জাহীদ রেজা নূর
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা গলায় দিয়ে লাঞ্ছিত করেছে একদল দুর্বৃত্ত। এই দুর্বৃত্তরা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করেন বলে খবরে প্রকাশ। তাঁরা এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এলাকাছাড়া করেছেন। বর্ষীয়ান এই মুক্তিযোদ্ধা একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কথা শুনতে শুনতে মনে হলো, অপমান কি তাঁকে করা হলো, নাকি গোটা বাংলাদেশকে?
ঘটনাটি এতটাই ন্যক্কারজনক যে এ নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। প্রশ্ন জাগে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধীদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার পথ কি এভাবেই উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে? একাত্তরকে ভুলে গিয়ে ধর্ম-ব্যবসাকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে যারা পরিণত করতে চায়, তাদের আস্ফালন দেখতে হবে এখন?
ঘটনাটির প্রতিবাদ করেছেন অনেকেই। জামায়াতে ইসলামী তাদের দল থেকে দুজনকে বহিষ্কার করেছে। অবশ্য এই বহিষ্কার শুধু লোকদেখানো নাটক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির বলেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা জামায়াতের কেউ নয়। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে দুজনকে কেন দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা বোঝা গেল না। জামায়াতের এই রহস্যময় আচরণের কারণ কী, তা ভেবে দেখা দরকার।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি করেছে বিক্ষোভ মিছিল। সরকারের তরফ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে, দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ ধরনের কঠোর উচ্চারণ প্রায়ই করে থাকেন, তাতে ফায়দা খুব কমই হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কীভাবে, কখন এদের আইনের আওতায় আনবেন, সেটা দেখার জন্য গোটা জাতি অপেক্ষা করছে। তাঁর কথা ও কাজে মিল দেখতে চায় জনগণ।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঘটা এই দুর্বৃত্তপনা আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে কথা বলার পরিসর তৈরি করেছে। আওয়ামী-বিরোধিতার নাম করে স্বাধীনতার সব ইতিবাচক অর্জনকে ধূলিসাৎ করার জন্য কি কোনো মহল উঠেপড়ে লেগেছে? এটা কি পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার অভিপ্রায়? তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার জন্য একটি মহল আওয়ামী লীগের অপশাসনের ওপর দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধকেই বিতর্কের মধ্যে ফেলার পাঁয়তারা করছে কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যই ভাঙা হয়নি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় বহু ভাস্কর্যও ভাঙা হয়েছে। এটা যে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আক্রোশ, তা না বোঝার কোনো কারণ নেই। মুক্তিযুদ্ধের নানা অর্জনকে বিতর্কিত করার মতো কর্মকাণ্ড ঘটতে দেখা গেছে। যে তরুণেরা পরিবর্তন আনবেন, তাঁরা এই বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখছেন, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই দেশে ইসলামি চরমপন্থা আসবে না। তাঁর কথার ওপর ভরসা রাখতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু ঘটমান
নানা বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যাবে, এ মুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন নিয়ে কথা বলতে গেলেই একদল বিভ্রান্ত মানুষ যেকোনো দেশপ্রেমী মানুষের গায়ে আওয়ামী-দোসর ট্যাগ লাগিয়ে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ তাদের শাসনামলে বিরুদ্ধমত দেখলেই রাজাকার ট্যাগ লাগিয়ে দিত। এখন হচ্ছে তার উল্টো। এই প্রবণতা বন্ধের জন্যই তো আন্দোলনটা হয়েছিল। তা কি বন্ধ হয়েছে? এই অরুচিকর প্রবণতা কমে যাচ্ছে, এ রকম কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ নেই। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ এবং সে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ, এই তথ্যকে এড়িয়ে কি দেশের ইতিহাস নির্মাণ করা যাবে? বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যা করেছে, তার সঙ্গে ষাট ও সত্তরের দশকের রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলা কি ঠিক হবে? এই অপকর্মটি শুধু তাঁরাই করতে পারেন, যাঁরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান। যে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এখন কাজ হচ্ছে, তার একটা বড় উদ্দেশ্য তো হচ্ছে, যাঁর যেখানে যতটা অবদান, তা স্বীকার করে নেওয়া। কোনো ধরনের বৈষম্য যেন না থাকে, তার বিধান করা। কিন্তু বাস্তবে কি সে কাজ হচ্ছে? কতটা হচ্ছে? কেন সাধারণ মানুষ হতাশ হচ্ছে, তার খোঁজ কি কেউ নিয়েছেন?
বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত আবদুল হাই কানু আওয়ামী লীগ আমলে তাঁর দলীয় প্রভাবশালী মন্ত্রীর দ্বারাও নিগৃহীত হয়েছেন, জেল খেটেছেন, নিজের এলাকায় থাকতে পারেননি। তিনি যদি ব্যক্তিগতভাবে কোনো অন্যায় করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিচার হতে পারত। যেকোনো নাগরিক অন্যায় আচরণ করলে তাঁর বিচার হওয়াই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু যাঁরা আবদুল হাই কানুর সঙ্গে এই অপমানজনক কাজ করেছেন, তাঁদের পরিচয় জামায়াতে ইসলামী হওয়ায় এর পেছনে অন্য আর কী উদ্দেশ্য আছে, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার। মুক্তিযুদ্ধকে জামায়াতে ইসলামীর বয়ান দিয়ে পরিশুদ্ধ করতে হবে—এ রকম জায়গায় কি তবে দেশ পৌঁছে গেল? এ ব্যাপারে কী বলে তরুণসমাজ? ইতিহাসের অর্জিত সাফল্যগুলোকে গৌণ করে দিয়ে নতুন করে ইতিহাস লেখার পাঁয়তারা কি চলছে? এটাও বিবেচনায় নিতে হবে তরুণদের।
তরুণদের কথা বলছি এই কারণে যে তাদের মাধ্যমেই দেশ পৌঁছাবে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। অতীতের অর্জনের ওপর নির্ভর করে তারা গড়ে তুলবে ভবিষ্যতের পথ। কিন্তু কোন বিবেচনা থেকে তারা পথ পাড়ি দেবে? আবদুল হাই কানুর ওপর হামলার ঘটনা কি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জনগণ কী ভাবছে, তা বোঝার জন্য অ্যাসিড টেস্ট? যদি এই অপকর্ম করে পার পেয়ে যায় দুর্বৃত্তের দল, তাহলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধারা কি এই রকম অপমানের শিকার হতে থাকবেন ভবিষ্যতে?
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুক্তিযোদ্ধারা এ রকম অপমানিত হবেন, তা নিশ্চয়ই তাঁরা ভাবতে পারেননি। তাঁদের মনে যদি এখন হতাশা থেকে প্রশ্ন আসে, ‘একাত্তরে তাহলে কেন আমরা যুদ্ধ করলাম?’ তাহলে তাঁদের মনে আশা জাগিয়ে তুলবে কে? বিভ্রান্ত পরাজিত শক্তির কাছ থেকে কি মুক্তিযুদ্ধের সবক নিতে হবে?
মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনা আর হেনস্তার ঘটনায় মামুলি প্রতিবাদ কিংবা নিন্দা জানানো হলে দুদিন পর মানুষ এই ঘটনা ভুলে যাবে। এত তথ্যের আনাগোনা চারদিক থেকে, যে তথ্যস্রোতেই তা ভেসে যাবে। কিন্তু যে দুর্বৃত্তরা একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলো কি না তা দেখার জন্য উদ্গ্রীব থাকবেন ইতিহাস-সন্ধানী মানুষ। একদিন এ রকম একটি ঘটনা এই দেশে ঘটতে পেরেছিল, সে কথা তাঁরা ভুলে যাবেন না। মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানকারীদের গ্রেপ্তার করা ও বিচারের আওতায় আনার কাজটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য হবে একটি বড় পরীক্ষা। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এই দেশে ইসলামি চরমপন্থা আসবে না। শুধু ইসলামি চরমপন্থা নয়, কোনো ধরনের চরমপন্থাই যেন এই দেশে কায়েম না হয়, সেই নিশ্চয়তা চায় দেশের জনগণ। ফ্যাসিবাদ সামাল দিতে নব্য ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার সামাল দিতে নব্য স্বৈরাচার যেন আমাদের রাজনীতির আকাশকে কালো করে না ফেলে, সে আশায় থাকতে চায় দেশের মানুষ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা গলায় দিয়ে লাঞ্ছিত করেছে একদল দুর্বৃত্ত। এই দুর্বৃত্তরা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করেন বলে খবরে প্রকাশ। তাঁরা এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এলাকাছাড়া করেছেন। বর্ষীয়ান এই মুক্তিযোদ্ধা একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কথা শুনতে শুনতে মনে হলো, অপমান কি তাঁকে করা হলো, নাকি গোটা বাংলাদেশকে?
ঘটনাটি এতটাই ন্যক্কারজনক যে এ নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। প্রশ্ন জাগে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধীদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার পথ কি এভাবেই উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে? একাত্তরকে ভুলে গিয়ে ধর্ম-ব্যবসাকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে যারা পরিণত করতে চায়, তাদের আস্ফালন দেখতে হবে এখন?
ঘটনাটির প্রতিবাদ করেছেন অনেকেই। জামায়াতে ইসলামী তাদের দল থেকে দুজনকে বহিষ্কার করেছে। অবশ্য এই বহিষ্কার শুধু লোকদেখানো নাটক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির বলেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা জামায়াতের কেউ নয়। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে দুজনকে কেন দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা বোঝা গেল না। জামায়াতের এই রহস্যময় আচরণের কারণ কী, তা ভেবে দেখা দরকার।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি করেছে বিক্ষোভ মিছিল। সরকারের তরফ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে, দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ ধরনের কঠোর উচ্চারণ প্রায়ই করে থাকেন, তাতে ফায়দা খুব কমই হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কীভাবে, কখন এদের আইনের আওতায় আনবেন, সেটা দেখার জন্য গোটা জাতি অপেক্ষা করছে। তাঁর কথা ও কাজে মিল দেখতে চায় জনগণ।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঘটা এই দুর্বৃত্তপনা আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে কথা বলার পরিসর তৈরি করেছে। আওয়ামী-বিরোধিতার নাম করে স্বাধীনতার সব ইতিবাচক অর্জনকে ধূলিসাৎ করার জন্য কি কোনো মহল উঠেপড়ে লেগেছে? এটা কি পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার অভিপ্রায়? তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার জন্য একটি মহল আওয়ামী লীগের অপশাসনের ওপর দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধকেই বিতর্কের মধ্যে ফেলার পাঁয়তারা করছে কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যই ভাঙা হয়নি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় বহু ভাস্কর্যও ভাঙা হয়েছে। এটা যে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আক্রোশ, তা না বোঝার কোনো কারণ নেই। মুক্তিযুদ্ধের নানা অর্জনকে বিতর্কিত করার মতো কর্মকাণ্ড ঘটতে দেখা গেছে। যে তরুণেরা পরিবর্তন আনবেন, তাঁরা এই বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখছেন, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই দেশে ইসলামি চরমপন্থা আসবে না। তাঁর কথার ওপর ভরসা রাখতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু ঘটমান
নানা বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যাবে, এ মুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন নিয়ে কথা বলতে গেলেই একদল বিভ্রান্ত মানুষ যেকোনো দেশপ্রেমী মানুষের গায়ে আওয়ামী-দোসর ট্যাগ লাগিয়ে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ তাদের শাসনামলে বিরুদ্ধমত দেখলেই রাজাকার ট্যাগ লাগিয়ে দিত। এখন হচ্ছে তার উল্টো। এই প্রবণতা বন্ধের জন্যই তো আন্দোলনটা হয়েছিল। তা কি বন্ধ হয়েছে? এই অরুচিকর প্রবণতা কমে যাচ্ছে, এ রকম কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ নেই। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ এবং সে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ, এই তথ্যকে এড়িয়ে কি দেশের ইতিহাস নির্মাণ করা যাবে? বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যা করেছে, তার সঙ্গে ষাট ও সত্তরের দশকের রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলা কি ঠিক হবে? এই অপকর্মটি শুধু তাঁরাই করতে পারেন, যাঁরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান। যে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এখন কাজ হচ্ছে, তার একটা বড় উদ্দেশ্য তো হচ্ছে, যাঁর যেখানে যতটা অবদান, তা স্বীকার করে নেওয়া। কোনো ধরনের বৈষম্য যেন না থাকে, তার বিধান করা। কিন্তু বাস্তবে কি সে কাজ হচ্ছে? কতটা হচ্ছে? কেন সাধারণ মানুষ হতাশ হচ্ছে, তার খোঁজ কি কেউ নিয়েছেন?
বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত আবদুল হাই কানু আওয়ামী লীগ আমলে তাঁর দলীয় প্রভাবশালী মন্ত্রীর দ্বারাও নিগৃহীত হয়েছেন, জেল খেটেছেন, নিজের এলাকায় থাকতে পারেননি। তিনি যদি ব্যক্তিগতভাবে কোনো অন্যায় করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিচার হতে পারত। যেকোনো নাগরিক অন্যায় আচরণ করলে তাঁর বিচার হওয়াই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু যাঁরা আবদুল হাই কানুর সঙ্গে এই অপমানজনক কাজ করেছেন, তাঁদের পরিচয় জামায়াতে ইসলামী হওয়ায় এর পেছনে অন্য আর কী উদ্দেশ্য আছে, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার। মুক্তিযুদ্ধকে জামায়াতে ইসলামীর বয়ান দিয়ে পরিশুদ্ধ করতে হবে—এ রকম জায়গায় কি তবে দেশ পৌঁছে গেল? এ ব্যাপারে কী বলে তরুণসমাজ? ইতিহাসের অর্জিত সাফল্যগুলোকে গৌণ করে দিয়ে নতুন করে ইতিহাস লেখার পাঁয়তারা কি চলছে? এটাও বিবেচনায় নিতে হবে তরুণদের।
তরুণদের কথা বলছি এই কারণে যে তাদের মাধ্যমেই দেশ পৌঁছাবে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। অতীতের অর্জনের ওপর নির্ভর করে তারা গড়ে তুলবে ভবিষ্যতের পথ। কিন্তু কোন বিবেচনা থেকে তারা পথ পাড়ি দেবে? আবদুল হাই কানুর ওপর হামলার ঘটনা কি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জনগণ কী ভাবছে, তা বোঝার জন্য অ্যাসিড টেস্ট? যদি এই অপকর্ম করে পার পেয়ে যায় দুর্বৃত্তের দল, তাহলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধারা কি এই রকম অপমানের শিকার হতে থাকবেন ভবিষ্যতে?
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুক্তিযোদ্ধারা এ রকম অপমানিত হবেন, তা নিশ্চয়ই তাঁরা ভাবতে পারেননি। তাঁদের মনে যদি এখন হতাশা থেকে প্রশ্ন আসে, ‘একাত্তরে তাহলে কেন আমরা যুদ্ধ করলাম?’ তাহলে তাঁদের মনে আশা জাগিয়ে তুলবে কে? বিভ্রান্ত পরাজিত শক্তির কাছ থেকে কি মুক্তিযুদ্ধের সবক নিতে হবে?
মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনা আর হেনস্তার ঘটনায় মামুলি প্রতিবাদ কিংবা নিন্দা জানানো হলে দুদিন পর মানুষ এই ঘটনা ভুলে যাবে। এত তথ্যের আনাগোনা চারদিক থেকে, যে তথ্যস্রোতেই তা ভেসে যাবে। কিন্তু যে দুর্বৃত্তরা একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলো কি না তা দেখার জন্য উদ্গ্রীব থাকবেন ইতিহাস-সন্ধানী মানুষ। একদিন এ রকম একটি ঘটনা এই দেশে ঘটতে পেরেছিল, সে কথা তাঁরা ভুলে যাবেন না। মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানকারীদের গ্রেপ্তার করা ও বিচারের আওতায় আনার কাজটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য হবে একটি বড় পরীক্ষা। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এই দেশে ইসলামি চরমপন্থা আসবে না। শুধু ইসলামি চরমপন্থা নয়, কোনো ধরনের চরমপন্থাই যেন এই দেশে কায়েম না হয়, সেই নিশ্চয়তা চায় দেশের জনগণ। ফ্যাসিবাদ সামাল দিতে নব্য ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার সামাল দিতে নব্য স্বৈরাচার যেন আমাদের রাজনীতির আকাশকে কালো করে না ফেলে, সে আশায় থাকতে চায় দেশের মানুষ।
এ বছর প্রায় শেষের পথে। এদিকে আরবের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি ধীরে ধীরে ঘুণে ধরা রাজনৈতিক শৃঙ্খলে এক স্থবির ম্যামথ হয়ে রয়ে গেছে। শাসকদের দেশে বৈধতা নেই। কেবল পশ্চিমা ও উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নগদ অর্থ দেশটিকে টিকিয়ে রেখেছে। এই দেশগুলো সব সময় মিসরে শাসকদের বিরুদ্ধে জনবিস্ফোরণের আশঙ্কায় থাকে।
১৪ ঘণ্টা আগেডিসেম্বরের ইউরোপে শীত জাঁকিয়ে বসতে শুরু করে। আকাশ থেকে নেমে আসে পেঁজা তুলার মতো নরম তুলতুলে তুষার। শ্বেত শুভ্রতার অপার্থিব এবং পবিত্র সৌন্দর্যে ঢেকে যায় চারদিক! এ সময়ে মহাসমারোহে বড়দিন আসে। উষ্ণতার ফল্গুধারায় উদ্বেলিত হয় হৃদয়। অন্ধকার নামতেই নানা বর্ণের আলোকসজ্জায় উজ্জ্বল হয় নগর, বন্দর, বাড়িঘর। ধর্ম
১৪ ঘণ্টা আগেডিসেম্বরের প্রান্তে এসে আমরা যখন নতুন বছরের আশা-প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্লেষণ করতে থাকি, ঠিক তখনই আসে বছরের শেষ উৎসব বড়দিন, যা ভালোবাসা ও একতার বার্তা বহন করে। বড়দিন মানেই শান্তি, ভালোবাসা এবং নতুন সূচনার প্রতীক। যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন হিসেবে পালিত হলেও ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলে উদ্যাপন করে বড়দিন। বাং
১৪ ঘণ্টা আগেশেষ হতে চলল আরও একটি বছর, ২০২৪। বাংলাদেশ তো বটেই, সারা পৃথিবীতে নানা পটপরিবর্তন ঘটেছে। নতুন প্রেক্ষাপটে নানা পরিবর্তনে রচিত হচ্ছে অর্থনৈতিক পরিমণ্ডল। যেকোনো পরিবর্তন কিংবা সংকটে, কোনো কিছুতে থেমে নেই আমাদের কৃষি। নতুন নতুন উদ্যোগে উন্মোচন হচ্ছে এক একটি সম্ভাবনা। আমাদের উর্বরা মাটি, কৃষকের নিজস্ব উদ্
২ দিন আগে