শাসককুলের উৎসব-ভীতি
মামুনুর রশীদ
স্বভাবতই মানুষ নিঃসঙ্গ। অনুষ্ঠান, উৎসব, আড্ডা, মিলনসভার যেকোনো সুযোগই তাকে উৎফুল্ল করে তোলে, একটা প্রেরণার সৃষ্টি হয়, নতুন করে জীবনের একটা ছবি এসে ধরা দেয়। আমাদের দেশে সে জন্যই বারো মাসে তেরো পার্বণ। প্রাচ্য দেশজুড়েই। এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে আছে নানা ধরনের উৎসবের ব্যবস্থা। পাশ্চাত্যে এই সুযোগ কম। তাই সেখানকার শহরে এবং গ্রামে আছে নানা ধরনের পানশালা। নিঃসঙ্গ মানুষেরা সেখানে বন্ধু খুঁজে নেয়।
আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী এবং প্রশাসনিক কাঠামো উৎসবকে ভয় পায়। বিশেষ করে বর্ষ শেষ আর বর্ষ শুরুর অনুষ্ঠানগুলো। যেহেতু এই দিনগুলোর একটা অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আছে, সেহেতু ভয় যেন বেশি। এমনভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেয়, যাতে সন্ধ্যার পর সবাই ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এবার মনে হচ্ছে রীতিমতো ১৪৪ ধারা জারি করে দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই কি এটা সম্ভব?
নিউইয়র্ক, লন্ডন, বার্লিন, টোকিও, কলকাতা, সিডনিসহ পৃথিবীর বড় শহরগুলোর কথাই ভাবা যাক। শহরগুলোর জনসংখ্যা বিপুল। শহরের কেন্দ্রস্থলে বিপুলসংখ্যক মানুষ একত্র হবেই। পানীয় সেবন করে গান, নৃত্য করবে—কোথাও প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে—মানুষের মানসিক ও শারীরিক একটা শক্তির মহড়া হবে। এবং বোঝা যাবে ওই মানুষগুলো কী পরিমাণে সহিষ্ণু। সেই জায়গাগুলোতে পুলিশ থাকে। দু-চারটে মারামারির ঘটনা হয়। মানুষ সেটাকে স্বাভাবিক মনে করে। যৌবনের এই উৎসবের স্মৃতি প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্যের স্মৃতিচারণা এবং প্রেরণায় নতুন জীবন দান করে। উৎসববিমুখ মানুষের যৌবনের কোনো সুখস্মৃতি থাকে না।
ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের বিষয়টা না হয় পাশ্চাত্য সংস্কৃতি। কিন্তু আমাদের দিন গণনা তো ইংরেজি ক্যালেন্ডারেই হয়ে থাকে। আমাদের দেশে নানা ধর্ম, নানা জাতি। যারা সংখ্যালঘু তাদেরও নিজস্ব উৎসব আছে। সেসব উৎসবে নাচ-গান এবং তাদের নিজস্ব রীতিতে তৈরি পানীয়র ব্যবস্থা থাকে। আমাদের দেশে বিত্তবানদের পানীয় গ্রহণের ব্যবস্থা আছে, সাধারণের নেই। তবু পানীয়র প্রচলন আছে সর্বত্রই। আইন লঙ্ঘন করে নেশাজাতীয় দ্রব্যের জোগান একেবারেই দুর্লভ নয়। বাংলা নববর্ষে এসবের বালাই না থাকলেও সন্ধ্যার আগেই সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই বন্ধ করে দেওয়ায় উৎসবের সব আয়োজনে ইতি টানতে হয়। বিষণ্ন মনে সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমাবার আয়োজন করে।
মানুষের আনন্দের সুযোগে শাসকগোষ্ঠী, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এত ভীত কেন? মানুষ কি বোঝে না যে বাড়তি ঝামেলা করলে তারই অসুবিধা হবে? অনেক সময়ই নানা কারণে কোথাও পুলিশ থাকে না। তাতে কি লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যায়? এই তো সেদিন, কোনো পুলিশ ছিল না। কিন্তু তাতে কি একেবারেই অনিরাপদ হয়ে গেল সব লোকালয়? মানুষ নিজে নিজেই পাহারা দিয়েছে। মানুষ যত সামাজিক হবে, ততই সমাজে স্বস্তি আসবে। পৃথিবীতে এমন অনেক গ্রাম বা ছোট শহর আছে, যেখানে কোনো পুলিশ নেই। তারা কি উৎসব করে না? তাদের পাহারা দেয় কে? সমাজ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আমাদের এত নির্ভরতা বেড়েছে যে এবার পাহারা দেওয়ার জন্য যেসব ব্যবস্থা হলো, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য যখন ছাত্ররা দাঁড়িয়ে গেল, তখন মানুষ বলতে শুরু করল, ‘আমরা পুলিশ চাই।’
যেকোনো রাজনৈতিক সংকটেও মানুষ সেনাবাহিনী চায়। নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী তো চায়-ই। অথচ উন্নত দেশগুলোতে নির্বাচনের দিন কোথাও পুলিশ বা সেনাবাহিনী দেখা যায় না। পুলিশকে মানুষের কাছে এত সহজলভ্য করার বিপদও আছে। পুলিশ অনৈতিক হয়ে পড়ে। অসৎ উপায়ে মানুষকে বিপদে ফেলার একটা অস্ত্র পেয়ে যায় হাতে। সেখান থেকে বিচার বিভাগ, আদালত পর্যন্ত মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। তামাশা করে বলা হয়, আদালতের ইট-কাঠ পর্যন্ত ঘুষ খায়! টাকা ছাড়া কোথাও কিছু হয় না। আজকে যে দুর্নীতিপরায়ণ সমাজটা গড়ে উঠেছে তার পেছনে এগুলোও একটা কারণ। মানুষ যত দিন আত্মশাসন করতে না শিখবে, তত দিন এই প্রবণতাগুলো চলবেই।
আমি একবার গারোদের সঙ্গে বড়দিন ও নববর্ষের উৎসবে ছিলাম। কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী কয়েক রাত ধরে নাচ-গান করেছে। কিন্তু একটুও কোনো অযাচিত ঘটনা ঘটেনি। সাঁওতাল, ওঁরাওদের কারাম উৎসবে গিয়েছি। পানরত সাঁওতাল তরুণ বন্ধুরা সারা রাত উৎসব করার পর খোলা মাঠে নৃত্যের অনুষ্ঠান করেছে। শত শত মাদলের শব্দে উৎসবে কারও এতটুকু তাল কাটেনি। ৫ বছরের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধ—কারও ছন্দে এতটুকু ভুল হয়নি। কোনো মারামারি বা হানাহানির ঘটনা তো হয়ইনি। তবে এটাও ঠিক, আমরা একটু কলহপ্রিয়ও। যেকোনো উৎসবে, এমনকি বিয়েবাড়িতেও অকারণে ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে দিই! উদ্যাপনকে উপভোগ করাও আমাদের শিখতে হবে। আমরা অনেক কিছু শিখিনি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকেই এই বিশৃঙ্খলার সূচনা। আমরা অভিভাবকত্ব চাই বটে, কিন্তু সেটি কখনো সুচারুরূপে পালন করতে পারি না।
২০২৪ সম্পর্কে দুটি কথা বলা প্রয়োজন। আগস্টের অভ্যুত্থানে একটি দুর্নীতিপরায়ণ শাসনব্যবস্থার দ্রুত উৎখাত হলো। আরেকটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা এল। কিন্তু কেন যেন তা সুসংহত হতে পারছে না। যে নাগরিক চেতনার উন্মেষ হওয়ার কথা ছিল, তা হলো না। সংস্কারের মতো দীর্ঘস্থায়ী কর্মসূচি নিয়ে একটা বড় সংকটই সৃষ্টি হলো। আমাদের সে ধৈর্য নেই, তাই এখন সবকিছুর আশু সমাধান হলো একটাই—নির্বাচন। নির্বাচন অতীতে আমাদের স্বস্তি দেয়নি, গত ১৬ বছর তো দেয়ইনি, বরং ছোট ছোট নির্বাচিত ক্ষমতাবানেরা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। তবু এ কথা ঠিক, যদি গণতন্ত্রকে সঠিক মনে করি তাহলে গণপ্রতিনিধিদের দ্বারাই দেশ শাসিত হতে হবে। এখন জনপ্রতিনিধিদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তার সংস্কার কি অল্প দিনে সম্ভব? ইতিহাস থেকে শাসকেরা শিক্ষা নেয় না, এটাই ইতিহাসের বড় শিক্ষা।
আমাদের রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম জড়িয়ে গেছে। আবার ধর্মভিত্তিক দল নানাভাবে বিভক্ত। সম্প্রতি তাবলিগ জামায়াতের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তির ফলাফলে চারটি তাজা প্রাণও চলে গেছে। তবে মানুষ নির্বাচনেই মনে হয় স্বস্তি খুঁজছে। সব দল মিলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে হয়তোবা জনজীবনে সুবাতাস বইতে থাকবে। রাজনীতির এক প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হচ্ছে শিল্প-সাহিত্যের চর্চা। শিল্পের মুক্ত বাতায়নে জীবনের একটা স্বচ্ছ ছবি দেখার আয়োজন। সেখানে একধরনের স্থবিরতা এসেছে। এই স্থবিরতাকে অতিক্রম করা গেলে মানুষের নিরাপত্তা ফিরবে এবং প্রেরণার সৃষ্টি হবে। এই প্রেরণা সৃষ্টি করা কোনো আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। শিল্প-সাহিত্যে চর্চার ফলে সম্ভব।
নাটকের হলগুলোর সংখ্যা এমনিতেই কম। সেসবকে প্রাণবন্ত করে তোলার যে উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তাতে বেশ বিলম্ব হয়ে গেছে। সিনেমা হলগুলোতেও দর্শকের আনাগোনা বাড়াতে হবে। আর্ট গ্যালারিগুলোতে এমনিতে খুব একটা ভিড় দেখা যায় না। তবে শীতকালে ক্রেতা আর দর্শকের একটা আসা-যাওয়া দেখা যেত, এবারে তা-ও নিতান্ত কম। তবে একটু একটু করে বাড়ছে। শীতকাল আমাদের উৎসবের ঋতু। এই ঋতুর আর মাত্র দু-তিন মাস বাকি আছে। দেখা যাক কতটা আশাবাদী হতে পারি।
২০২৫ অবশ্যই আশার বছর। রাজনীতির অনেক মেরুকরণ হবে। শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রেও একটা তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সবটা মিলিয়ে আমরা আশার কথাই বলব, স্বপ্নের মধ্যেই আমাদের জীবন। অনাগত কালটা আমাদের স্বপ্ন সম্ভারে ভরে উঠুক।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
স্বভাবতই মানুষ নিঃসঙ্গ। অনুষ্ঠান, উৎসব, আড্ডা, মিলনসভার যেকোনো সুযোগই তাকে উৎফুল্ল করে তোলে, একটা প্রেরণার সৃষ্টি হয়, নতুন করে জীবনের একটা ছবি এসে ধরা দেয়। আমাদের দেশে সে জন্যই বারো মাসে তেরো পার্বণ। প্রাচ্য দেশজুড়েই। এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে আছে নানা ধরনের উৎসবের ব্যবস্থা। পাশ্চাত্যে এই সুযোগ কম। তাই সেখানকার শহরে এবং গ্রামে আছে নানা ধরনের পানশালা। নিঃসঙ্গ মানুষেরা সেখানে বন্ধু খুঁজে নেয়।
আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী এবং প্রশাসনিক কাঠামো উৎসবকে ভয় পায়। বিশেষ করে বর্ষ শেষ আর বর্ষ শুরুর অনুষ্ঠানগুলো। যেহেতু এই দিনগুলোর একটা অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আছে, সেহেতু ভয় যেন বেশি। এমনভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেয়, যাতে সন্ধ্যার পর সবাই ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এবার মনে হচ্ছে রীতিমতো ১৪৪ ধারা জারি করে দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই কি এটা সম্ভব?
নিউইয়র্ক, লন্ডন, বার্লিন, টোকিও, কলকাতা, সিডনিসহ পৃথিবীর বড় শহরগুলোর কথাই ভাবা যাক। শহরগুলোর জনসংখ্যা বিপুল। শহরের কেন্দ্রস্থলে বিপুলসংখ্যক মানুষ একত্র হবেই। পানীয় সেবন করে গান, নৃত্য করবে—কোথাও প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে—মানুষের মানসিক ও শারীরিক একটা শক্তির মহড়া হবে। এবং বোঝা যাবে ওই মানুষগুলো কী পরিমাণে সহিষ্ণু। সেই জায়গাগুলোতে পুলিশ থাকে। দু-চারটে মারামারির ঘটনা হয়। মানুষ সেটাকে স্বাভাবিক মনে করে। যৌবনের এই উৎসবের স্মৃতি প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্যের স্মৃতিচারণা এবং প্রেরণায় নতুন জীবন দান করে। উৎসববিমুখ মানুষের যৌবনের কোনো সুখস্মৃতি থাকে না।
ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের বিষয়টা না হয় পাশ্চাত্য সংস্কৃতি। কিন্তু আমাদের দিন গণনা তো ইংরেজি ক্যালেন্ডারেই হয়ে থাকে। আমাদের দেশে নানা ধর্ম, নানা জাতি। যারা সংখ্যালঘু তাদেরও নিজস্ব উৎসব আছে। সেসব উৎসবে নাচ-গান এবং তাদের নিজস্ব রীতিতে তৈরি পানীয়র ব্যবস্থা থাকে। আমাদের দেশে বিত্তবানদের পানীয় গ্রহণের ব্যবস্থা আছে, সাধারণের নেই। তবু পানীয়র প্রচলন আছে সর্বত্রই। আইন লঙ্ঘন করে নেশাজাতীয় দ্রব্যের জোগান একেবারেই দুর্লভ নয়। বাংলা নববর্ষে এসবের বালাই না থাকলেও সন্ধ্যার আগেই সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই বন্ধ করে দেওয়ায় উৎসবের সব আয়োজনে ইতি টানতে হয়। বিষণ্ন মনে সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমাবার আয়োজন করে।
মানুষের আনন্দের সুযোগে শাসকগোষ্ঠী, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এত ভীত কেন? মানুষ কি বোঝে না যে বাড়তি ঝামেলা করলে তারই অসুবিধা হবে? অনেক সময়ই নানা কারণে কোথাও পুলিশ থাকে না। তাতে কি লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যায়? এই তো সেদিন, কোনো পুলিশ ছিল না। কিন্তু তাতে কি একেবারেই অনিরাপদ হয়ে গেল সব লোকালয়? মানুষ নিজে নিজেই পাহারা দিয়েছে। মানুষ যত সামাজিক হবে, ততই সমাজে স্বস্তি আসবে। পৃথিবীতে এমন অনেক গ্রাম বা ছোট শহর আছে, যেখানে কোনো পুলিশ নেই। তারা কি উৎসব করে না? তাদের পাহারা দেয় কে? সমাজ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আমাদের এত নির্ভরতা বেড়েছে যে এবার পাহারা দেওয়ার জন্য যেসব ব্যবস্থা হলো, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য যখন ছাত্ররা দাঁড়িয়ে গেল, তখন মানুষ বলতে শুরু করল, ‘আমরা পুলিশ চাই।’
যেকোনো রাজনৈতিক সংকটেও মানুষ সেনাবাহিনী চায়। নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী তো চায়-ই। অথচ উন্নত দেশগুলোতে নির্বাচনের দিন কোথাও পুলিশ বা সেনাবাহিনী দেখা যায় না। পুলিশকে মানুষের কাছে এত সহজলভ্য করার বিপদও আছে। পুলিশ অনৈতিক হয়ে পড়ে। অসৎ উপায়ে মানুষকে বিপদে ফেলার একটা অস্ত্র পেয়ে যায় হাতে। সেখান থেকে বিচার বিভাগ, আদালত পর্যন্ত মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। তামাশা করে বলা হয়, আদালতের ইট-কাঠ পর্যন্ত ঘুষ খায়! টাকা ছাড়া কোথাও কিছু হয় না। আজকে যে দুর্নীতিপরায়ণ সমাজটা গড়ে উঠেছে তার পেছনে এগুলোও একটা কারণ। মানুষ যত দিন আত্মশাসন করতে না শিখবে, তত দিন এই প্রবণতাগুলো চলবেই।
আমি একবার গারোদের সঙ্গে বড়দিন ও নববর্ষের উৎসবে ছিলাম। কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী কয়েক রাত ধরে নাচ-গান করেছে। কিন্তু একটুও কোনো অযাচিত ঘটনা ঘটেনি। সাঁওতাল, ওঁরাওদের কারাম উৎসবে গিয়েছি। পানরত সাঁওতাল তরুণ বন্ধুরা সারা রাত উৎসব করার পর খোলা মাঠে নৃত্যের অনুষ্ঠান করেছে। শত শত মাদলের শব্দে উৎসবে কারও এতটুকু তাল কাটেনি। ৫ বছরের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধ—কারও ছন্দে এতটুকু ভুল হয়নি। কোনো মারামারি বা হানাহানির ঘটনা তো হয়ইনি। তবে এটাও ঠিক, আমরা একটু কলহপ্রিয়ও। যেকোনো উৎসবে, এমনকি বিয়েবাড়িতেও অকারণে ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে দিই! উদ্যাপনকে উপভোগ করাও আমাদের শিখতে হবে। আমরা অনেক কিছু শিখিনি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকেই এই বিশৃঙ্খলার সূচনা। আমরা অভিভাবকত্ব চাই বটে, কিন্তু সেটি কখনো সুচারুরূপে পালন করতে পারি না।
২০২৪ সম্পর্কে দুটি কথা বলা প্রয়োজন। আগস্টের অভ্যুত্থানে একটি দুর্নীতিপরায়ণ শাসনব্যবস্থার দ্রুত উৎখাত হলো। আরেকটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা এল। কিন্তু কেন যেন তা সুসংহত হতে পারছে না। যে নাগরিক চেতনার উন্মেষ হওয়ার কথা ছিল, তা হলো না। সংস্কারের মতো দীর্ঘস্থায়ী কর্মসূচি নিয়ে একটা বড় সংকটই সৃষ্টি হলো। আমাদের সে ধৈর্য নেই, তাই এখন সবকিছুর আশু সমাধান হলো একটাই—নির্বাচন। নির্বাচন অতীতে আমাদের স্বস্তি দেয়নি, গত ১৬ বছর তো দেয়ইনি, বরং ছোট ছোট নির্বাচিত ক্ষমতাবানেরা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। তবু এ কথা ঠিক, যদি গণতন্ত্রকে সঠিক মনে করি তাহলে গণপ্রতিনিধিদের দ্বারাই দেশ শাসিত হতে হবে। এখন জনপ্রতিনিধিদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তার সংস্কার কি অল্প দিনে সম্ভব? ইতিহাস থেকে শাসকেরা শিক্ষা নেয় না, এটাই ইতিহাসের বড় শিক্ষা।
আমাদের রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম জড়িয়ে গেছে। আবার ধর্মভিত্তিক দল নানাভাবে বিভক্ত। সম্প্রতি তাবলিগ জামায়াতের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তির ফলাফলে চারটি তাজা প্রাণও চলে গেছে। তবে মানুষ নির্বাচনেই মনে হয় স্বস্তি খুঁজছে। সব দল মিলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে হয়তোবা জনজীবনে সুবাতাস বইতে থাকবে। রাজনীতির এক প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হচ্ছে শিল্প-সাহিত্যের চর্চা। শিল্পের মুক্ত বাতায়নে জীবনের একটা স্বচ্ছ ছবি দেখার আয়োজন। সেখানে একধরনের স্থবিরতা এসেছে। এই স্থবিরতাকে অতিক্রম করা গেলে মানুষের নিরাপত্তা ফিরবে এবং প্রেরণার সৃষ্টি হবে। এই প্রেরণা সৃষ্টি করা কোনো আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। শিল্প-সাহিত্যে চর্চার ফলে সম্ভব।
নাটকের হলগুলোর সংখ্যা এমনিতেই কম। সেসবকে প্রাণবন্ত করে তোলার যে উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তাতে বেশ বিলম্ব হয়ে গেছে। সিনেমা হলগুলোতেও দর্শকের আনাগোনা বাড়াতে হবে। আর্ট গ্যালারিগুলোতে এমনিতে খুব একটা ভিড় দেখা যায় না। তবে শীতকালে ক্রেতা আর দর্শকের একটা আসা-যাওয়া দেখা যেত, এবারে তা-ও নিতান্ত কম। তবে একটু একটু করে বাড়ছে। শীতকাল আমাদের উৎসবের ঋতু। এই ঋতুর আর মাত্র দু-তিন মাস বাকি আছে। দেখা যাক কতটা আশাবাদী হতে পারি।
২০২৫ অবশ্যই আশার বছর। রাজনীতির অনেক মেরুকরণ হবে। শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রেও একটা তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সবটা মিলিয়ে আমরা আশার কথাই বলব, স্বপ্নের মধ্যেই আমাদের জীবন। অনাগত কালটা আমাদের স্বপ্ন সম্ভারে ভরে উঠুক।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন এলাকা বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে রাখাইনের ১৭টি শহরের ভেতর ১৪টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে আরাকান আর্মি দাবি করছে। দখল করা শহরের মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মংডু, বুথিডাং এবং চিন রাজ্যের প
২১ ঘণ্টা আগেরাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের একটি উঁচু ভবনে কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিদ্যুতের লুজ কানেকশন থেকে ওই ঘটনার সূত্রপাত বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। সে সিদ্ধান্তের আলোকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্ম
২১ ঘণ্টা আগেগণ-অভ্যুত্থান যখন আগস্ট থেকে জানুয়ারিতে এসে পা রেখেছে, তখন বিভিন্ন সংগঠনের সৃষ্ট অনেক ঘটনাতেই রাজনৈতিক জটিলতা বেড়ে ওঠার আলামত দেখা যাচ্ছে। যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল মানুষ, আন্দোলন শেষে তা এখন কিছুটা শীতল। আন্দোলনের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে জমে উঠেছে বিতর্ক। যে যার মতো করে নিজেদেরই আন্দোলন
২১ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে বটতলার একজন উকিল ছিলেন। বটতলার হলে কী হবে, তিনি ছিলেন ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ গভর্নর—জবরদস্ত শাসক মোনায়েম খান। তাঁর দাপটে পূর্ব পাকিস্তান ছিল কম্পমান। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের এই স্বৈরশাসক একবার তাঁর ওস্তাদ ‘পাকিস্তানের’ স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের কাছ থেকে হুকুম পান...
২ দিন আগে