করোনায় ছাত্র থেকে মিঠাই বিক্রেতা জুনায়েদ

মো. শামীম হোসেন, পাংশা (রাজবাড়ী)
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২১, ০০: ০৬
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭: ০৫

যে বয়সে লেখাপড়া করার কথা, সে বয়সে সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে জুনায়েদকে। সংসারের ঘানি টানতে ময়মনসিংহের নেত্রকোনা থেকে এখন সে রাজবাড়ীতে। খালাত ভাই আলমগীরের অধীনে কাজ করে যে টাকা উপার্জন করেন, তা দিয়ে সংসার চালান। থাকেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার ফুলতলা গ্রামে।  

সারাদিন ১০ টাকার হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করার জন্য পায়ে হেঁটে জুনায়েদ ছুটে চলেন রাজবাড়ীর প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্র ও হাট–বাজারে। করোনা মহামারীতে দরিদ্র পরিবারের বড় ছেলে বলে মাদ্রাসা ছাত্র থেকে এখন হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা সে। পরিবারের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন নিজের ভবিষ্যতের চিন্তা।

জুনায়েদ নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার তাঁরাকান্দা ইউনিয়নের দয়াল বাজার গ্রামের মো. জহিরুল ইসলামের ছেলে। মাত্র ১২ বছর বয়সেই সে নিজের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে পরিবারের হাল ধরেছে।

গতকাল শুক্রবার রাজবাড়ীর পাংশায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে দেখা যায় জুনায়েদকে। পাংশায় কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় এই বিএডিসিতে প্রতিদিন বিকেলে প্রকৃতি অনুভব করতে আসে মানুষ। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বিকেলে মানুষের ভিড়ে তা রূপ নেয় বিনোদন কেন্দ্রে। তাই জুনায়েদ প্রতি শুক্রবার হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে আসে পাংশার বিএডিসিতে। এ সময় কথা হয় জুনায়েদের সঙ্গে। 

জুনায়েদ বলেন, আমি অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। মা-বাবা, দুই ভাই ও এক বোন নিয়ে আমাদের সংসার। বাবা একজন রাজমিস্ত্রী। বাবার বয়স হয়ে গেছে, ঠিকমত কাজ করতে পারেন না। বাবা যা আয় করেন তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। আমি সংসারের বড় ছেলে। এই কারণে সংসার চালানোর জন্য আমাকে অনেক আগে থেকেই এই কাজ বেছে নিতে হয়েছে। 

মিঠাই বিক্রি করছেন জুনায়েদজুনায়েদ আরও বলেন, বাবা আমাকে লেখাপড়া করাতে চেয়েছিলেন। এ জন্য স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তিও করেছিলেন। কিন্তু বাবার আয়ে আমাদের সংসার চলতো না। এ কারণে বাবার কষ্ট ও পরিবারের কথা চিন্তা করে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে এই পেশায় এসেছি। 

প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হতো। এখন আর কষ্ট মনে হয় না। রাজবাড়ীর এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি নিজেকে। জেলার জামালপুর, বহরপুর, বালিয়াকান্দি, সোনাপুর, রামদিয়া ও পাংশাসহ জেলার বিভিন্ন হাট–বাজার ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যাই। হাওয়াই মিঠাইয়ের সঙ্গে বাচ্চাদের কিছু খেলনা রাখি। প্রতিদিন যা বিক্রি হয় তা নিয়ে খালাতো ভাইয়ের কাছে দেই। বিনিময়ে মাসে বেতন পাই ৮ হাজার টাকা। 

এর মধ্যে থাকা খাওয়া বাবদ মাসে তিন হাজা টাকা খরচ হয়। বাকি টাকা বাড়িতে পাঠাই। এই উপার্জিত অর্থ দিয়ে ছোট ভাই–বোনদের লেখাপড়া করাতে চায় জুনায়েদ। 

মুঠোফোনে কথা হয় জুনায়েদের বাবা জহিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার আয় দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হলেও জুনায়েদকে লেখাপড়া করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জুনায়েদ পরিবারের কথা চিন্তা করে লেখাপড়া বাদ দিয়ে এই পেশা বেছে নিয়েছে। এ ছাড়া করোনা ভাইরাস আসার পরে আমার আয় প্রায় বন্ধের পথে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকেই ওই কাজে রয়েছে জুনায়েদ। আমিও পরিস্থিতির শিকার হয়ে জুনায়েদকে কিছু বলি না। সবকিছু মিলে এখন কোনো মতে সংসার চলছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত