মযহারুল ইসলাম বাবলা
ক্ষিতিশচন্দ্র ধরকে সাতচল্লিশের বাংলা ভাগ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করেছিলাম। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাগ অনিবার্য ছিল। কেননা, অখণ্ড বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠরা ছিল মুসলমান। এতে হিন্দুরা মুসলমানদের দ্বারা পিষ্ট হতো। অনুন্নত শ্রেণির কবলে চিড়ে-চ্যাপটা হতে হতো। বাংলা ভাগে আমাদের ক্ষতিটা হয়েছে শরণার্থী বাঙালদের আগমনের কারণে। নয়তো বাংলা ভাগে আমাদের কোনো সংকট ছিল না।’
ছেচল্লিশের দাঙ্গা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেছিলেন, ওই দাঙ্গা জিন্নাহর ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে পালনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছিল। আর কলকাতার দাঙ্গায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুরাবর্দী (সোহরাওয়ার্দী)। তবে ওই দাঙ্গা সংঘটনে প্রধান ভূমিকায় ছিল বিহারি এবং শিখরা। বাঙালিরা দাঙ্গা সংঘটনে তেমন যুক্ত ছিল না।
শিখরা তো হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়। তারা কেন মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা করেছিল? এই প্রশ্নে ক্ষিতিশ বাবুর বক্তব্য ছিল, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং আওরঙ্গজেব শিখদের দুজন গুরুনানককে হত্যা করেছিলেন। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতিশোধ হয়তো শিখরা নিয়েছিল। তাঁর সঙ্গে আলাপে আমি হতাশই হয়েছিলাম। তবে পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয়রা আমাদের সম্পর্কে কিরূপ ধারণা পোষণ করতেন, সেই চিত্রটি ১৯৮৬ সালেই পেয়েছিলাম।
ওই একই সময়ে নিউ আলিপুরে পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরের এক প্রবীণের সঙ্গে দেখা ও আলাপ হয়েছিল। তিনি নকশালবাড়ি আন্দোলনের কর্মী। নির্যাতন ও কারাভোগ পর্যন্ত করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, নকশালবাড়ি আন্দোলনে সর্বাত্মক ক্ষতিসাধন করেছিল মুক্তিযুদ্ধ। দেশভাগের তীব্র সমালোচনা করে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের শাসকশ্রেণিকে এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে দায়ী করে খিস্তি করে অনেক কথাই বলেছিলেন। পাশাপাশি আরও বলেছিলেন, দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রবক্তা জিন্নাহ নন, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সাভারকার। তাঁর ঘোষিত দ্বিজাতিতত্ত্বকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নিয়েছিলেন জিন্নাহ। আমরা সাতচল্লিশে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ঔপনিবেশিক শাসনাধীন হয়ে পড়েছিলাম। দুই বাংলার জনগণের দশা অভিন্ন। সেটা পাকিস্তান রাষ্ট্রে যেমন ছিল, আজও তেমনি। আর পশ্চিম বাংলাসহ সারা ভারতের সাধারণ মানুষেরও একই দশা। এই ছিল তাঁর কথার সারসংক্ষেপ। সেবার বিচিত্র ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছিলাম। এত বছর পরও তাঁদের কথা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়নি। কথাগুলোর প্রাসঙ্গিকতা মাঝে মাঝেই ভাবিয়ে তোলে।
১৯৮৬ সালে কলকাতা গিয়ে অতিথি হিসেবে ছিলাম ইন্টালি সিআইটি রোডের আত্মীয়তুল্য দিলীপ সেনের বাড়িতে। তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন আলাপে জানতে পারলাম, তাঁদের বাড়ির দোতলায় ব্রিটিশবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের একজন সক্রিয় বিপ্লবী-যোদ্ধা থাকেন। তাঁর আদি নিবাস পুরান ঢাকায়। সাতচল্লিশের দেশভাগের পর কলকাতায় চলে যান। ভারত সরকার কর্তৃক মাসোহারা পেয়ে থাকেন। চিরকুমার ওই বিপ্লবী থাকেন ভাইপোদের সঙ্গে। ঢাকার কলতাবাজারের খণ্ড যুদ্ধে অংশ নেওয়া ওই বিপ্লবী বেশ কিছু সশস্ত্র অভিযানেও যুক্ত ছিলেন। ব্রিটিশ সরকার কলতাবাজারের ঘটনায় বিপ্লবীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। আত্মরক্ষার্থে তাঁরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হন। তিনি বুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে রামেরকান্দা হয়ে দোহারে এক পরিচিত বাড়িতে আশ্রয় নেন। দেশভাগের পর বাধ্য হয়ে মাতৃভূমি ত্যাগ করে কলকাতায় চলে আসেন। সেই থেকে কলকাতায় আছেন।
স্বদেশি বিপ্লবীকে স্বচক্ষে দেখার জন্য আমি কৌতূহলী হয়ে উঠি। শোনা ঘটনাগুলো আমাকে আচ্ছন্ন করে তোলে। রাত্রি-যাপনের পর সকালেই কাউকে কিছু না বলে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠে যাই। ভেজানো দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখি ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ বিপ্লবীটি জানালার পাশে বসে সূর্যের আলোয় দৈনিক পত্রিকা পড়ছেন। ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাইলে তিনি ইশারায় ভেতরে যেতে বলেন। আমি দ্রুত ছুটে গিয়ে তাঁর পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি। তিনি আমার এই ত্বরিতকাণ্ডে বিস্মিত হয়ে জানতে চান, ‘কে তুমি?’ আমি বলি, ঢাকা থেকে এসেছি। ‘ওহ, তা আমার কাছে ক্যান আইছো?’ আমি আবেগে অনর্গল বলে যাই, ‘আপনারা বীর, আপনাদের বীরত্বের জন্যই ভারতবর্ষ ব্রিটিশমুক্ত হয়েছে। স্বাধীনতা এসেছে উপমহাদেশের।’
শোনামাত্র তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। খিস্তিখেউড় করে বললেন, ‘স্বাধীনতা! আমার ইয়ের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার জন্য আমরা ব্রিটিশদের খেদানোর সংগ্রাম করি নাই। নিজ দ্যাশ ছাইড়া ভিন দ্যাশে আয়া রিফ্যুজি হইবার লাইগা যুদ্ধ করি নাই। এই দ্যাশের সরকারের ভিক্ষার ওপর ভর কইরা বাঁচবার লেগা যুদ্ধ করি নাই। যৌবনের সবকিছু উজাড় কইরা এইভাবে বাঁচবার চাই নাই। আর কী হুনবার চাও? অহন আমাকে দেখা অইছে। যাও, চইলা যাও। আর হুনো, স্বাধীনতার কথা কইছো না? এইটা স্বাধীনতা না। হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গায় দ্যাশ ভাঙনের স্বাধীনতা। যেটা আমাগো স্বপ্নেও আছিল না। যাও বাবা, বিদায় হও।’
আমি নত মুখে স্থান ত্যাগ করি। তাঁর খেদোক্তি, ভেতরের আগুনঝরা যন্ত্রণাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। সত্যি তো, যে স্বাধীনতার জন্য তাঁরা জীবন বাজি রেখে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রাম করেছেন। তাঁদের ওই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তো স্বাধীনতা আসেনি। এসেছে টেবিল ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম সম্প্রদায়ের পরস্পরের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার মধ্য দিয়ে। দেশভাগের নির্মমতা যাঁদের অভিজ্ঞতায় রয়েছে, উচ্ছেদ, বিচ্ছেদ, উৎপাটনের চরম মর্মান্তিকতায়, তাঁদের কাছে সাতচল্লিশের স্বাধীনতা প্রহসন ভিন্ন অন্য কিছু নয়। এই সত্য দুই বাংলার দেশত্যাগী হিন্দু-মুসলমানের জীবনস্মৃতি থেকে মুছে যাবার নয়। তাঁর আক্ষেপ তো অন্যায্য নয়। যথার্থই।
(শেষ)
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
ক্ষিতিশচন্দ্র ধরকে সাতচল্লিশের বাংলা ভাগ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করেছিলাম। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাগ অনিবার্য ছিল। কেননা, অখণ্ড বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠরা ছিল মুসলমান। এতে হিন্দুরা মুসলমানদের দ্বারা পিষ্ট হতো। অনুন্নত শ্রেণির কবলে চিড়ে-চ্যাপটা হতে হতো। বাংলা ভাগে আমাদের ক্ষতিটা হয়েছে শরণার্থী বাঙালদের আগমনের কারণে। নয়তো বাংলা ভাগে আমাদের কোনো সংকট ছিল না।’
ছেচল্লিশের দাঙ্গা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেছিলেন, ওই দাঙ্গা জিন্নাহর ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে পালনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছিল। আর কলকাতার দাঙ্গায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুরাবর্দী (সোহরাওয়ার্দী)। তবে ওই দাঙ্গা সংঘটনে প্রধান ভূমিকায় ছিল বিহারি এবং শিখরা। বাঙালিরা দাঙ্গা সংঘটনে তেমন যুক্ত ছিল না।
শিখরা তো হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়। তারা কেন মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা করেছিল? এই প্রশ্নে ক্ষিতিশ বাবুর বক্তব্য ছিল, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং আওরঙ্গজেব শিখদের দুজন গুরুনানককে হত্যা করেছিলেন। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতিশোধ হয়তো শিখরা নিয়েছিল। তাঁর সঙ্গে আলাপে আমি হতাশই হয়েছিলাম। তবে পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয়রা আমাদের সম্পর্কে কিরূপ ধারণা পোষণ করতেন, সেই চিত্রটি ১৯৮৬ সালেই পেয়েছিলাম।
ওই একই সময়ে নিউ আলিপুরে পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরের এক প্রবীণের সঙ্গে দেখা ও আলাপ হয়েছিল। তিনি নকশালবাড়ি আন্দোলনের কর্মী। নির্যাতন ও কারাভোগ পর্যন্ত করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, নকশালবাড়ি আন্দোলনে সর্বাত্মক ক্ষতিসাধন করেছিল মুক্তিযুদ্ধ। দেশভাগের তীব্র সমালোচনা করে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের শাসকশ্রেণিকে এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে দায়ী করে খিস্তি করে অনেক কথাই বলেছিলেন। পাশাপাশি আরও বলেছিলেন, দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রবক্তা জিন্নাহ নন, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সাভারকার। তাঁর ঘোষিত দ্বিজাতিতত্ত্বকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নিয়েছিলেন জিন্নাহ। আমরা সাতচল্লিশে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ঔপনিবেশিক শাসনাধীন হয়ে পড়েছিলাম। দুই বাংলার জনগণের দশা অভিন্ন। সেটা পাকিস্তান রাষ্ট্রে যেমন ছিল, আজও তেমনি। আর পশ্চিম বাংলাসহ সারা ভারতের সাধারণ মানুষেরও একই দশা। এই ছিল তাঁর কথার সারসংক্ষেপ। সেবার বিচিত্র ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছিলাম। এত বছর পরও তাঁদের কথা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়নি। কথাগুলোর প্রাসঙ্গিকতা মাঝে মাঝেই ভাবিয়ে তোলে।
১৯৮৬ সালে কলকাতা গিয়ে অতিথি হিসেবে ছিলাম ইন্টালি সিআইটি রোডের আত্মীয়তুল্য দিলীপ সেনের বাড়িতে। তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন আলাপে জানতে পারলাম, তাঁদের বাড়ির দোতলায় ব্রিটিশবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের একজন সক্রিয় বিপ্লবী-যোদ্ধা থাকেন। তাঁর আদি নিবাস পুরান ঢাকায়। সাতচল্লিশের দেশভাগের পর কলকাতায় চলে যান। ভারত সরকার কর্তৃক মাসোহারা পেয়ে থাকেন। চিরকুমার ওই বিপ্লবী থাকেন ভাইপোদের সঙ্গে। ঢাকার কলতাবাজারের খণ্ড যুদ্ধে অংশ নেওয়া ওই বিপ্লবী বেশ কিছু সশস্ত্র অভিযানেও যুক্ত ছিলেন। ব্রিটিশ সরকার কলতাবাজারের ঘটনায় বিপ্লবীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। আত্মরক্ষার্থে তাঁরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হন। তিনি বুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে রামেরকান্দা হয়ে দোহারে এক পরিচিত বাড়িতে আশ্রয় নেন। দেশভাগের পর বাধ্য হয়ে মাতৃভূমি ত্যাগ করে কলকাতায় চলে আসেন। সেই থেকে কলকাতায় আছেন।
স্বদেশি বিপ্লবীকে স্বচক্ষে দেখার জন্য আমি কৌতূহলী হয়ে উঠি। শোনা ঘটনাগুলো আমাকে আচ্ছন্ন করে তোলে। রাত্রি-যাপনের পর সকালেই কাউকে কিছু না বলে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠে যাই। ভেজানো দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখি ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ বিপ্লবীটি জানালার পাশে বসে সূর্যের আলোয় দৈনিক পত্রিকা পড়ছেন। ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাইলে তিনি ইশারায় ভেতরে যেতে বলেন। আমি দ্রুত ছুটে গিয়ে তাঁর পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি। তিনি আমার এই ত্বরিতকাণ্ডে বিস্মিত হয়ে জানতে চান, ‘কে তুমি?’ আমি বলি, ঢাকা থেকে এসেছি। ‘ওহ, তা আমার কাছে ক্যান আইছো?’ আমি আবেগে অনর্গল বলে যাই, ‘আপনারা বীর, আপনাদের বীরত্বের জন্যই ভারতবর্ষ ব্রিটিশমুক্ত হয়েছে। স্বাধীনতা এসেছে উপমহাদেশের।’
শোনামাত্র তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। খিস্তিখেউড় করে বললেন, ‘স্বাধীনতা! আমার ইয়ের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার জন্য আমরা ব্রিটিশদের খেদানোর সংগ্রাম করি নাই। নিজ দ্যাশ ছাইড়া ভিন দ্যাশে আয়া রিফ্যুজি হইবার লাইগা যুদ্ধ করি নাই। এই দ্যাশের সরকারের ভিক্ষার ওপর ভর কইরা বাঁচবার লেগা যুদ্ধ করি নাই। যৌবনের সবকিছু উজাড় কইরা এইভাবে বাঁচবার চাই নাই। আর কী হুনবার চাও? অহন আমাকে দেখা অইছে। যাও, চইলা যাও। আর হুনো, স্বাধীনতার কথা কইছো না? এইটা স্বাধীনতা না। হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গায় দ্যাশ ভাঙনের স্বাধীনতা। যেটা আমাগো স্বপ্নেও আছিল না। যাও বাবা, বিদায় হও।’
আমি নত মুখে স্থান ত্যাগ করি। তাঁর খেদোক্তি, ভেতরের আগুনঝরা যন্ত্রণাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। সত্যি তো, যে স্বাধীনতার জন্য তাঁরা জীবন বাজি রেখে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রাম করেছেন। তাঁদের ওই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তো স্বাধীনতা আসেনি। এসেছে টেবিল ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম সম্প্রদায়ের পরস্পরের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার মধ্য দিয়ে। দেশভাগের নির্মমতা যাঁদের অভিজ্ঞতায় রয়েছে, উচ্ছেদ, বিচ্ছেদ, উৎপাটনের চরম মর্মান্তিকতায়, তাঁদের কাছে সাতচল্লিশের স্বাধীনতা প্রহসন ভিন্ন অন্য কিছু নয়। এই সত্য দুই বাংলার দেশত্যাগী হিন্দু-মুসলমানের জীবনস্মৃতি থেকে মুছে যাবার নয়। তাঁর আক্ষেপ তো অন্যায্য নয়। যথার্থই।
(শেষ)
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন এলাকা বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে রাখাইনের ১৭টি শহরের ভেতর ১৪টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে আরাকান আর্মি দাবি করছে। দখল করা শহরের মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মংডু, বুথিডাং এবং চিন রাজ্যের প
১ দিন আগেরাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের একটি উঁচু ভবনে কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিদ্যুতের লুজ কানেকশন থেকে ওই ঘটনার সূত্রপাত বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। সে সিদ্ধান্তের আলোকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্ম
১ দিন আগেগণ-অভ্যুত্থান যখন আগস্ট থেকে জানুয়ারিতে এসে পা রেখেছে, তখন বিভিন্ন সংগঠনের সৃষ্ট অনেক ঘটনাতেই রাজনৈতিক জটিলতা বেড়ে ওঠার আলামত দেখা যাচ্ছে। যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল মানুষ, আন্দোলন শেষে তা এখন কিছুটা শীতল। আন্দোলনের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে জমে উঠেছে বিতর্ক। যে যার মতো করে নিজেদেরই আন্দোলন
১ দিন আগেবাংলাদেশে বটতলার একজন উকিল ছিলেন। বটতলার হলে কী হবে, তিনি ছিলেন ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ গভর্নর—জবরদস্ত শাসক মোনায়েম খান। তাঁর দাপটে পূর্ব পাকিস্তান ছিল কম্পমান। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের এই স্বৈরশাসক একবার তাঁর ওস্তাদ ‘পাকিস্তানের’ স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের কাছ থেকে হুকুম পান...
২ দিন আগে