ভ্রমণ /পূর্ব তিমুরে বেড়াতে যাবেন কেন, কী দেখবেন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ০৬
Thumbnail image
আপনি যদি এখনো পূর্ব তিমুরে না গিয়ে থাকেন, তবে সেখানে কয়টা দিন কাটিয়ে আসতে পারেন। ছবি: এএফপি

পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট রামোস হোর্তা এখন বাংলাদেশ ভ্রমণ করছেন। আগে এই দেশটির নাম পর্যন্ত শুনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াও কঠিন হবে না। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি কিন্তু পর্যটকদের জন্য চমৎকার এক গন্তব্য। এখন নিশ্চয় আপনি জানতে চাইবেন, কেন?

পূর্ব তিমুরের আরেক নাম তিমুর লেসতা। ১৪ হাজার ৯৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটি ২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ডাইভিং, তিমি দেখা, ট্র্যাকিং, বাইকিং, মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, চমৎকার পর্বতময় পথ এবং দৃষ্টিনন্দন সাদা বালির সৈকত—এসব মিলিয়ে পূর্ব তিমুর নিঃসন্দেহে বিশ্বের এক অনন্য কিন্তু তুলনামূলক কম পরিচিত পর্যটন গন্তব্য। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখনো ভ্রমণের জায়গা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি দেশটি। অথচ আমাদের বাংলাদেশিদের পূর্ব তিমুরে যেতে কিন্তু দেশ থেকে ভিসা করে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, সেখানে অন অ্যারাইভাল ভিসা।

কাজেই যদি কিছু নতুন অভিজ্ঞতা নিতে চান এবং সমুদ্র ও সাদা বালুর সৈকত আপনার প্রথম পছন্দ হয় তবে পূর্ব তিমুর হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য।

ডাইভিংয়ের সেরা জায়গা

‘পূর্ব তিমুরের// ডাইভিং থাইল্যান্ডের চেয়ে অনেক ভালো,’ বলেন গ্রেগ ডানকান। এই ডাইভ প্রশিক্ষকের এই মন্তব্য অধিকার থেকেই। কারণ তিনি একটা সময় দক্ষিণ থাইল্যান্ডের ডাইভিংয়ের জন্য বিখ্যাত কো তাও-তে দুই বছর কাজ করেছেন।

ডাইভিংয়ের জন্য আদর্শ পূর্ব তিমুর। ছবি: এএফপি
ডাইভিংয়ের জন্য আদর্শ পূর্ব তিমুর। ছবি: এএফপি

গ্রেগ বলেন, ‘এই অঞ্চলের অনেক জায়গা, যেমন অস্ট্রেলিয়া বা মালয়েশিয়ার উপকূল, অতিরিক্ত ডাইভিংয়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত। তবে পূর্ব তিমুরে এখনো সেই চাপ নেই।’

দেশটির রাজধানী দিলির আশপাশেই চমৎকার কিছু ডাইভিং স্পটে যাই। কেবল ৪০ মিনিটের ডাইভিংয়ে ছোট হাঙর, টুনা, কচ্ছপ, ম্যাকেরেল এবং ব্যারাকুডার মতো প্রাণী দেখার সৌভাগ্য হব আপনার। সমুদ্রের নিচের ডুবন্ত পাহাড়ি ঢালে এমন বহু প্রাণী দেখা যায়।

আরেকটি জনপ্রিয় ডাইভিং স্পট হলো আতারো দ্বীপ, যা দিলি বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে যাওয়ার পথে আপনি ডলফিনদের দলে দলে মাছ ধরতে বা আপনার নৌকার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে দেখতে পারেন। আবার অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে তিমিরাও ভেসে ওঠে।

দিলির পূর্ব ও পশ্চিমে আরও অনেক ডাইভিং স্পট আছে, যেখানে আপনি অক্ষত প্রবাল প্রাচীরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

যেন নিজের এক সৈকত

পূর্ব তিমুরের সেরা জায়গাগুলির একটি জাকো দ্বীপ। ছোট্ট দেশটির সবচেয়ে পূর্ব প্রান্তে এর অবস্থান। এটি দিলি থেকে সড়ক পথে ছয় ঘণ্টার দূরত্ব। সবুজ পাহাড় এবং উপকূলীয় রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছাবেন সেখানে।

রাজধানীর কাছেও অনেক সাদা বালির সৈকত রয়েছে, যেমন এরিয়া ব্রাঙ্কা (যার অর্থ ‘সাদা বালি’) এবং ডলার বিচ। যদিও সপ্তাহান্তে এই সৈকতগুলোতে বেশ ভিড় থাকে, দিলির পূর্ব ও পশ্চিমে আরও অনেক শান্ত এবং নির্জন সৈকতের দেখা পাবেন।

এমন নির্জন কোনো সৈকতে গেলে, নিজের খাবার ও পানীয় সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। তবে এরিয়া ব্রাঙ্কার আশপাশে অনেক রেস্তোরাঁ আছে, যেখানে সাঁতার বা সাইকেল চালানোর পর তাজা মাছের নানা পদ ও ঠান্ডা ডাবের পানি দিয়ে দুপুর বা রাতের খাবারটা জমবে বেশ।

দক্ষিণ উপকূল বেশ বিপজ্জনক। সেখানে বিশাল সব নোনা জলের কুমির থাকায় সাঁতার কাটাটা মোটেই নিরাপদ নয়।

চোখ জুড়ানো প্রকৃতি

দেশটির বেশির ভাগ অংশ পর্বতময়। সবুজ উঁচু-নিচু ভূমি চোখ জুড়ায় পর্যটকদের। তবে কড়া সব মোচড়ের রাস্তা ধরে সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়। পূর্ব তিমুরের সর্বোচ্চ বিন্দু হলো রামেলাউ পর্বত, যার উচ্চতা দুই হাজার ৯৬৩ মিটার। তবে পথটা খুব দুরারোহ নয়, তিন ঘণ্টায় হেঁটে পর্বত শীর্ষে পৌঁছানো যায়।

রাজধানী দিলি থেকে অল্প দূরত্বেই রয়েছে সাদা বালির সৈকত। ছবি: এএফপি
রাজধানী দিলি থেকে অল্প দূরত্বেই রয়েছে সাদা বালির সৈকত। ছবি: এএফপি

দিলি থেকে বাউকাউ শহরে যাওয়ার উপকূলীয় রাস্তাটি শুধু দৃশ্যের জন্যই যাত্রার যোগ্য। বাউকাউতে রাত কাটিয়ে আরও পূর্ব দিকে ‘কম’ এবং জাকো দ্বীপে যেতে পারেন। তবে পথ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে বর্ষায় (নভেম্বর থেকে মে) এই রাস্তা ভ্রমণকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে।

মনোমুগ্ধকর সাইক্লিং

যদি গাড়ি চালানো খুব কঠিন মনে হয়, বা ব্যয়বহুল, তবে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। তবে আপনার শরীরটা ফিট থাকতে হবে, কারণ এখানে ঢালু পথ আর উষ্ণ তাপমাত্রা (সাধারণত বছরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) আপনাকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। তবে সাইকেল চালানোর সময় নিঃসন্দেহে গাড়ির তুলনায় ভালোভাবে দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

পূর্ব তিমুরের রাস্তা এমনকি শক্তিশালী চার চাকার যানবাহনের জন্যও চ্যালেঞ্জিং। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ট্যুর দ্য তিমুর ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন সাইকেল রেসগুলোর একটি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

পূর্ব তিমুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে। ছবি: এএফপি
পূর্ব তিমুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে। ছবি: এএফপি

শান্ত জীবন

কখনো কখনো খুব বেশি শান্তিও বিরক্তিকর হতে পারে এর দারুণ প্রমাণ পূর্ব তিমুর। ট্যাক্সিগুলো প্রায়ই খালি রাস্তায় ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে চলে, যা আপনার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য একটু ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে পারে।

তবে এর অর্থ হলো পূর্ব তিমুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম ভিড়, কম জটিল এবং কম উন্নত এলাকা। দেশটির অতীতের অস্থিরতা এবং ধীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর অন্যতম কারণ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তেল এবং গ্যাস থেকে বড় আয় দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটিয়েছে।

কম দামে ভালো কফি

কফিপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে থাকবে দেশটি। পাহাড়ের ঢালে এবং উঁচু গাছের ছায়ায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কফি পূর্ব তিমুরকে ধীরে ধীরে বৈশ্বিক কফি বাজারে নিজের স্থান তৈরি করতে সাহায্য করছে।

কঠিন এক বাই সাইকেল রেসের জন্য নাম আছে পূর্ব তিমুরের। ছবি: এএফপি
কঠিন এক বাই সাইকেল রেসের জন্য নাম আছে পূর্ব তিমুরের। ছবি: এএফপি

ভ্রমণকারীদের জন্য, কফির দাম প্রাথমিকভাবে বিস্ময়কর মনে হতে পারে। কারণ তাঁরা এখানে অনেক খাবার বা পানীয়ের দাম বেশি পেলেও কফির দামটা কম আবিষ্কার করবেন। রাজধানী দিলির কাছের এরমেরা এলাকার কফির জন্য আলাদা নাম আছে। সেখানে আপনি সস্তায় চমৎকার কফি পান করতে করতে অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

আরও আকর্ষণ

পূর্ব তিমুরে ভ্রমণ মানেই শুধু প্রকৃতির নয়, সংস্কৃতির গভীরে যাওয়ার সুযোগ। উত্তর উপকূলজুড়ে রয়েছে অসংখ্য সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক আকর্ষণ, যা দেশটির সমৃদ্ধ অতীতকে তুলে ধরে। পূর্ব তিমুরে খাবারের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে ভোজন রসিকদের জন্য আনন্দের। রাস্তার খাবারের সরল স্বাদ আর সৈকতের তাজা বারবিকিউ—দুটোই আপনাকে মুগ্ধ করবে।

সমুদ্রের ধারে দারুণ সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন। ছবি: এএফপি
সমুদ্রের ধারে দারুণ সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন। ছবি: এএফপি

পূর্ব তিমুর এখনো একটি অপ্রচলিত গন্তব্য, যেখানে পর্যটন অবকাঠামো বেশ সাধারণ। তবে এখানকার এই একটু অগোছালো, বুনো ভাব বরং অন্যরকম আকর্ষণ তৈরি করে পর্যটকদের কাছে। তেমনি এখানকার বাসিন্দাদের আতিথেয়তার প্রকৃত স্বাদ নিতে স্থানীয় পরিবারের হোমস্টেতে থাকার বিকল্প নেই। এটি তাদের জীবনধারা ও সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেবে।

স্থানীয় বাজারে ঘুরতে গেলে চোখে পড়বে রঙিন কাপড়, হাতের তৈরি পোশাক এবং দৃষ্টিনন্দন গয়না। এগুলো শুধু আপনার সংগ্রহে যোগ করার জন্য নয়, বরং পূর্ব তিমুরের সংস্কৃতির গল্প বলবে।

পূর্ব তিমুরের কফি স্বাদে এবং দামে দুটিতেই সেরা। ছবি: এএফপি
পূর্ব তিমুরের কফি স্বাদে এবং দামে দুটিতেই সেরা। ছবি: এএফপি

সব মিলিয়ে পূর্ব তিমুর নিশ্চিতভাবে অন্যরকম এক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা উপভোগের সুযোগ করে দেবে।

সূত্র: সিএনএন, গো নোমাড ডট কম, ভিজিট তিমুর ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত