বিরস
তখন দেশে এরশাদের শাসনকাল চলছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদিন পল্টি খেয়ে এরশাদের দলে ভিড়ে মন্ত্রীও হয়ে গেলেন। চারদিকে সবাই ছি ছি করতে লাগল। নতুন মন্ত্রী শপথ নিয়ে বাসায় ফেরার পর তাঁর ছেলেমেয়েরা তাঁকে সহাস্যে বরণ করে নিয়ে সমস্বর বলে উঠল, ‘আমাদের বাবা এত দিন ছিল বোকা, আজ হয়েছে বুদ্ধিমান।’ বড় ছেলে এককাঠি বাড়িয়ে বলল, ‘জানো বাবা, আমার বন্ধুরা সবাই তোমার প্রশংসা করেছে!’
মন্ত্রী পিতার মুখে কিন্তু হাসি নেই। কারণ শপথ নিয়ে বাসায় ফেরার পথে তিনি নিজে দেখেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিছিল হচ্ছে, তাঁর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হচ্ছে। তাঁর নাম ধরে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, ‘...দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’। পুত্র বানিয়ে মিথ্যা বলছে বুঝতে পেরেই তিনি গম্ভীর মুখে ঘরে ঢুকলেন।
রাতে খাবার টেবিলে বসে তিনি বড় ছেলেকে উদ্দেশ করে বললেন, অতি চালাক হওয়া এবং মিথ্যা বলার পরিণতি কি জানো?
ছেলে চটপট উত্তর দিল, ‘জানি বাবা, আমার কপালেও শেষকালে তোমার মতো মন্ত্রিত্ব জুটবে।’
খ. আগের দিনে রাজা-বাদশাহদের ছিল নানা বিচিত্র শখ, বিচিত্র খেয়াল। তখন গণতন্ত্রের বালাই ছিল না। রাজা-বাদশাহদের ভোটভিক্ষা করতে হতো না। কারও কাছে তাঁদের জবাবদিহিও করতে হতো না। যা ইচ্ছে তাই করতে পারতেন। দাস-দাসী, চাকর-বাকর, পাইক-পেয়াদার অভাব ছিল না। এখনো এমন শাসক পৃথিবীতে নেই তা জোর দিয়ে বলা যাবে না। শাসকদের কারও কারও বিপুল সম্পদের কথা এখনো শোনা যায়। ক্ষমতার স্বাদ পেলে ভাঙা স্যুটকেস থেকেও জাহাজ বেরোতে পারে। ইমেলদা মার্কোসের জুতাকাহিনি তো একসময় বেশ রগড়ের জন্ম দিয়েছিল।
না, আমরা মূল বিষয়েই থাকি। সেকালে এক রাজার ছিল কুকুর পোষার শখ। কিন্তু তাঁর পোষা ১০টি কুকুর ছিল ভয়ানক হিংস্র। রাজার কোনো মন্ত্রী ঠিকঠাকমতো কাজ করতে না পারলে রাজা সেই মন্ত্রীকে কুকুরের সামনে ছেড়ে দিতেন। কুকুরদের আঁচড়ে-কামড়ে মন্ত্রীর মৃত্যু হতো। একদিন এক প্রবীণ মন্ত্রীর উপদেশ রাজার মনঃপূত না হওয়ায়, তিনি ওই মন্ত্রীকে কুকুরদের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দিলেন। মন্ত্রী অনেক কাকুতিমিনতি করলেন, কিন্তু রাজার মন নরম হলো না। মন্ত্রী বললেন, ‘মহারাজ, আমি কত বছর ধরে আপনার সেবা করছি, আপনার নির্দেশ পালন করছি, আপনার সুখের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কত প্রজার ভিটায় ঘুঘু চরিয়েছি। আজ আমার একটা সিদ্ধান্ত আপনার পছন্দ হলো না বলে, আমায় এই কঠোর শাস্তি দিলেন? দয়া করে আমায় এই শাস্তি দেবেন না।’
কিন্তু রাজা তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। হাকিম নড়বে, তবু হুকুম নড়বে না অবস্থা! নিরুপায় মন্ত্রী শেষ মিনতি হিসেবে বললেন, ‘মহারাজ, আপনি আমায় মাত্র ১০টা দিন সময় দিন। তারপর আপনি আমাকে কুকুরের মধ্যে ছেড়ে দিলেও আমি প্রতিবাদ করব না।’
রাজা নরম হলেন এবং ওই প্রবীণ মন্ত্রীকে ১০ দিন সময় দিলেন।
মন্ত্রী তখন কুকুর পালকের কাছে গিয়ে তাঁকে ১০ দিনের ছুটি দিলেন এবং এই ১০ দিন নিজের হাতে কুকুরদের যত্নআত্তি করলেন। তাদের গোসল করালেন, খাওয়ালেন, তাদের সঙ্গেই খেলাধুলা করলেন। ১০ দিন পর মন্ত্রী রাজসভায় প্রবেশ করা মাত্র, রাজার আদেশে তাঁকে কুকুরদের মধ্যে নিক্ষেপ করা হলো। কিন্তু রাজা আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, কুকুরগুলো মন্ত্রীকে আক্রমণ করার বদলে তাঁর পা চেটে দিচ্ছে, লেজ নেড়ে আদর খাচ্ছে, পায়ের কাছে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
রাজা তো অবাক! এমন ‘মিরাকেল’ কীভাবে ঘটছে? মন্ত্রীকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেন এর গোপন রহস্য। না হলে শূলে চড়িয়ে তাঁকে হত্যা করা হবে। মন্ত্রী হাত কচলে সবিনয়ে বললেন, ‘মহারাজ, আমি মাত্র ১০ দিন এই কুকুরদের সেবা করেছি। তারা আমাকে মনে রেখেছে। আর আমি আপনাকে বছরের পর বছর সেবা করেছি, হুকুম তামিল করেছি, কিন্তু আমার একটা পরামর্শ পছন্দ না হওয়ায় আপনি সেসবই ভুলে গেলেন!’
রাজার মুখে কোনো রা নেই। তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারলেন, কিন্তু মন্ত্রীর বুদ্ধির কাছে ক্ষমতার মত্ততা হার মানতে পারে না। নিজের ক্ষমতার দাপট দেখাতে তিনি মন্ত্রীকে তখনই পদচ্যুত করলেন।
তখন দেশে এরশাদের শাসনকাল চলছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদিন পল্টি খেয়ে এরশাদের দলে ভিড়ে মন্ত্রীও হয়ে গেলেন। চারদিকে সবাই ছি ছি করতে লাগল। নতুন মন্ত্রী শপথ নিয়ে বাসায় ফেরার পর তাঁর ছেলেমেয়েরা তাঁকে সহাস্যে বরণ করে নিয়ে সমস্বর বলে উঠল, ‘আমাদের বাবা এত দিন ছিল বোকা, আজ হয়েছে বুদ্ধিমান।’ বড় ছেলে এককাঠি বাড়িয়ে বলল, ‘জানো বাবা, আমার বন্ধুরা সবাই তোমার প্রশংসা করেছে!’
মন্ত্রী পিতার মুখে কিন্তু হাসি নেই। কারণ শপথ নিয়ে বাসায় ফেরার পথে তিনি নিজে দেখেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিছিল হচ্ছে, তাঁর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হচ্ছে। তাঁর নাম ধরে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, ‘...দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’। পুত্র বানিয়ে মিথ্যা বলছে বুঝতে পেরেই তিনি গম্ভীর মুখে ঘরে ঢুকলেন।
রাতে খাবার টেবিলে বসে তিনি বড় ছেলেকে উদ্দেশ করে বললেন, অতি চালাক হওয়া এবং মিথ্যা বলার পরিণতি কি জানো?
ছেলে চটপট উত্তর দিল, ‘জানি বাবা, আমার কপালেও শেষকালে তোমার মতো মন্ত্রিত্ব জুটবে।’
খ. আগের দিনে রাজা-বাদশাহদের ছিল নানা বিচিত্র শখ, বিচিত্র খেয়াল। তখন গণতন্ত্রের বালাই ছিল না। রাজা-বাদশাহদের ভোটভিক্ষা করতে হতো না। কারও কাছে তাঁদের জবাবদিহিও করতে হতো না। যা ইচ্ছে তাই করতে পারতেন। দাস-দাসী, চাকর-বাকর, পাইক-পেয়াদার অভাব ছিল না। এখনো এমন শাসক পৃথিবীতে নেই তা জোর দিয়ে বলা যাবে না। শাসকদের কারও কারও বিপুল সম্পদের কথা এখনো শোনা যায়। ক্ষমতার স্বাদ পেলে ভাঙা স্যুটকেস থেকেও জাহাজ বেরোতে পারে। ইমেলদা মার্কোসের জুতাকাহিনি তো একসময় বেশ রগড়ের জন্ম দিয়েছিল।
না, আমরা মূল বিষয়েই থাকি। সেকালে এক রাজার ছিল কুকুর পোষার শখ। কিন্তু তাঁর পোষা ১০টি কুকুর ছিল ভয়ানক হিংস্র। রাজার কোনো মন্ত্রী ঠিকঠাকমতো কাজ করতে না পারলে রাজা সেই মন্ত্রীকে কুকুরের সামনে ছেড়ে দিতেন। কুকুরদের আঁচড়ে-কামড়ে মন্ত্রীর মৃত্যু হতো। একদিন এক প্রবীণ মন্ত্রীর উপদেশ রাজার মনঃপূত না হওয়ায়, তিনি ওই মন্ত্রীকে কুকুরদের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দিলেন। মন্ত্রী অনেক কাকুতিমিনতি করলেন, কিন্তু রাজার মন নরম হলো না। মন্ত্রী বললেন, ‘মহারাজ, আমি কত বছর ধরে আপনার সেবা করছি, আপনার নির্দেশ পালন করছি, আপনার সুখের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কত প্রজার ভিটায় ঘুঘু চরিয়েছি। আজ আমার একটা সিদ্ধান্ত আপনার পছন্দ হলো না বলে, আমায় এই কঠোর শাস্তি দিলেন? দয়া করে আমায় এই শাস্তি দেবেন না।’
কিন্তু রাজা তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। হাকিম নড়বে, তবু হুকুম নড়বে না অবস্থা! নিরুপায় মন্ত্রী শেষ মিনতি হিসেবে বললেন, ‘মহারাজ, আপনি আমায় মাত্র ১০টা দিন সময় দিন। তারপর আপনি আমাকে কুকুরের মধ্যে ছেড়ে দিলেও আমি প্রতিবাদ করব না।’
রাজা নরম হলেন এবং ওই প্রবীণ মন্ত্রীকে ১০ দিন সময় দিলেন।
মন্ত্রী তখন কুকুর পালকের কাছে গিয়ে তাঁকে ১০ দিনের ছুটি দিলেন এবং এই ১০ দিন নিজের হাতে কুকুরদের যত্নআত্তি করলেন। তাদের গোসল করালেন, খাওয়ালেন, তাদের সঙ্গেই খেলাধুলা করলেন। ১০ দিন পর মন্ত্রী রাজসভায় প্রবেশ করা মাত্র, রাজার আদেশে তাঁকে কুকুরদের মধ্যে নিক্ষেপ করা হলো। কিন্তু রাজা আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, কুকুরগুলো মন্ত্রীকে আক্রমণ করার বদলে তাঁর পা চেটে দিচ্ছে, লেজ নেড়ে আদর খাচ্ছে, পায়ের কাছে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
রাজা তো অবাক! এমন ‘মিরাকেল’ কীভাবে ঘটছে? মন্ত্রীকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেন এর গোপন রহস্য। না হলে শূলে চড়িয়ে তাঁকে হত্যা করা হবে। মন্ত্রী হাত কচলে সবিনয়ে বললেন, ‘মহারাজ, আমি মাত্র ১০ দিন এই কুকুরদের সেবা করেছি। তারা আমাকে মনে রেখেছে। আর আমি আপনাকে বছরের পর বছর সেবা করেছি, হুকুম তামিল করেছি, কিন্তু আমার একটা পরামর্শ পছন্দ না হওয়ায় আপনি সেসবই ভুলে গেলেন!’
রাজার মুখে কোনো রা নেই। তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারলেন, কিন্তু মন্ত্রীর বুদ্ধির কাছে ক্ষমতার মত্ততা হার মানতে পারে না। নিজের ক্ষমতার দাপট দেখাতে তিনি মন্ত্রীকে তখনই পদচ্যুত করলেন।
‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র অন্যতম নেতা সাইফুল হক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ঐক্য ফোরামের নেতা ছিলেন। তিনি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন। এখন পর্যন্ত ২০টি বই লিখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে...
১৩ ঘণ্টা আগেসদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে নানা মাত্রিক আলোচনার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন: ‘গণহত্যার বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে।’
১৩ ঘণ্টা আগেতিন মাস পার হলো, আমরা একটি অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলের অধীনে আছি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের অবসান ঘটেছে। অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে জনমনে আশার সঞ্চার হয়েছিল—সামাজিক সব বৈষম্যের অবসান ঘটবে, আমাদের সামগ্রিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে, প্রকৃত স্বাধীনতা..
১৩ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রামের আকবরশাহ থানার নাছিয়াঘোনা এলাকায় যাওয়া-আসা করতে গেলে বোঝা যায় সেটি দুর্গম এলাকা। এ কারণেই সেখানে বসানো হয়েছিল ফাঁড়ি। কিন্তু ৫ আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পুলিশের থানা ও ফাঁড়িগুলোয় যখন আক্রমণ করা হচ্ছিল, তখন নুরু আলম নুরু নামের এক সন্ত্রাসীও সে সুযোগ নেন। তিনি পুলিশের ফাঁড়ি দখল করে...
১৩ ঘণ্টা আগে