চিররঞ্জন সরকার
‘অপরাধ প্রমাণ না-হওয়া অবধি সকলেই নির্দোষ’—এই নীতিকে আমরা লজ্জাকরভাবে বিসর্জন দিয়েছি। একজন সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত ব্যক্তি পেলেই আমরা তাকে ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত করে ঝাঁপিয়ে পড়ছি তার চরিত্র হননে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই কাজটি হচ্ছে ভয়ংকরভাবে। এখানে যেহেতু কোনো সেন্সর নেই, কোনো নিষেধ করার ক্ষমতাওয়ালা কর্তা নেই। তাই যা খুশি বলা যায়, এবং যেকোনো ভাষায় বলা যায়। এই লাইসেন্স পেয়ে সবার আগল খুলে গিয়েছে। অবাধ ইতরামির জন্য কেউ কেউ বেছে নিয়েছে এই সোশ্যাল মিডিয়াকে। অশালীন ভাষা প্রয়োগের উৎসব চলছে। যে যত জঘন্য গালাগাল প্রয়োগ করতে পারে তার লেখায়, সে তত স্মার্ট। সেই লেখার লাইক-কমেন্ট শেয়ার বেশি!
বর্তমানে অনেক মানুষেরই ‘সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল’ হয়ে যাচ্ছে। কারও যদি একটুখানি দোষ খুঁজে বের করা যায়, অমনি সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তার ওপর। ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে-ফেনিয়ে তিলকে তাল করে চলছে গণধোলাই। একজনকে অপমান ও হেয় করে জ্যান্ত মেরে ফেলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার চেয়ে কার্যকরী মাধ্যম দুনিয়ায় আর দ্বিতীয়টি নেই।
একদল ‘ফেসবুক যোদ্ধা’ জন্মেছে, যাদের কাজ এর-ওর-তার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া। কোনো একটা ছুতো পেলেই হলো। অমনি আক্রমণ! যত অশালীন শব্দ ব্যবহার করা যায়। যত নোংরা উপমা, কুযুক্তি, অবান্তর সব তথ্যপ্রমাণ দেওয়া যায়। কেউ প্রশ্ন করবে না। কেউ খারাপ বলবে না। বরং অনেকেই সহমত জানাবে! লাভ ইমো দেবে। ফেসবুক আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু দিয়েছে কাউকে খুঁচিয়ে-কুচিয়ে-কচলিয়ে রক্তাক্ত করবার মহান সুযোগ!
এই সুযোগ পেয়ে আমরা প্রত্যেকেই যেন একেকজন দিগ্বিজয়ী বীর আলেক্সান্ডার! এই ‘যোদ্ধা’দের আক্রমণের লক্ষ্য হতে পারে যে-কেউ। তবে নারী হলে জমে ভালো। আর যদি সে একটু ‘লাস্যময়ী’, ‘আধুনিকা’ কেউ হয়, তবে তো আরও ভালো। ‘আদিরস’ মিশিয়ে নিজেদের যাবতীয় বিকৃতির প্রকাশ ঘটাতে সুবিধে হয়। কিছু কিছু ইতর প্রাণীর যেমন কামড়ানোর সময় বিষাক্ত লালা ঝরে, ঠিক তেমনি এই নব্য ‘ফেসবুক-যোদ্ধা’দের শব্দ এবং বাক্যে এক ধরনের কামনাতাড়িত রোষের বিষাক্ত লালা নিঃসৃত হয়। এই লালার বিষে সেই ব্যক্তি জর্জরিত হয়! এতেই এই ‘ফেসবুক-পোকা’দের আনন্দ!
ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমণির কথাই ধরা যাক। বাসায় মাদক রাখার দায়ে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর গত কয়েক দিন ধরে যা চলছে, তা রীতিমতো অসভ্যতা। পুলিশ-র্যাবের সূত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরীমণির চরিত্র হননের নিরলস চেষ্টা হচ্ছে। তিনি কতটা খারাপ মেয়ে, কতগুলো বিয়ে করেছেন, কতজনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে টাকা কামিয়েছেন, তিনি কত বড় ‘দেহজীবী’, কত বড় মদ্যপ—এমন সব ঘটনার রগরগে বর্ণনায় ভরে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্য মেয়ে হিসেবে পরীমণিকে সাব্যস্ত করার একটা মরিয়া চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
পরীমণির আসল অপরাধ কী? বাসায় মাদকদ্রব্য রাখা, কথিত প্রতারণা, বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানো, নাকি অন্য কিছু? তাঁর আসল অপরাধটা কী? আসল অপরাধের ধারেকাছে না থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় নিয়ে মাতামাতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একজন নারী হিসেবে তিনি কী পোশাক পরেছেন, কীভাবে চলাফেরা করেছেন, কার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন, তা নিয়ে নোংরামির প্রতিযোগিতা চলেছে যেন। একই সঙ্গে চলছে চরিত্রহনন। তাঁর জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিওচিত্র ‘ভাইরাল’ হচ্ছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন গল্প-কাহিনি যোগ করে চেষ্টা করা হচ্ছে তাঁর চরিত্রহননের। তাঁকে নিয়ে মিডিয়ায় যা হচ্ছে, তা ধর্ষণেরই শামিল।
এই ঘটনায় নারীর প্রতি আমাদের সমাজে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিই যেন ফুটে উঠেছে। সেটা হচ্ছে, নারীর কথিত অপরাধকে যৌনতার মোড়কে ঢেকে উপস্থাপন। এই দৃষ্টিভঙ্গির ধারক-বাহকদের কাছে পুরুষের প্রতিপক্ষ একা নারী, মন সেখানে অস্বীকৃত-উপেক্ষিত, কেবল আছে নারীর শরীরটুকু, আর তাঁকে ঘিরে আদিমতার উল্লাস। ‘ভোগের’ সেই উৎসবে শামিল শত-সহস্র-লক্ষ্য জন! নিজেদের অতৃপ্ত যৌন লালসাকে একজন নারীর ওপর ‘আরোপ’ করে বিকৃত আনন্দ লাভের চেষ্টা। এই নারীর বিরুদ্ধে যেহেতু প্রতারণার অভিযোগ আছে, তাই তাঁকে নিয়ে আদি রসাত্মক কথা বলায় অপরাধ নেই। এই মানসিকতা ও বিশ্বাসে মূলধারার মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সবাই যেন বুঁদ হয়ে আছে।
কেউ যদি সত্যিকার অর্থে অপরাধী হয়, সেই অপরাধীর শাস্তি চাওয়া এক জিনিস। আর শাস্তি চাওয়ার নামে নিজেদের বিকৃতির প্রকাশ আরেক জিনিস। এই ‘পুরুষতান্ত্রিক বিকৃতির’ বিরুদ্ধে নারীদের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়নি; বিষয়টি অনেকে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু তারা প্রতিবাদ করারও সাহস পায়নি। প্রথাগত পুরুষতান্ত্রিক বিকৃতির যে সুনামি চলছে, তাতে একজন নারী আরেকজন নারীকে নিয়ে করা নিকৃষ্ট ট্রলের প্রতিবাদ করতে খুব একটা সাহস দেখায় না। প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি আবার তাঁকেও নিশানা করা হয়। তাঁকেও ‘যৌনকর্মী’ হিসেবে দেগে দেওয়া হয়। যদি তাঁরও ব্যক্তিগত জীবন খুঁড়ে কোনো চরিত্রহীনতার আলামত হাজির করা হয়! মেয়েরা তাই ভয়ে কুঁকড়ে থাকে। মানুষের জীবনে তো অনেক রকম ঘটনাই থাকে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকের জীবনেই থাকে লুক্কায়িত নানা অধ্যায়। সেগুলো সব সময় যে ‘চয়েস’ থাকে, তাও নয়। ‘সমাজসিদ্ধ’ পথেও সব ঘটে না। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ সেই সব দুর্বলতাগুলোকে সামনে তুলে এনে সামাজিকভাবে ‘খেলো’ চেষ্টা করেই যায়। এটা যে কত বড় অসভ্যতা, তা কে কাকে বোঝাবে?
আসলে আমরা এক ভয়াবহ বিকারের মধ্যে বসবাস করছি। এখানে এক শ্রেণির মানুষ ধর্মের ব্যাপারে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। কিন্তু নারীদের ব্যাপারে যারপরনাই অসংবেদনশীল। প্রবল নারীবিরোধী মানসিকতা লালন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরুষ যেন এখনো নারীকে কেবল ‘ভোগ্য’ বলেই মনে করে। চার দেয়ালের গণ্ডি পেরিয়ে যারা বাইরে বেরোয়, তাঁদেরই চরিত্রহীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। শিক্ষিত-সচেতন-আধুনিক নারী মানেই তাঁদের কাছে ‘খেলুড়ে।’ সমস্ত যোগ্যতা-দক্ষতাকে অস্বীকার করে তাঁদের ‘দেহজীবী’ হিসেবে দেখা হয়। তাঁরা ‘শরীর দেখিয়ে’, ‘বিছানায় শুয়ে’ যাবতীয় সাফল্য অর্জন করেন বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়। এই শ্রেণির পুরুষেরা নারীকে অপমান-অপদস্থ আর হয়রানি করে আনন্দ পায়। তাঁদের কাছে নারীর অপমান, নির্যাতিত হওয়া, এমনকি ধর্ষণ পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিগত আচরণ ও চরিত্রের ‘সমস্যা’। তাঁর পোশাকের সমস্যা। যুক্তি-বুদ্ধি-কাণ্ডজ্ঞান বিসর্জন দিয়ে আমরা এক অদ্ভুত বিশ্বাসের জগতে বাস করছি। এই ‘বিশ্বাস’ কেবলই নারীকে ‘ভোগ’ করতে, ‘দখল’ করতে, ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতে শেখাচ্ছে। এদের কাছে পুরুষের চোখের ‘পর্দা’ নয়, নারীর শরীরের পর্দা গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়ে তারা গগণবিদারি মাতম তুলছে!
সোশ্যাল মিডিয়া না হয়, ‘আহাম্মকের পাঠশালা’, যেখানে ব্যক্তিগত শিক্ষা, রুচি ও বিবেকই একমাত্র ‘নিয়ন্ত্রক’ বা ছাঁকনি, এখানে কাণ্ডজ্ঞান আশা করা দুরাশা মাত্র। কিন্তু আমাদের মূলধারার মিডিয়াগুলো কী পরীমণি ইস্যুতে দায়িত্বশীল খবর পরিবেশন করতে পেরেছে? মানুষ শিখবে কোত্থেকে? সমাজে রুচিবোধ তৈরি হবে কাদের হাত ধরে? কেবল কাটতি, টিআরপি বাড়ানোর জন্য রগরগে কাহিনি, ‘আপত্তিকর’ ছবি প্রকাশ করা হবে? নীতি-নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হবে?
‘অপরাধ প্রমাণ না-হওয়া অবধি সকলেই নির্দোষ’—এই নীতিকে আমরা লজ্জাকরভাবে বিসর্জন দিয়েছি। একজন সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত ব্যক্তি পেলেই আমরা তাকে ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত করে ঝাঁপিয়ে পড়ছি তার চরিত্র হননে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই কাজটি হচ্ছে ভয়ংকরভাবে। এখানে যেহেতু কোনো সেন্সর নেই, কোনো নিষেধ করার ক্ষমতাওয়ালা কর্তা নেই। তাই যা খুশি বলা যায়, এবং যেকোনো ভাষায় বলা যায়। এই লাইসেন্স পেয়ে সবার আগল খুলে গিয়েছে। অবাধ ইতরামির জন্য কেউ কেউ বেছে নিয়েছে এই সোশ্যাল মিডিয়াকে। অশালীন ভাষা প্রয়োগের উৎসব চলছে। যে যত জঘন্য গালাগাল প্রয়োগ করতে পারে তার লেখায়, সে তত স্মার্ট। সেই লেখার লাইক-কমেন্ট শেয়ার বেশি!
বর্তমানে অনেক মানুষেরই ‘সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল’ হয়ে যাচ্ছে। কারও যদি একটুখানি দোষ খুঁজে বের করা যায়, অমনি সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তার ওপর। ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে-ফেনিয়ে তিলকে তাল করে চলছে গণধোলাই। একজনকে অপমান ও হেয় করে জ্যান্ত মেরে ফেলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার চেয়ে কার্যকরী মাধ্যম দুনিয়ায় আর দ্বিতীয়টি নেই।
একদল ‘ফেসবুক যোদ্ধা’ জন্মেছে, যাদের কাজ এর-ওর-তার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া। কোনো একটা ছুতো পেলেই হলো। অমনি আক্রমণ! যত অশালীন শব্দ ব্যবহার করা যায়। যত নোংরা উপমা, কুযুক্তি, অবান্তর সব তথ্যপ্রমাণ দেওয়া যায়। কেউ প্রশ্ন করবে না। কেউ খারাপ বলবে না। বরং অনেকেই সহমত জানাবে! লাভ ইমো দেবে। ফেসবুক আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু দিয়েছে কাউকে খুঁচিয়ে-কুচিয়ে-কচলিয়ে রক্তাক্ত করবার মহান সুযোগ!
এই সুযোগ পেয়ে আমরা প্রত্যেকেই যেন একেকজন দিগ্বিজয়ী বীর আলেক্সান্ডার! এই ‘যোদ্ধা’দের আক্রমণের লক্ষ্য হতে পারে যে-কেউ। তবে নারী হলে জমে ভালো। আর যদি সে একটু ‘লাস্যময়ী’, ‘আধুনিকা’ কেউ হয়, তবে তো আরও ভালো। ‘আদিরস’ মিশিয়ে নিজেদের যাবতীয় বিকৃতির প্রকাশ ঘটাতে সুবিধে হয়। কিছু কিছু ইতর প্রাণীর যেমন কামড়ানোর সময় বিষাক্ত লালা ঝরে, ঠিক তেমনি এই নব্য ‘ফেসবুক-যোদ্ধা’দের শব্দ এবং বাক্যে এক ধরনের কামনাতাড়িত রোষের বিষাক্ত লালা নিঃসৃত হয়। এই লালার বিষে সেই ব্যক্তি জর্জরিত হয়! এতেই এই ‘ফেসবুক-পোকা’দের আনন্দ!
ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমণির কথাই ধরা যাক। বাসায় মাদক রাখার দায়ে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর গত কয়েক দিন ধরে যা চলছে, তা রীতিমতো অসভ্যতা। পুলিশ-র্যাবের সূত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরীমণির চরিত্র হননের নিরলস চেষ্টা হচ্ছে। তিনি কতটা খারাপ মেয়ে, কতগুলো বিয়ে করেছেন, কতজনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে টাকা কামিয়েছেন, তিনি কত বড় ‘দেহজীবী’, কত বড় মদ্যপ—এমন সব ঘটনার রগরগে বর্ণনায় ভরে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্য মেয়ে হিসেবে পরীমণিকে সাব্যস্ত করার একটা মরিয়া চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
পরীমণির আসল অপরাধ কী? বাসায় মাদকদ্রব্য রাখা, কথিত প্রতারণা, বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানো, নাকি অন্য কিছু? তাঁর আসল অপরাধটা কী? আসল অপরাধের ধারেকাছে না থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় নিয়ে মাতামাতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একজন নারী হিসেবে তিনি কী পোশাক পরেছেন, কীভাবে চলাফেরা করেছেন, কার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন, তা নিয়ে নোংরামির প্রতিযোগিতা চলেছে যেন। একই সঙ্গে চলছে চরিত্রহনন। তাঁর জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিওচিত্র ‘ভাইরাল’ হচ্ছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন গল্প-কাহিনি যোগ করে চেষ্টা করা হচ্ছে তাঁর চরিত্রহননের। তাঁকে নিয়ে মিডিয়ায় যা হচ্ছে, তা ধর্ষণেরই শামিল।
এই ঘটনায় নারীর প্রতি আমাদের সমাজে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিই যেন ফুটে উঠেছে। সেটা হচ্ছে, নারীর কথিত অপরাধকে যৌনতার মোড়কে ঢেকে উপস্থাপন। এই দৃষ্টিভঙ্গির ধারক-বাহকদের কাছে পুরুষের প্রতিপক্ষ একা নারী, মন সেখানে অস্বীকৃত-উপেক্ষিত, কেবল আছে নারীর শরীরটুকু, আর তাঁকে ঘিরে আদিমতার উল্লাস। ‘ভোগের’ সেই উৎসবে শামিল শত-সহস্র-লক্ষ্য জন! নিজেদের অতৃপ্ত যৌন লালসাকে একজন নারীর ওপর ‘আরোপ’ করে বিকৃত আনন্দ লাভের চেষ্টা। এই নারীর বিরুদ্ধে যেহেতু প্রতারণার অভিযোগ আছে, তাই তাঁকে নিয়ে আদি রসাত্মক কথা বলায় অপরাধ নেই। এই মানসিকতা ও বিশ্বাসে মূলধারার মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সবাই যেন বুঁদ হয়ে আছে।
কেউ যদি সত্যিকার অর্থে অপরাধী হয়, সেই অপরাধীর শাস্তি চাওয়া এক জিনিস। আর শাস্তি চাওয়ার নামে নিজেদের বিকৃতির প্রকাশ আরেক জিনিস। এই ‘পুরুষতান্ত্রিক বিকৃতির’ বিরুদ্ধে নারীদের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়নি; বিষয়টি অনেকে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু তারা প্রতিবাদ করারও সাহস পায়নি। প্রথাগত পুরুষতান্ত্রিক বিকৃতির যে সুনামি চলছে, তাতে একজন নারী আরেকজন নারীকে নিয়ে করা নিকৃষ্ট ট্রলের প্রতিবাদ করতে খুব একটা সাহস দেখায় না। প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি আবার তাঁকেও নিশানা করা হয়। তাঁকেও ‘যৌনকর্মী’ হিসেবে দেগে দেওয়া হয়। যদি তাঁরও ব্যক্তিগত জীবন খুঁড়ে কোনো চরিত্রহীনতার আলামত হাজির করা হয়! মেয়েরা তাই ভয়ে কুঁকড়ে থাকে। মানুষের জীবনে তো অনেক রকম ঘটনাই থাকে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকের জীবনেই থাকে লুক্কায়িত নানা অধ্যায়। সেগুলো সব সময় যে ‘চয়েস’ থাকে, তাও নয়। ‘সমাজসিদ্ধ’ পথেও সব ঘটে না। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ সেই সব দুর্বলতাগুলোকে সামনে তুলে এনে সামাজিকভাবে ‘খেলো’ চেষ্টা করেই যায়। এটা যে কত বড় অসভ্যতা, তা কে কাকে বোঝাবে?
আসলে আমরা এক ভয়াবহ বিকারের মধ্যে বসবাস করছি। এখানে এক শ্রেণির মানুষ ধর্মের ব্যাপারে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। কিন্তু নারীদের ব্যাপারে যারপরনাই অসংবেদনশীল। প্রবল নারীবিরোধী মানসিকতা লালন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরুষ যেন এখনো নারীকে কেবল ‘ভোগ্য’ বলেই মনে করে। চার দেয়ালের গণ্ডি পেরিয়ে যারা বাইরে বেরোয়, তাঁদেরই চরিত্রহীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। শিক্ষিত-সচেতন-আধুনিক নারী মানেই তাঁদের কাছে ‘খেলুড়ে।’ সমস্ত যোগ্যতা-দক্ষতাকে অস্বীকার করে তাঁদের ‘দেহজীবী’ হিসেবে দেখা হয়। তাঁরা ‘শরীর দেখিয়ে’, ‘বিছানায় শুয়ে’ যাবতীয় সাফল্য অর্জন করেন বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়। এই শ্রেণির পুরুষেরা নারীকে অপমান-অপদস্থ আর হয়রানি করে আনন্দ পায়। তাঁদের কাছে নারীর অপমান, নির্যাতিত হওয়া, এমনকি ধর্ষণ পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিগত আচরণ ও চরিত্রের ‘সমস্যা’। তাঁর পোশাকের সমস্যা। যুক্তি-বুদ্ধি-কাণ্ডজ্ঞান বিসর্জন দিয়ে আমরা এক অদ্ভুত বিশ্বাসের জগতে বাস করছি। এই ‘বিশ্বাস’ কেবলই নারীকে ‘ভোগ’ করতে, ‘দখল’ করতে, ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতে শেখাচ্ছে। এদের কাছে পুরুষের চোখের ‘পর্দা’ নয়, নারীর শরীরের পর্দা গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়ে তারা গগণবিদারি মাতম তুলছে!
সোশ্যাল মিডিয়া না হয়, ‘আহাম্মকের পাঠশালা’, যেখানে ব্যক্তিগত শিক্ষা, রুচি ও বিবেকই একমাত্র ‘নিয়ন্ত্রক’ বা ছাঁকনি, এখানে কাণ্ডজ্ঞান আশা করা দুরাশা মাত্র। কিন্তু আমাদের মূলধারার মিডিয়াগুলো কী পরীমণি ইস্যুতে দায়িত্বশীল খবর পরিবেশন করতে পেরেছে? মানুষ শিখবে কোত্থেকে? সমাজে রুচিবোধ তৈরি হবে কাদের হাত ধরে? কেবল কাটতি, টিআরপি বাড়ানোর জন্য রগরগে কাহিনি, ‘আপত্তিকর’ ছবি প্রকাশ করা হবে? নীতি-নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হবে?
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নাম জুড়ে দিয়ে ওই তিন দলসহ মোট ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে রিট করার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। ১১টি দলের তালিকায় এলডিপির নামও
৬ ঘণ্টা আগেঅত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এই লেখাটা লিখছি। রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ে অন্য একটি প্রবন্ধ লিখব বলে ভেবেছিলাম। গত রোববার থেকেই বুকের মধ্যে কেমন যেন পাথরচাপা একটা কষ্ট অনুভব করছি। প্রথমে টেলিভিশনে খবরে দেখলাম, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তিন ছাত্র মারা গেছেন। যে তিন ছাত্র মারা গেছেন, তাঁদের সমবয়সী হবে
৬ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় বহুল পরিচিত একটি শব্দ হলো কালাজ্বর। শব্দটি কমবেশি আমরা সবাই শুনেছি। এমনকি কেউ কেউ কালাজ্বরে আক্রান্তও হয়েছি। কিন্তু এই জ্বরকে কালাজ্বর কেন বলা হয়? কালো রঙের সঙ্গে এর কি কোনো সম্পর্ক রয়েছে? জ্বরের প্রকারভেদে রঙের কি আদৌ কোনো ভূমিকা রয়েছে? যদি না থাকে তাহলে প্রশ্ন হলো, কেন এ জ্বরকে কালাজ্ব
৬ ঘণ্টা আগেসাংবাদিকদের হয়রানি করা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থল ও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের ইমিগ্রেশনে যেভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, তা কেবল পেশাগত বাধার উদাহরণ নয়, এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তার ওপর একধরনের চাপ। এই ধরনের আচরণ রাষ্ট্রের মৌলিক চেতনা ও মানব
৬ ঘণ্টা আগে