ড. মইনুল ইসলাম
১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে প্রতিবছর পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ঐতিহাসিক দিনটির স্মরণ-উৎসবের সূচনা করতেন। কিন্তু, মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের প্রতিবছরের অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত থাকতেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণকে আর কত দিন যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা থেকে বাংলাদেশ সরকার বিরত থাকবে? মুক্তিযুদ্ধের কান্ডারি তাজউদ্দীনকে আর কত দিন অবহেলার শিকার হতে হবে? ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামও অনেক বছর ধরে হাসিনার বিরাগভাজন হয়ে আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। অথচ, তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম দিশারি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল মুসাবিদাকারী।
আর কত দিন এ ধরনের ইতিহাস খণ্ডিতকরণ সহ্য করতে হবে এ জাতিকে?
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চের রাতের ঘটনাবলির ধারাবাহিকতায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যেভাবে শুরু হয়েছিল, তার সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল মুজিবনগর দিবসের প্রতি স্বৈরশাসক হাসিনার এহেন রহস্যজনক ভালোবাসার ঘাটতি। অথচ, আমার বিবেচনায় ওই পর্যায়ে তাজউদ্দীন এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, তার জন্য জাতির চিরদিন মহান আল্লাহ তাআলাকে শোকরিয়া জানানো উচিত এবং তাঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আমার এই বিবেচনার ব্যাখ্যা নিম্নরূপ: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় যখন ইয়াহিয়া খান গোপনে ঢাকা ত্যাগ করলেন, তখনই সারা দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর সশস্ত্র আঘাত হানতে যাচ্ছে। পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার কথা ছিল। সেনাবাহিনী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রওনা হওয়ার খবর পেয়েই তাজউদ্দীন বঙ্গবন্ধুর বাসায় গেলেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেতে, পুরান ঢাকার একটি বাসাও ঠিক করে রাখা হয়েছিল আত্মগোপনের জন্য। কিন্তু, ইতিহাসের ওই যুগসন্ধিক্ষণে শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধু কোথাও যেতে রাজি হলেন না। তাজউদ্দীনের তাবৎ কাকুতি-মিনতি বিফলে গেল। বঙ্গবন্ধুর এক কথা, ‘তোমরা যা করার করো, আমি কোথাও যাব না’। তাজউদ্দীন একটি স্বাধীনতার ঘোষণাও লিখে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং টেপরেকর্ডারও নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, বঙ্গবন্ধু টেপে বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। বঙ্গবন্ধুর মন্তব্য, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’ তাজউদ্দীনের পীড়াপীড়ির জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশু দিন হরতাল ডেকেছি।’ (সূত্র: শারমিন আহমদ, তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা, ঐতিহ্য, এপ্রিল ২০১৪) তাজউদ্দীনকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিলেও স্বাধীনতা ঘোষণার বিকল্প ব্যবস্থা ছিল বঙ্গবন্ধুর, এটা এখন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। তিনি স্বেচ্ছায় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার সিদ্ধান্ত যেমনি নিয়েছিলেন, তেমনি আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের অগোচরে ওয়্যারলেস ও অন্যান্য মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তাটিও জাতিকে জানানোর ব্যবস্থাটি বাস্তবায়ন করেছিলেন। শারমিন আহমদের বইয়ে ওয়্যারলেসের চিফ ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হকের একটি টেলিফোন কল রিসিভ করার প্রসঙ্গটি বর্ণিত হয়েছে, যে কলটি ২৫ মার্চ মধ্য রাতের অব্যবহিত পর রিসিভ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী গোলাম মোরশেদ। নুরুল হক গোলাম মোরশেদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘মেসেজটি পাঠানো হয়ে গেছে। এখন মেশিনটি কী করব?’ তখন গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে। হয়তো তাই বঙ্গবন্ধু টেলিফোন কল রিসিভ না করেই গোলাম মোরশেদের মাধ্যমে জবাব দিয়েছিলেন, ‘মেশিনটি ভেঙে ফেলে পালিয়ে যেতে বল্’। হাজি গোলাম মোরশেদের এই কাহিনির সমর্থন মিলছে ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হককে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওই ওয়্যারলেস মেসেজ পাঠানোর অপরাধে বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করার ঘটনায়। এই কাহিনির একমাত্র সাক্ষী গোলাম মোরশেদ আজও বেঁচে আছেন। ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে শারমিন আহমদের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষণে ওই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছিলেন, ওই অনুষ্ঠানে আমিও আলোচক ছিলাম। (হাসিনার মতে ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রেরণ করেছিলেন)। এই কাহিনিগুলো হয়তো ২৬ মার্চ রাতের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার প্রমাণ, যা ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ রকম একটা মেসেজই হয়তো চট্টগ্রামের ওয়্যারলেস অফিস থেকে ডা. নুরুন্নাহার জহুরকে ফোনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল, যেটা সাইক্লোস্টাইল করে ২৬ মার্চ ভোর থেকে চট্টগ্রামে প্রচার করা হয়েছিল! ২৬ মার্চ ১৯৭১ সকালে একটি ঘোড়ার গাড়িতে করে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারকারীদের হাত থেকে আমিও ওই লিফলেটটা পেয়েছিলাম চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায়।
বঙ্গবন্ধুকে টেপে স্বাধীনতা ঘোষণায় রাজি করাতে না পেরে বিক্ষুব্ধ চিত্তে নিজ ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন তাজউদ্দীন। এরপর কীভাবে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম তাজউদ্দীনকে বাসা থেকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে লালমাটিয়ার এক বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন এবং ২৭ মার্চ কারফিউ প্রত্যাহারের পর জীবন বাজি রেখে তিন দিন তিন রাতের কঠিন ও বিপৎসংকুল যাত্রা পার হয়ে ৩০ মার্চ কুষ্টিয়ার জীবননগর সীমান্তের টুঙ্গি নামক জায়গার একটি কালভার্টের ওপর পৌঁছে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং মাহবুবউদ্দিন আহমদকে বিএসএফের কর্মকর্তাদের কাছে আলোচনার জন্য পাঠিয়েছিলেন তার মনোমুগ্ধকর বর্ণনা তাজউদ্দীন-কন্যা শারমিন আহমদের বইটির ১০৬-১১০ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত আছে। তাজউদ্দীন ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক সাক্ষাৎকারে জাতিকে জানিয়েছিলেন যে টুঙ্গির ওই কালভার্টের ওপর অপেক্ষা করার সময়ই তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে একটা স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন এবং তজ্জন্যে ভারতের সাহায্য কামনা করবেন। সফল আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাজউদ্দীন ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে বিএসএফের একটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন বিএসএফের পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক প্রধান গোলোক মজুমদার। তাঁর মাধ্যমে বিএসএফ মহাপরিচালক সুন্দরজি খবর পেয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
মিসেস গান্ধী তাজউদ্দীন ও ব্যারিস্টার আমীর-উলকে সাক্ষাৎদানে সম্মত হওয়ায় তাঁদের নয়াদিল্লি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এয়ারপোর্টে তাঁদের জামাকাপড়ের মলিন দশা দেখে সুন্দরজি নিজের স্যুটকেস থেকে কাপড় দিয়ে তাঁদের কাপড় পাল্টানোর সুযোগ করে দেন। পরে তাঁদের আরও কিছু জামাকাপড় কিনে দেওয়া হয়েছিল। দিল্লি পৌঁছানোর পর ৩ এপ্রিল শ্রীমতী গান্ধীর সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দিল্লিতে এরই মাঝে গিয়ে পৌঁছান বাংলাদেশের দুজন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান ও ড. আনিসুর রহমান। তাঁরাও আলোচনায় শরিক হতে শুরু করেন। একাধিক আলোচনা বৈঠকের পর ১০ এপ্রিল তাজউদ্দীন এক বেতার ভাষণে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের ঘোষণা নেন, যাতে মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গঠিত হাইকমান্ডের সদস্যদের মন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতা ঘোষণার ওই ভাষণটির মুসাবিদা করেছিলেন তাজউদ্দীন, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম এবং প্রফেসর রেহমান সোবহান। ভাষণ দেওয়ার পর তাজউদ্দীন এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম কলকাতা ফেরত এসে অন্য নেতাদের খুঁজতে শুরু করেন। প্রথমে তাঁদের দেখা হয় মনসুর আলী ও কামারুজ্জামানের সঙ্গে; তাঁরা দুজনেই সানন্দে সম্মতি প্রদান করেন। পরে খবর পাওয়া যায় যে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহ সীমান্তে আছেন। তাঁর কাছে ছুটে যান তাজউদ্দীন, তিনিও সম্মতি দেন। পরে আগরতলায় খোন্দকার মোশতাকের আপত্তির মুখে পড়েন তাজউদ্দীন; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁকে দেওয়ার শর্তে তাঁর সঙ্গে রফা হয়। আরও তীব্র বাধা এসেছিল শেখ মনির নেতৃত্বে যুব ও ছাত্রনেতাদের কাছ থেকে, যাঁরা তাঁদের নেতৃত্বে বিপ্লবী কাউন্সিল করার ম্যান্ডেট বঙ্গবন্ধু নিজেই তাঁদের দিয়েছিলেন বলে দাবি তুলে ঘোষিত সরকারের শপথ অনুষ্ঠানকে প্রায় ভন্ডুলই করে দিয়েছিলেন। তীব্র বাগ্বিতণ্ডা ও তর্ক-বিতর্কের পর তাঁদের নিরস্ত করা গিয়েছিল।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই রচিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিলের মুজিবনগর দিবসের ইতিহাস। এটা খুবই বেদনাদায়ক যে বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় একবারও মুজিবনগরে যাননি। কিন্তু, এখন তো মুজিবনগর দিবসের স্মৃতি রক্ষার্থে মুজিবনগরে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ ও স্থাপত্যসমূহ গড়ে তোলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মুজিবকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি করে বাংলাদেশের প্রথম সরকার যেখানে শপথ নিয়েছিল, সেখানে বাংলাদেশের সরকার-প্রধান যাবেন না কেন? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের প্রতি আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ: মুজিবনগর দিবসের প্রতি পতিত স্বৈরশাসক হাসিনার অবহেলার অবসানকল্পে এবারের মুজিবনগর দিবসে আপনি সশরীরে সেখানে যান। একই সঙ্গে তাজউদ্দীনের ঐতিহাসিক অবদানকে যথাযথ স্বীকৃতি দিন। এটা খুবই দুঃখজনক যে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় মুজিবনগর কমপ্লেক্সের বেশ কিছু স্থাপত্য ভাঙচুরের শিকার হয়েছিল। জামায়াত-শিবিরসহ স্বাধীনতাবিরোধী মহল এসব ভাঙচুর চালিয়েছে। ওগুলো যথাসম্ভব শিগগিরই মেরামত করার ব্যবস্থা করুন। একই সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হোক—মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সামান্যতম অমর্যাদাও সরকার মেনে নেবে না। কোনো অজুহাতেই গণ-অভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো যাবে না।
১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে প্রতিবছর পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ঐতিহাসিক দিনটির স্মরণ-উৎসবের সূচনা করতেন। কিন্তু, মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের প্রতিবছরের অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত থাকতেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণকে আর কত দিন যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা থেকে বাংলাদেশ সরকার বিরত থাকবে? মুক্তিযুদ্ধের কান্ডারি তাজউদ্দীনকে আর কত দিন অবহেলার শিকার হতে হবে? ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামও অনেক বছর ধরে হাসিনার বিরাগভাজন হয়ে আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। অথচ, তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম দিশারি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল মুসাবিদাকারী।
আর কত দিন এ ধরনের ইতিহাস খণ্ডিতকরণ সহ্য করতে হবে এ জাতিকে?
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চের রাতের ঘটনাবলির ধারাবাহিকতায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যেভাবে শুরু হয়েছিল, তার সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল মুজিবনগর দিবসের প্রতি স্বৈরশাসক হাসিনার এহেন রহস্যজনক ভালোবাসার ঘাটতি। অথচ, আমার বিবেচনায় ওই পর্যায়ে তাজউদ্দীন এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, তার জন্য জাতির চিরদিন মহান আল্লাহ তাআলাকে শোকরিয়া জানানো উচিত এবং তাঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আমার এই বিবেচনার ব্যাখ্যা নিম্নরূপ: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় যখন ইয়াহিয়া খান গোপনে ঢাকা ত্যাগ করলেন, তখনই সারা দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর সশস্ত্র আঘাত হানতে যাচ্ছে। পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার কথা ছিল। সেনাবাহিনী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রওনা হওয়ার খবর পেয়েই তাজউদ্দীন বঙ্গবন্ধুর বাসায় গেলেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেতে, পুরান ঢাকার একটি বাসাও ঠিক করে রাখা হয়েছিল আত্মগোপনের জন্য। কিন্তু, ইতিহাসের ওই যুগসন্ধিক্ষণে শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধু কোথাও যেতে রাজি হলেন না। তাজউদ্দীনের তাবৎ কাকুতি-মিনতি বিফলে গেল। বঙ্গবন্ধুর এক কথা, ‘তোমরা যা করার করো, আমি কোথাও যাব না’। তাজউদ্দীন একটি স্বাধীনতার ঘোষণাও লিখে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং টেপরেকর্ডারও নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, বঙ্গবন্ধু টেপে বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। বঙ্গবন্ধুর মন্তব্য, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’ তাজউদ্দীনের পীড়াপীড়ির জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশু দিন হরতাল ডেকেছি।’ (সূত্র: শারমিন আহমদ, তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা, ঐতিহ্য, এপ্রিল ২০১৪) তাজউদ্দীনকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিলেও স্বাধীনতা ঘোষণার বিকল্প ব্যবস্থা ছিল বঙ্গবন্ধুর, এটা এখন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। তিনি স্বেচ্ছায় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার সিদ্ধান্ত যেমনি নিয়েছিলেন, তেমনি আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের অগোচরে ওয়্যারলেস ও অন্যান্য মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তাটিও জাতিকে জানানোর ব্যবস্থাটি বাস্তবায়ন করেছিলেন। শারমিন আহমদের বইয়ে ওয়্যারলেসের চিফ ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হকের একটি টেলিফোন কল রিসিভ করার প্রসঙ্গটি বর্ণিত হয়েছে, যে কলটি ২৫ মার্চ মধ্য রাতের অব্যবহিত পর রিসিভ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী গোলাম মোরশেদ। নুরুল হক গোলাম মোরশেদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘মেসেজটি পাঠানো হয়ে গেছে। এখন মেশিনটি কী করব?’ তখন গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে। হয়তো তাই বঙ্গবন্ধু টেলিফোন কল রিসিভ না করেই গোলাম মোরশেদের মাধ্যমে জবাব দিয়েছিলেন, ‘মেশিনটি ভেঙে ফেলে পালিয়ে যেতে বল্’। হাজি গোলাম মোরশেদের এই কাহিনির সমর্থন মিলছে ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হককে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওই ওয়্যারলেস মেসেজ পাঠানোর অপরাধে বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করার ঘটনায়। এই কাহিনির একমাত্র সাক্ষী গোলাম মোরশেদ আজও বেঁচে আছেন। ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে শারমিন আহমদের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষণে ওই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছিলেন, ওই অনুষ্ঠানে আমিও আলোচক ছিলাম। (হাসিনার মতে ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রেরণ করেছিলেন)। এই কাহিনিগুলো হয়তো ২৬ মার্চ রাতের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার প্রমাণ, যা ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ রকম একটা মেসেজই হয়তো চট্টগ্রামের ওয়্যারলেস অফিস থেকে ডা. নুরুন্নাহার জহুরকে ফোনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল, যেটা সাইক্লোস্টাইল করে ২৬ মার্চ ভোর থেকে চট্টগ্রামে প্রচার করা হয়েছিল! ২৬ মার্চ ১৯৭১ সকালে একটি ঘোড়ার গাড়িতে করে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারকারীদের হাত থেকে আমিও ওই লিফলেটটা পেয়েছিলাম চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায়।
বঙ্গবন্ধুকে টেপে স্বাধীনতা ঘোষণায় রাজি করাতে না পেরে বিক্ষুব্ধ চিত্তে নিজ ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন তাজউদ্দীন। এরপর কীভাবে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম তাজউদ্দীনকে বাসা থেকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে লালমাটিয়ার এক বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন এবং ২৭ মার্চ কারফিউ প্রত্যাহারের পর জীবন বাজি রেখে তিন দিন তিন রাতের কঠিন ও বিপৎসংকুল যাত্রা পার হয়ে ৩০ মার্চ কুষ্টিয়ার জীবননগর সীমান্তের টুঙ্গি নামক জায়গার একটি কালভার্টের ওপর পৌঁছে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং মাহবুবউদ্দিন আহমদকে বিএসএফের কর্মকর্তাদের কাছে আলোচনার জন্য পাঠিয়েছিলেন তার মনোমুগ্ধকর বর্ণনা তাজউদ্দীন-কন্যা শারমিন আহমদের বইটির ১০৬-১১০ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত আছে। তাজউদ্দীন ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক সাক্ষাৎকারে জাতিকে জানিয়েছিলেন যে টুঙ্গির ওই কালভার্টের ওপর অপেক্ষা করার সময়ই তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে একটা স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন এবং তজ্জন্যে ভারতের সাহায্য কামনা করবেন। সফল আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাজউদ্দীন ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে বিএসএফের একটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন বিএসএফের পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক প্রধান গোলোক মজুমদার। তাঁর মাধ্যমে বিএসএফ মহাপরিচালক সুন্দরজি খবর পেয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
মিসেস গান্ধী তাজউদ্দীন ও ব্যারিস্টার আমীর-উলকে সাক্ষাৎদানে সম্মত হওয়ায় তাঁদের নয়াদিল্লি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এয়ারপোর্টে তাঁদের জামাকাপড়ের মলিন দশা দেখে সুন্দরজি নিজের স্যুটকেস থেকে কাপড় দিয়ে তাঁদের কাপড় পাল্টানোর সুযোগ করে দেন। পরে তাঁদের আরও কিছু জামাকাপড় কিনে দেওয়া হয়েছিল। দিল্লি পৌঁছানোর পর ৩ এপ্রিল শ্রীমতী গান্ধীর সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দিল্লিতে এরই মাঝে গিয়ে পৌঁছান বাংলাদেশের দুজন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান ও ড. আনিসুর রহমান। তাঁরাও আলোচনায় শরিক হতে শুরু করেন। একাধিক আলোচনা বৈঠকের পর ১০ এপ্রিল তাজউদ্দীন এক বেতার ভাষণে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের ঘোষণা নেন, যাতে মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গঠিত হাইকমান্ডের সদস্যদের মন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতা ঘোষণার ওই ভাষণটির মুসাবিদা করেছিলেন তাজউদ্দীন, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম এবং প্রফেসর রেহমান সোবহান। ভাষণ দেওয়ার পর তাজউদ্দীন এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম কলকাতা ফেরত এসে অন্য নেতাদের খুঁজতে শুরু করেন। প্রথমে তাঁদের দেখা হয় মনসুর আলী ও কামারুজ্জামানের সঙ্গে; তাঁরা দুজনেই সানন্দে সম্মতি প্রদান করেন। পরে খবর পাওয়া যায় যে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহ সীমান্তে আছেন। তাঁর কাছে ছুটে যান তাজউদ্দীন, তিনিও সম্মতি দেন। পরে আগরতলায় খোন্দকার মোশতাকের আপত্তির মুখে পড়েন তাজউদ্দীন; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁকে দেওয়ার শর্তে তাঁর সঙ্গে রফা হয়। আরও তীব্র বাধা এসেছিল শেখ মনির নেতৃত্বে যুব ও ছাত্রনেতাদের কাছ থেকে, যাঁরা তাঁদের নেতৃত্বে বিপ্লবী কাউন্সিল করার ম্যান্ডেট বঙ্গবন্ধু নিজেই তাঁদের দিয়েছিলেন বলে দাবি তুলে ঘোষিত সরকারের শপথ অনুষ্ঠানকে প্রায় ভন্ডুলই করে দিয়েছিলেন। তীব্র বাগ্বিতণ্ডা ও তর্ক-বিতর্কের পর তাঁদের নিরস্ত করা গিয়েছিল।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই রচিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিলের মুজিবনগর দিবসের ইতিহাস। এটা খুবই বেদনাদায়ক যে বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় একবারও মুজিবনগরে যাননি। কিন্তু, এখন তো মুজিবনগর দিবসের স্মৃতি রক্ষার্থে মুজিবনগরে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ ও স্থাপত্যসমূহ গড়ে তোলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মুজিবকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি করে বাংলাদেশের প্রথম সরকার যেখানে শপথ নিয়েছিল, সেখানে বাংলাদেশের সরকার-প্রধান যাবেন না কেন? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের প্রতি আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ: মুজিবনগর দিবসের প্রতি পতিত স্বৈরশাসক হাসিনার অবহেলার অবসানকল্পে এবারের মুজিবনগর দিবসে আপনি সশরীরে সেখানে যান। একই সঙ্গে তাজউদ্দীনের ঐতিহাসিক অবদানকে যথাযথ স্বীকৃতি দিন। এটা খুবই দুঃখজনক যে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় মুজিবনগর কমপ্লেক্সের বেশ কিছু স্থাপত্য ভাঙচুরের শিকার হয়েছিল। জামায়াত-শিবিরসহ স্বাধীনতাবিরোধী মহল এসব ভাঙচুর চালিয়েছে। ওগুলো যথাসম্ভব শিগগিরই মেরামত করার ব্যবস্থা করুন। একই সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হোক—মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সামান্যতম অমর্যাদাও সরকার মেনে নেবে না। কোনো অজুহাতেই গণ-অভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো যাবে না।
দেশের সংবিধান, পুলিশ, স্থানীয় সরকার, নির্বাচন, বিচারব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের নানা আলাপ হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু এই সময়ে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে খুব বেশি কিছু করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারেরই গঠন করা শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
১৫ ঘণ্টা আগেঈশ্বরকে এখনো বুঝে উঠতে পারিনি আমরা। এ কারণে মানবদেহ থাকলেও মনুষ্যত্ব, মানবিকতা নেই কিংবা মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি। ঈশ্বরকে বোঝার জন্য আমরা দায়বদ্ধ নই, যদিও আমাদের দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গটি এখানে আসার কথা ছিল না। শব্দটি প্রযোজ্য নয় এখানে। কিন্তু জন্ম, মৃত্যু ও ধর্মকে পুঁজি করে এক অদৃশ্য নাগপাশে বাঁধা পড়ে
১৫ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও কার্যপরিধি নিয়ে রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। এক অংশ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার শুধু নির্বাচন পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়; বিচার বিভাগে সংস্কার, হাসিনা সরকারের হত্যা-নির্যাতন, গুম-খুন ও দুর্নীতির বিচার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষকরণসহ নানা
১৬ ঘণ্টা আগেঢাকা শহরে পরিবহনের অব্যবস্থাপনার কারণে নগরবাসী কাহিল অনেক আগে থেকেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যানজটের অসহনীয় যন্ত্রণা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকারের কিছু উদ্যোগ গ্রহণের কারণে মানুষ আশার আলো দেখতে পেলেও সময়ের সঙ্গে সেই আশাও নিরাশায় পরিণত হয়েছে। মূলত পরিবহনমালিক ও নেতাদের অসহযোগিতার কারণে
১৬ ঘণ্টা আগে