Ajker Patrika

গত ২০ বছরে বদলে গেছে পৃথিবীর কেন্দ্র

অনলাইন ডেস্ক    
পৃথিবীর কেন্দ্র মূলত দুটি অংশে বিভক্ত—তরল বাইরের কেন্দ্র ও কঠিন অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র। ছবি: রোস্ট–৯ ডি
পৃথিবীর কেন্দ্র মূলত দুটি অংশে বিভক্ত—তরল বাইরের কেন্দ্র ও কঠিন অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র। ছবি: রোস্ট–৯ ডি

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের (ইনার কেন্দ্র) আকৃতি বদলে গেছে বলে জানিয়ছেন একদল বিজ্ঞানী। গত ২০ বছরে এই পরিবর্তন হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

গবেষণার প্রধান অধ্যাপক জন ভিডাল বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র সাধারণত বলের মতো আকারের বলে ধারণা করা হলেও নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কিছু স্থানে ১০০ মিটার বা তারও বেশি উচ্চতায় বিকৃত হতে পারে।’

গত ১০ ফেব্রুয়ারি নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়। ভূমিকম্প তরঙ্গ বিশ্লেষণের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের সীমানায় নানা পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

পৃথিবীর কেন্দ্র মূলত দুটি অংশে বিভক্ত—তরল বাইরের কেন্দ্র ও কঠিন অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ২০০ মাইল (৫ হাজার ১৫০ কিলোমিটার) গভীরে অবস্থিত। অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের গতিশীলতা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা সূর্যের ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে প্রাণীজগতকে রক্ষা করে। যদি এটি বন্ধ হয়ে যায়, তবে পৃথিবীও মঙ্গলগ্রহের মতো প্রাণহীন হয়ে পড়তে পারে।

যেখানে কঠিন অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের সীমানা অত্যন্ত গরম তরল ধাতু বাইরের কেন্দ্রের সঙ্গে স্পর্শ করে, সেখানে আকারের এই পরিবর্তনটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পৃথিবীর ঘূর্ণনের চেয়ে অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র কেন ধীর গতিতে ঘুরতে শুরু করেছিল তা মূলত জানতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। একসময় এর গতি কমে গেলে ২০১০ সালে তা আবার দ্রুতগতিতে ঘুরতে শুরু করে।

পৃথিবীর কেন্দ্র কীভাবে কাজ করে তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে বুঝতে সাহায্য করে। এটি পৃথিবীকে সূর্যের বিপজ্জনক বিকিরণ থেকে রক্ষা করে।

১৯৯১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে একই জায়গায় সংঘটিত ভূমিকম্পের তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের পরিবর্তনের প্রমাণ পেয়েছেন।

অধ্যাপক ভিদালের মতে, বাইরের কেন্দ্রের তরল প্রবাহ ও অসমান মাধ্যাকর্ষণ টানের ফলে অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র বিকৃত হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হার্ভোজ টকালসিক বলেন, এই প্রবন্ধটি ‘পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রকাশ করেছে, যা আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করা উচিত।’

তিনি বলেন, এটি বিজ্ঞানীদের ‘অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের ভিস্কোসিটি (ঘনত্ব) এর মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদার্থের গুণাবলি সম্পর্কে আরও সঠিক অনুমান করতে সাহায্য করতে পারে, যা আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে কম জানা বিষয়গুলোর মধ্যে একটি।’

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তরল বাইরের কেন্দ্র কঠিন অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। তবে পুরোপুরি কঠিন হওয়ার জন্য বিলিয়ন বছর সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে প্রাণীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। সম্ভবত এর মধ্যেই সূর্য পৃথিবীকে গ্রাস করবে।

অধ্যাপক ভিডাল বলেন, ‘এই আবিষ্কার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোন পরিবর্তন আনবে না, তবে আমরা সত্যিই জানতে চাই পৃথিবীর অভ্যন্তরে কী ঘটছে।’

এই পরিবর্তনগুলো পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ভিডিল বলেন, ‘আমরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত নই যে, এই পরিবর্তনগুলো সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারছি নাকি। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সীমানা সব সময় পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং অনেক গবেষকের মতো আমিও অতীতে অনেক ভুল করেছি।’

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স ও বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

বাংলাদেশে-ভারত সম্পর্কের অবনতিতে দায়ী মোদি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা: কংগ্রেস

তখন অন্য একটা সংগঠন করতাম, এখন বলতে লজ্জা হয়: জামায়াতের আমির

কুতুবদিয়ায় ছাত্রলীগ নেতার ছুরিকাঘাতে ২ ছাত্রদল নেতা আহত

আইসিসির শাস্তি নিয়ে খেলতে নামা পাকিস্তানকে হেসেখেলে হারাল নিউজিল্যান্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত