি স্বর্গেই সম্ভব। আর তার মাঝে মাঝে ছোট ছোট জলের ধারা। খানিকক্ষণ পর পর মেঘেদের হালকা স্রোত এসে ছোঁয়া দিয়ে কোথায় চলে যাচ্ছে। একটা পাথরের ওপর বসে পড়লাম। এই সুন্দরকে কিছুক্ষণ চুপ চাপ উপভোগ করতে হবে। পাশের এক ফলকে দেখলাম লেখা রয়েছে, ‘ন্যাচার ইজ এ বুক অ্যান্ড অথর ইজ গড’— প্রকৃতি একটা বই ঈশ্বর যার লেখক। মনটা এক অন্য ভাবে ভরে উঠল। আর ঠিক তখনই কানে ভেসে এল অদ্ভুত এক বাঁশির শব্দ। কয়েক মুহূর্তের জন্য ডুবে গেলাম স্বপ্নের মধ্যে। মনে হলো পণ্ডিত হরি প্রসাদ বসেছেন ইন্দ্রের সভায়।
আমার চটকা ভেঙে দিয়ে অলক দা বললেন, ‘এদিকে আয়, দেখে যা।’ গিয়ে দেখি বড় একটা পাথরের ওপর বসে এক বৃদ্ধ বাজাচ্ছেন এই মোহন বাঁশি। পাশে বসে আছেন তাঁর স্ত্রী। বাজনা শেষে আলাপ হলো দক্ষিণ ভারতের এই দম্পতির সঙ্গে। ভদ্রলোক রেল থেকে অবসর নিয়েছেন পাঁচ বছর হলো। বললেন, ‘বহুদিনের ইচ্ছা ছিল এখানে এসে বাঁশি বাজাবার। আজ সে ইচ্ছা পূরণ হলো। এরপর মরে গেলেও দুঃখ থাকবে না।’ অলক দা বললেন, ‘এবার চল ফিরি। নামতে নামতে বিকেল হয়ে যাবে।’ আমি উপত্যকার দিকে তাকিয়ে ব্লটিং পেপারের মতো সৌন্দর্যকে শুষে নিলাম যতটা সম্ভব। তারপর ফেরার পথ ধরলাম ঘোড়ার পিঠে। ফেরার পথে এক জায়গায় দেখলাম পাথরে লেখা, ‘কাক ভুশুণ্ডি ২০ কিলোমিটার।’ ঘোড়াওয়ালা বললেন, ‘কাক ভুশুণ্ডি একটা লেকের নাম। ২০ কিলোমিটার ট্রেকিং পথ।’ পাহাড়ের লেক বাংলার সাহিত্যে কী তবে ভুশুণ্ডির মাঠ হয়েছে! মনে মনে হাসলাম।
কয়েকটি তথ্য: চেষ্টা করুন জিএমভিএন ঘাঙ্ঘারিয়া বুক করতে। সঙ্গে রাখুন হোমিও ওষুধ সিওসিএ–৩০। শ্বাস কষ্ট হলে জিভে কয়েক ফোঁটা ফেলে দিন। সঙ্গে কাজু, কিশমিশ রাখুন। পথে বারবার চা খেয়ে ও বিশ্রাম নিতে নিতে চলুন। সঙ্গে ছাতা কিংবা রেইনকোট অবশ্যই রাখুন। ব্যাটারি ব্যাংক চার্জ দিয়ে আনবেন। অপ্রয়োজনীয়ে জিনিস গাড়িতে রেখে হালকা হয়ে পাহাড়ে উঠুন, অবশ্যই ঘোড়া নিয়ে। দেখবেন সারা জীবন মনে রাখার মতো একটা ভ্রমণ হয়ে থাকবে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ট্রেনে হরিদ্বার আসতে পারেন কিংবা দিল্লি পর্যন্ত রাজধানী এক্সপ্রেস বা বিমানে। সেখান থেকে বিকেলের জন-শতাব্দীতে হরিদ্বার আসুন। পর দিন ভোরে ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। গোবিন্দ ঘাট পর্যন্ত আসতে পারলে খুব ভালো হয়। রাতে ওখানেই থাকুন। ফেরার সময় চাইলে বদ্রিনাথ দর্শন করে নিতেও পারেন।
কখন আসবেন: ১৫ আগস্ট এর আশপাশের সময়টা সব থেকে ভালো।
খাবার মজাদার করতে আমরা সাধারণভাবে তেল-মসলার খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলি। সেখান থেকে বাদ যায় না পেঁয়াজ কিংবা রসুন। পেঁয়াজকে কায়দা করে সরিয়ে রাখলেও খাবার মজাদার হতে পারে। তেমনই কিছু রেসিপি...
১৫ ঘণ্টা আগেবাংলা অঞ্চলে মিষ্টিজাতীয় প্রাচীন খাবারগুলোর মধ্যে সন্দেশের নাম আছে একেবারে প্রথম দিকে। সব মিষ্টির কিছু না কিছু বদল হলেও, এর বদল হয়েছে খুবই কম। যশোরের নলেন গুড়ের সন্দেশ, মানিকগঞ্জ বা নাগরপুরের প্যারা সন্দেশ, পাবনার মাছের পেটি সন্দেশ ইত্যাদি কে না খেতে পছন্দ করে!
১৫ ঘণ্টা আগেজীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরেফিরে এসেছে দারুচিনি দ্বীপের কথা, তার রহস্যময় শ্যামলিমার কথা, সেই সবুজের গহিনে দিকহারা নাবিকের আশ্রয়-আকাঙ্ক্ষার কথা। এই দারুচিনি দ্বীপ কি আসলে কোনো সমুদ্রঘেরা ভূখণ্ড, নাকি বনলতা সেন নিজেই, তা নিয়ে কবিরা বিতর্ক করুক। আমরা বরং এই দ্বীপের তত্ত্বতালাশ করি।
১৫ ঘণ্টা আগে‘প্রসেসেস’-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভাতের মাড় ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি হজমযোগ্য স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে কাজ করে। এমনকি এটি ওজন কমাতে পারে।
১৫ ঘণ্টা আগে