Ajker Patrika

জীবন ‘হাওয়াই মিঠাই’ না

মো. ফরিদ রায়হান, অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) 
জীবন ‘হাওয়াই মিঠাই’ না

পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের প্রধান সড়ক। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এই সড়কের ঠাকুর বাড়ির সীমানা পেরোতেই উল্টোদিকের বাঁশতলায় দেখা যায়,৫-৭ জন কিশোর-কিশোরী কিছু একটা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে এগিয়ে দেখা যায়, মাটিতে পায়ের জুতো জোড়া পেতে এক বয়স্ক মানুষ হাওয়াই মিঠাই মেশিন ঘুরিয়ে চলছেন। একটু পর পর তৈরি হওয়া হাওয়াই মিঠাই, কখনো শিশুদের নিকট বেচেন, কখনো পাশের বয়ামে সংরক্ষণ করছেন। 

হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতার নাম  ইদ্রিস মিয়া (৫৩)। গ্রাম কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের দেওঘর ইউনিয়নের পশ্চিম আলীনগরে। মৃত হরমুজ আলীর বড় ছেলে ইদ্রিস মিয়া পাঁচ মেয়ে এক ছেলে সন্তানের পিতা। বছরে বারো মাস তিনি হাওয়ায় মেশিন কাঁধে বয়ে বিভিন্ন গ্রামে মিঠাই ফেরি করে বেচেন। এতেই চলে সংসার ও সন্তানের পড়াশোনার খরচ। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩৫ বছর আগে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে বাবার সংসার হতে পৃথক হন ইদ্রিস মিয়া।  কৃষি শ্রমিকের কাজ করে সন্তানের ভরণপোষণ, লেখা-পড়া ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। 

 ২০০৫ সালে বড় মেয়ে বিয়ে দেন ধারদেনা করে। বছর ঘুরে আসে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে মহাজনের ভয়ে চলে যান শহরে। সেখানেই এক হাওয়াই মিঠাই কারিগরের সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্য। তার নিকট শিখেন হাওয়াই মিঠাই তৈরির কাজ। ছয় মাস পর গ্রামে ফিরে এসে, হাওয়াই মিঠাই মেশিন কিনে স্বল্প পুঁজিতে শুরু করেন এই ব্যবসা। আস্তে আস্তে ঋণ পরিশোধ করেন। তারপর আর পেছনে থাকাতে হয়নি। 

কাঠ ও টিনে তৈরি বাক্সের ওপরে একটি চরকা। চরকার কৌটায় দেওয়া হয় চিনি, ভেতরে রাখা কেরোসিন বাতির তাপে গলানো হয় তা। বাক্সের ডানে হাতে ঘোরানো প্যাডেল চালিয়ে প্রতি মিনিটে ৩-৪টি হাওয়াই মিঠাই তৈরি করা হয়। মিঠাই সৌন্দর্য বাড়াতে রং ব্যবহার করা হয় চিনিতে। 

প্রতিটি মিঠাই নগদ ২ টাকা ও নারীদের ঝরে পড়া চুলের বিনিময়ে বিক্রি করেন। দিনে ৬-৭ শত টাকার হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন। খরচ শেষে লাভ হয় ৫-৬ শত টাকা। তিনি জানান, এই ব্যবসা করে তিন মেয়ে কে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট দুই মেয়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে পঞ্চম শ্রেণি পড়াশোনা করে এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। 

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও হাওয়াই মিঠাই ক্রেতা লাভলী আক্তার বলে, এই বুড়া চাচ্চু কদিন পর পর আমরার এখানে আয়ে (আসে) মজার মজার কথা কয়। আমরা ট্যাহা, নাইলে চুল দিয়্যা হাওয়াই মিঠাই কিনে খাই। 

হাওয়াই মিঠাইয়ে রং ব্যবহার করা ক্ষতিকর। তাই শুধুমাত্র চিনি দিয়ে সাদা হাওয়াই মিঠাই তৈরি করেন ইদ্রিস মিয়া। তিনি বলেন, জীবন হাওয়াই মিঠাইর মতো না! এটি মাকড়সার জাল মতো। এই জালে জড়িয়ে সারা জীবন চলছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আরাকান আর্মির আপত্তি ও শর্ত

চুরির অপবাদে ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতন ছাত্রদল নেতার, টাকা দিয়ে মুক্তি

ট্রেনের এক আসন পেতে কিনতে হচ্ছে ৬ টিকিট, প্রশাসনের অভিযান

৩০টির বেশি মার্কিন পণ্যের আমদানি শুল্ক পর্যালোচনার উদ্যোগ

মামলার ভয় দেখিয়ে ইউপি সদস্যের কাছ থেকে এসি, টাকা নেন ওসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত