Ajker Patrika

৩২ বছর ধরে বিক্রি করেন হাওয়াইমিঠাই

হোসাইন আহমেদ সুলভ, মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ)
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৯: ৫৩
৩২ বছর ধরে বিক্রি করেন হাওয়াইমিঠাই

একসময় আব্দুর রহিম হাওয়াইমিঠাই বিক্রি করার জন্য জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। এখন তাঁর শরীর আর আগের মতো নেই। আগে হাওয়াইমিঠাইয়ের ঘণ্টার আওয়াজ শুনলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ছুটে আসত। বাবা-মায়ের কাছে বায়না ধরত মিঠাই কেনার জন্য। এখন সেই সব দিন হারিয়ে গেছে। পাল্টে গেছে শিশুদের খাবারের চাহিদা। তাই আবদুর রহিম প্রতিদিনই ভাবেন, মিঠাইয়ের ব্যবসা ছেড়ে দেবেন।  

এলাকা সূত্রে জানা যায়, মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের রামপুর এলাকার বাসিন্দা মৃত সাবেদ আলীর ছেলে আবদুর রহিম (৬৩)। তিনি প্রায় ৩২ বছর যাবৎ হাওয়াইমিঠাই বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। নিজ এলাকায় তিনি হাওয়াইমিঠাইয়ে কারিগর হিসাবেই পরিচিত। 

আবদুর রহিমের বাবার তেমন সম্পত্তি ছিল না। মিঠাই বিক্রি করেই এক ছেলেকে পড়িয়েছেন কলেজ পর্যন্ত। মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। জমি কিনেছেন ৪ শতাংশ। তাতেই ঘর করে থাকেন তিনি।

আবদুর রহিম কর্মজীবনের শুরুতে অনেক ধরনের ব্যবসা করেছেন। ৩২ বছর আগে নেত্রকোনায় ভাঙ্গারির ব্যবসা করতেন তিনি। সেখান থেকেই হাওয়াইমিঠাই তৈরির হাতেখড়ি। অনেক খোঁজার পর জামালপুরের ইসলামপুর থেকে হাওয়াইমিঠাই তৈরির মেশিন কিনে নিয়ে আসেন। মেশিনের নিচে তেলের একটা বাতি জ্বালিয়ে, ওপরে রং মিশিয়ে চিনি দিয়ে বাম হাতে চাকতি ঘোরালেই তৈরি হতে থাকে হাওয়াইমিঠাই। 

এইভাবে শুরু হয় তাঁর ব্যবসা। নিজ বাড়িতে বসেই দিনরাত এক করে তৈরি করতেন এই মিঠাই। সকাল হলেই হকাররা ভিড় করত বাড়ির আঙিনায়। কাচের বাক্সে লাল রঙের বল মিঠাই নিয়ে যে যার মতো বেরিয়ে পড়ত। নিজেও বেরিয়ে পড়তেন নতুন কোনো এলাকায়। সন্ধ্যায় ফিরে এসে সবাই বাক্স জমা দিয়ে যেত। তবে এখন আর হাওয়াইমিঠাই বিক্রি করার মতো হকার পাওয়া যায় না। শুধু শখের পেশা বলে এখনো ধরে রেখেছেন তিনি।

এ বিষয়ে হাওয়াইমিঠাইয়ের কারিগর আবদুর রহিম বলেন, 'একসময় এর চাহিদা ছিল অনেক বেশি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যেমন পছন্দ করত, বড়রাও তেমনি। এখন শহরের মানুষ চিনিই কম খায়। শিশুরা দোকানের চিপস, চকলেট খেতে পছন্দ করে। হাওয়ায় মিঠাই এখন অনেকের কাছেই আর মজা লাগে না। আগে চিনির সঙ্গে খাওয়ার রং দিতাম, এখন বহু বছর যাবৎ রং-টং দিই না। রং দিলে আবার রঙিন মিঠাই বের হয়। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিদিনই মনে মনে কই ব্যবসা ছাইড়া দিমু। আবার ভাবি, এটা ছাইড়া কী কইরা খামু। শখের পেশা ছিল, তাই করতাছি।'

পৌর এলাকার বাসিন্দা রিপন সারওয়ার বলেন, 'আমরা ছোটবেলা থেকেই তাঁকে হাওয়াইমিঠাই বিক্রি করতে দেখে আসছি। শহরের আশপাশে ঘুরে ঘুরে মিঠাই বিক্রি করেন তিনি। তাঁর তৈরি হাওয়াইমিঠাই খেয়ে আমরাও বড় হয়েছি। এখন মাঝে মাঝে তাকে ছোট শিশুদের স্কুলের সামনে দীর্ঘ সময়ের জন্য বসে থাকতে দেখা যায়। তবে পাল্টেছে ব্যবসার ধরন। আগে বাড়ি থেকে তৈরি করে এনে বিক্রি করতেন। এখন মেশিন কাঁধে নিয়ে ঘুরে ঘুরে তৈরি আর বিক্রি করেন। সারা দিনে দেড় থেকে দুই কেজি চিনির মিঠাই তৈরি করা যায়। এতে তাঁর ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। তাতেই চলে সংসার। এখন বয়স বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো ঘুরতে পারেন না। তা ছাড়া করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় তাঁর ব্যবসার পরিধিও কমে গেছে।' 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আরাকান আর্মির আপত্তি ও শর্ত

চুরির অপবাদে ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতন ছাত্রদল নেতার, টাকা দিয়ে মুক্তি

ট্রেনের এক আসন পেতে কিনতে হচ্ছে ৬ টিকিট, প্রশাসনের অভিযান

৩০টির বেশি মার্কিন পণ্যের আমদানি শুল্ক পর্যালোচনার উদ্যোগ

মামলার ভয় দেখিয়ে ইউপি সদস্যের কাছ থেকে এসি, টাকা নেন ওসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত