অরুণ কর্মকার
পথ বড় বিচিত্র বস্তু। বস্তু না বলে ধাঁধা বললেই বোধ হয় জুতসই হয়। পথে নেমে পড়া যায়। পথ চলাও যায়। কোন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পথে নামা হয়েছে, তা-ও জানা থাকে পথিকের। মনে একটা গন্তব্য নির্দিষ্ট করেই তো পথে নামে পথিক। কিন্তু সেই পথের শেষ আসলে কোথায়? প্রকৃতপক্ষে কী আছে সেই পথের শেষে? পথিকের নির্দিষ্ট গন্তব্যে সেই পথ পৌঁছেছে কি না, তা আগেভাগে জানা যায় না। সেই পথের সবটা দেখাও যায় না; বিশেষ করে শেষটা। পথের এই গূঢ় তত্ত্ব উক্ত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের বাণীতে।
কবিগুরুর কবিতায়ও এসেছে পথের তত্ত্ব। লিখেছেন, ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি, আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী’ (মহুয়া/ পথের বাঁধন)। পথ কি তাহলে এক প্রপঞ্চ! পথে নামলে চলতি হাওয়ায় ভেসে বেড়াতে হয়! মানুষ কি নিজের মতো করে পথ রচনা করতে পারে? জীবন চলার পথ তাহলে রচিত হয় কীভাবে? কে রচনা করেন সেই পথ? এসব অনেক গভীর-নিবিড় আলোচনার বিষয়।
তা ছাড়া, পথ কি শুধু জীবন চলারই হয়? সমাজের, রাষ্ট্রেরও তো চলার পথ থাকে। সেই পথ অবশ্য জীবন চলার পথের মতো রহস্যময় নয়। সমাজ ও রাষ্ট্র তৈরি করেছে মানুষ নিজে। আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে ধাপে ধাপে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রের চলার পথও মানুষের সৃষ্টি। তবে সেই পথ নিয়েও জটিলতার শেষ নেই; বিশেষ করে রাষ্ট্রের চলার পথ যাঁরা রচনা করেন, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যাঁরা নানা ঘটনার জন্ম দেন, তাঁরা যখন পথের দিশা হারিয়ে ফেলেন, তখন পথের শেষে কী আছে, সে প্রশ্নটি গভীরতর হয়ে দেখা দেয়। কারণ ওই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের নাগরিক সাধারণ পড়ে যায় এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে। এটিই আমাদের আজকের আলোচনার প্রসঙ্গ।
এই যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে একটা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা চলছে, এ তো পথেরই প্রশ্ন। সরকারি দল বলছে, পথ নির্ধারিত হয়েই আছে। সংবিধানে বর্ণিত পথ। আর বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্র দলগুলো বলছে, ও পথে কাঁটা আছে। সেই কাঁটার নাম শেখ হাসিনা। তাঁর অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। গেলে কাঁটার আঘাত নিশ্চিত। তাই ভিন্ন পথে নির্বাচনের দাবি তাদের। এই পথ-পদ্ধতির দাবিতে তারা পথে নেমেছে। সরকারি এবং বিরোধী দুই দলেরই অবস্থান এখন পথে। তবে পরস্পরের সেই পথ এতটাই বেঁকে গেছে যে, সে দুই পথের এক মোহনায় (অ্যাভিনিউ) মিলিত হওয়া প্রায় অসম্ভব। এই অসম্ভব ঘটনা সম্ভব হতে পারে, কেবল একটি উপায়ে। যদি তারা নিজ নিজ পথ কিছুটা পরিবর্তন করে। অবশ্য সে আশা দুরাশাই বটে।
এই দুরাশা দূর হওয়ার ভরসা হয়ে বিরোধী দলগুলোর কাছে প্রতিভাত হয়েছিল, তৃতীয়পক্ষের হস্তক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো ছিল তার পুরোভাগে। এখনো আছে। তবে আপাতদৃষ্টিতে তা যথেষ্ট ম্রিয়মাণ। অনেকটা প্রবল ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হলে যেমন হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ব্লুমবার্গ’-এ একজন নিবন্ধকার লিখেছেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ক্রুসেড শেষ হয়েছে।
যদিও আমার তা মনে হয় না। ‘সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের চাপ অব্যাহতই আছে এবং সামনেও থাকবে। এটাকে তারা এই অঞ্চলে তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের পথ হিসেবে দেখছে। আর ইউরোপ তো এখন যুক্তরাষ্ট্রের বি-টিম। ইউরোপ আর কোনো দিন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কোনো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বাইরে গিয়ে নিজস্ব অবস্থান নিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করার কারণ আছে।
সে যা-ই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ক্রুসেড যে এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ, তা আরও স্পষ্ট হয়েছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একের পর এক রাজনৈতিক হিউমারধর্মী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। বলিউডের সুতন্বী নায়িকা আলিয়া ভাটের একটি সিনেমার সংলাপের অনুকরণে ‘খেলা হবে’ থেকে শুরু হয় এই হিউমার। তারপর আসে ‘তলে তলে আপস হয়ে গেছে’। তারপর আসে ‘মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে দেওয়া’। এরপর নতুন বাণী—আমেরিকা যাদের মুরব্বি, তাদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা শেষ। উচ্চপর্যায়েও কথাবার্তা হয়ে গেছে।
তার মানে কি, সরকার চাপটা সামলে উঠতে পেরেছে? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সে জন্যই কি ফুরফুরে মেজাজে আছেন? চাপ কি তাহলে এখন বিরোধী দলগুলোর ওপর বেশি? হতেও পারে। বিএনপির নেতারা গরম কথা বলছেন, তবে তা গরম তেলে ফোড়ন দেওয়ার মতো ছ্যাঁৎ করে উঠছে না। দপ করে জ্বলে ওঠার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অক্টোবর মাসের অর্ধেক প্রায় চলে যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলো সরকারের পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করল।
কিন্তু সরকারের টনকও নড়াতে পারল না; বরং এক দফা দাবি আদায়ের জন্য কী কর্মসূচি দেওয়া হবে, কোন কর্মসূচি কার্যকর হবে, তা নিয়ে পড়ল দ্বিধা-সংকটে। এরপর গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হলো। কাজের কাজ কিছুই হলো না। তার ওপর তাঁদের মূল ভরসার জায়গা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের চাপও এল কমে। ফলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সুর কিছুটা নরম হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
এখন শোনা যাচ্ছে, বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেবে আসন্ন দুর্গাপূজার পরে। সারা পৃথিবীর অস্থিরতা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট, দেশের মধ্যেও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চিত পরিস্থিতি ঘিরে এবারের দুর্গাপূজা বেশ একটা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ দেবী দুর্গার আগমন ও প্রত্যাগমনের সঙ্গে এই পরিস্থিতির একটা যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই।
হিন্দু মিথ অনুযায়ী, দেবী দুর্গা প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট বাহনে করে (ঐরাবত, দোলা, নৌকা, ঘোটক প্রভৃতি) কৈলাসে স্বামীর বাড়ি থেকে ধরাধামে পিত্রালয়ে আসেন পূজা নিতে। এ বছর তিনি আসবেন ঘোটকে, অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে। ফিরেও যাবেন ঘোড়ায় চড়েই। তো এই ঘোড়া হলো অস্থিরতার প্রতীক। ঘোড়া নিজে সুস্থির থেকে আপন ছন্দে খুব দ্রুতলয়ে চলে বটে। কিন্তু তার খুরের আঘাতে প্রকম্পিত হয় সমগ্র বসুন্ধরা। ধুলায় আচ্ছন্ন হয় সমগ্র পৃথিবী। ঘোড়ায় চড়ে দেবীর আসা-যাওয়ার ফলাফল অস্থির পৃথিবী। এটা হলো ধর্মবিশ্বাস। অনেকের আশঙ্কা, এবার বাস্তবের সঙ্গেও মিলবে এই বিশ্বাস দেশে এবং বিশ্বময়।
বিরোধী দলের অবস্থান তো বোঝা গেল, পূজার পরে চূড়ান্ত আন্দোলন। সরকার ও সরকারি দলের অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন আছে? নেই। বিন্দুমাত্রও না। সরকারি দল মাঠে থাকবে। সরকার নির্বাচন কমিশনের আওতায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়বে; অর্থাৎ পূজার পরে দুই পরস্পরবিরোধী পথ আরও একটু বেশি বেঁকে যাবে। পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য এই পরিস্থিতি আদর্শ নয়। আবার এই দুই বিপরীত পথের এক মোহনায় মিলিত হওয়ার কোনো আভাস কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
পথ বড় বিচিত্র বস্তু। বস্তু না বলে ধাঁধা বললেই বোধ হয় জুতসই হয়। পথে নেমে পড়া যায়। পথ চলাও যায়। কোন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পথে নামা হয়েছে, তা-ও জানা থাকে পথিকের। মনে একটা গন্তব্য নির্দিষ্ট করেই তো পথে নামে পথিক। কিন্তু সেই পথের শেষ আসলে কোথায়? প্রকৃতপক্ষে কী আছে সেই পথের শেষে? পথিকের নির্দিষ্ট গন্তব্যে সেই পথ পৌঁছেছে কি না, তা আগেভাগে জানা যায় না। সেই পথের সবটা দেখাও যায় না; বিশেষ করে শেষটা। পথের এই গূঢ় তত্ত্ব উক্ত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের বাণীতে।
কবিগুরুর কবিতায়ও এসেছে পথের তত্ত্ব। লিখেছেন, ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি, আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী’ (মহুয়া/ পথের বাঁধন)। পথ কি তাহলে এক প্রপঞ্চ! পথে নামলে চলতি হাওয়ায় ভেসে বেড়াতে হয়! মানুষ কি নিজের মতো করে পথ রচনা করতে পারে? জীবন চলার পথ তাহলে রচিত হয় কীভাবে? কে রচনা করেন সেই পথ? এসব অনেক গভীর-নিবিড় আলোচনার বিষয়।
তা ছাড়া, পথ কি শুধু জীবন চলারই হয়? সমাজের, রাষ্ট্রেরও তো চলার পথ থাকে। সেই পথ অবশ্য জীবন চলার পথের মতো রহস্যময় নয়। সমাজ ও রাষ্ট্র তৈরি করেছে মানুষ নিজে। আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে ধাপে ধাপে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রের চলার পথও মানুষের সৃষ্টি। তবে সেই পথ নিয়েও জটিলতার শেষ নেই; বিশেষ করে রাষ্ট্রের চলার পথ যাঁরা রচনা করেন, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যাঁরা নানা ঘটনার জন্ম দেন, তাঁরা যখন পথের দিশা হারিয়ে ফেলেন, তখন পথের শেষে কী আছে, সে প্রশ্নটি গভীরতর হয়ে দেখা দেয়। কারণ ওই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের নাগরিক সাধারণ পড়ে যায় এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে। এটিই আমাদের আজকের আলোচনার প্রসঙ্গ।
এই যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে একটা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা চলছে, এ তো পথেরই প্রশ্ন। সরকারি দল বলছে, পথ নির্ধারিত হয়েই আছে। সংবিধানে বর্ণিত পথ। আর বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্র দলগুলো বলছে, ও পথে কাঁটা আছে। সেই কাঁটার নাম শেখ হাসিনা। তাঁর অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। গেলে কাঁটার আঘাত নিশ্চিত। তাই ভিন্ন পথে নির্বাচনের দাবি তাদের। এই পথ-পদ্ধতির দাবিতে তারা পথে নেমেছে। সরকারি এবং বিরোধী দুই দলেরই অবস্থান এখন পথে। তবে পরস্পরের সেই পথ এতটাই বেঁকে গেছে যে, সে দুই পথের এক মোহনায় (অ্যাভিনিউ) মিলিত হওয়া প্রায় অসম্ভব। এই অসম্ভব ঘটনা সম্ভব হতে পারে, কেবল একটি উপায়ে। যদি তারা নিজ নিজ পথ কিছুটা পরিবর্তন করে। অবশ্য সে আশা দুরাশাই বটে।
এই দুরাশা দূর হওয়ার ভরসা হয়ে বিরোধী দলগুলোর কাছে প্রতিভাত হয়েছিল, তৃতীয়পক্ষের হস্তক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো ছিল তার পুরোভাগে। এখনো আছে। তবে আপাতদৃষ্টিতে তা যথেষ্ট ম্রিয়মাণ। অনেকটা প্রবল ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হলে যেমন হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ব্লুমবার্গ’-এ একজন নিবন্ধকার লিখেছেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ক্রুসেড শেষ হয়েছে।
যদিও আমার তা মনে হয় না। ‘সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের চাপ অব্যাহতই আছে এবং সামনেও থাকবে। এটাকে তারা এই অঞ্চলে তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের পথ হিসেবে দেখছে। আর ইউরোপ তো এখন যুক্তরাষ্ট্রের বি-টিম। ইউরোপ আর কোনো দিন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কোনো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বাইরে গিয়ে নিজস্ব অবস্থান নিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করার কারণ আছে।
সে যা-ই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ক্রুসেড যে এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ, তা আরও স্পষ্ট হয়েছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একের পর এক রাজনৈতিক হিউমারধর্মী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। বলিউডের সুতন্বী নায়িকা আলিয়া ভাটের একটি সিনেমার সংলাপের অনুকরণে ‘খেলা হবে’ থেকে শুরু হয় এই হিউমার। তারপর আসে ‘তলে তলে আপস হয়ে গেছে’। তারপর আসে ‘মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে দেওয়া’। এরপর নতুন বাণী—আমেরিকা যাদের মুরব্বি, তাদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা শেষ। উচ্চপর্যায়েও কথাবার্তা হয়ে গেছে।
তার মানে কি, সরকার চাপটা সামলে উঠতে পেরেছে? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সে জন্যই কি ফুরফুরে মেজাজে আছেন? চাপ কি তাহলে এখন বিরোধী দলগুলোর ওপর বেশি? হতেও পারে। বিএনপির নেতারা গরম কথা বলছেন, তবে তা গরম তেলে ফোড়ন দেওয়ার মতো ছ্যাঁৎ করে উঠছে না। দপ করে জ্বলে ওঠার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অক্টোবর মাসের অর্ধেক প্রায় চলে যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলো সরকারের পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করল।
কিন্তু সরকারের টনকও নড়াতে পারল না; বরং এক দফা দাবি আদায়ের জন্য কী কর্মসূচি দেওয়া হবে, কোন কর্মসূচি কার্যকর হবে, তা নিয়ে পড়ল দ্বিধা-সংকটে। এরপর গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হলো। কাজের কাজ কিছুই হলো না। তার ওপর তাঁদের মূল ভরসার জায়গা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের চাপও এল কমে। ফলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সুর কিছুটা নরম হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
এখন শোনা যাচ্ছে, বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেবে আসন্ন দুর্গাপূজার পরে। সারা পৃথিবীর অস্থিরতা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট, দেশের মধ্যেও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চিত পরিস্থিতি ঘিরে এবারের দুর্গাপূজা বেশ একটা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ দেবী দুর্গার আগমন ও প্রত্যাগমনের সঙ্গে এই পরিস্থিতির একটা যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই।
হিন্দু মিথ অনুযায়ী, দেবী দুর্গা প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট বাহনে করে (ঐরাবত, দোলা, নৌকা, ঘোটক প্রভৃতি) কৈলাসে স্বামীর বাড়ি থেকে ধরাধামে পিত্রালয়ে আসেন পূজা নিতে। এ বছর তিনি আসবেন ঘোটকে, অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে। ফিরেও যাবেন ঘোড়ায় চড়েই। তো এই ঘোড়া হলো অস্থিরতার প্রতীক। ঘোড়া নিজে সুস্থির থেকে আপন ছন্দে খুব দ্রুতলয়ে চলে বটে। কিন্তু তার খুরের আঘাতে প্রকম্পিত হয় সমগ্র বসুন্ধরা। ধুলায় আচ্ছন্ন হয় সমগ্র পৃথিবী। ঘোড়ায় চড়ে দেবীর আসা-যাওয়ার ফলাফল অস্থির পৃথিবী। এটা হলো ধর্মবিশ্বাস। অনেকের আশঙ্কা, এবার বাস্তবের সঙ্গেও মিলবে এই বিশ্বাস দেশে এবং বিশ্বময়।
বিরোধী দলের অবস্থান তো বোঝা গেল, পূজার পরে চূড়ান্ত আন্দোলন। সরকার ও সরকারি দলের অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন আছে? নেই। বিন্দুমাত্রও না। সরকারি দল মাঠে থাকবে। সরকার নির্বাচন কমিশনের আওতায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়বে; অর্থাৎ পূজার পরে দুই পরস্পরবিরোধী পথ আরও একটু বেশি বেঁকে যাবে। পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য এই পরিস্থিতি আদর্শ নয়। আবার এই দুই বিপরীত পথের এক মোহনায় মিলিত হওয়ার কোনো আভাস কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে অটোরিকশা বন্ধের প্রস্তাবে চালকদের রাস্তায় নেমে আসা এবং শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবরোধে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
৭ ঘণ্টা আগেআগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কী পারবে না, তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে কী হবে না—এ নিয়ে গরম এখন রাজনীতির মাঠ। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক হিসেবে দাবিদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি তো আরও একধাপ বেশি। আওয়ামী লীগকে কেবল নির্বাচনের বাইরে রাখাই নয়, দাবি তাদের দেশের প্রাচী
১৪ ঘণ্টা আগেহুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওনের ছেলে নিষাদ হুমায়ূনের একটা ভাইরাল ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। বেশ মজা পেলাম। সত্যি বললে মজার চেয়েও ছোট্ট বাচ্চার কথায় ভাবনার উদ্রেক হলো। চিন্তার দুয়ার উন্মুক্ত হলো।
১৪ ঘণ্টা আগেপরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সার্কুলার অর্থনীতি বা বৃত্তাকার অর্থনীতি এক নবদিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বাংলাদেশে স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সার্কুলার অর্থনীতির বিকল্প নেই।
১৪ ঘণ্টা আগে