Ajker Patrika

নির্বাচন কমিশন

বাতিল আগের সব দেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা

  • দেশীয় পর্যবেক্ষক নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি
  • এইচএসসি পাসের নিচে কেউ পর্যবেক্ষক হতে পারবেন না
  • পর্যবেক্ষক সংস্থাকে ইসির নিবন্ধন পেতে নতুন করে আবেদন করতে হবে
মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশীয় পর্যবেক্ষক নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধিত নীতিমালায় পর্যবেক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাসের সুপারিশ করা হচ্ছে। নীতিমালাটি চূড়ান্ত হলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধন পাওয়া সব দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ইসির নিবন্ধনের জন্য সবাইকে আবার নতুন করে আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই দফায় মোট ৯৬টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় ইসি। প্রথম দফায় ৬৭টি এবং দ্বিতীয় দফায় ২৯টি সংস্থা ইসির নিবন্ধন পায়। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, পর্যবেক্ষক সংস্থার মেয়াদ নিবন্ধন পাওয়ার দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। অর্থাৎ এই ৯৬টি সংস্থার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৮ সালের শেষের দিকে।

পর্যবেক্ষক নীতিমালার সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সংশোধিত পর্যবেক্ষক নীতিমালায় শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আগের পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

বিদ্যমান নীতিমালায় পর্যবেক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল বলেন, এটি কাউকে ছোট করার জন্য নয়। ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন একজন সম্মানিত ব্যক্তি, তাঁর মিনিমাম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে ভালো হয়। সে জন্যই এটি করা।

অভিযোগ রয়েছে, ‘পাতানো নির্বাচনকে বৈধতা দিতে নামসর্বস্ব অনেক সংস্থাকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দেশীয় বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক সংস্থা সার্বিকভাবে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলে ইসিতে প্রতিবেদন দিয়েছে। পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো প্রতিবেদন জমা দিলেও সেগুলো খুলে দেখেনি বিদায়ী কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ত্রুটি দেখতে পায়নি রাজারহাট স্বাবলম্বী সংস্থা। সার্বিকভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ, সুষ্ঠু ও আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করেছে আরেক পর্যবেক্ষক সংস্থা সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন। আলোচিত অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী পরিচালিত সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোটারদের সহজে ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে অভিজ্ঞ নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর ছিল। ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ সন্তোষজনক ছিল। কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম, অসংগতি পরিলক্ষিত হয়নি। দায়িত্বপালনের সময় পর্যবেক্ষকেরা কোনোরূপ বাধার সম্মুখীন হননি। তবে কিছু কিছু ভোটকেন্দ্র দ্বিতীয় তলায় হওয়ায় বৃদ্ধ, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী ভোটারদের কিছুটা কষ্ট হয়েছে এবং কিছুসংখ্যক কেন্দ্রে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ছিল না। বেশ কিছু ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজ এলাকার মধ্যে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। সংস্থাটি ৮৩টি সংসদীয় আসনের ৭ হাজার ২১০টি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সামগ্রিক বিচারে ভোটার উপস্থিতি কম হলেও ভোটগ্রহণ পর্ব শান্তিপূর্ণ ছিল। বিশেষ কিছু কেন্দ্রে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্টদের বিতাড়ন এবং সহিংসতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নির্বাচনে গৃহীত ব্যবস্থাপনায় আনন্দিত ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে চাঁদপুর জেলায় পাঁচটি ও ঢাকার একটি নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা সমাহার।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পাওয়া ৯৬টি দেশীয় সংস্থার মধ্যে ৮৪টি সংস্থার ২০ হাজার ৭৭৩ পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছিল ইসি। রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের পাশাপাশি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষক সংস্থারও নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। তখন প্রথমবার ১৩৮টি সংস্থা ইসির নিবন্ধন পায়। প্রথমে এসব সংস্থার মেয়াদ এক বছর নির্ধারণ করা হলেও পরে মেয়াদ বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত