Ajker Patrika

তহিদুল কি একা

সম্পাদকীয়
তহিদুল কি একা

‘বেচারা’ তহিদুল ইসলাম নীলফামারীর ডিমলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ভূমি কার্যালয়ের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা। কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের নামে যে বিশাল সব ঘটনা ঘটে গেল দেশে, তার খবর সম্ভবত তিনি পাননি। তিনি ভেবেছিলেন, যেভাবে ভূমি অফিসে ‘সেবা’ দানের বিনিময়ে ‘ব্যক্তিগত সেবা’ লাভের সুযোগ তৈরি করে নিয়েছেন, সেভাবেই চালিয়ে যেতে পারবেন কাজ। কিন্তু ধরা পড়ে গেলেন হাতেনাতে। ঘুষের টাকাটা সরানোর আগেই ‘বমাল গ্রেপ্তার!’ স্থানীয় মানুষ কার্যালয় ঘেরাও করলে টনক নড়ে এই কর্মকর্তার। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং ঘুষের টাকা ফেরত দেন। খবর পেয়ে ইউএনও আসেন ঘটনাস্থলে। উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে তিনি আশ্বাস দেন যে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যে জমির নামজারির জন্য খরচ সাকল্যে ১ হাজার ১৭০ টাকা, সেই জমির জন্য ৬ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন তহিদুল ইসলাম। ‘বেচারা’ ভাবতেও পারেননি, মাত্র এই কটা টাকার জন্য এভাবে বিপদে পড়বেন। তিনি যে আদ্যোপান্ত এক ঘুষখোর কর্মকর্তা, সে কথাও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে। এখন দেখা যাক, তিনি কী শাস্তি পান।

ঘুষের জন্য নাম আছে ভূমি অফিসের। অনেকেই বলে থাকেন, ঘুষ না দিয়ে এই অফিস থেকে কাজ বের করে আনা আর খোঁড়া পায়ে হিমালয় ডিঙানো একই রকম ঘটনা। আদতে এই অফিস থেকে দেওয়া রসিদের সঙ্গে ভুক্তভোগীর দেওয়া টাকার পরিমাণের মধ্যে গরমিল না থাকাটাই নাকি অস্বাভাবিক ব্যাপার। রাজা যায়, রাজা আসে—এই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না।

একজন তহিদুলের বিরুদ্ধে হয়তো ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কিন্তু ভূমি অফিস আদৌ কি দুর্নীতিমুক্ত হবে? দেশের সর্বত্র যে ভূমি অফিসগুলো আছে, সেগুলোয় কীভাবে কাজ হয়, সে কথা ভুক্তভোগী সবারই জানা। তাই একজন তহিদুলের ব্যাপারে পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হলেই আত্মতৃপ্তির কোনো অবকাশ নেই। ঘুষের রাজত্ব হিসেবে যে দুর্নাম কামিয়েছে ভূমি অফিস, সে দুর্নাম ঘোচানোটাই দরকার সবার আগে। আর সে জন্য প্রয়োজন, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনস্তত্ত্ব বদলানো। তাঁরা যে জনগণের সেবক, জনগণের করের টাকায়ই তাঁদের বেতন হয়, সে কথা যেন তাঁরা উপলব্ধি করেন, দায়িত্ব গ্রহণের আগেই তাঁদের সে কথা মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। সেই অফিসেই একটি অভিযোগ জানানোর জায়গা থাকতে হবে, যেখানে দায়িত্ব পাবেন এমন কেউ, যার হাতে অভিযোগ পেলেই যেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন, এ রকম ক্ষমতা থাকবে। ‘বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নে’ সেবাদানের যে বিষয়গুলো লেখা আছে, সেই কাজগুলো ঠিকভাবে হচ্ছে কি না, সে পর্যবেক্ষণ করাটাও জরুরি। কীভাবে মানুষ অনায়াসে সরকারি অফিসে সেবা পেতে পারেন, তা ঠিক করবেন নীতিনির্ধারকেরা।

পরিবর্তন এলে কিছুদিন ভালোভাবে চলার পরই আমাদের সরকারি অফিসগুলো আবার সেই পুরোনো অভ্যাসে ফিরে যায়—এ রকম হাজারো নজির রয়েছে। তাই কথামালার রাজনীতি দিয়ে নয়, বাস্তব ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটানোটাই এখনকার সবচেয়ে বড় দাবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আট মাসের পরিচয়, চার মাসে ‘বাগদান’

সৌদি রাষ্ট্রদূত নিয়ে ভিন্ন কথা বলছে মডেল মেঘনার পরিবার

৯ টুকরো লাশ: সবুজকে হেমায়েতপুর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন পলাশ-তৃষা

সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেন মেঘনার সহযোগী সমির, পুলিশের প্রতিবেদন

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি জানা যাবে মাত্র ৮০০ টাকার রক্ত পরীক্ষায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত