এম এম আকাশ
স্বাধীনতা সহজে পাওয়া যায় না। বীরের রক্তস্রোতোধারা, মাতার দুঃখ, কন্যার অশ্রু এবং অসংখ্য মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্ভোগ তথা আত্মত্যাগের মাধ্যমেই সর্বত্র স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং অর্জিত স্বাধীনতাও এর ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু তার চেয়েও বড় সত্য হচ্ছে স্বাধীনতা রক্ষা করা, তাকে অর্থবহ করা এবং তাকে আরও গৌরবদীপ্ত করে সব নাগরিকের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করা। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে সেটি শতগুণ কঠিন কাজ। স্বাধীনতা যদি নিছক পতাকা বদল, মানচিত্র বদল, ক্ষমতার হাতবদল হতো, তাহলে স্বাধীনতা অর্জনের পর তাকে ফলপ্রসূ করাটা তেমন কোনো কঠিন কাজ হতো না। স্বাধীনতা বলতে আমরা তখন বোঝাতাম প্রাপ্ত উত্তরাধিকারের ‘রূপান্তর’, মর্মের পরিবর্তন নয়। কিন্তু আমাদের প্রিয় স্বদেশ যে বৈপ্লবিক মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তা শুধু ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্রের বাহ্যিক রূপ পরিবর্তনের জন্য নয়। সেটা সত্য হলে সেদিন এত রক্তক্ষয়ের প্রয়োজন হতো না। আমরা মুজিব-ইয়াহিয়ার বৈঠক থেকেই একটা আপসরফা করেই চলতে পারতাম। অথবা খোন্দকার মোশতাক ও আমেরিকানদের পরামর্শানুসারে স্বাধীনতার বদলে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করেই সন্তুষ্ট হতাম।
আসলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল মৌলিক অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। নতুন একটি জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের জন্য। আকাঙ্ক্ষাটা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু পথটা স্পষ্ট জানা ছিল না।
৫০ বছরে এসে প্রশ্ন, এই জন্মকালীন প্রত্যাশা কি পূরণ হয়েছে? এ কথা ঠিক যে বাংলাদেশ টিকে আছে এবং নানা দিক থেকে এগিয়েও যাচ্ছে। হেনরি কিসিঞ্জাররা যেমন বলেছিলেন ‘বাংলাদেশ একটি তলাহীন ঝুড়ি’, তেমনটি ইতিহাসে সত্য হয়নি। কিন্তু এ কথাও সত্য যে, আমরা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে শোষণহীন সমাজ কায়েম করতে পারিনি।
শ্রমিক-কৃষকের মুখে আজ পর্যন্ত আনন্দের হাসি ফুটে ওঠেনি। আজও ধর্মীয় ভণ্ডামি, কূপমণ্ডূকতা এবং কখনো কখনো উগ্র ফ্যাসিবাদ এ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সাহস পাচ্ছে অবলীলাক্রমে। গণতন্ত্র আজ সন্ত্রাসের জাঁতাকলে এবং অর্থের দাপটে বড়ই কাতর। তাই এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে অর্জিত স্বাধীনতাকে এখনো আমরা জনগণের মুক্তিতে পরিণত করতে পারিনি।
এ কথা ঠিক যে বাংলাদেশে আজ একধরনের পুঁজিবাদী বিকাশ হচ্ছে। এই বিকাশের একই সঙ্গে দুটি রূপ দেখা যায়। একদিকে বাংলাদেশ পৃথিবীতে হয়তো অচিরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাকশিল্পের অধিকারী হতে চলেছে, পদ্মার ওপর ব্রিজ ও মেট্রোরেল তৈরি হবে, অন্যদিকে সেই পোশাকশিল্পেই বাংলাদেশে মজুরি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে কম। যে জায়গায় খরচ হওয়ার কথা ১ টাকা, সেখানে খরচ হয়েছে ৩ টাকা! আলোর পাশেই অন্ধকার—পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের নিয়মই তাই।
‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহারে’ পুঁজিবাদী বিকাশের ঐতিহাসিক ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো মার্ক্স যে ভাষায় প্রায় ১৬০ বছর আগে বর্ণনা করে গিয়েছিলেন, আজও বাংলাদেশে তা মোটা দাগে সত্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে—মার্ক্স লিখেছিলেন:
১. ‘নিজেদের প্রস্তুত মালের জন্য অবিরত বর্ধমান এক বাজারের তাগিদ বুর্জোয়া শ্রেণিকে সারা পৃথিবীময় দৌড় করিয়ে বেড়ায়’।
তেমনটিই কি বাংলাদেশে আজ হচ্ছে না?
মার্ক্স ভেবেছিলেন, পুঁজির এই আন্তর্জাতিক চরিত্র মনোজগতেও আন্তর্জাতিক চিন্তা-ভাবনার প্রসার ঘটাবে। মার্ক্স ওই একই পুস্তিকায় লিখেছিলেন:
২. ‘আগেকার স্থানীয় ও জাতীয় বিচ্ছিন্নতা ও স্বপর্যাপ্তির বদলে পাচ্ছি সর্বক্ষেত্রেই আদান-প্রদান, বিশ্বজোড়া পরস্পর নির্ভরতা। বৈষয়িক উৎপাদনে যেমন, তেমনি মনীষার ক্ষেত্রেও।’
বাংলাদেশে কি সে রকম হচ্ছে? এখানে তো চিন্তার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ধর্মীয় মৌলবাদীরাই বহাল তবিয়তে বিকশিত হচ্ছে! কিন্তু মনোযোগ দিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে বাংলাদেশের মৌলবাদীদের মধ্যে দুটি ধারা বিদ্যমান। একটি দেওবন্দি মাদ্রাসাভিত্তিক হেফাজতি ধারা। এটি প্রাচীনপন্থী এবং বিলীয়মান। পুঁজিবাদ সম্ভবত দ্রুতই এদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা আরেক ধরনের মৌলবাদেরও সাক্ষাৎ পাই, যাকে আমি নাম দিতে চাই ‘আধুনিক পুঁজিবাদী মৌলবাদ’।
এটির মূল হোতা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী। এই দল মৌলবাদী, কিন্তু ভয়ানক ধূর্ত ও কৌশলী একটি দল। এই দলের সঙ্গে পুঁজিবাদের কোনো শত্রুতা নেই। তাদের অনেক নেতাই পুঁজিপতি। আমেরিকানরা এই দলকে দেশে দেশে ব্যবহার করেছে প্রগতিশীলদের বিরুদ্ধে বহুবার। এ জন্যই স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন একসময় বাংলাদেশের জামায়াতকে ‘মডারেট মুসলিম’ দলের সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। এরা মূলত বিএনপির ধর্মভিত্তিক ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদকে পছন্দ করলেও সুবিধা দেখলে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদকেও নিজেদের কাজে লাগায়। তাদের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করলে আপনি দেখবেন সেখানে একটি সহযোগী সদস্যপদের ফরম আছে এবং সেটি অমুসলমানদের জন্যও উন্মুক্ত বলে দাবি করা হয়েছে। সেখানে যদিও প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা হয়েছে, কিন্তু পরে দরখাস্তের ভেতরে তাকে যেসব শর্ত পূরণের কথা বলা হয়েছে, তাতে কোথাও সুনির্দিষ্টভাবে ‘ইসলাম’ ধর্মের কোনো কথাই নেই!
জামায়াত আসলে সুকৌশলে প্রথমে নিরীহ একটি বক্তব্য দিয়ে সহযোগী সদস্য সংগ্রহ করে ধাপে ধাপে মগজধোলাই করে অবশেষে রগকাটা জঙ্গি ক্যাডার তৈরি করে থাকে।
মশিউল আলম লিখিত গ্রন্থ ‘উইকিলিকসে বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায় যে এই দলের অন্যতম নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে গিয়ে আগেই ‘মিনতি’ জানিয়ে এসেছেন যে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র খর্ব করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হলে তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সুযোগ থাকবে না এবং নাইন–ইলেভেনের মতো জঙ্গি তৎপরতা তখন বৃদ্ধি পেতে পারে, যেটা আমেরিকার জন্যও ক্ষতিকর হবে আর সে জন্যই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উচিত হবে আওয়ামী লীগকে বোঝানো, যাতে জামায়াতকে বেআইনি করা না হয়।
কিন্তু জামায়াত কি গণতান্ত্রিক দল? মার্কিনরা কি নাৎসি দলকে গণতান্ত্রিক দল বলে? মনে রাখা উচিত, জামায়াত এমন একটি দল, যেখানে তৈরি হয়েছিল ’৭১-এর
খুনিরা। যে দল এখনো ’৭১-এ তাদের ভূমিকাকে কোনো অন্যায় বলে মনে করে না এবং জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতাও আমাদের অজানা নয়। জামায়াতের শাখা–প্রশাখাও
বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে। তাই যখন বাংলাদেশে জামায়াত নেতা নিজামীর ফাঁসির আদেশ ঘোষিত হয়, তখন দেখা গেল পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামের আমির সিরাজুল হক ভুল তথ্য উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়ে তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
আমাদের দেশে একটি প্রচলিত ভুল তথ্য চালু আছে যে, বঙ্গবন্ধু দালালদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল, তারা অধিকাংশই বন্দী ছিলেন এবং কারও কারও ক্ষেত্রে বিচারও শুরু হয়েছিল। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতা কবজা করার পর, একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও এই দালালদের কারামুক্তি দিয়ে সমাজ-রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেন। আর মুক্ত হওয়ার পর এরা দক্ষতার সঙ্গে সংগঠন ও নিজস্ব পুঁজির বিকাশ ঘটিয়েছে।
যদিও এ কথা সত্য যে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে অপরাধী’ অনেক জামায়াত নেতার বিচার ও ফাঁসি হয়েছে। সংগঠন হিসেবে তাদের প্রকাশ্য কার্যকলাপও এখন দৃশ্যমান নয়। কিন্তু নাগরিক সমাজে তাদের যেসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ছিল, (যার একটি তালিকা ড. আবুল বারকাতের লেখায় আছে) তা আজও বিদ্যমান আছে এবং তারা বাড়ছেও। আজ তাই নিছক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক বিকাশের অভিঘাতে বাংলাদেশ থেকে একটি সামন্ত অবশেষের মতো জামায়াতের অবশিষ্ট অভিশাপ দূর হবে না। বরং মৌলবাদী ধর্মীয় চিন্তা যখন পুঁজি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে সামনে এগোয়, তখন তাকে কিছুতেই খাটো করে নিছক সামন্তবাদের অবশেষ হিসেবে দেখলে চলবে না। ভারতে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান, আল-কায়েদার ধিকি ধিকি উপস্থিতি এবং আফগানিস্তানে তালেবানদের জনপ্রিয় উত্থান ইত্যাদি দেখে সেই আশঙ্কা পুনরায় ফিরে এসেছে। বিচার ও শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবেও জামায়াতকে পরাজিত করতে হবে। আজকের যুগে পুঁজিবাদের যে অস্বাস্থ্যকর ও অগণতান্ত্রিক চরিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে বোঝা যায় যে সেই চিরায়ত আত্মশক্তি সে ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে।
এ কথা সত্য যে বর্তমান পুঁজিবাদের অজস্র সীমাবদ্ধতা আছে, আছে ব্যাংকের দলীয়করণ ও দুর্নীতি, আছে অর্থ বিদেশে পাচারের সমস্যা, আছে বিদ্যুৎ-বন্দর-গ্যাসের সংকট, আছে বৈষম্য ও সুশাসনের সমস্যা, আছে আমলাতন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, অস্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রহীনতা, আর এগুলো ‘জামায়াতে ইসলামী’ও বোঝে। তাই সে পুঁজিবাদে বিশ্বাস করলেও সেই সব ব্যবসার সঙ্গে তলে তলে জড়িত থাকলেও ওপরে-ওপরে তার স্লোগান হচ্ছে ‘সৎ লোকের শাসনে কল্যাণকর অর্থনীতি’ চাই। লক্ষ করুন, বর্তমান শাসক দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি জামায়াত গ্রহণ করেছে, শুধু তার আগে জুড়ে দিয়েছে ‘সৎ লোকের শাসন’। এটাই তার প্রোপাগান্ডার প্রধান কৌশল।
আমার মনে হয় বর্তমান শাসক দল আওয়ামী লীগে যদি অসৎ লোকদের প্রভাব বাড়তে থাকে এবং কল্যাণমূলক (প্রধানত অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান) প্রকল্পগুলো যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এ দেশে ‘অসহায় দরিদ্র’ ও ‘লুটেরা ধনীরা’ সংখ্যায় আরও বাড়বে। জামায়াতও ক্রমাগত ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এই ভয়ংকর পরিণতি রোধ করতে হলে এখন থেকেই প্রগতিশীলদের এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তিকে স্বাধীনতা সংহত করার লক্ষ্যে ইতিবাচক সাফল্যের পাল্টা দৃষ্টান্তও স্থাপন করতে হবে। লুটেরাদের দমন এবং ইহলোকেই দরিদ্রদের মুক্তির ব্যবস্থা করা যে সম্ভব, তা প্রমাণ করতে হবে। এই বিকল্পের সংগ্রামগ্রাহ্য করতে হবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, এমনকি ধর্মের ক্ষেত্রেও কুসংস্কার ও মিথ্যা ব্যাখ্যার (যেমন নারীকে হেয় করা ইত্যাদি) বিপরীতে রুখে দাঁড়াতে হবে এখনই। প্রগতিশীল মধ্যবিত্তকে এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। বুর্জোয়া-ধনী-ব্যবসায়ী যারা টাকা বানানোয় ব্যস্ত, তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। সময় হয়েছে শহীদদের ঋণের কথা ভেবে আরেকবার উঠে দাঁড়াবার। করোনার মধ্যে যাঁরা অন্যদের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে এই লেখা এখানেই শেষ করছি।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান
স্বাধীনতা সহজে পাওয়া যায় না। বীরের রক্তস্রোতোধারা, মাতার দুঃখ, কন্যার অশ্রু এবং অসংখ্য মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্ভোগ তথা আত্মত্যাগের মাধ্যমেই সর্বত্র স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং অর্জিত স্বাধীনতাও এর ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু তার চেয়েও বড় সত্য হচ্ছে স্বাধীনতা রক্ষা করা, তাকে অর্থবহ করা এবং তাকে আরও গৌরবদীপ্ত করে সব নাগরিকের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করা। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে সেটি শতগুণ কঠিন কাজ। স্বাধীনতা যদি নিছক পতাকা বদল, মানচিত্র বদল, ক্ষমতার হাতবদল হতো, তাহলে স্বাধীনতা অর্জনের পর তাকে ফলপ্রসূ করাটা তেমন কোনো কঠিন কাজ হতো না। স্বাধীনতা বলতে আমরা তখন বোঝাতাম প্রাপ্ত উত্তরাধিকারের ‘রূপান্তর’, মর্মের পরিবর্তন নয়। কিন্তু আমাদের প্রিয় স্বদেশ যে বৈপ্লবিক মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তা শুধু ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্রের বাহ্যিক রূপ পরিবর্তনের জন্য নয়। সেটা সত্য হলে সেদিন এত রক্তক্ষয়ের প্রয়োজন হতো না। আমরা মুজিব-ইয়াহিয়ার বৈঠক থেকেই একটা আপসরফা করেই চলতে পারতাম। অথবা খোন্দকার মোশতাক ও আমেরিকানদের পরামর্শানুসারে স্বাধীনতার বদলে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করেই সন্তুষ্ট হতাম।
আসলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল মৌলিক অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। নতুন একটি জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের জন্য। আকাঙ্ক্ষাটা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু পথটা স্পষ্ট জানা ছিল না।
৫০ বছরে এসে প্রশ্ন, এই জন্মকালীন প্রত্যাশা কি পূরণ হয়েছে? এ কথা ঠিক যে বাংলাদেশ টিকে আছে এবং নানা দিক থেকে এগিয়েও যাচ্ছে। হেনরি কিসিঞ্জাররা যেমন বলেছিলেন ‘বাংলাদেশ একটি তলাহীন ঝুড়ি’, তেমনটি ইতিহাসে সত্য হয়নি। কিন্তু এ কথাও সত্য যে, আমরা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে শোষণহীন সমাজ কায়েম করতে পারিনি।
শ্রমিক-কৃষকের মুখে আজ পর্যন্ত আনন্দের হাসি ফুটে ওঠেনি। আজও ধর্মীয় ভণ্ডামি, কূপমণ্ডূকতা এবং কখনো কখনো উগ্র ফ্যাসিবাদ এ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সাহস পাচ্ছে অবলীলাক্রমে। গণতন্ত্র আজ সন্ত্রাসের জাঁতাকলে এবং অর্থের দাপটে বড়ই কাতর। তাই এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে অর্জিত স্বাধীনতাকে এখনো আমরা জনগণের মুক্তিতে পরিণত করতে পারিনি।
এ কথা ঠিক যে বাংলাদেশে আজ একধরনের পুঁজিবাদী বিকাশ হচ্ছে। এই বিকাশের একই সঙ্গে দুটি রূপ দেখা যায়। একদিকে বাংলাদেশ পৃথিবীতে হয়তো অচিরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাকশিল্পের অধিকারী হতে চলেছে, পদ্মার ওপর ব্রিজ ও মেট্রোরেল তৈরি হবে, অন্যদিকে সেই পোশাকশিল্পেই বাংলাদেশে মজুরি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে কম। যে জায়গায় খরচ হওয়ার কথা ১ টাকা, সেখানে খরচ হয়েছে ৩ টাকা! আলোর পাশেই অন্ধকার—পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের নিয়মই তাই।
‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহারে’ পুঁজিবাদী বিকাশের ঐতিহাসিক ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো মার্ক্স যে ভাষায় প্রায় ১৬০ বছর আগে বর্ণনা করে গিয়েছিলেন, আজও বাংলাদেশে তা মোটা দাগে সত্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে—মার্ক্স লিখেছিলেন:
১. ‘নিজেদের প্রস্তুত মালের জন্য অবিরত বর্ধমান এক বাজারের তাগিদ বুর্জোয়া শ্রেণিকে সারা পৃথিবীময় দৌড় করিয়ে বেড়ায়’।
তেমনটিই কি বাংলাদেশে আজ হচ্ছে না?
মার্ক্স ভেবেছিলেন, পুঁজির এই আন্তর্জাতিক চরিত্র মনোজগতেও আন্তর্জাতিক চিন্তা-ভাবনার প্রসার ঘটাবে। মার্ক্স ওই একই পুস্তিকায় লিখেছিলেন:
২. ‘আগেকার স্থানীয় ও জাতীয় বিচ্ছিন্নতা ও স্বপর্যাপ্তির বদলে পাচ্ছি সর্বক্ষেত্রেই আদান-প্রদান, বিশ্বজোড়া পরস্পর নির্ভরতা। বৈষয়িক উৎপাদনে যেমন, তেমনি মনীষার ক্ষেত্রেও।’
বাংলাদেশে কি সে রকম হচ্ছে? এখানে তো চিন্তার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ধর্মীয় মৌলবাদীরাই বহাল তবিয়তে বিকশিত হচ্ছে! কিন্তু মনোযোগ দিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে বাংলাদেশের মৌলবাদীদের মধ্যে দুটি ধারা বিদ্যমান। একটি দেওবন্দি মাদ্রাসাভিত্তিক হেফাজতি ধারা। এটি প্রাচীনপন্থী এবং বিলীয়মান। পুঁজিবাদ সম্ভবত দ্রুতই এদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা আরেক ধরনের মৌলবাদেরও সাক্ষাৎ পাই, যাকে আমি নাম দিতে চাই ‘আধুনিক পুঁজিবাদী মৌলবাদ’।
এটির মূল হোতা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী। এই দল মৌলবাদী, কিন্তু ভয়ানক ধূর্ত ও কৌশলী একটি দল। এই দলের সঙ্গে পুঁজিবাদের কোনো শত্রুতা নেই। তাদের অনেক নেতাই পুঁজিপতি। আমেরিকানরা এই দলকে দেশে দেশে ব্যবহার করেছে প্রগতিশীলদের বিরুদ্ধে বহুবার। এ জন্যই স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন একসময় বাংলাদেশের জামায়াতকে ‘মডারেট মুসলিম’ দলের সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। এরা মূলত বিএনপির ধর্মভিত্তিক ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদকে পছন্দ করলেও সুবিধা দেখলে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদকেও নিজেদের কাজে লাগায়। তাদের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করলে আপনি দেখবেন সেখানে একটি সহযোগী সদস্যপদের ফরম আছে এবং সেটি অমুসলমানদের জন্যও উন্মুক্ত বলে দাবি করা হয়েছে। সেখানে যদিও প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা হয়েছে, কিন্তু পরে দরখাস্তের ভেতরে তাকে যেসব শর্ত পূরণের কথা বলা হয়েছে, তাতে কোথাও সুনির্দিষ্টভাবে ‘ইসলাম’ ধর্মের কোনো কথাই নেই!
জামায়াত আসলে সুকৌশলে প্রথমে নিরীহ একটি বক্তব্য দিয়ে সহযোগী সদস্য সংগ্রহ করে ধাপে ধাপে মগজধোলাই করে অবশেষে রগকাটা জঙ্গি ক্যাডার তৈরি করে থাকে।
মশিউল আলম লিখিত গ্রন্থ ‘উইকিলিকসে বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায় যে এই দলের অন্যতম নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে গিয়ে আগেই ‘মিনতি’ জানিয়ে এসেছেন যে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র খর্ব করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হলে তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সুযোগ থাকবে না এবং নাইন–ইলেভেনের মতো জঙ্গি তৎপরতা তখন বৃদ্ধি পেতে পারে, যেটা আমেরিকার জন্যও ক্ষতিকর হবে আর সে জন্যই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উচিত হবে আওয়ামী লীগকে বোঝানো, যাতে জামায়াতকে বেআইনি করা না হয়।
কিন্তু জামায়াত কি গণতান্ত্রিক দল? মার্কিনরা কি নাৎসি দলকে গণতান্ত্রিক দল বলে? মনে রাখা উচিত, জামায়াত এমন একটি দল, যেখানে তৈরি হয়েছিল ’৭১-এর
খুনিরা। যে দল এখনো ’৭১-এ তাদের ভূমিকাকে কোনো অন্যায় বলে মনে করে না এবং জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতাও আমাদের অজানা নয়। জামায়াতের শাখা–প্রশাখাও
বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে। তাই যখন বাংলাদেশে জামায়াত নেতা নিজামীর ফাঁসির আদেশ ঘোষিত হয়, তখন দেখা গেল পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামের আমির সিরাজুল হক ভুল তথ্য উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়ে তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
আমাদের দেশে একটি প্রচলিত ভুল তথ্য চালু আছে যে, বঙ্গবন্ধু দালালদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল, তারা অধিকাংশই বন্দী ছিলেন এবং কারও কারও ক্ষেত্রে বিচারও শুরু হয়েছিল। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতা কবজা করার পর, একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও এই দালালদের কারামুক্তি দিয়ে সমাজ-রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেন। আর মুক্ত হওয়ার পর এরা দক্ষতার সঙ্গে সংগঠন ও নিজস্ব পুঁজির বিকাশ ঘটিয়েছে।
যদিও এ কথা সত্য যে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে অপরাধী’ অনেক জামায়াত নেতার বিচার ও ফাঁসি হয়েছে। সংগঠন হিসেবে তাদের প্রকাশ্য কার্যকলাপও এখন দৃশ্যমান নয়। কিন্তু নাগরিক সমাজে তাদের যেসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ছিল, (যার একটি তালিকা ড. আবুল বারকাতের লেখায় আছে) তা আজও বিদ্যমান আছে এবং তারা বাড়ছেও। আজ তাই নিছক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক বিকাশের অভিঘাতে বাংলাদেশ থেকে একটি সামন্ত অবশেষের মতো জামায়াতের অবশিষ্ট অভিশাপ দূর হবে না। বরং মৌলবাদী ধর্মীয় চিন্তা যখন পুঁজি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে সামনে এগোয়, তখন তাকে কিছুতেই খাটো করে নিছক সামন্তবাদের অবশেষ হিসেবে দেখলে চলবে না। ভারতে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান, আল-কায়েদার ধিকি ধিকি উপস্থিতি এবং আফগানিস্তানে তালেবানদের জনপ্রিয় উত্থান ইত্যাদি দেখে সেই আশঙ্কা পুনরায় ফিরে এসেছে। বিচার ও শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবেও জামায়াতকে পরাজিত করতে হবে। আজকের যুগে পুঁজিবাদের যে অস্বাস্থ্যকর ও অগণতান্ত্রিক চরিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে বোঝা যায় যে সেই চিরায়ত আত্মশক্তি সে ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে।
এ কথা সত্য যে বর্তমান পুঁজিবাদের অজস্র সীমাবদ্ধতা আছে, আছে ব্যাংকের দলীয়করণ ও দুর্নীতি, আছে অর্থ বিদেশে পাচারের সমস্যা, আছে বিদ্যুৎ-বন্দর-গ্যাসের সংকট, আছে বৈষম্য ও সুশাসনের সমস্যা, আছে আমলাতন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, অস্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রহীনতা, আর এগুলো ‘জামায়াতে ইসলামী’ও বোঝে। তাই সে পুঁজিবাদে বিশ্বাস করলেও সেই সব ব্যবসার সঙ্গে তলে তলে জড়িত থাকলেও ওপরে-ওপরে তার স্লোগান হচ্ছে ‘সৎ লোকের শাসনে কল্যাণকর অর্থনীতি’ চাই। লক্ষ করুন, বর্তমান শাসক দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি জামায়াত গ্রহণ করেছে, শুধু তার আগে জুড়ে দিয়েছে ‘সৎ লোকের শাসন’। এটাই তার প্রোপাগান্ডার প্রধান কৌশল।
আমার মনে হয় বর্তমান শাসক দল আওয়ামী লীগে যদি অসৎ লোকদের প্রভাব বাড়তে থাকে এবং কল্যাণমূলক (প্রধানত অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান) প্রকল্পগুলো যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এ দেশে ‘অসহায় দরিদ্র’ ও ‘লুটেরা ধনীরা’ সংখ্যায় আরও বাড়বে। জামায়াতও ক্রমাগত ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এই ভয়ংকর পরিণতি রোধ করতে হলে এখন থেকেই প্রগতিশীলদের এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তিকে স্বাধীনতা সংহত করার লক্ষ্যে ইতিবাচক সাফল্যের পাল্টা দৃষ্টান্তও স্থাপন করতে হবে। লুটেরাদের দমন এবং ইহলোকেই দরিদ্রদের মুক্তির ব্যবস্থা করা যে সম্ভব, তা প্রমাণ করতে হবে। এই বিকল্পের সংগ্রামগ্রাহ্য করতে হবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, এমনকি ধর্মের ক্ষেত্রেও কুসংস্কার ও মিথ্যা ব্যাখ্যার (যেমন নারীকে হেয় করা ইত্যাদি) বিপরীতে রুখে দাঁড়াতে হবে এখনই। প্রগতিশীল মধ্যবিত্তকে এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। বুর্জোয়া-ধনী-ব্যবসায়ী যারা টাকা বানানোয় ব্যস্ত, তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। সময় হয়েছে শহীদদের ঋণের কথা ভেবে আরেকবার উঠে দাঁড়াবার। করোনার মধ্যে যাঁরা অন্যদের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে এই লেখা এখানেই শেষ করছি।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা গলায় দিয়ে লাঞ্ছিত করেছে একদল দুর্বৃত্ত। এই দুর্বৃত্তরা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করেন বলে খবরে প্রকাশ। তাঁরা এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এলাকাছাড়া করেছেন। বর্ষীয়ান এই মুক্তিযোদ্ধা একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কথা শুনতে শুনতে মনে হলো, অপমান কি তাঁকে করা হলো, ন
৩ ঘণ্টা আগেএ বছর প্রায় শেষের পথে। এদিকে আরবের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি ধীরে ধীরে ঘুণে ধরা রাজনৈতিক শৃঙ্খলে এক স্থবির ম্যামথ হয়ে রয়ে গেছে। শাসকদের দেশে বৈধতা নেই। কেবল পশ্চিমা ও উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নগদ অর্থ দেশটিকে টিকিয়ে রেখেছে। এই দেশগুলো সব সময় মিসরে শাসকদের বিরুদ্ধে জনবিস্ফোরণের আশঙ্কায় থাকে।
৩ ঘণ্টা আগেডিসেম্বরের ইউরোপে শীত জাঁকিয়ে বসতে শুরু করে। আকাশ থেকে নেমে আসে পেঁজা তুলার মতো নরম তুলতুলে তুষার। শ্বেত শুভ্রতার অপার্থিব এবং পবিত্র সৌন্দর্যে ঢেকে যায় চারদিক! এ সময়ে মহাসমারোহে বড়দিন আসে। উষ্ণতার ফল্গুধারায় উদ্বেলিত হয় হৃদয়। অন্ধকার নামতেই নানা বর্ণের আলোকসজ্জায় উজ্জ্বল হয় নগর, বন্দর, বাড়িঘর। ধর্ম
৩ ঘণ্টা আগেডিসেম্বরের প্রান্তে এসে আমরা যখন নতুন বছরের আশা-প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্লেষণ করতে থাকি, ঠিক তখনই আসে বছরের শেষ উৎসব বড়দিন, যা ভালোবাসা ও একতার বার্তা বহন করে। বড়দিন মানেই শান্তি, ভালোবাসা এবং নতুন সূচনার প্রতীক। যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন হিসেবে পালিত হলেও ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলে উদ্যাপন করে বড়দিন। বাং
৩ ঘণ্টা আগে