সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনাটি ঘটিয়েছে তরুণেরাই। অতীতে বড় বড় ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্র-জনতা ঐক্যের ভিত্তিতেই। যেমন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদবিরোধী নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান। শেখ হাসিনার পতনও তরুণদের শুরু করা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ঘটল। কিন্তু আসলে ঘটেছেটা কী? সেটার বিবেচনাও জরুরি। কেউ বলছেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা, কারও ধারণা আরও অগ্রসর, বলছেন বিপ্লবই ঘটে গেছে। বাস্তবে কিন্তু দুটির কোনোটি ঘটেনি, যেটা ঘটেছে তা হলো নৃশংস একটি সরকারের পতন। আর এই পতনকে অনিবার্য করে তুলেছে সরকার নিজেই। বিগত সরকার ছিল চরম ফ্যাসিবাদী এবং শেষের দিনগুলোতে তার আচরণ ছিল অবিশ্বাস্য রকমের নৃশংস। সরকারের নৃশংসতা ও মনুষ্যত্বের অপমান সরকারের পতনকে নিশ্চিত করেছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সরকারবিরোধী আন্দোলনের ভূমিকাও কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে তারা সরকারের জনবিচ্ছিন্নতাকে স্পষ্ট করে তুলেছিল। সরকারের পতন অবশ্যই ঘটত। সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে সরকার যদি সরে যেত, তাহলে এত মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটত না; সরকারকেও দেশ ছেড়ে পালাতে হতো না। তারা বিরোধী দল হিসেবে থাকতে পারত। চরমপন্থার চরম ফল ঘটেছে।
জনগণের রাজনীতি দেশে এখন সে অর্থে দেখা যাচ্ছে না। বুর্জোয়ারা বৈষম্যবিরোধী নন, তাঁরা বৈষম্য সৃষ্টি ও লালনপালনের পক্ষে; আন্দোলন করতে হবে প্রকৃত বৈষম্যবিরোধীদের, অর্থাৎ সমাজতন্ত্রীদের। সমাজতন্ত্রী, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষরা যদি একটি সুনির্দিষ্ট ও অতীব প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন, তবে মানুষের সাড়া পাওয়ার পাশাপাশি তাঁরা অসম্ভবকে সম্ভব করার দিকে অগ্রসর হতে পারবেন। এই যুক্তফ্রন্ট ১৯৫৪ সালের মতো পাঁচমিশালি হবে না, তবে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ও সমাজতন্ত্রীদের সমন্বয়ে হতে হবে। বুর্জোয়ারা নন, জনগণের রাজনীতি করবে সমাজে যাঁরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চান, সেই বাম গণতান্ত্রিক শক্তি।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা বাড়বে না, বরং কমবে। নির্বাচন হলে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরাও বুর্জোয়াই। বুর্জোয়ারা তো রাজনীতি করেন ক্ষমতার জন্য। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তাঁরাও অসহিষ্ণু হবেন বলে আশঙ্কা। সম্পদ পাচারে তাঁরা যদি আগের সরকারের মতো তৎপর না হন তো ভালো। কিন্তু মুনাফালিপ্সা তাঁদের অব্যাহতি দেবে না। ব্যবসায়ী এবং আমলারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকবেন, আগে যেমন ছিলেন। উন্নতির পুঁজিবাদী ধারাও অব্যাহত থাকবে বলেই ধারণা করি। ফলে বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা এবং দেশপ্রেমের নিম্নগামিতা অব্যাহত থাকবে। রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সমাজ পরিবর্তনকারীদের রাজনৈতিক ভূমিকার ওপর।
গত ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। ওই পুলিশকেই জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে লেলিয়ে দেওয়া হয়। দলীয় ক্যাডারদেরও কাজে লাগানো হয় আন্দোলনকারীদের নির্যাতন করতে। সরকারের সবচেয়ে ওপরে থাকা প্রধানমন্ত্রী, তাঁর দম্ভ বাড়তে বাড়তে হয়ে উঠেছিল আকাশচুম্বী। তাঁর একক স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্বে যেটা সবচেয়ে বেশি জাজ্বল্যমান হয়েছে, সেটা হচ্ছে প্রতিশোধস্পৃহা। তাঁর প্রতিশোধপরায়ণতায় দেশে নৈরাজ্য, লুণ্ঠন, অগণতান্ত্রিকতা থেকে ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়েছিল। দলবাজি, চাঁদাবাজি চরম আকার ধারণ করেছিল।
আগেই বলেছি, বুর্জোয়া শাসকেরা বৈষম্যবিরোধী নন। মানুষের এগিয়ে যাওয়ার প্রধান অন্তরায় হচ্ছে বৈষম্য। ওই বৈষম্য নিরসন না হলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এর জন্য উন্নতির ধারায় পরিবর্তন আনা চাই। উন্নতি পাহাড়ের মতো ভারী হয়ে জনগণের কাঁধে চড়ে বসবে না; উন্নতি হওয়া চাই নদীর মতো সৃষ্টিশীল, সর্বত্রগামী এবং উপকারী। এর জন্য রাষ্ট্রের পুঁজিবাদী-আমলাতান্ত্রিক চরিত্রে মৌলিক পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। রাষ্ট্রের মালিকানা হবে জনগণের। সেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের অধিকার ও সুযোগের সাম্য থাকবে; ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটবে। এবং সর্বত্র জবাবদিহিমূলক জনপ্রতিনিধিত্বের শাসন থাকা চাই। এটা এমনি এমনি ঘটবে না—এর জন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দরকার হবে।
জাতীয়তাবাদীদের একটা সীমা আছে। তাঁদের পরিসরটা একটি গণ্ডিতে আবদ্ধ। ক্ষমতাপ্রাপ্তিই তাঁদের অভীষ্ট লক্ষ্য। সেটা পেলে তাঁরা ওখানেই থেমে পড়েন। আর অগ্রসর হন না। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ ছিল ধর্মাশ্রয়ী। সেটা প্রত্যাখ্যান করেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান। দুটির মধ্যে মিল এবং অমিল নিশ্চয় রয়েছে। কিন্তু জাতীয়তাবাদ যে ধরনেরই হোক, সে শ্রেণি মানে না। বলে, সবাই সমান। ভাই-ভাই। সুবিধাভোগী ধনীরা মেহনতিদের শোষণ করে অথচ উন্নতি যা ঘটে তা মেহনতিদের শ্রমের কারণেই। জাতীয়তাবাদ তার এই চরিত্রটা বদলাতে পারে না। আর রাষ্ট্রের চরিত্র? সেটা তো আগের মতো পুঁজিবাদী-আমলাতান্ত্রিকই রয়ে গেছে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে পেছনে ঠেলে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ক্রমেই চাঙা হচ্ছে, আশকারা পাচ্ছে, শাসকদের আনুকূল্যও লাভ করেছে।
বিদ্যমান রাষ্ট্রে মৌলিক ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। গত ৫৩ বছরে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে মাত্র। ঘটেছে শাসকদের নাম ও পোশাক পরিবর্তন। রাষ্ট্রের চরিত্রে যে পরিবর্তন সেটা শতকরা ২০ জনের সুবিধা বৃদ্ধি করেছে, ৮০ জনকে বঞ্চিত করে। রাষ্ট্রীয় শাসক আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ক্রমাগত নিষ্ঠুর হয়েছেন। বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সমাজের মৌলিক পরিবর্তনে মোটেই সাহায্য করবে না, বরং তার বিরোধিতা করবে। কারণ, রাষ্ট্র তো একটি ব্যবস্থা বইকি, যা তার মালিকের সেবা করে। রাষ্ট্রের বুর্জোয়া মালিকেরা নিশ্চয়ই বৈষম্য দূর করতে চাইবেন না। তাঁরা তাঁদের মুনাফা ও ক্ষমতা বাড়ানোতে তৎপর থাকবেন। ফলে সমাজের অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার কথা। আশার জায়গাটা হবে (যদি হয়) সমাজ-পরিবর্তনকামীদের রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ। বর্তমানে সুযোগ এসেছে সমাজ পরিবর্তনকামী রাজনৈতিক দলগুলোর একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের। এই যুক্তফ্রন্ট হবে আন্দোলনের, তবে যুক্তফ্রন্ট আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনেও অংশ নেবে। মানুষ হতাশায় ভুগছে, যুক্তফ্রন্ট মানুষকে আশাবাদী এবং ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে।
দেশে ক্রমাগত সমাজ বদলের অঙ্গীকারবদ্ধ মানুষের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু নিঃশেষ হয়নি। ওই লড়াই বিভিন্ন পন্থায় অব্যাহত রয়েছে। সমাজের অধিকাংশ মানুষই ভালো মানুষ। কিন্তু তারা সংগঠিত নয়। তাদের দল নেই। দল গঠনের সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি নেই। মানুষ তো মানুষই থাকবে না যদি তার মনুষ্যত্ব হারায়। এবং মানুষ নিশ্চয়ই মনুষ্যত্ব হারাতে রাজি হবে না। প্রয়োজন বিবেকবান ও বুদ্ধিমান মানুষের এগিয়ে আসা।
আমরা অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামের অনেক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সফল হয়েছি। যেমন আমরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে বিদায় করেছি। বিদায় করেছি পাকিস্তানিদেরও। স্বাধীনতার আগে ও পরে আমাদের অর্জনগুলোকে আমলে নিলে পরিষ্কার হয়ে যাবে আমাদের দেশের মানুষেরা শত প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে জয়ী হয়েছে।
ওই জয় ত্যাগ-আত্মত্যাগে এসেছে বলেই কঠিন নিশ্চয়ই, আর বিকল্প বলতে নিশ্চয়ই বুর্জোয়াদের থেকে কিছু আশা করা যাবে না। যাঁরা সমাজ পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ, তাঁরাই বিকল্প পথের দিশা দিতে পারবেন। অন্য কেউ নয়।
আমরা দেখতে চাই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ। বৈষম্যহীন এবং সব মানুষের অধিকার ও সুযোগের সাম্য নিশ্চিতকারী একটি সমাজ চাই। যে সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন না হওয়া অবধি মুক্তির সংগ্রাম চলছে এবং চলবে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনাটি ঘটিয়েছে তরুণেরাই। অতীতে বড় বড় ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্র-জনতা ঐক্যের ভিত্তিতেই। যেমন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদবিরোধী নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান। শেখ হাসিনার পতনও তরুণদের শুরু করা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ঘটল। কিন্তু আসলে ঘটেছেটা কী? সেটার বিবেচনাও জরুরি। কেউ বলছেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা, কারও ধারণা আরও অগ্রসর, বলছেন বিপ্লবই ঘটে গেছে। বাস্তবে কিন্তু দুটির কোনোটি ঘটেনি, যেটা ঘটেছে তা হলো নৃশংস একটি সরকারের পতন। আর এই পতনকে অনিবার্য করে তুলেছে সরকার নিজেই। বিগত সরকার ছিল চরম ফ্যাসিবাদী এবং শেষের দিনগুলোতে তার আচরণ ছিল অবিশ্বাস্য রকমের নৃশংস। সরকারের নৃশংসতা ও মনুষ্যত্বের অপমান সরকারের পতনকে নিশ্চিত করেছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সরকারবিরোধী আন্দোলনের ভূমিকাও কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে তারা সরকারের জনবিচ্ছিন্নতাকে স্পষ্ট করে তুলেছিল। সরকারের পতন অবশ্যই ঘটত। সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে সরকার যদি সরে যেত, তাহলে এত মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটত না; সরকারকেও দেশ ছেড়ে পালাতে হতো না। তারা বিরোধী দল হিসেবে থাকতে পারত। চরমপন্থার চরম ফল ঘটেছে।
জনগণের রাজনীতি দেশে এখন সে অর্থে দেখা যাচ্ছে না। বুর্জোয়ারা বৈষম্যবিরোধী নন, তাঁরা বৈষম্য সৃষ্টি ও লালনপালনের পক্ষে; আন্দোলন করতে হবে প্রকৃত বৈষম্যবিরোধীদের, অর্থাৎ সমাজতন্ত্রীদের। সমাজতন্ত্রী, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষরা যদি একটি সুনির্দিষ্ট ও অতীব প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন, তবে মানুষের সাড়া পাওয়ার পাশাপাশি তাঁরা অসম্ভবকে সম্ভব করার দিকে অগ্রসর হতে পারবেন। এই যুক্তফ্রন্ট ১৯৫৪ সালের মতো পাঁচমিশালি হবে না, তবে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ও সমাজতন্ত্রীদের সমন্বয়ে হতে হবে। বুর্জোয়ারা নন, জনগণের রাজনীতি করবে সমাজে যাঁরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চান, সেই বাম গণতান্ত্রিক শক্তি।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা বাড়বে না, বরং কমবে। নির্বাচন হলে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরাও বুর্জোয়াই। বুর্জোয়ারা তো রাজনীতি করেন ক্ষমতার জন্য। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তাঁরাও অসহিষ্ণু হবেন বলে আশঙ্কা। সম্পদ পাচারে তাঁরা যদি আগের সরকারের মতো তৎপর না হন তো ভালো। কিন্তু মুনাফালিপ্সা তাঁদের অব্যাহতি দেবে না। ব্যবসায়ী এবং আমলারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকবেন, আগে যেমন ছিলেন। উন্নতির পুঁজিবাদী ধারাও অব্যাহত থাকবে বলেই ধারণা করি। ফলে বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা এবং দেশপ্রেমের নিম্নগামিতা অব্যাহত থাকবে। রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সমাজ পরিবর্তনকারীদের রাজনৈতিক ভূমিকার ওপর।
গত ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। ওই পুলিশকেই জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে লেলিয়ে দেওয়া হয়। দলীয় ক্যাডারদেরও কাজে লাগানো হয় আন্দোলনকারীদের নির্যাতন করতে। সরকারের সবচেয়ে ওপরে থাকা প্রধানমন্ত্রী, তাঁর দম্ভ বাড়তে বাড়তে হয়ে উঠেছিল আকাশচুম্বী। তাঁর একক স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্বে যেটা সবচেয়ে বেশি জাজ্বল্যমান হয়েছে, সেটা হচ্ছে প্রতিশোধস্পৃহা। তাঁর প্রতিশোধপরায়ণতায় দেশে নৈরাজ্য, লুণ্ঠন, অগণতান্ত্রিকতা থেকে ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়েছিল। দলবাজি, চাঁদাবাজি চরম আকার ধারণ করেছিল।
আগেই বলেছি, বুর্জোয়া শাসকেরা বৈষম্যবিরোধী নন। মানুষের এগিয়ে যাওয়ার প্রধান অন্তরায় হচ্ছে বৈষম্য। ওই বৈষম্য নিরসন না হলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এর জন্য উন্নতির ধারায় পরিবর্তন আনা চাই। উন্নতি পাহাড়ের মতো ভারী হয়ে জনগণের কাঁধে চড়ে বসবে না; উন্নতি হওয়া চাই নদীর মতো সৃষ্টিশীল, সর্বত্রগামী এবং উপকারী। এর জন্য রাষ্ট্রের পুঁজিবাদী-আমলাতান্ত্রিক চরিত্রে মৌলিক পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। রাষ্ট্রের মালিকানা হবে জনগণের। সেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের অধিকার ও সুযোগের সাম্য থাকবে; ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটবে। এবং সর্বত্র জবাবদিহিমূলক জনপ্রতিনিধিত্বের শাসন থাকা চাই। এটা এমনি এমনি ঘটবে না—এর জন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দরকার হবে।
জাতীয়তাবাদীদের একটা সীমা আছে। তাঁদের পরিসরটা একটি গণ্ডিতে আবদ্ধ। ক্ষমতাপ্রাপ্তিই তাঁদের অভীষ্ট লক্ষ্য। সেটা পেলে তাঁরা ওখানেই থেমে পড়েন। আর অগ্রসর হন না। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ ছিল ধর্মাশ্রয়ী। সেটা প্রত্যাখ্যান করেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান। দুটির মধ্যে মিল এবং অমিল নিশ্চয় রয়েছে। কিন্তু জাতীয়তাবাদ যে ধরনেরই হোক, সে শ্রেণি মানে না। বলে, সবাই সমান। ভাই-ভাই। সুবিধাভোগী ধনীরা মেহনতিদের শোষণ করে অথচ উন্নতি যা ঘটে তা মেহনতিদের শ্রমের কারণেই। জাতীয়তাবাদ তার এই চরিত্রটা বদলাতে পারে না। আর রাষ্ট্রের চরিত্র? সেটা তো আগের মতো পুঁজিবাদী-আমলাতান্ত্রিকই রয়ে গেছে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে পেছনে ঠেলে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ক্রমেই চাঙা হচ্ছে, আশকারা পাচ্ছে, শাসকদের আনুকূল্যও লাভ করেছে।
বিদ্যমান রাষ্ট্রে মৌলিক ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। গত ৫৩ বছরে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে মাত্র। ঘটেছে শাসকদের নাম ও পোশাক পরিবর্তন। রাষ্ট্রের চরিত্রে যে পরিবর্তন সেটা শতকরা ২০ জনের সুবিধা বৃদ্ধি করেছে, ৮০ জনকে বঞ্চিত করে। রাষ্ট্রীয় শাসক আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ক্রমাগত নিষ্ঠুর হয়েছেন। বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সমাজের মৌলিক পরিবর্তনে মোটেই সাহায্য করবে না, বরং তার বিরোধিতা করবে। কারণ, রাষ্ট্র তো একটি ব্যবস্থা বইকি, যা তার মালিকের সেবা করে। রাষ্ট্রের বুর্জোয়া মালিকেরা নিশ্চয়ই বৈষম্য দূর করতে চাইবেন না। তাঁরা তাঁদের মুনাফা ও ক্ষমতা বাড়ানোতে তৎপর থাকবেন। ফলে সমাজের অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার কথা। আশার জায়গাটা হবে (যদি হয়) সমাজ-পরিবর্তনকামীদের রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ। বর্তমানে সুযোগ এসেছে সমাজ পরিবর্তনকামী রাজনৈতিক দলগুলোর একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের। এই যুক্তফ্রন্ট হবে আন্দোলনের, তবে যুক্তফ্রন্ট আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনেও অংশ নেবে। মানুষ হতাশায় ভুগছে, যুক্তফ্রন্ট মানুষকে আশাবাদী এবং ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে।
দেশে ক্রমাগত সমাজ বদলের অঙ্গীকারবদ্ধ মানুষের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু নিঃশেষ হয়নি। ওই লড়াই বিভিন্ন পন্থায় অব্যাহত রয়েছে। সমাজের অধিকাংশ মানুষই ভালো মানুষ। কিন্তু তারা সংগঠিত নয়। তাদের দল নেই। দল গঠনের সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি নেই। মানুষ তো মানুষই থাকবে না যদি তার মনুষ্যত্ব হারায়। এবং মানুষ নিশ্চয়ই মনুষ্যত্ব হারাতে রাজি হবে না। প্রয়োজন বিবেকবান ও বুদ্ধিমান মানুষের এগিয়ে আসা।
আমরা অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামের অনেক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সফল হয়েছি। যেমন আমরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে বিদায় করেছি। বিদায় করেছি পাকিস্তানিদেরও। স্বাধীনতার আগে ও পরে আমাদের অর্জনগুলোকে আমলে নিলে পরিষ্কার হয়ে যাবে আমাদের দেশের মানুষেরা শত প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে জয়ী হয়েছে।
ওই জয় ত্যাগ-আত্মত্যাগে এসেছে বলেই কঠিন নিশ্চয়ই, আর বিকল্প বলতে নিশ্চয়ই বুর্জোয়াদের থেকে কিছু আশা করা যাবে না। যাঁরা সমাজ পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ, তাঁরাই বিকল্প পথের দিশা দিতে পারবেন। অন্য কেউ নয়।
আমরা দেখতে চাই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ। বৈষম্যহীন এবং সব মানুষের অধিকার ও সুযোগের সাম্য নিশ্চিতকারী একটি সমাজ চাই। যে সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন না হওয়া অবধি মুক্তির সংগ্রাম চলছে এবং চলবে।
গত বছর আমি অভিবাসন সম্পর্কে লেখার জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছি। বোঝার চেষ্টা করেছি এই দেশে অভিবাসনের অর্থ কী, বর্তমান ব্যবস্থায় কী ভাঙন ধরেছে এবং আমরা কীভাবে এটি ঠিক করতে পারি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের মতো অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে আমি উদ্বেগের সঙ্গে তাঁর অভিবাসন দমনের পরিকল্পনাগুল
৫ ঘণ্টা আগেআতশবাজির ইতিহাস আজকের নয়। কেউ কেউ বলেন, এর প্রচলন প্রথম চীনে। দুই হাজার বছর আগে হান রাজবংশের রাজত্বকালে প্রথম এর প্রচলন হয়। তখনকার মানুষ ধারণা করত বন্যা-খরা-অনাবৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে অপদেবতাদের কারণে। আতশবাজি ফাটিয়ে, আকাশের দিকে বাজি-পটকা ফুটিয়ে অপদেবতাদের ভয় দেখাত তারা। সেখান থেকেই আত
৫ ঘণ্টা আগেঢাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সময়ে মানুষ হত্যাসহ নানা ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকার অপরাধে কারাগারে বন্দী ছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর একে একে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগার থেকে মুক্তি পেতে শুরু করেন। তাঁরা বের হওয়ার পর আবার একই অপকর্মে জড়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ১৯
৫ ঘণ্টা আগে২০০৫ সালে আমি ভিয়েতনামের কৃষি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রথম ড্রাগন ফলের চিত্র তুলে ধরেছিলাম। তখন দেশের মানুষের কাছে ড্রাগন ফল তেমন পরিচিত ছিল না। তারও ১২-১৩ বছর পর বিদেশি ফল ‘ড্রাগন’ দেশের মানুষের কাছে পরিচিত হতে থাকে। কয়েক বছর আগেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে অচেনা ফল ছিল ড্রাগন।
১ দিন আগে