Ajker Patrika

৭০ বছর বয়সী খালেকের সংসার চলে রিকশা চালিয়ে

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
৭০ বছর বয়সী খালেকের সংসার চলে রিকশা চালিয়ে

জীবনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেছে আব্দুল খালেক খন্দকারের; বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে শরীর। পায়ে হেঁটে চলা কঠিন হলেও পৃথিবীতে টিকে থাকার লড়াইয়ে থেমে নেই এই বৃদ্ধ। তিন চাকার বাহন রিকশা নিয়ে তাঁর অবিরাম ছুটে চলা। 

আব্দুল খালেকের ঘরে অসুস্থ স্ত্রী, তিন মেয়ে। মেয়েদের মধ্যে দুজনের বয়স ২৫ পেরিয়ে গেলেও টাকার অভাবে বিয়ে দিতে পারছেন না। দুই ছেলে গার্মেন্টসে চাকরি করে, বিয়ে করে আলাদা থাকে। একবার খোঁজও নেয় না অসহায় বাবা মায়ের। এমন পরিস্থিতিতে রিকশায় প্যাডেল মেরেই চলছে তাঁর সংসার। স্থানীয় কেউ কেউ মাঝেমধ্যে কিছু সহায়তা করলেও কারও কাছ থেকে চেয়ে নেন না তিনি। 

আব্দুল খালেক খন্দকারের জন্ম ভোলা জেলার লালমোহন থানার গজারিয়া ইউনিয়নের কচুয়াখালী গ্রামে। বাবা মৃত আছমত আলী। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের কামারজাগী গ্রামে তাঁর শ্বশুর বাড়ি। এটিই তাঁর বর্তমান ঠিকানা। 

সিংজুরী, চরবাইলজুরী পঞ্চরাস্তা মোড় ও ঘিওর বাজারের রুটে রিকশা নিয়ে ক্লান্ত শরীরের খালেক খন্দকারের দেখা মেলে। যে বয়সে একজন মানুষের অবসরে থাকার কথা, সেখানে রোদ-বৃষ্টির মাঝেই রিকশা নিয়ে ছুটে চলতে হচ্ছে সড়কে। সাধারণ মানুষও তাঁর এই শ্রমকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখছেন। 

মো. সাইফুল ইসলাম নামের স্থানীয় একজন বলেন, এই বৃদ্ধ চাচাকে প্রায়ই রিকশা নিয়ে ঘুরতে দেখি। তবে ওনার রিকশায় কোনো যাত্রী উঠতে দেখি না। একদিন কিছু টাকা দিতে চাইলেও নিতে চাননি। পরে এমনিতেই রিকশায় উঠে ভাড়া দিয়েছি। এই চাচাকে প্রতিদিনই কেউ না কেউ সহযোগিতা করেন। 

বয়স ৫০ পেরোনোর পর থেকেই খালেক খন্দকার বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। তিনি বলেন, রিকশা চালাতে বেশ কষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে শরীরে খিঁচুনি দিলে দাঁড়িয়ে থাকাও অসম্ভব হয়ে যায়। তবুও সংসার চালাতে প্রতিদিন বের হওয়া লাগে। দুই ছেলে থাকার কথা স্বীকার করলেও তাঁদের সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি। চাপা কণ্ঠে তাঁদের কথা এড়িয়ে যান। বলেন, যার কেউ নেই তাঁর আল্লাহ আছে, আমার থেকেও কেউ নেই। তবে আল্লাহর রহমতে ভালোই কাটছে সময়। রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিন শ টাকা আয় হয়। তাতেই দিন চলে। 

আব্দুল খালেক বলেন, আমি একজন সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট না থাকায় আমার কোনো ভাতা হয়নি। মানুষ আমাকে যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা করে। অনেকে রিকশায় না উঠেও ভাড়া দিয়ে দেয়। আবার কেউ কেউ খারাপ ব্যবহারও করে। ভিক্ষা চাইতে লজ্জা লাগে তাই রিকশা চালাই। তা ছাড়া আমাদের নবী ভিক্ষা করতে নিষেধ করেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আরাকান আর্মির আপত্তি ও শর্ত

চুরির অপবাদে ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতন ছাত্রদল নেতার, টাকা দিয়ে মুক্তি

ট্রেনের এক আসন পেতে কিনতে হচ্ছে ৬ টিকিট, প্রশাসনের অভিযান

৩০টির বেশি মার্কিন পণ্যের আমদানি শুল্ক পর্যালোচনার উদ্যোগ

মামলার ভয় দেখিয়ে ইউপি সদস্যের কাছ থেকে এসি, টাকা নেন ওসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত