আজাদুর রহমান চন্দন
গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দুই দিনের ব্যবধানে দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। গত ২২ ডিসেম্বর প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ঢাকায় একের পর এক ছিনতাই, চলাচলে ভয়’। এর আগে ২০ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল ‘স্বস্তি ফিরছে না জনমনে’। গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন ও সাত হাজার টাকা ছিনিয়ে নিতে ছিনতাইকারীরা তাঁর পেটে ছুরিকাঘাত করায় তিনি মারা যান। ওই ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাজধানীতে ছিনতাইয়ের এমন অনেক ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রাতে ও ভোরে চলাচল করতে মানুষ ভয় পাচ্ছেন। ঘটছে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা।
কিছুদিন আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা হয়। পুলিশ ও ঢাকার আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ৫০টি থানা এলাকায় গত ১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ দিনে অন্তত ৩৪ জন ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মামলা করেছেন। এ সময় একজন ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও চারজন। সব মিলিয়ে গত ৫ আগস্ট থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন সাতজন।’ প্রতিবেদনে রাজধানীতে চুরি-ডাকাতির তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে ৩০ নভেম্বর। ১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে আদাবরে। উল্লিখিত ৪০ দিনে ঢাকা মহানগরে সর্বাধিক ৯টি করে চুরির মামলা হয়েছে ভাটারা ও শাহবাগ থানায়। ৬টি করে মামলা হয়েছে উত্তরা পূর্ব, শেরেবাংলা নগর, কলাবাগান, পল্লবী ও মোহাম্মদপুর থানায়। ৫টি করে মামলা হয়েছে গুলশান, কামরাঙ্গীরচর, হাতিরঝিল ও মিরপুর থানায়। প্রথম আলো রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরলেও আজকের পত্রিকা সারা দেশের চিত্র তুলে ধরে। ‘স্বস্তি ফিরছে না জনমনে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, একের পর এক খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরির ঘটনা মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে।
এমন এক সময়ে প্রতিবেদন দুটি ছাপা হলো যখন কিনা দেশের গণমাধ্যমে ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন খোদ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা এই কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ গত ২২ ডিসেম্বর সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, এখনো ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ আছে। কাজেই বাড়িয়ে লেখার মতো অবস্থা যে নেই, তা বলাই বাহুল্য। গণমাধ্যম সংস্কার ছাড়াও রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের সুপারিশ দিতে আরও ১০টি কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগে সংস্কার নাকি নির্বাচন—সে নিয়ে বিতর্কও দেখা দিয়েছে। যদিও এমন নয় যে যাঁরা দ্রুত নির্বাচন দাবি করছেন তাঁরা সংস্কারের বিপক্ষে। বরং তাঁদের কেউ কেউ অনেক আগে থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কোনো সরকার চাইলেই তো আর সব সংস্কার সব সময় করে ফেলতে পারে না। শেখ হাসিনার সরকারের পতন হওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই একাধিক নিবন্ধে বলেছি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ ছাড়া সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। আবার এটাও ঠিক যে সংবিধান ছাড়াও সংস্কার করার মতো অনেক ক্ষেত্র আছে, যার একটি হলো স্থানীয় সরকারের স্বশাসন নিশ্চিত করা। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনও অবশ্য এ বিষয়ে কিছু ইতিবাচক সুপারিশের আভাস দিয়েছে।
সংস্কার দেশের আপামর জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর এই জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপ পাওয়ার সুযোগ এসেছে। কিন্তু সংস্কারের নামে অযৌক্তিক কিছু করতে চাইলে কিংবা জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করা হলে সবই মাঠে মারা যেতে পারে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য দরকার জনজীবনে স্বস্তি। সাধারণ মানুষ তখনই স্বস্তি পায়, যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম তাদের নাগালে থাকে এবং ভালো থাকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যে কতটা ঊর্ধ্বমুখী সে চিত্র আগের লেখায় তুলে ধরেছি। গত কয়েক দিনে সবজির বাজার খানিকটা সহনীয় হলেও নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার পরও দাম কিছুটা কমতে না কমতেই আবার বাড়তে শুরু করেছে। আমনের ভরা মৌসুমে বাড়ছে চালের দামও। বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম, স্বল্প আয়ের মানুষ যেটি কিনে থাকে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, মোটা চালের দাম বেড়েছে মূলত সর্বশেষ এক সপ্তাহে—কেজিতে তিন থেকে চার টাকা। এ সময়ে মাঝারি চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা। সরু চালের দাম এক সপ্তাহে বাড়েনি। কিন্তু এক মাসের হিসাবে বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা।
এই যদি হয় বাজারের অবস্থা, তাহলে সাধারণ মানুষ চলবে কীভাবে! আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা তো শুরুতেই বলেছি। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে-শান্তিতে না থাকলে অপশক্তি সংস্কারের পথে বাধা সৃষ্টি করার সুযোগ পাবে সহজেই। এরই মধ্যে এ ধরনের নানা আলামত দেখাও যাচ্ছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যমতে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পাঁচ মাসে বৈষম্য-বঞ্চনাসহ নানা দাবিতে ১০১টি আন্দোলন হয়েছে। আপাতত বিরতি দিলেও আন্দোলনে আছেন সরকারের বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সরকারি কর্মকর্তাদের দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এক পক্ষে আছেন প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা।
অন্য দলে আছেন প্রশাসন বাদে অন্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ ব্যানারে ২৫ ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল, নিজ নিজ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব পদে দায়িত্ব দেওয়া এবং সব ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সম্প্রতি ঘোষণা দেয়, উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করা হবে। ওই ঘোষণার পর প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগ বা অপসারণ দাবি করেছেন।
রাজধানীতে নানা দাবিতে সড়ক অবরোধের কারণে যানজটে সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আহত হওয়া ব্যক্তিরা ক্ষোভ থেকে সড়কে নেমেছিলেন গত ১৩ নভেম্বর। প্রায় ১৪ ঘণ্টা তাঁরা চিকিৎসা না নিয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টের এক নির্দেশনার বিরোধিতা করে ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে নামেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা। তাঁরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে শুরু করেন আন্দোলন। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে আছেন চা-শ্রমিকেরাও। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে এখনো চলমান সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের আন্দোলন। চলমান আন্দোলনের মধ্যে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর ব্যানারে কিছু মানুষ সড়কে নেমে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
যাঁরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই নিজেদের ‘বঞ্চিত’ বা ‘বৈষম্যের শিকার’ বলে দাবি করছেন। এমন অনেক সংগঠনের ব্যানারেও আন্দোলন হচ্ছে, যেসব সংগঠনের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। শুধু দাবি জানানোর জন্য বেশ কিছু সংগঠনের জন্ম হয়েছে। আবার কেউ কেউ কোনো ব্যানার বা সংগঠন ছাড়াই আন্দোলনে নেমেছেন। নানা কঠোরতা-সীমাবদ্ধতার কারণে আগের সরকারের সময় যৌক্তিক দাবিও অনেকে প্রকাশ করতে পারেননি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সুবাদে গণ-অভ্যুত্থানের পর তাঁরা দাবি জানানোর সুযোগ এসেছে বলে হয়তো মনে করছেন। তবে অনেক অযৌক্তিক আন্দোলনও যে হচ্ছে না, তেমনটি নয়। এসব আন্দোলনের পেছনে কারও অসৎ উদ্দেশ্য থাকতেও পারে। কাজেই সংস্কারের পথ নিষ্কণ্টক করতে চাইলে জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে হবে। সেই সঙ্গে নজর দিতে হবে নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনেও।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দুই দিনের ব্যবধানে দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। গত ২২ ডিসেম্বর প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ঢাকায় একের পর এক ছিনতাই, চলাচলে ভয়’। এর আগে ২০ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল ‘স্বস্তি ফিরছে না জনমনে’। গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন ও সাত হাজার টাকা ছিনিয়ে নিতে ছিনতাইকারীরা তাঁর পেটে ছুরিকাঘাত করায় তিনি মারা যান। ওই ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাজধানীতে ছিনতাইয়ের এমন অনেক ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রাতে ও ভোরে চলাচল করতে মানুষ ভয় পাচ্ছেন। ঘটছে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা।
কিছুদিন আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা হয়। পুলিশ ও ঢাকার আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ৫০টি থানা এলাকায় গত ১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ দিনে অন্তত ৩৪ জন ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মামলা করেছেন। এ সময় একজন ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও চারজন। সব মিলিয়ে গত ৫ আগস্ট থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন সাতজন।’ প্রতিবেদনে রাজধানীতে চুরি-ডাকাতির তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে ৩০ নভেম্বর। ১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে আদাবরে। উল্লিখিত ৪০ দিনে ঢাকা মহানগরে সর্বাধিক ৯টি করে চুরির মামলা হয়েছে ভাটারা ও শাহবাগ থানায়। ৬টি করে মামলা হয়েছে উত্তরা পূর্ব, শেরেবাংলা নগর, কলাবাগান, পল্লবী ও মোহাম্মদপুর থানায়। ৫টি করে মামলা হয়েছে গুলশান, কামরাঙ্গীরচর, হাতিরঝিল ও মিরপুর থানায়। প্রথম আলো রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরলেও আজকের পত্রিকা সারা দেশের চিত্র তুলে ধরে। ‘স্বস্তি ফিরছে না জনমনে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, একের পর এক খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরির ঘটনা মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে।
এমন এক সময়ে প্রতিবেদন দুটি ছাপা হলো যখন কিনা দেশের গণমাধ্যমে ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন খোদ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা এই কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ গত ২২ ডিসেম্বর সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, এখনো ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ আছে। কাজেই বাড়িয়ে লেখার মতো অবস্থা যে নেই, তা বলাই বাহুল্য। গণমাধ্যম সংস্কার ছাড়াও রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের সুপারিশ দিতে আরও ১০টি কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগে সংস্কার নাকি নির্বাচন—সে নিয়ে বিতর্কও দেখা দিয়েছে। যদিও এমন নয় যে যাঁরা দ্রুত নির্বাচন দাবি করছেন তাঁরা সংস্কারের বিপক্ষে। বরং তাঁদের কেউ কেউ অনেক আগে থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কোনো সরকার চাইলেই তো আর সব সংস্কার সব সময় করে ফেলতে পারে না। শেখ হাসিনার সরকারের পতন হওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই একাধিক নিবন্ধে বলেছি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ ছাড়া সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। আবার এটাও ঠিক যে সংবিধান ছাড়াও সংস্কার করার মতো অনেক ক্ষেত্র আছে, যার একটি হলো স্থানীয় সরকারের স্বশাসন নিশ্চিত করা। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনও অবশ্য এ বিষয়ে কিছু ইতিবাচক সুপারিশের আভাস দিয়েছে।
সংস্কার দেশের আপামর জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর এই জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপ পাওয়ার সুযোগ এসেছে। কিন্তু সংস্কারের নামে অযৌক্তিক কিছু করতে চাইলে কিংবা জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করা হলে সবই মাঠে মারা যেতে পারে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য দরকার জনজীবনে স্বস্তি। সাধারণ মানুষ তখনই স্বস্তি পায়, যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম তাদের নাগালে থাকে এবং ভালো থাকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যে কতটা ঊর্ধ্বমুখী সে চিত্র আগের লেখায় তুলে ধরেছি। গত কয়েক দিনে সবজির বাজার খানিকটা সহনীয় হলেও নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার পরও দাম কিছুটা কমতে না কমতেই আবার বাড়তে শুরু করেছে। আমনের ভরা মৌসুমে বাড়ছে চালের দামও। বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম, স্বল্প আয়ের মানুষ যেটি কিনে থাকে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, মোটা চালের দাম বেড়েছে মূলত সর্বশেষ এক সপ্তাহে—কেজিতে তিন থেকে চার টাকা। এ সময়ে মাঝারি চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা। সরু চালের দাম এক সপ্তাহে বাড়েনি। কিন্তু এক মাসের হিসাবে বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা।
এই যদি হয় বাজারের অবস্থা, তাহলে সাধারণ মানুষ চলবে কীভাবে! আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা তো শুরুতেই বলেছি। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে-শান্তিতে না থাকলে অপশক্তি সংস্কারের পথে বাধা সৃষ্টি করার সুযোগ পাবে সহজেই। এরই মধ্যে এ ধরনের নানা আলামত দেখাও যাচ্ছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যমতে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পাঁচ মাসে বৈষম্য-বঞ্চনাসহ নানা দাবিতে ১০১টি আন্দোলন হয়েছে। আপাতত বিরতি দিলেও আন্দোলনে আছেন সরকারের বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সরকারি কর্মকর্তাদের দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এক পক্ষে আছেন প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা।
অন্য দলে আছেন প্রশাসন বাদে অন্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ ব্যানারে ২৫ ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল, নিজ নিজ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব পদে দায়িত্ব দেওয়া এবং সব ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সম্প্রতি ঘোষণা দেয়, উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করা হবে। ওই ঘোষণার পর প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগ বা অপসারণ দাবি করেছেন।
রাজধানীতে নানা দাবিতে সড়ক অবরোধের কারণে যানজটে সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আহত হওয়া ব্যক্তিরা ক্ষোভ থেকে সড়কে নেমেছিলেন গত ১৩ নভেম্বর। প্রায় ১৪ ঘণ্টা তাঁরা চিকিৎসা না নিয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টের এক নির্দেশনার বিরোধিতা করে ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে নামেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা। তাঁরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে শুরু করেন আন্দোলন। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে আছেন চা-শ্রমিকেরাও। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে এখনো চলমান সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের আন্দোলন। চলমান আন্দোলনের মধ্যে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর ব্যানারে কিছু মানুষ সড়কে নেমে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
যাঁরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই নিজেদের ‘বঞ্চিত’ বা ‘বৈষম্যের শিকার’ বলে দাবি করছেন। এমন অনেক সংগঠনের ব্যানারেও আন্দোলন হচ্ছে, যেসব সংগঠনের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। শুধু দাবি জানানোর জন্য বেশ কিছু সংগঠনের জন্ম হয়েছে। আবার কেউ কেউ কোনো ব্যানার বা সংগঠন ছাড়াই আন্দোলনে নেমেছেন। নানা কঠোরতা-সীমাবদ্ধতার কারণে আগের সরকারের সময় যৌক্তিক দাবিও অনেকে প্রকাশ করতে পারেননি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সুবাদে গণ-অভ্যুত্থানের পর তাঁরা দাবি জানানোর সুযোগ এসেছে বলে হয়তো মনে করছেন। তবে অনেক অযৌক্তিক আন্দোলনও যে হচ্ছে না, তেমনটি নয়। এসব আন্দোলনের পেছনে কারও অসৎ উদ্দেশ্য থাকতেও পারে। কাজেই সংস্কারের পথ নিষ্কণ্টক করতে চাইলে জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে হবে। সেই সঙ্গে নজর দিতে হবে নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনেও।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
দল বা দেশ পরিচালনায়—এক ব্যক্তির, এক পরিবারের আধিপত্যের ঢং দেখানো গণতন্ত্র দেখেই অভ্যস্ত আমরা। সেটি যে শুধু গত ১৫ বছরেই দেখেছি—তা নয়, আগেও তা ছিল। যদি বলি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই, তাহলেও মিথ্যা বলা হবে না। অতি স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এই ঢং দেখানো গণতন্ত্রও ক্ষণে ক্ষণে হোঁচট খেয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগেমানুষ পুরোনোকে বিদায় দেয় আর নতুনকে বরণ করে নেয়। এটি একটি চিরাচরিত প্রথা। সময়কে সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, সপ্তাহ, মাস ও বছর ধরেই পৃথিবীতে একটি সিস্টেমে চলমান আছে। বলা হয় সময়ের গাছপাথর নেই। খ্রিষ্টীয় বছর বৈশ্বিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটাকে ধরেই চলছে সারা বিশ্ব। বাংলা বর্ষের পরিবর্তিত সময়গুলো নিয়ে
১৮ ঘণ্টা আগেরোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো রিওভাইরাস শনাক্ত করেছে। শনিবার আজকের পত্রিকায় ‘দেশে প্রথমবারের মতো রিওভাইরাস শনাক্ত’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। পাঁচ রোগীর শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে, যদিও তাঁদের বড় কোনো জটিলতা দেখা যায়নি।
১৮ ঘণ্টা আগেড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান ২৫ ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-এর সমন্বয়ক। জনপ্রশাসনে আন্তক্যাডার বৈষম্য ও বিরোধ, প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি বাকি ক্যাডারদের ক্ষোভ এবং তাঁদের অন্যান্য দাবি-দাওয়ার বিষয় নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলেছেন।
২ দিন আগে