মহুয়া রউফ
মেসির জন্মের প্রায় ৬৩ বছর আগে এবং আজ থেকে প্রায় ৯৯ বছর আগে আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মেসির দেশে গিয়েছিলেন। থেকেছিলেন বেশ কিছুদিন। সামনে ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী। সে কথা স্মরণ করে এই রবীন্দ্রতর্পণ।
সময়টা ১৯২৪ সালের নভেম্বর মাস। পেরুর স্বাধীনতাসংগ্রামের শত বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি সে দেশের আমন্ত্রিত অতিথি। যাচ্ছিলেন জাহাজযোগে। পথে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন। নেমে পড়েন আর্জেন্টিনায়। ওঠেন বুয়েনস এইরেসের প্লাসা হোটেলে। রবির সফর সঙ্গী তাঁর সেক্রেটারি লেনার্ড এলমহার্স্ট। সে সময় আর্জেন্টিনায় একজন বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও নারীবাদী লেখিকা ছিলেন। নাম তাঁর ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। তিনি লাতিন আমেরিকায় নারীবাদী আন্দোলনের প্রভাবশালী নেত্রী। তিনি বিদুষী, তিনি প্রথাবিরোধী। বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘সুর’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। লাতিন আমেরিকার সেরা কবি ও লেখকদের লেখা প্রকাশিত হতো ‘সুর’ পত্রিকায়।
তত দিনে গীতাঞ্জলি অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, স্প্যানিশ ও ফরাসি ভাষায়। ওকাম্পো তত দিনে গীতাঞ্জলি পড়ে ফেলেছেন এই তিন ভাষায়। তিনি অভিভূত। রবীন্দ্রনাথের ভক্ত হয়ে ওঠেন তিনি। হয়ে ওঠেন অনুরাগী। তাঁদের যোগাযোগের সূত্র গীতাঞ্জলি। অসুস্থ রবি বুয়েনস এইরেসের একটি হোটেলে উঠেছেন খবর পেয়ে ওকাম্পো ছুটে গেলেন তাঁর কাছে। অসুস্থ রবিকে নিজের বাড়িতে এনে রাখতে চাইলেন। অনেকটা জোর করেই তাঁকে নিয়ে আসেন ওকাম্পো। না, পারলেন না, পিতার আপত্তিতে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ‘ভিলা ওকাম্পো’র কাছাকাছি আরেকটি বাড়ি ভাড়া করেন রবিঠাকুরের জন্য। রবীন্দ্রনাথকে দেখারও বেশ আগে তাঁর সাহিত্য পড়ার মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি প্রাথমিক মুগ্ধতা তৈরি হয়েছিল। রবির তখন ৬৩ আর ওকাম্পো ৩৪। রবি ডাকতেন ‘বিজয়া’ বলে। প্রথম দর্শনেই রবিকে তাঁর মনে হয়েছে নীরব, সুদূর, তুলনাহীন, বিনীত। জনশ্রুতি আছে, তাঁরা পরস্পরের প্রেমে পড়েছিলেন। তাঁদের প্রেমের গুঞ্জন গত ১০০ বছরে আরও বেড়েছে। বিস্তর গবেষণা হয়েছে এ নিয়ে। এক পক্ষ দাবি করেছে, এ প্রেম প্লেটোনিক। কেউ কেউ এটি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন তা প্লেটোনিক নয়, জৈবিক। আমাদের নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ রায় একে বলেছেন ‘অশ্রুত গুঞ্জন’।
‘ভিলা ওকাম্পো’ বাড়িটি একটি অভিজাত বাড়ি। এর পরতে পরতে নান্দনিকতা। এটি নকশা করেছিলেন ওকাম্পোর স্থপতি পিতা নিজেই। উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন কন্যা, পিতার মৃত্যুর পর। এর সামনে-পেছনে বিশাল প্রাঙ্গণ। সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। এ বাড়িতে রাত্রিযাপন না করলেও দিনের অধিকাংশ সময় ওকাম্পোর সঙ্গে সবুজ প্রাঙ্গণে কাটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। এ বাড়ির কাছের প্লাতা নদীর তীরেই রচিত হয়েছে রবি-বিজয়ার প্লেটোনিক প্রেম। ১৯৭৩ সাল থেকে ‘ভিলা ওকাম্পো’ ইউনেসকোর সম্পত্তি।
ইউনেসকো প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ওকাম্পো সক্রিয় অবদান রেখেছেন। ১৯৪৬ সালে নুরেমবার্গ ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ছিলেন। আর্জেন্টিনার পেরন সরকারের সময় জেল-জুলুমের অভিজ্ঞতাও নিতে হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ১৯৫৩ সালের ৮ মে। কারাগারে ছিলেন ২৬ দিন। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা তাঁর প্রভাবশালী বন্ধুরা এগিয়ে এসেছিলেন সে সময়। প্রতিবাদ জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন এই মহীয়সীর। তাঁর মুক্তিতে আমাদের জওহরলাল নেহরুর ভূমিকা আছে, ইতিহাস বলে।
‘ভিলা ওকাম্পো’র নিচতলার কয়েকটি কক্ষের একটি ছিল পিয়ানো কক্ষ। সেই পিয়ানো রাখা আছে এখানে, যেটা বিজয়া বাজিয়ে শোনাতেন রবিকে। পিয়ানো কক্ষের উল্টো দিকের কক্ষটিতে আছে জওহরলাল নেহরুর ছবি। তাঁর মেয়ে ইন্দিরার পদধূলি পড়েছে এ বাড়িতে। শুধু ইন্দিরার কথা বলছি কেন, পৃথিবীর সে সময়কার বিভিন্ন রথী-মহারথীর পা পড়েছে এ ভিটায়। সেই তালিকায় আছেন সাহিত্যিক, দার্শনিক, সংগীতজ্ঞ।
রবিঠাকুর শারদ প্রাতে, মাধবী রাতে যে বিদেশিনীকে দেখছেন, তিনি ওকাম্পো নন। কারণ, ওকাম্পোর সঙ্গে দেখা হওয়ার ৩০ বছর আগে ১৮৯৫ সালে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বসে রবীন্দ্রনাথ ‘ওগো বিদেশিনী’ গানটি লিখেছিলেন। কিন্তু ওকাম্পোর সঙ্গে এ গানের একধরনের সম্পর্ক আছে। ওকাম্পোর বাড়িতে বসে ৩০ বছর আগে লেখা ‘ওগো বিদেশিনী’ গানটির ইংরেজিতে অনুবাদ করে ওকাম্পোকে উপহার দিয়েছিলেন রবি। বলেছেন, ‘ভুবন ভ্রমিয়া শেষে/ আমি এসেছি নূতন দেশে,/ আমি অতিথি তোমারি দ্বারে ওগো বিদেশিনী’।
লেখক: গবেষক, পরিব্রাজক, অ্যান্টার্কটিক অভিযাত্রী।
মেসির জন্মের প্রায় ৬৩ বছর আগে এবং আজ থেকে প্রায় ৯৯ বছর আগে আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মেসির দেশে গিয়েছিলেন। থেকেছিলেন বেশ কিছুদিন। সামনে ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী। সে কথা স্মরণ করে এই রবীন্দ্রতর্পণ।
সময়টা ১৯২৪ সালের নভেম্বর মাস। পেরুর স্বাধীনতাসংগ্রামের শত বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি সে দেশের আমন্ত্রিত অতিথি। যাচ্ছিলেন জাহাজযোগে। পথে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন। নেমে পড়েন আর্জেন্টিনায়। ওঠেন বুয়েনস এইরেসের প্লাসা হোটেলে। রবির সফর সঙ্গী তাঁর সেক্রেটারি লেনার্ড এলমহার্স্ট। সে সময় আর্জেন্টিনায় একজন বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও নারীবাদী লেখিকা ছিলেন। নাম তাঁর ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। তিনি লাতিন আমেরিকায় নারীবাদী আন্দোলনের প্রভাবশালী নেত্রী। তিনি বিদুষী, তিনি প্রথাবিরোধী। বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘সুর’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। লাতিন আমেরিকার সেরা কবি ও লেখকদের লেখা প্রকাশিত হতো ‘সুর’ পত্রিকায়।
তত দিনে গীতাঞ্জলি অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, স্প্যানিশ ও ফরাসি ভাষায়। ওকাম্পো তত দিনে গীতাঞ্জলি পড়ে ফেলেছেন এই তিন ভাষায়। তিনি অভিভূত। রবীন্দ্রনাথের ভক্ত হয়ে ওঠেন তিনি। হয়ে ওঠেন অনুরাগী। তাঁদের যোগাযোগের সূত্র গীতাঞ্জলি। অসুস্থ রবি বুয়েনস এইরেসের একটি হোটেলে উঠেছেন খবর পেয়ে ওকাম্পো ছুটে গেলেন তাঁর কাছে। অসুস্থ রবিকে নিজের বাড়িতে এনে রাখতে চাইলেন। অনেকটা জোর করেই তাঁকে নিয়ে আসেন ওকাম্পো। না, পারলেন না, পিতার আপত্তিতে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ‘ভিলা ওকাম্পো’র কাছাকাছি আরেকটি বাড়ি ভাড়া করেন রবিঠাকুরের জন্য। রবীন্দ্রনাথকে দেখারও বেশ আগে তাঁর সাহিত্য পড়ার মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি প্রাথমিক মুগ্ধতা তৈরি হয়েছিল। রবির তখন ৬৩ আর ওকাম্পো ৩৪। রবি ডাকতেন ‘বিজয়া’ বলে। প্রথম দর্শনেই রবিকে তাঁর মনে হয়েছে নীরব, সুদূর, তুলনাহীন, বিনীত। জনশ্রুতি আছে, তাঁরা পরস্পরের প্রেমে পড়েছিলেন। তাঁদের প্রেমের গুঞ্জন গত ১০০ বছরে আরও বেড়েছে। বিস্তর গবেষণা হয়েছে এ নিয়ে। এক পক্ষ দাবি করেছে, এ প্রেম প্লেটোনিক। কেউ কেউ এটি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন তা প্লেটোনিক নয়, জৈবিক। আমাদের নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ রায় একে বলেছেন ‘অশ্রুত গুঞ্জন’।
‘ভিলা ওকাম্পো’ বাড়িটি একটি অভিজাত বাড়ি। এর পরতে পরতে নান্দনিকতা। এটি নকশা করেছিলেন ওকাম্পোর স্থপতি পিতা নিজেই। উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন কন্যা, পিতার মৃত্যুর পর। এর সামনে-পেছনে বিশাল প্রাঙ্গণ। সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। এ বাড়িতে রাত্রিযাপন না করলেও দিনের অধিকাংশ সময় ওকাম্পোর সঙ্গে সবুজ প্রাঙ্গণে কাটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। এ বাড়ির কাছের প্লাতা নদীর তীরেই রচিত হয়েছে রবি-বিজয়ার প্লেটোনিক প্রেম। ১৯৭৩ সাল থেকে ‘ভিলা ওকাম্পো’ ইউনেসকোর সম্পত্তি।
ইউনেসকো প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ওকাম্পো সক্রিয় অবদান রেখেছেন। ১৯৪৬ সালে নুরেমবার্গ ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ছিলেন। আর্জেন্টিনার পেরন সরকারের সময় জেল-জুলুমের অভিজ্ঞতাও নিতে হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ১৯৫৩ সালের ৮ মে। কারাগারে ছিলেন ২৬ দিন। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা তাঁর প্রভাবশালী বন্ধুরা এগিয়ে এসেছিলেন সে সময়। প্রতিবাদ জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন এই মহীয়সীর। তাঁর মুক্তিতে আমাদের জওহরলাল নেহরুর ভূমিকা আছে, ইতিহাস বলে।
‘ভিলা ওকাম্পো’র নিচতলার কয়েকটি কক্ষের একটি ছিল পিয়ানো কক্ষ। সেই পিয়ানো রাখা আছে এখানে, যেটা বিজয়া বাজিয়ে শোনাতেন রবিকে। পিয়ানো কক্ষের উল্টো দিকের কক্ষটিতে আছে জওহরলাল নেহরুর ছবি। তাঁর মেয়ে ইন্দিরার পদধূলি পড়েছে এ বাড়িতে। শুধু ইন্দিরার কথা বলছি কেন, পৃথিবীর সে সময়কার বিভিন্ন রথী-মহারথীর পা পড়েছে এ ভিটায়। সেই তালিকায় আছেন সাহিত্যিক, দার্শনিক, সংগীতজ্ঞ।
রবিঠাকুর শারদ প্রাতে, মাধবী রাতে যে বিদেশিনীকে দেখছেন, তিনি ওকাম্পো নন। কারণ, ওকাম্পোর সঙ্গে দেখা হওয়ার ৩০ বছর আগে ১৮৯৫ সালে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বসে রবীন্দ্রনাথ ‘ওগো বিদেশিনী’ গানটি লিখেছিলেন। কিন্তু ওকাম্পোর সঙ্গে এ গানের একধরনের সম্পর্ক আছে। ওকাম্পোর বাড়িতে বসে ৩০ বছর আগে লেখা ‘ওগো বিদেশিনী’ গানটির ইংরেজিতে অনুবাদ করে ওকাম্পোকে উপহার দিয়েছিলেন রবি। বলেছেন, ‘ভুবন ভ্রমিয়া শেষে/ আমি এসেছি নূতন দেশে,/ আমি অতিথি তোমারি দ্বারে ওগো বিদেশিনী’।
লেখক: গবেষক, পরিব্রাজক, অ্যান্টার্কটিক অভিযাত্রী।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে